fbpx

উচ্চ শিক্ষায় GRE

বিদেশে বিশেষ করে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মনের কয়েকটা দুশ্চিন্তা দূর করার প্রয়াসেই কীবোর্ডের কাছে আসা!

        সতর্কতা: লেখাটা মূলত পরিসংখ্যান বিভাগের ভাই-বোনদের জন্য লেখা! অনেক লম্বা তাই খুব বেশি সময় হাতে না থাকলে এড়িয়ে যান ।

তালিকা তৈরি করলে পরিচিত বন্ধুবান্ধব, বড়ভাই বা ছোটভাই অথবা একে অপরকে চিনিনা এমন অনেকেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছো। যেহেতু আমরা বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র-ছাত্রী সেহেতু ধরে নেয়া যায় সবাই GRE’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো। এ পর্যায়ে একটা প্রশ্ন বারবার মাথায় ঘুরতে থাকে। আর তা হচ্ছে – GRE তে কত পেলে আমার আমেরিকায় গিয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ হবে?

        এই প্রশ্নটার সমাধান আসলে দেয়া একটু কঠিন। তবে একটা আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরতে পারি। আশা করি এই আলোচনা তোমাদের একটু হলেও সাহায্য করবে। আলোচনার কিছু অংশ অনুবাদ করে লেখার চেষ্টা করেছি। তাই কিছু কিছু ইংরেজি শব্দ এসে গেছে মনের অজান্তেই। পরে আর সেগুলোকে পরিবর্তনের চেষ্টা করিনি। আশা করি  পড়তে তেমন অসুবিধা হবে না।

        আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরছি, মানে গত কিছু দিন হলো পড়া শুরু করেছি এর পরিসংখ্যান বিভাগ আমেরিকার মধ্যে খুব একটা খারাপ অবস্থানে নেই। বিভাগীয়  চেয়ারম্যান অনেকটা পাগলা কিসিমের পরিসংখ্যানবিদ। কথা বলার সময় মুখে কিছু আটকায় না। অনেকটা জাফর স্যার টাইপ। (যদিও জাফর স্যারের মত এত ড্যাশিং না!) প্রফেসরের নাম ড. আর্নল্ড স্টমবার্গ। কিছু দিন আগে ছিলো ডিপার্টমেন্টের পিকনিক । সেখানেই আর্নির সাথে হওয়া আলাপের সারাংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ও ভালো কথা, প্রফেসর সাহেব উনাকে উনার ডাক নাম ধরে ডাকার অনুমতি দিয়েছেন। আর উনার পারিবারিক ডাক নাম হচ্ছে আর্নি!

 কেমন আছো হাল হকিকত টাইপ কথাবার্তা সেরেই আর্নি হেসে বললো, “তুমি কি জানো তুমিই আমাদের বিভাগের প্রথম বাংলাদেশি এবং আমি খুব গর্বিত যে ড.উড তোমার এপ্লিকেশন এক্সেপ্ট করেছে। আমি হেসে জানালাম, “ড. উড হয়তো জানতে বাংলাদেশি পরিসংখ্যানের ছেলেকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে চান বাংলাদেশের ছাত্ররা পরিসংখ্যান বুঝে কেমন!” আর্নি হেসে জানালো, “ড. উড শুধু যোগ্যদেরই বেছে বেছে নিয়ে আসে। আচ্ছা বলো তো বাংলাদেশের ছাত্ররা আমেরিকার উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে এত কম আগ্রহী কেন? তোমাদের আরো এগিয়ে আসা উচিত। ইন্ডিয়ান আর চাইনিজ ছাত্ররা যেভাবে এগিয়ে এসেছে তোমাদেরও সেভাবে এগিয়ে আসা উচিত।

আমি বললাম, “আগে হয়তো উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে আসা ছাত্রের সংখ্যা কয়েকজন ছিলো, এখন সেই সংখ্যাটা বাড়ছে। আশা করি আরো বাড়বে। আমার দেশের অনেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। কেউ হয়তো সাহসের অভাবে আবার কেউ হয়তো দেশের থেকে দূরে যেতে চায় না এই জন্য উচ্চশিক্ষার চেষ্টাটা করে না। কেউ আবার সঠিক তথ্যের অভাবেও পিছিয়ে পড়ে।”

 আর্নি হেসে বলল, “তোমার পরিচিতরা কেন তথ্যের অভাবে থাকবে? তুমি তাদের জানাবে।” আমি সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করলাম, “জানবো তো সত্য, কিন্তু আমি নিজেই জানি না আসলে কোন কারণে আমাকে ড. উড সিলেক্ট করেছেন। সিলেকশনের প্রধান বিবেচ্য বিষয় কী ছিলো? মানে কিসের উপর নির্ভর করে তোমরা ছাত্রদের বাছাই করো?”

