মানুষের ভাবনা ও বাস্তবতা একই সমান্তরাল রেখায় প্রবাহিত হয় না বলেই হয়তো ‘প্যাপাইরাস’ পত্রিকার পূর্ব কথা লেখার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আমাকে লিখতে বসতে হলো৷ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস থেকে পৃথিবী পাল্টে ফেলার যুদ্ধে নেমে যে সকল উদ্যোগ নেয়া হয় তা অনেক সময়ই পরবর্তী প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে অব্যাহত গতিতে চলে না৷ কিন্তু যারা উদ্যোগটা শুরু করেন তাদের আবেগ, ভালোবাসা সারা জীবনের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে৷ আর আমাদের দেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী এমন আবেগঘন বিষয় নিয়ে লিখতে যাওয়াটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই কারণে যে, এতে কাকে রেখে কার অবদানকে গুরুত্ব প্রদান করা হলো কিংবা গুরুত্ব প্রদান করা হলো না; কার কৃতিত্ত্বকে বড় করে দেখানো হলো, কারটা দেখানো হলো না অথবা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কার ভূমিকাকে তুলে ধরা হলো, কারটা তুলে ধরা হলো না- এ বিষয়গুলো খুব খুঁটিয়ে দেখা হয়৷ এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিকে তার মনঃপূত করে উপস্থাপন করতে না পারলে সর্বনাশ! ইতিহাসটাই মিথ্যা হয়ে যায় তখন৷ কিন্তু কিছু বেকুব প্রকৃতির মানুষ আছে যাদের সহজে শিক্ষা হয় না এবং বারে বারেই ‘খাল কেটে কুমির আনা’র মতো কাজ করে থাকে৷ এ স্বভাবদোষেই আমি পত্রিকাটির শুরুর কথা লেখার ইচ্ছা আর দমন করতে পারলাম না৷
প্রায় এক দশক-এরও বেশি সময় পর পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশিত হচ্ছে যা পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দদায়ক একটি সংবাদ৷ প্রকাশনার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিরতির ফলে সমকালীন শিক্ষার্থীদের ভাবনায় পত্রিকাটির অস্তিত্ব যে একদমই নেই তা সহজেই অনুমেয়৷ আর এটাই স্বাভাবিক৷ কেননা পত্রিকাটির শেষ সংখ্যা (সংখ্যা ৭: জানুয়ারি-জুন, ২০০৪) যখন প্রকাশিত হয় তখন পরিসংখ্যান বিষয়ে অধ্যয়নরত সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষার্থীটিও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে হয়তো নতুন পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেছে৷ অন্যদিকে, এখন যে শিক্ষার্থীটি বিভাগে সর্বোচ্চ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সে বিভাগে ভর্তি হওয়ার অনেক আগে থেকেই পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে৷ এ কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের পত্রিকাটি সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে লেখাটিতে৷ এক্ষেত্রে পত্রিকাটি প্রকাশনার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বাধা-বিঘ্নগুলোকে পারতপক্ষে এড়িয়ে পত্রিকাটির জন্মকথা উপস্থাপনের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে৷ লেখাটি পড়ার ক্ষেত্রে এ কথাটি মনে রাখলে সুবিধা হবে যে, ‘প্যাপাইরাস’ পত্রিকাটি পরিসংখ্যান বিভাগ-এর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের; এটি কোন ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠী বিশেষের নয় এবং কোন বিশেষ ধারণাপুষ্ট বা নীতি-আদর্শের বশবর্তী হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকাশনা নয়৷ আর একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, পত্রিকাটির শুরুতে এর নাম ছিল ‘প্যাপিরাস’, পরবর্তীতে এর নাম সঠিক উচ্চারণে ‘প্যাপাইরাস’ হিসেবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷ এ কারণে উক্ত সিদ্ধান্তের পূর্ববর্তী ঘটনা বিবৃত করার ক্ষেত্রে আমরা ভুল উচ্চারণে পূর্বের নামই ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র পত্রিকাটির জন্ম ও শৈশবের আবেগকে ধরে রাখতে৷ আশা করি পাঠকবৃন্দ বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করবেন৷
