fbpx

দৈবচয়িত

প্রথম অধ্যায়

প্রথম সকাল

কমলাপুর রেল স্টেশনে এসে ক্যাঁচর ক্যাঁচর ব্রেক কষে থামার আয়োজন করছে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। এমন কোন স্টেশন নেই যেখানে এটা থামেনি। এ লোকাল ট্রেনটির নাম কেন এক্সপ্রেস রাখা হয়েছে, এ নিয়ে ট্রেনের ভেতর সারারাত কমপক্ষে একশ বার ভেবেছে অরণ্য। ভেবে কুল পায়নি কোন।

ইংরেজি শব্দের এরকম অপব্যবহার হতে দেয়া যায় না। এ নিয়ে ভোরের কাগজে একটা চিঠি পাঠাতে হবে।  

স্টেশনে তখন শীতের সকাল। জানলা দিয়ে প্রীতিকর-ভীতিকর অনেক কিছুই চোখে পড়ছে অরণ্যর। সুর্যটা সবে উঁকি দিতে শুরু করেছে পূব আকাশে। মিষ্টি রোদ-ছায়ার খেলা লেগেছে স্টেশনের শেষপ্রান্তের করই গাছের ডালে। আহ্লাদি চড়ুই পাখিগুলো অবিরাম কিচির-মিচির করে যাচ্ছে সে আলো-আঁধারিতে। পাখিদের জগতে রোমাঞ্চের অভাব নেই বলেই মনে হচ্ছে। ভাবতে ভালই লাগল ওর। জানালা দিয়ে মাথা বের করে মিষ্টি বাতাসের ঘ্রাণ নিচ্ছিলো ও। হঠাৎ দূরে সামনের দিকে তাকিয়ে ও ভয় পেয়ে গেল। একটা অল্পবয়সী ছেলেকে দেখতে পেল উঁচু প্লাটফর্ম থেকে রেল-লাইনের দিকে তাক করে দুই নম্বর প্রাকৃতিক ক্রিয়া সম্পাদনে। মনে হচ্ছে দু সেকন্ডের মধ্যেই ট্রেনের ইঞ্জিন ওর পশ্চাৎদেশে আঘাত করতে যাচ্ছে। অরণ্যর দুচোখকে ছানাবড়া করে ট্রেনের ইঞ্জিনকে ফাঁকি দিয়ে ভোঁ দৌড়ে নিমেষেই হাওয়া হয়ে গেল ছেলেটি। ঘরছাড়াদের অনেক রকম ট্রেনিং থাকতে হয়।

স্টেশনের যে প্ল্যাটফর্মে নোয়াখালী এক্সপ্রেস থামার প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটার উপরে কোন ছাদ নেই। অন্য পাশে ছাদওয়ালা যেটা তার নিচে অসংখ্য নারী-পুরুষ সারিবেঁধে ঘুমাচ্ছে। ঘরহীন মানুষের ঘর। এখানে সেখানে অর্ধনগ্ন ক্ষুদে শিশুদের কান্না শুনা যাচ্ছে – মায়ের প্রবোধে কাজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এর মধ্যেই একাধিক লোক পশ্চিমমুখী হয়ে ফজর নামাজ আদায় করছে। এক নারী ঢুলুঢুলু চোখে তার শিশুকে বুকে চেপে দোলাচ্ছে তার কান্না থামাতে। আর একজন নিজেকে আড়াল করে তার কাপড় বদলানোর অসফল চেষ্টা করছে। অবস্থাটা কাকের মত – চোখ বন্ধ করে ভাবা কেউ কিছু দেখছে না। উপরওয়ালা সবাইকে সব সুযোগ দেন না।