আর্নি আগের টোনেই স্বাভাবিক ভাবে আমাকে ব্যাখ্যা করলো, “আসলে পরিসংখ্যান উচ্চশিক্ষার জন্য প্রধানত যা লাগে সেটা হচ্ছে গণিত। ম্যাথমেটিক্সে যারা ভালো তাদের পরিসংখ্যানে সফল হওয়াটা সহজ। আর গণিতের সাথে আরেকটা বিষয় লাগে সেটা হচ্ছে চিন্তা করবার ক্ষমতা। আমরা প্রধানত GRE এর ম্যাথ স্কোরের উপর নির্ভর করেই তোমাদের ভর্তি করিয়েছি। GRE ম্যাথ স্কোরের উপর নির্ভর করার কারণ হচ্ছে আমরা জানি না তোমাদের আগের ইনস্টিউশনে তোমাদের কেমন ম্যাথ পড়ানো হয়েছে। কারণ শুধু জিপিএ দেখেই একটা ছাত্রকে যাচাই করা সম্ভব না। হতে পারে তোমার ম্যাথ কোর্সের জিপিএ খারাপ কারণ তোমার যে ইন্সট্রাক্টর ছিলো সে খুব কড়া করে খাতা দেখেছে। আবার এটাও হতে পারে তোমার ম্যাথের জিপিএ ভালো কারণ তোমার আগের ম্যাথ ইন্সট্রাক্টর খাতা না দেখেই নাম্বার ইচ্ছা মত বসিয়েছে। নানান কারণে আমরা ছাত্রদের ম্যাথ ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে তাদের ট্রান্সক্রিপ্টের উপর ভরসা করতে পারি না। কিন্তু আমাদের যেহেতু ম্যাথে স্ট্রং ছাত্র লাগবে তাই আমরা জোর দেই GRE’র ম্যাথ স্কোরের উপর। আমাদের এখানে GRE তে ম্যাথ স্কোর ৯৫% বা তার উপরে থাকলে আমরা ছাত্রদের পটেনশিয়াল ছাত্র বিবেচনা করে তাদের এডমিশনের কথা ভাবি। কারণ যে ছেলেটার GRE ম্যাথ স্কোর ১৬৭-১৭০ তাকে আমরা বেসিক ম্যাথ ও চিন্তাশক্তি দুইটাতেই ভালো বলে ধরে নিতে পারি। আর এই দুই দিক দিয়ে ভালো ছাত্রদেরই SOP (Statement of purpose) আমরা রিভিও করে ভর্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি ।”

         আমি এমন সহজ সরল ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা শুনে বললাম, “আমাকে এভাবে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে বলার জন্য ধন্যবাদ।”

         আর্নি আরো আন্তরিক ভাবে বললো, “টোফায়াল (গত কয় দিনে আমার নামকে যেভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ডাকা হয়েছে তার মাঝে এটাই মোটামুটি তোফায়েল শব্দটার কাছাকাছি গেছে। বাকি গুলোর অবস্থা অতি বিরক্তিকর রকমের জঘন্য!), তোমাকে এভাবে বলার কারণ হচ্ছে তোমার মত আরো মেধাবী বাংলাদেশি পরিসংখ্যানবিদ আমাদের এখানে আসুক এটা আমি চাই এবং এই তথ্যগুলো তোমার বন্ধুদের জানালে তারা বুঝতে পারবে কোন বিষয়টাতে জোর দিয়ে প্রিপারেশন নিলে এডমিশন সহজ হয়ে যায়।

 আমি ভবিষ্যতের চাকরির বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে জানি জানায়, “বিশ্বে আজকের দিনে পরিসংখ্যানবিদের যে চাহিদা তার তুলনায় অর্ধেক পরিসংখ্যানবিদও নাই। আমাদের এখান থেকে পিএইচডি করে ছাত্ররা বছরে ১ লাখ ডলার বা তার বেশি আর মাস্টার্স করে বছরে ৭৫-৮০ হাজার ডলার এ চাকরিতে ঢুকেছে। আমার জানামতে কেউ চাকরিহীন নাই। আমাদের আরো অনেক বেশি পরিসংখ্যানবিদ দরকার। আমাদের দরকার আরো ম্যাথে শক্তিশালী এবং একইসাথে চিন্তা করতে পারে এমন মানুষ।”

    শিলিতো পার্কের সন্ধ্যার আলোতে প্রফেসরের সাথে পরিসংখ্যান ও বাস্তব জীবন নিয়ে বিশাল আলোচনা চালিয়ে যেতে খারাপ লাগে নাই একবিন্দুও। জাফর আহমেদ খানের পর ইনিই দ্বিতীয় পরিসংখ্যানবিদ যার সাথে পড়ালেখা নিয়ে কথা বলেও খারাপ লাগে নি। ক্লাসে লোকটা সারাক্ষন চিন্তা করো চিন্তা করো বলতে থাকে, আর প্রথম দিনেই বার বার বলে গেছেন, “আমার ক্লাসটা তোমাদের জীবনের অন্যসকল ক্লাস থেকে আলাদা। আমি তোমাদের চিন্তা করতে শেখানোর চেষ্টা করবো।” কথাগুলো শুনে কেন জানি মনে হচ্ছিল পৃথিবীর অন্য প্রান্তে আরেকজন জাফর আহমেদ খান-এর সাথে আমার দেখা হলো। আরেকজন লিজেন্ড!

     বিঃদ্রঃ যারা পুরো লেখাটা না পড়েই একেবারে নিচে চলে এসেছো তাদের জন্য সারমর্ম, GRE এর প্রিপারেশন নেয়ার সময় অবশ্যই ম্যাথের উপর জোর দিয়ে প্রস্তুতি নিবে। কারণ ম্যাথ রিলেটেড সাবজেক্ট পড়তে চাইলে তোমাকে যাচাই করা হবে তোমার GRE ম্যাথ স্কোর দিয়েই। তাই কোন স্কোর যেন না ছুটে যায়। সবার জন্য শুভ কামনা।

তোফায়েল আজম

সেশন: ২০০৭-০৮