fbpx

সম্পাদকীয় জানুয়ারি ২০১৫

৫৩১ খ্রিষ্টপূর্ব। গ্যামেলিয়ন মাসের ‘পুরাতন ও নতুন চাঁদের দিন’ (শেষ দিন)।

ইলিসাস নদীর জলে শেষ বিকেলের আলো খেলা করছে। একটা প্ল্যাটানাস গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছেন দার্শনিক বিয়ন। তাঁর সামনে ঘাসের উপর এক টুকরো প্যাপাইরাস আর একটা কালামোস (শব্দটির সাথে আরবী ‘ক্বলাম’ আর  বাংলা ‘কলম’ শব্দ দুটির মিল লক্ষণীয়)। ডান দিকে দুটি পেয়ালা – একটিতে হেমলক আর অন্যটিতে কালামোসের কালি। একটি দেয় মৃত্যু, অন্যটি দেয় অমরত্ব।

মিশরের এক পুরোহিতের কাছে দীক্ষা নিয়ে বিয়ন বহুদিন পুনর্জন্ম নিয়ে লেখাপড়া আর চিন্তা-ভাবনা করেছেন। গ্রীসের মানুষ পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে না, তাই তাঁর কোন খ্যাতি বা শিষ্য জোটেনি। এজন্যে তাঁর মনে কোন দুঃখ নেই। তাঁর দুঃখ একটাই- আসল প্রশ্নের উত্তর তিনি জানেন না। পুনর্জন্ম কি সত্যিই আছে? আজ এর উত্তর পাবেন তিনি।

একটা ঈগলের কর্কশ ডাকে বিয়নের চিন্তায় ছেদ পড়লো। তিনি আকাশের দিকে চাইলেন। সূর্য ডুবছে। তার মানে, সময় হয়েছে।

কালামোস হাতে নিলেন বিয়ন, প্যাপাইরাসে লিখলেন, ‘Periméno’ (আমি অপেক্ষায় রইলাম)। এরপর, কোন দ্বিধা না করে, হেমলকের পাত্রে চুমুক দিলেন তিনি। ধীরে ধীরে তাঁর শরীর নিস্তেজ হয়ে গেল। কিন্তু, ঠোঁটের কোণে লেগে রইলো প্রশান্তির হাসি।

বিয়ন, যার নামের অর্থ ‘জীবন’, তিনি সত্যের সন্ধানে মৃত্যুকে বেছে নিলেন।

পাঠক, এটা কোন ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, আমার কল্পনা মাত্র। পুনর্জন্ম সত্যিই আছে কিনা, তা জানতে আমি প্রায়ই বিয়ন হয়ে যাই, কিন্তু হেমলক (অথবা এর দেশী সংস্করণ ধুতুরার বিষ) খেতে সাহস হয় না। গণিতবিদেরা বলেন, বিয়োগ হচ্ছে এক ধরণের যোগ, আর ভাগ হচ্ছে এক ধরণের গুণ। তাহলে, মৃত্যু কি জন্মেরই নামান্তর নয়?

পুনর্জন্মে বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে বলুন, ‘প্যাপিরাস’ পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাবার দশ বছর পরে কেমন করে ‘প্যাপাইরাস’ নামে ফের প্রকাশিত হচ্ছে?

অবশ্য, অনেকেই এটাকে পুনর্জন্ম বলবেন না। বলবেন ‘শীতনিদ্রা থেকে উঠে হাই তোলা’। তারপরও বলতে হবে, একটি অসাধ্য সাধন করা হয়েছে। কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙানো কি চাট্টিখানি কথা?

প্রিয় পাঠক, আপনার সামনে এক টুকরো প্যাপাইরাস বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কালামোস হাতে নেয়ার দায়িত্ব আপনার। একটি লেখা আপনাকে দিতে পারে অমরত্ব। Sas periménoume (আমরা অপেক্ষায় রইলাম)।

477 Converted 02 e1555767108650

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

জাফর আহমেদ খান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