চোখ ফিরিয়ে অন্য জানালা দিয়ে অরণ্য খোলা প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকায়। কলের গোড়ায় এক মা নিজে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজছে, আবার সে কয়লার আঙ্গুল দিয়েই ছোট ছেলেটাকে দাঁত মেজে দিচ্ছে। মমতাভরা  কোশ ভর্তি পানি নিয়ে কুলিও করিয়ে দিচ্ছে। শেষ হলে সযত্নে আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে দিতেই ছেলেটার দৌড়। একেই বলে ভালবাসা। নিখাদ। এ ভালবাসা দেখার জন্য সিনেমা হলে যাওয়া লাগেনা।

নোয়াখালী স্টেশন থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ঠিক এগার ঘন্টা সময় নিয়েছে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। অবশ্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে মাত্র একঘন্টা বেশিই সময় নিয়েছে। একঘণ্টা কোন ব্যাপার না। এক ঘণ্টায় তো আর পৃথিবী উলটে যাচ্ছে না! যোগাযোগমন্ত্রী মওদুদ সাহেব নাকি উপরাষ্ট্রপতি হবার লাইনে ফার্ষ্ট প্লেসে।  

ডাফল ব্যাগটিকে সারারাত সযত্নে আগলে রেখেছিল অরণ্য। গতবার বাড়ি থেকে ফেরার সময় বড় ভাইয়া ব্যাগটি ওর জন্য রেখে এসেছিলেন। বাঁ হাতে লুঙ্গিটাকে ধরে ডান হাতে ডাফল ব্যাগটাকে কাঁধে চাপিয়ে সিট থেকে উঠে পড়ল ও। ট্রেন থেমে গেছে। নামতে হবে। কি বুঝে ডাফল ব্যাগটাকে পাশে রেখে লুঙ্গিটাতে দুটো গিট্টু মেরে নিল। ও শুনেছে ঢাকায় কিছু দুষ্ট ছেলেরা নাকি অকারণেই কারো লুঙ্গি টেনে দৌড়ে পালায়। মানুষকে অপদস্থ করার মাঝে কী মজা, কে জানে! সাবধানের মার নেই।

এ লুঙ্গি পরারও একটা ইতিহাস আছে। চল্লিশের দশকে ব্রিটিশবিরোধী স্বদেশী আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ – এমন কোন বিপ্লব ছিলনা যেটাতে অরণ্যর বাবা সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। যার ফলস্বরূপ ব্রিটিশদের প্রতি, পাকিস্তানীদের প্রতি প্রচণ্ড বিরূপ একটা মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। বাবার ধারণা ইংরেজরা প্যান্টস্যুট পরিয়ে আমাদের সাহেব-মেম বানিয়ে বাঙ্গালিত্বের বারোটা বাজাবে। কাজেই অরণ্যর ছোটবেলায় যখন বাচ্চারা অনেকেই ইংলিশ হাফ প্যান্ট পরে স্কুলে আসত, ওকে আসতে হত বাসায় মায়ের হাতে বানান সুতার কাপড়ের প্যান্ট পরে। অবশ্য শহর আর গ্রামের সংযোগস্থলের স্কুল বলে কথা – মোটা কাপড়ের ইংলিশ হাফ প্যান্টের বন্ধুরাই সংখ্যালঘিষ্ঠ  ছিল। হাসির পাত্র হতে হয়নি তাই কখনো। অনেকেই বলত বাবার সামর্থে কুলায় না দেখেই নাকি বাবার সম্মতি ছিলনা এতে। সামর্থ ছিলনা সত্যি, কিন্তু মেজ মামার ভাইয়াকে দেয়া কমপ্লিট স্যুটটি যেদিন কান ধরিয়ে ফেরত পাঠালেন তাকে দিয়ে, সেদিনই অরণ্য বুঝল, আর্থিক কারণটা বড় কারণ ছিল না এর পেছনে। জুনিয়র হাই আর হাই স্কুল কেটেছে সাদা পাজামা আর সাদা শার্ট পরে। সেটাই কমবেশি সবাই পরত।

