গত জুলাই মাসে মায়ের বাসা থেকে একটি ফোন আসে৷ ফোনটি পেয়ে জানতে পারি আমার ছোট ভাই বাজার থেকে কেনা আম খাওয়ার পরেই তার বমি ও পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়৷ এক পর্যায়ে বাসার লোকজন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করার পর সে ভালো হয়৷ আসলে যে বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলার জন্য এ ঘটনাটি লিখলাম সে বিষয় হলো খাদ্যে ভেজাল, বিশেষত ফরমালিন ব্যবহার৷
আজকাল আমরা কমবেশি সবাই এই বিষয়টি সম্পর্কে জানি৷ ফরমালিন এক ধরনের কীটনাশক যা পূর্বে শুধুমাত্র হাসপাতালে মৃতদেহ সংরক্ষণ, হাসপাতালের কক্ষ জীবানুনাশকরণ, অপারেশন ও মাঝে মাঝে শৈল চিকিৎসার যন্ত্রপাতি জীবানুনাশকরণের কাজে ব্যবহার করা হতো৷ কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য এই ফরমালিন অনৈতিকভাবে এখন মানুষের খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে রাতে খাবারের টেবিলে আমরা যা যা খাই তার প্রায় সবগুলোতেই ভেজাল৷ কোথায় নেই ভেজাল? মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল, দুধ, মসলা, প্রসাধন সামগ্রী এমনকি শিশুখাদ্যেও ভেজাল রয়েছে৷
এই যে এতো সব ভেজাল, এর কারণ কি? এর প্রধান কারণ হলো মুনাফা, অতি মুনাফা৷ মুলতঃ পাইকারি বিক্রেতাদের এই জন্য দায়ী করা হয়৷ কিন্তু উৎপাদনকারীরাও সমানভাবে দায়ী এই ভেজাল কার্যক্রমে৷ কারণ উৎপাদনকারীরা গাছে থাকা অবস্থাতেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করেন৷ এমন কি যেদিন তারা পাইকারি বাজারে বিক্রি করেন তার ঠিক আগ মুহূর্তে আরেক দফা বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য (ফরমালিন) ব্যবহার করেন৷ উৎপাদনকারী থেকে যখন পাইকারি বাজারে আসে পাইকাররা আরেক দফা ফরমালিন প্রয়োগ করেন যাতে করে উৎপাদিত দ্রব্যাদি পচে নষ্ট হয়ে তাদের ব্যবসার ক্ষতি না হয়৷ তাহলে সহযেই বোঝা যাচ্ছে উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসা অবধিএকাধিক পর্যায়ে খাদ্যের উপর ফরমালিন প্রয়োগ হয়৷
উক্ত ফরমালিন খাদ্যদ্রব্যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এখন মানুষের নানারকম অসুখ এমনকি ক্যান্সার এর-ও কারন হতে পারে এই ফরমালিন৷
এই ফরমালিনমুক্ত খাদ্য আমরা কিভাবে পেতে পারি৷ একটি উপায় আছে, সেটি হচ্ছে জনসচেতনতা তৈরি করা৷ ফরমালিনের ক্ষতিকর প্রভাব ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহনের সাথে সাথেই যদি মানুস বুঝতে পারতো তাহলে এটির বিরুদ্ধে দুর্বার জনসচেতনতা তৈরি হয়ে যেতো৷ আমার ভাইয়ের কথাই বলি, বাজারের কেনা আম খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সে এখন আর বাজারের আম খায় না৷ এমনিতেই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত৷ তাদের ভাষ্য মতে বাজারের সব খাবারেই তো ভেজাল সেজন্য কি খারার না খেয়ে থাকবো৷ আমরা এখন কমবেশি সবাই জানি ফলে ফরমালিন অতিমাত্রায় ব্যবহার হয়৷ যদি আমরা সকলে একযোগে সকল ফল কেনা বন্ধ করতে পারতাম তাহলে ফলের ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন দেওয়া বন্ধ করতেন৷ এছাড়াও খাদ্য ব্যবস্থাপনার সাথে যে সকল সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তি জড়িত তাদেরকেও এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে৷ চিন্তা করতে হবে মানবিক দিক থেকে যে, এই কাজটি একটি গর্হিত কাজ৷ এছাড়াও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত প্রতিবেদন ছাপিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে এগিয়ে আসতে পারে৷ সর্বোপরি সরকারের এই বিষয়টির উপর জোরালোভাবে মজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি৷ আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জেনে শুনে পঙ্গু করে দিতে চাই না৷ যদি সুন্দর আগামি প্রজন্ম দেখতে চাই তাহলে এখনই এই বিষয়টি নিয়ে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত হবে৷
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সেশন: ১৯৯৬-৯৭
- This author does not have any more posts.