প্যাপিরাস পত্রিকাটির সর্বশেষ প্রকাশিত সংখ্যা (সংখ্যা-৭)-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, “একটা সময় ছিল যখন প্যাপিরাস ছিল রুগ্ন শিশুর মতো স্পর্শকাতর৷ সে স্পর্শকাতরতা প্যাপিরাস কাটিয়ে উঠেছে৷ এখন প্যাপিরাসের এদিক ওদিক ছোটাছুটি করার সময়৷” রুগ্নতা কাটিয়ে উঠলেও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবার শক্তি সে পত্রিকাটি অর্জন করতে পারে নি তা সে সময়ে বোঝা যায়নি৷ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজের জীবনকালের সাথে সবকিছুকে তুলনা করা৷ সে প্রেক্ষিতে আমরা যদি সময়কে বিবেচনায় নিয়ে আসি তবে পত্রিকাটি অনেকটা শৈশব কাটিয়ে কৈশোরের ধাপে পদার্পন করতে যাচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য যে এর এখন বিশেষ যত্নের প্রয়োজন৷ সে যত্ন নিয়ে আলোচনায় না গিয়ে আমরা পত্রিকাটির কৈশোর পর্যন্ত বড় হওয়া জীবনটার কথা বলি একটু৷
আঁতুড়ঘরের প্যাপিরাস এর পাশে থাকার সৌভাগ্য আমার হয়নি৷ তবে এর জন্মলগ্নটা সম্পর্কে একটা ধারণা প্রদান করতে পারি৷ পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদ পাতায় উল্লেখ রয়েছে “১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা (আগস্ট-অক্টোবর)”৷ উল্লিখিত সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখেছিলেন আমাদের অগ্রজ নাজমুল হাসান শিবলী ভাই (বর্তমানে মিডল্যন্ড ব্যাংকে কর্মরত)৷ শিবলী ভাই-এর লেখা সম্পাদকীয়তে উল্লেখ রয়েছে যে, পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা আগস্ট ‘৯৯ এর তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে এটি ঐ সময়ে আলোর মুখ দেখেনি৷ এই তথ্যাবলী থেকে ধারনা করা যায় যে, পত্রিকাটির জন্ম ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কোন এক সময়ে৷ এক্ষেত্রে যে কথাটি না বললেই নয় তা হচ্ছে এ ধরনের একটি পত্রিকা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রকাশের ধারণাটি প্রথম যার মাথায় আসে তিনি হচ্ছেন আমাদের অগ্রজ দেলোয়ার জাহান চৌধুরী (আপেল) ভাই (বর্তমানে সিলেটে ব্র্যাক ব্যাংকে কর্মরত)৷ আপেল ভাই এফএইচ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন৷ সে সময়ে আপেল ভাই-এর এই ধারণা থেকেই অন্যান্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দের প্রচেষ্টায় পত্রিকাটি জন্ম নেয় ‘প্যাপিরাস’ নামে৷
পত্রিকাটির নামকরনের বিষয়ে বলি৷ কাগজ-এর পূর্ব ইতিহাস যারা জানেন তারা সবাই ‘প্যাপিরাস’ নামটির সাথে সুপরিচিত৷ কাগজ আবিষ্কারের পূর্বে মানবজাতির মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল ‘প্যাপিরাস’ নামক গাছ থেকে তৈরি লেখার উপকরণ৷ প্রাচীন মিশরে লেখার কাজে কাগজের অবর্তমানে এটির প্রথম ব্যবহার সম্পর্কে ইতিহাস জানা যায়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত “ছাত্র-ছাত্রীদের যাবতীয় সুখ দুঃখের পাঁচালী” জানাতেই পত্রিকাটির নাম রাখা হয় ‘প্যাপিরাস’৷ এই নামকরণে যার নাম সর্বাগ্রে স্মরণযোগ্য তিনি হচ্ছেন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম. এ. জলিল, যিনি বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ স্যারের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় ‘প্যাপিরাস’ নামেই পত্রিকাটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চা ও মত প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে সবার মনে স্থান করে নেয়৷
পত্রিকাটির প্রথম প্রকাশিত সংখ্যার সাথে জড়িত অগ্রজবৃন্দের মধ্যে নাজমুল হাসান শিবলী ভাই প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ সম্পাদকমণ্ডলীর অপর সদস্যগণ ছিলেন দেলোয়ার জাহান চৌধুরী (আপেল) ভাই এবং সৈয়দ ইমরান কবির (মিনার) ভাই (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে কর্মরত)৷ এছাড়াও ছিলেন আহমেদ হোসেইন (রতন) ভাই (বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত); জাহাঙ্গীর কবির (নিশান) ভাই (বর্তমানে সমাজসেবা অধিদফতরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত)৷ এক্ষেত্রে প্রথম প্রকাশনার একটি বিষয় সম্পর্কে না বললেই নয়৷ নীতিগতভাবে যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে ‘প্যাপিরাস’ পত্রিকাটি প্রকাশ করা হবে তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসলো পত্রিকা প্রকাশের প্রাথমিক ব্যয়ের যোগান আসবে কোথা থেকে৷ সে