বিপত্তি বাধল কলেজে গিয়ে। বাড়ি থেকে বিশ কিলোমিটার দুরে চৌমুহনী কলেজে ইন্টারে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাবা। চৌমুহনী কলেজ বাবার প্রিয় কলেজ। দাদা-দাদীর মৃত্যুর পর দুটি ছোট ছোট বোনের দায়িত্ব নিতে গিয়ে জেলা স্কুলের এক নম্বর ছাত্র হয়েও এন্ট্রান্স পাস করে আর কলেজমুখী হতে পারেননি। মাইজদী শহরে জেলা জজ কোর্টে কেরানির কাজ নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু কলেজের খায়েশ তার মেটেনি। কাজ শেষে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন চৌমুহনী কলেজে। কিন্তু দৈব-দুর্বিপাকে বেশিদিন সেটা চালাতে পারেননি। বাবার পড়াশুনার কথা চিন্তা করতে গেলে অরণ্যর মাথা বিগড়ে যায়। বিধাতা এমন কেন? যাকে রাজ্যের যত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পাঠিয়েছ, তাকে একটু সুযোগ-সুবিধা দিলে কি হত? পরক্ষণেই মনে মনে বলল, আস্তাগফিরুল্লাহ!

বাবা বললেন – পাজামা আর শার্টই হবে কলেজে যাবার পোশাক। অরণ্যর তখন পাখা গজিয়েছে। সে বললে, হয় প্যান্ট-শার্ট পরব, নয় লুঙ্গিই সই। বাবা বললেন – তথৈবচ। সত্যি সে শব্দটাই বললেন বাবা। বাবা খুব ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন – বাংলা তো বটেই, ইংরেজি বাগধারারও ঘাটতি ছিল না তাঁর কাছে। অরণ্য লুঙ্গি আর শার্ট পরে কাটিয়ে দিল দু বছর চৌমুহনী কলেজে। মাঝে সাঝে পাজামা পাঞ্জাবি পরেছে – যেমন মানুবাবু স্যারের কেমিষ্ট্রি ল্যাবে উনি লুঙ্গি পরে ঢুকতে দিতেন না। বলতেন এটা নিরাপত্তার বিষয়। অরণ্যর মাথায় আসত না – মেয়েরা যদি স্কার্ট বা শাড়ী পরে ল্যাবে আসতে পারে, তবে ছেলেদের লুঙ্গিতে দোষটা কোথায়? প্রশ্নের উত্তর মেলে নি।

কমলাপুর রেল স্টেশনের গেট পেরোতেই বিজয়ের হাসি হাসি মুখের দেখা মিলল। বিজয় অরণ্যের বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তরে পড়ছে। বয়সে মাত্র চার বছরের বড় হলেও বিজয়কে খুব ভয় পেত অরণ্য। কেন সেটা সে জানে না। মনে হয় বাড়িতে থাকা অবস্থায় মাঝে মধ্যে যে সব উত্তম-মধ্যমের শিকার হতে হয়েছিল – ওর ধারণা সম্পূর্ণ অকারণে,  সেটার প্রভাব হতে পারে।

স্লামালেকুম।

কিরে কোন অসুবিধে হয়নি তো পথে?

না।

এত দেরি করছে কেন?

আর বইলেন না – খালি থামায় আর থামায়। তূর্ণা-নিশীথারে সাইড দেয়, এরে সাইড দেয়, ওরে সাইড দেয়।

এই নোয়াখালী এক্সপ্রেস আর কোন দিন ঠিক হবে না। যোগাযোগ মন্ত্রীর দেশে থেকে আমাদের যোগাযোগের যে কী হাল!

