জুলাই ১০, ২০২৫

পরিবীক্ষণ ও মুল্যায়ন শিক্ষা: একটি ক্ষুদ্র ভাবনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কার্যক্রম কী যদি প্রশ্ন তোলা হয়, তবে যে কোনো সাধারণ ব্যক্তিই খুব সহজেই স্বীকার করবেন যে, মূল কাজ হচ্ছে দুটি- জ্ঞান আহরণ ও জ্ঞান বিতরণ৷ জ্ঞান বিতরণের মাধ্যম বিভিন্ন রকম হতে পারে, তেমনি জ্ঞান আহরণের পথও বিভিন্ন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান আহরণের অন্যতম মাধ্যম গবেষণা৷ গবেষণালব্ধ জ্ঞান উচ্চতর জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করে৷

আর এটা কম বেশি সকলেরই জানা যে, গবেষণার একটি অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে পরিসংখ্যান৷ পরিসংখ্যান বিষয়ক জ্ঞান উন্নত গবেষণা কর্ম সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ পরিসংখ্যানের ছাত্র হিসেবে এটুকু বলতে পারি, যে কোনো ধরনের গবেষণা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ গবেষণা পদ্ধতিতে পরিসংখ্যান বিষয় সংক্রান্ত জ্ঞানকে যদি ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে গবেষণার ফলাফল চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব৷ এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিষয়ের প্রয়োগিক ব্যবহারে দক্ষ হওয়া একজন ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি৷ আর যদি সে ব্যক্তি বিভিন্ন গবেষণায় অংশ গ্রহণে ইচ্ছুক হয় তাহলে তো কথাই নেই৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷ প্রায় ৬ দশকের বেশি বয়সী এই বিভাগে কাজ করেছেন অনেক জ্ঞানী-গুনী শিক্ষক৷ এখনো অনেক প্রতিভাবান শিক্ষকমণ্ডলী পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদানের পাশাপাশি বাস্তবক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের প্রয়োগিক জ্ঞানদানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে৷ পরিসংখ্যানের প্রয়োগিক ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে যাতে শিক্ষার্থীরা অর্জিত জ্ঞানকে আরো ভালোভাবে প্রয়োগ করতে পারে৷ এটা শিক্ষার্থীদের অর্জিত বিদ্যাকেও পাকাপোক্ত করতে সাহায্য করছে৷

গবেষণা কাজে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা তাদের পরিসংখ্যানের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রয়োগিক জ্ঞান অর্জনের পথকে সুগম করছে৷ বাস্তবে পরিসংখ্যান ব্যবহার করতে গিয়ে বাস্তবিক সমস্যাগুলোও শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে এবং এ সব বাস্তব সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি “পরিবীক্ষণ ও মুল্যায়ন”-এর উপর শিক্ষার্থীদের প্রয়োগিক জ্ঞান পরিসংখ্যান বিভাগে শিক্ষাধীন অবস্থায় অর্জন করা উচিত বলে আমি মনে করি৷ এছারাও ফোকাস গ্রুপ ডিসকাসন, তথ্য সমৃদ্ধ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার সহ অন্যান্য গুনগত বিশ্লেষনের প্রয়োগিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সাহায্য করবে৷ “পরিবীক্ষণ ও মুল্যায়ন” পরিচালনার জন্য নূন্যতম ছয় মাস মেয়াদি প্রকল্পের প্রয়োজন তাই ব্যয় একটি দুঃশ্চিন্তার বিষয়৷ সেক্ষেত্রে এ ধরনের ছোটো খাটো প্রকল্পের ব্যয়ের অর্থ কী করে যোগানো যায় সে বিষয়ে বিভাগ চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে পারে৷ প্রয়োজনবোধে বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারেন৷

বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগিক গবেষণা, “পরিবীক্ষণ ও মুল্যায়ন” এবং গুনগত বিশ্লেষনের মাঠ পর্যায়ের ধারণা কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে মৌলিক গবেষণা কাজের জন্য প্রস্তুত হতে পারে৷ এ সকল গবেষণা কাজের মাধ্যমে পরিসংখ্যান বিভাগ উপাত্ত ভাণ্ডারও গড়ে তুলতে পারে যা পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ গবেষণা সংক্রান্ত এ ধরনের প্রয়োগিক কাজের দক্ষতা পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হবে বলে আশা করা যায়৷

irfan bhai
এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম অফিসার | পপুলেশন কাউন্সিল

প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ২০০০-২০০১

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