সময়ে পত্রিকাটির সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা নিজেদের স্বল্প সামর্থে যতটা পারেন একটা তহবিল গঠন করলেন৷ সহজেই অনুমেয় যে ঐ তহবিল পত্রিকা প্রকাশের ব্যয় বহনের জন্য যথেষ্ট ছিল না৷ সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসেন সৈয়দ ইমরান কবির (মিনার) ভাই-এর বাবা সৈয়দ মোজাহিদ আলী সাহেব৷ ওয়ারির ফোল্ডার স্ট্রীটে ‘নাজ প্রিন্টার্স’ নামে সৈয়দ মোজাহিদ আলী সাহেবের একটি প্রেস ছিলো৷ আপেল ভাইদের বন্ধুর বাবা হিসেবে পত্রিকা প্রকাশের জন্য যা যা প্রয়োজন ছিলো তার জন্য উনার প্রেস ব্যবহার করতে উনি অনুমতি দিয়েছিলেন, তার পরিবর্তে ব্যয় হিসেবে যখন যা পারা গিয়েছে তা পরিশোধ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি৷ ফলে পত্রিকা প্রকাশের সবচেয়ে বড় দুঃশ্চিন্তাগুলোর একটি অর্থাৎ ব্যয়ের ব্যাপারটি খুব সহজেই মিটে যায়৷
পত্রিকাটি সেসময় ত্রৈমাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছিলো৷ প্রকাশনা অনিয়মিত হওয়ায় পত্রিকাটির পঞ্চম সংখ্যা থেকে এটি ষান্মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীতে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সংখ্যাটি ষান্মাসিক সংখ্যা হিসেবেই প্রকাশিত হয়৷ পত্রিকাটির অনিয়মিত প্রকাশনার পেছনে দুইটি প্রধাণ কারণ ছিলো৷ পত্রিকাটি নিয়ে কাজ করতেন মূলতঃ বিভিন্ন বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা৷ ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা হলেও লেখা আহ্বান, লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা ও প্রকাশনা প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে শ্রেণি পাঠ ও পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে সময় দেয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হয়ে যেত৷ দ্বিতীয় প্রধান কারণটি ছিলো আর্থিক অসঙ্গতি৷ পত্রিকাটির ষষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশনার ব্যয় শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় সম্পন্ন করা হয়েছিলো৷ তবে পত্রিকা বিক্রির মাধ্যমে কিছু আয় হতো কিন্তু সেটা মোট ব্যয়ের তুলনায় খুবই নগন্য৷
প্যাপিরাস পত্রিকাটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংখ্যা দুটোর বিষয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা নেই৷ এ দুটো সংখ্যার সাথে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম না৷ পত্রিকাটির সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ২০০০ সালে এর তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশের প্রাক্কালে৷ এ সময় পত্রিকাটির সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন নিশান ভাই৷ ঘটনাচক্রে বিভাগ-এর অগ্রজদের মধ্যে নিশান ভাই এর সাথে আমার আগেই পরিচয় হয়েছিলো৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই আমি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট-এ ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হই৷ ভাষা শিক্ষার কোর্সে নিশান ভাই আর আমি একই ব্যাচে ক্লাশ করতাম৷ পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাশ করার সময় একদিন আপেল ভাই ও উনার সাথে আরো এক ভাই (আমি এই মুহূর্তে উনার নাম মনে করতে পারছি না) আমাকে ধরে বসলেন কথা বলার জন্য৷ আপেল ভাই নিজেদের পরিচয় দিয়ে জানালেন যে, উনারা আতাহার স্যারের (অধ্যাপক এম. আতাহারুল ইসলাম) মাধ্যমে আমার একটা লেখার বিষয়ে জানতে পেরেছেন৷ উনারা সেই লেখাটা পরিসংখ্যান বিভাগের পত্রিকায় প্রকাশ করতে আগ্রহী। সেই প্রথম আমার পরিচয় ‘প্যাপিরাস’ এর সাথে।
পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যা অর্থাৎ চতুর্থ সংখ্যা থেকে আমার বন্ধু ও সহপাঠী আজাদ (পুরো নাম: কাজী আজাদ-উজ্-জামান; বর্তমানে ‘জেড’ নামক একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় খুলনায় অবস্থান করছেন) এবং আমি দু’জনে ‘প্যাপিরাস’ এর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হই। এ সংখ্যাটিতে নিশান ভাই সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন; আর আমরা দু’জন সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি।