বিজয়ের সঙ্গে রিকসায় উঠে বসল অরণ্য। এই প্রথম ওর ঢাকায় আসা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম জমা দেবার সময় ঢাকা আসার জন্য বিজয়ের হাতে পায়ে ধরেছিল অরণ্য। বিজয় ধমক মেরে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। নিজে সব ফর্ম তুলে বাড়িতে নিয়ে অরণ্যর স্বাক্ষর নিয়ে এসে জমা দিয়েছিল। বুয়েট তো রসায়নে নম্বরের স্বল্পতা দেখিয়ে পরীক্ষাই দিতে দিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দয়া করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ডেকেছে। ভর্তি পরীক্ষা তো আর সে দিয়ে দিতে পারবে না, তাই এ দফায় আর না বলতে পারেনি। সে উদ্দেশ্যেই ঢাকায় আসা ওর। প্রথমে ভয় পাচ্ছিল একা আসতে, বিজয়কে বাড়ি এসে ওকে নিয়ে যেতে বলেছিল। বিজয় ধমক দিয়ে বলেছে – টাকা কি গাছে ধরে? সমস্যা নেই – আমি থাকব রেল স্টেশনে।

রিকশা চলতে শুরু করেছে। বিজয় ওকে হড়হড় করে চিনিয়ে যাচ্ছে – এটা হল বিআরটিসি বাস ডিপো, এটা হল বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল, এটা হল কমলাপুর রোড। আমরা চাইলে বাস নিতে পারতাম – হলুদ রঙের ছয় নম্বর বাস – ক্যাম্পাসে যায় না, কিন্তু পুরানা পল্টনে নেমে রিক্সায় যেতে পারতাম। ভাবছি তুই প্রথম আসছস, তোকে দেখাতে দেখাতে নেই। এটা হল নটরডেম কলেজের ক্যাম্পাস। …

এত হড়হড়ানির মধ্যে এ নামটা খট করে অরণ্যর কানে বাজল। এ কলেজের নাম শোনেনি এমন কোন ছাত্র মনে হয় বাংলাদেশে নেই। মেট্রিক পরীক্ষায় মিশন স্কুল থেকে ভাল ফলাফল করার পর জ্যাকব স্যার বলেছিলেন নটরডেমে যেতে। কিন্তু খরচপাতির কথা ভেবে বাবার কাছে তোলাই হয়নি ব্যাপারটা।

-একদিন তোকে নিয়ে যাব। সুন্দর ক্যাম্পাস। গাছ-গাছালিতে ঘেরা। তোর পছন্দ হবে। তুই তো আবার লেখালেখি করিস।

শাপলা চত্বরে পৌঁছাতেই বিজয় বলল – এটা হল বাংলাদেশের রাজধানী। অরণ্য হেসে ভাইয়ের দিকে তাকায়। এই প্রথম ও চোখ তুলে তাকাল অগ্রজের দিকে। তাকিয়েই চোখ নীচু করে বলল – মানে কী?

-মানে বুঝলি না? এটা হল আসলে কমার্শিয়াল এরিয়া। কিন্তু যখনই টিভি বা কোথাও ঢাকার চেহারা দেখাবে, তখন শাপলা চত্বর দিয়ে শুরু করবে। তাই শাপলা চত্বরই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী।

বিজয়ের কথায় ফিক করে হেসে ফেলে অরণ্য। অরণ্যর হঠাৎ মনে হল ও বিজয়কে আর আগের মত ভয় পাচ্ছে না। ভয়টা যে একেবারেই চলে গেছে তা না, তবে আগে যেমন করে বিজয়ের দিকে তাকাতেও ভয় লাগত, তেমনটি হচ্ছে না। বিজয়ের সঙ্গে ওর স্কুল বা কলেজে একসাথে যাওয়া আসা হয়নি। বড় হয়ে একসাথে রিকশায় চড়াটাও এই প্রথম। অরণ্য ভাবল, ওর সাথে আরো বেশি বেশি রিকশায় চড়তে হবে।

-এটা হল ডিআইটি এভিনিউ। এইদিক দিয়ে হেঁটে গেলে একটু পরেই পড়বে দোজখের টিকেট কাউন্টার।

-মানে কী?