প্যাপিরাস এর ৫ম সংখ্যা থেকে আমাদের ব্যাচ অর্থাৎ ২০০৩ এর স্নাতক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যাচ ‘প্যাপিরাস’ এর পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমরা যখন পত্রিকাটির দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন আপেল ভাই আমাদেরকে একটা কথা বলেছিলেন যেটা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। আপেল ভাই বলেছিলেন, “রোকন, পত্রিকাটির মান উন্নয়ন করতে না পারলেও অসুবিধা নেই, কিন্তু পত্রিকাটি যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রেখো।“ আজাদ ও আমি এটা বন্ধ না হওয়ার জন্য সর্বাঙ্গীন চেষ্টা করেছিলাম। ফলে প্যাপিরাস এর ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যা আমাদের হাত দিয়েই প্রকাশিত হয়। এ সংখ্যাগুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের সহপাঠী বন্ধু মোঃ আব্দুর রহমান খান জেনাস (বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত), জিনাত আমান বন্যা (বর্তমানে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে কর্মরত), সৈয়দা শারমিন জাহান পল্লবী (বর্তমানে এসি নেইলসন এ কর্মরত), মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু (বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক-এ কর্মরত), মোঃ আসাদুর রহমান (বর্তমানে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত) সর্বতোভাবে আমাদের সহযোগিতা করেন। এছাড়া আমাদের সাথে ছিলেন আমাদের অগ্রজ সাউভিয়া ইসলাম উর্মি আপা, আপেল ভাই ও নিশান ভাই।
প্যাপিরাস এর ৫ম সংখ্যা থেকে পত্রিকাটি একটি ষান্মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ৬ষ্ঠ সংখ্যা পর্যন্ত পত্রিকাটির ব্যয়ভার শিক্ষার্থীরা নিজেরা বহন করে। এক্ষেত্রে পত্রিকা বিক্রি থেকে যা কিছু আয় হতো তা ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য করা হতো। পত্রিকার প্রকাশনা, ব্যয় ও বিক্রি এ সকল বিষয়ে আরো একজন ব্যক্তির অকুণ্ঠ সমর্থন ও সার্বিক সহযোগিতা ছিলো। তিনি হচ্ছেন অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান। লুৎফর স্যার সেদিন গুলোতে পত্রিকাটির জন্য যেভাবে সব দিক থেকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন তা স্মরণযোগ্য। স্যারের এ সহযোগিতা ছাড়া পত্রিকাটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
লুৎফর স্যারের প্রচেষ্টা এবং আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় পত্রিকাটি একসময় বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটা ২০০৪ সালের কথা। মতিউর রহমান স্যার পত্রিকাটির প্রকাশনা ব্যয় বহনের জন্য বিভাগ থেকে অর্থায়ন করার বিষয়ে সম্মত হন। লুৎফর স্যারের উপস্থিতিতে মতিউর রহমান স্যার আমাদের ডেকে নিয়ে বলেন যে, পত্রিকাটি প্রকাশের ব্যয় ভার বিভাগ থেকে বহন করার ব্যবস্থা উনি করে দিবেন কিন্তু তার বিপরীতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের পত্রিকাটি বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে। পত্রিকা ব্যয়ের অর্থ নিয়ে যেন কোনো গোলমাল না হয় সে বিষয়েও চেয়ারম্যান স্যার আমাদের সতর্ক করে দেন। অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমরা স্যারের প্রস্তাবে রাজি হই এবং প্যাপিরাসের ৭ম সংখ্যা (জানুয়ারি-জুন, ২০০৪) বিভাগের খরচে প্রকাশিত হয়। প্যাপিরাস পত্রিকাটির ১ম সংখ্যা থেকে ৭ম সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংখ্যায় তৎকালীন বর্তমান শিক্ষার্থী ছাড়াও সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলীর অনেকেই লেখা দিয়ে পত্রিকাটিকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ড. মতিউর রহমান স্যার, এম. এ. জলিল স্যার ও মুরশীদা খানম ম্যাডামের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তখন শিক্ষার্থী হিসেবে লিখেছিলেন এবং পরবর্তীতে বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছেন এমন কয়েকজন হচ্ছেন আহমেদ হোসাইন, মোঃ আবু সাদেক মোল্লা, নাবিলা পারভীন, খন্দকার মোঃ মোস্তফা কামাল, শফিউল্লাহ স্টালিন।
বিভাগ পত্রিকার ব্যয় বহন করায় সে সময়ে শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যয় বহনের মতো দায় থেকে মুক্তি পাওয়াটা একটা বড় পরিত্রাণ ছিলো আমাদের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, ৭ম সংখ্যার পর পত্রিকাটির আর কোনো সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পত্রিকার ‘ব্যয়’ বিষয়ক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও কেন আর কোনো সংখ্যা প্রকাশিত হলো না – এটা অনেকের মনেই প্রশ্ন থেকে যাবে। আমরা যারা পরিসংখ্যান বিভাগ-এর সাথে সম্পৃক্ত তারা সকলেই কম-বেশি এই ‘কেন’-র উত্তর জানি। তাই এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনায় গেলাম না। সে আলোচনায় না গিয়ে বরঞ্চ আমরা দেখি অজ্ঞাতবাসের শৈশবকাল পেরিয়ে এই বয়ঃসন্ধিকালে পত্রিকাটি আবার কী করে সবার সামনে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।
সময় ২০১১ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে পরিসংখ্যান বিভাগ-এর প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন আমাদের ৩/৪ বছরের অনুজ রূপক, সারোয়ারদের ব্যাচ। আমি এ অনুষ্ঠানে কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠানে আপেল ভাই-ও এসেছিলেন। সে সময় প্যাপিরাস পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া যায় কি না সে বিষয়ে আমাদের দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয়। আপেল ভাই-এর সাথে আলোচনার সূত্র ধরে সেদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভাগের তৎকালীন শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা একটা প্রস্তাব রেখেছিলাম। আমরা বলেছিলাম যে, প্যাপিরাস পত্রিকাটি প্রকাশনার উদ্যোগ যদি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নেন, তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো। এক্ষেত্রে সহযোগিতার ধরণ হবে আর্থিক ও কারিগরি। প্রয়োজনে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণও বের করা যেতে পারে বলে আমরা মত ব্যক্ত করি। আমাদের এ প্রস্তাবে তৎকালীন শিক্ষার্থী মোঃ আতিকুল হক চৌধুরী (শ্যামল) – বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত – পত্রিকাটি পুনঃ প্রকাশের কিছু উদ্যোগ গ্রহণের প্রচেষ্টা নেন, কিন্তু তা সফল হয়নি।
২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারি কাজী মোতাহার হোসেন ভবন প্রাঙ্গণে পরিসংখ্যান বিভাগ-এর অ্যালামনাই এসোসিয়েশন (ডুসডা) এর ২য় পূণর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। আমাদের ব্যাচের আমরা প্রায় ৪০ জনের মতো সহপাঠী বন্ধু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। সে সময় বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অধ্যাপক খালেদা বানু ম্যাডাম। অনুষ্ঠান শেষে আমাদের ব্যাচের উপস্থিত সবাই আমরা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে যাই। এ সময়ই আলাপচারিতায় প্যাপিরাস পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা ম্যাডামকে অনুরোধ করি। ম্যাডাম আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে আবেদন করতে পরামর্শ দেন এবং জানান যে, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবেন।
পরবর্তীতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা পত্রিকা প্রকাশের বিষয়টি আলোচনা করলে অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের আগ্রহে পত্রিকাটি প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের ব্যাচ এর পক্ষ থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর একটি আবেদন করা হয়। একই সময়ে বর্তমান শিক্ষার্থীরাও পত্রিকাটি পুনঃ প্রকাশের আগ্রহ ব্যক্ত করে একটি আবেদন করেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে বর্তমান শিক্ষার্থী তোফায়েল আজম আমাদেরকে সহযোগিতা করেন। আমাদের ব্যাচ থেকে যে আবেদনটা করা হয় সেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে, পত্রিকাটির ব্যয় বহনের দায়িত্ব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। বিভাগ শুধু বর্তমান শিক্ষার্থীদের পত্রিকাটি পরিচালনা করার অনুমোদন প্রদান করবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করে না এমন প্রকাশনা কর্মকান্ডে নৈতিক সমর্থন প্রদান করবে। পত্রিকাটি পরিসংখ্যান বিভাগ-এর পত্রিকা হিসেবে পরিচিত হবে বলেই আমরা আশা করেছিলাম।
আমাদের প্রত্যাশা আলোর মুখ দেখে যখন বিভাগের একাডেমিক কমিটির ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখের সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ‘প্যাপিরাস’ পুনরায় প্রকাশ করা হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষার্থীরাই প্রকাশনার দায়িত্বে থাকবেন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পত্রিকার ব্যয় বহন করবেন। পত্রিকা প্রকাশের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয় বিভাগীয় ছাত্র উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোঃ এরশাদুল হককে। এ সকল নির্দেশনা সংক্রান্ত পত্রটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খালেদা বানু ০১ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে প্রায় ১ বছর পর আমাদের ব্যাচের মতামতের ভিত্তিতে ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভায় প্যাপিরাস পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ খান এর নাম অনুমোদন করা হয়। একই সভায় প্যাপিরাস পত্রিকার জন্য একটি নীতিমালাও অনুমোদন করা হয়। এ সিদ্ধান্ত অবহিত করে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খালেদা বানু স্বাক্ষরিত একটি পত্র অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ খানকে ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে প্রেরণ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পত্রিকাটি প্রকাশের নবদ্বার উন্মোচিত হলো। ইতিমধ্যে পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদ পত্রিকার নামের উচ্চারণ সঠিকভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে এর নাম বাংলায় ‘প্যাপাইরাস’ হিসেবে উল্লেখ করার বিষয়ে একমত হন। ফলে সম্পূর্ণ বাংলা পত্রিকা হিসেবে ‘প্যাপাইরাস’-ই পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বকালের শিক্ষার্থীদের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। পত্রিকাটির পুনঃ প্রকাশের উদ্যোগের বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খালেদা বানু ম্যাডামের সাথে আর যেসব ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন তাদের একজন হচ্ছেন অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান স্যার। এছাড়াও রয়েছেন আমাদের সহপাঠী বন্ধু মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মোঃ মোজাফ্ফর হোসেন (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত), মোঃ মোতাহার হোসেন রঞ্জু (বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত), আরিফ আল মামুন (বর্তমানে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি তে কর্মরত), সৈয়দা শারমিন জাহান (পল্লবী) ও রেশমা জেসমিন ইভা ( বর্তমানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে কর্মরত)। প্যাপাইরাস এর নতুন প্রকাশনায় যাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি উৎসাহব্যঞ্জক তারা হচ্ছেন বর্তমান শিক্ষার্থীগণ। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, এই উজ্জ্বল তারুণ্যই পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রেখে আমাদের ব্যর্থতাকে মুছে ফেলবে।
সদস্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প্যাপাইরাস
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন:১৯৯৯-২০০০
- রোকনুজ্জামানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বুধবার, জুলাই ১, ২০১৫
- রোকনুজ্জামানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
- রোকনুজ্জামানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০১৯
- রোকনুজ্জামানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০১৯
- রোকনুজ্জামানhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%95%e0%a6%a8%e0%a7%81%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8/বৃহস্পতিবার, জুন ১৩, ২০১৯