-বুঝস নাই? দোজখের কাউন্টার হইলো রাজউক। রাজউকের ভেতরে সব ঘুষের কারবার। ঘুষ খায়, আর ঘুষ দেয়। একেকটা করে টিকেট কেনাবেচা হয় দোজখের।

আবার হেসে ফেলে অরণ্য। বিজয় যে এরকম হাসির কথা বলতে পারে, সেটা অরণ্যর জানা ছিলনা।

-এটা হল বায়তুল মোকাররাম – ছবিতে দেখস নাই? এইটার উলটা দিকেই সিপিবির অফিস। আজাদ প্রডাক্টসও এখানেই।

আজাদ প্রডাক্টসের “ভিউ কার্ড” ছিল হাই-স্কুল আর কলেজ সময়ের বিনোদন। কাজেই নামটা না মনে থাকার কিছু না। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঈদগাহ ময়দান পেরিয়ে হাইকোর্টের মোড়ে পৌঁছে যায় ওরা।

-বামপাশে দেখছস – এইটা দোজখের আরেক টিকেট কাউন্টার।

অরণ্য ভাল করে চোখ তুলে দেখল গেটের উপরে লেখা – শিক্ষা ভবন।  

অরণ্য সত্যি বুঝতে পারলনা শিক্ষা ভবনের সঙ্গে দোযখের সম্পর্ক কী। তাই সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল – কেন এটা তো বেহেশতের টিকিট কাউন্টার হবার কথা!

বিজয় একটু অবাক হল। অরণ্য কখনো হাল্কা হয়ে ওর সাথে কথা বলে না। অরণ্য কেন, ওর অন্য কোন ভাই-বোনেরাও না। সবাই ওকে ভয় পায়। বড় ভাই হিসেবে ও ওদেরকে শাসন করে সত্যি, কিন্তু ওদের এ ভয় পাওয়াটা ওকে কষ্ট দেয়।

-জানিস না। এখানকার ইট-কাঠও ঘুষ খায়। মামা উনার স্কুলের টিচারদের এমপিও করতে পিওন থেকে অফিসার পর্যন্ত কত টাকা যে ঢেলেছেন এ পর্যন্ত –

-তাই বলে শিক্ষা ভবন? অরণ্যর বিশ্বাস হতে চায় না।

-বিশ্বাস হচ্ছে না, না? দেখাব একদিন তোকে। মামা ত আমাকে দিয়েই ফাইল গুলা পাঠায়।

হাইকোর্ট মাজার ডানে ফেলে রিকশা ঢোকে কলেজ রোডে। হাতের ডানেই চোখে পড়ে কার্জন হলের লাল দালানগুলো। বিজয়ের ধারাবিবরণী চলছেই বিরতিহীন – কার্জন হল, চিনছস ত? রাস্তা থেকে ভাল করে দেখা যায় না। পরে আবার বের হলে দেখাব ভাল করে। আর আল্লা আল্লা কইরা যদি চান্স পাইয়া যাস, তাইলে ত বছরের পর বছর দেখবি। কার্জন হলের পরেই আমাদের হল। আমাদের হল আর ওই কার্জন হলের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। একই বাউন্ডারির মধ্যে। সবই লাল বিল্ডিং। এই রিক্সাওয়ালা ভাই, ডান দিকে ঢুকে পড়েন!

ফজলুল হক হলের খোলা গেট দিয়ে ঢুকে পড়ে রিক্সা।  এই তাহলে ফজলুল হক হল? সুন্দর কংক্রিটের পথ – দুপাশে নারকেল আর সাদা ইউক্যালিপটাস গাছের সমারোহ। অরণ্যর মনটা ভরে গেল এক আনন্দে। মনে মনে বলল – আল্লাহ আমারে চান্স পাওয়াইয়া দাও। যেই সাবজেকটই দাও, কোন অসুবিধা নাই।

রিক্সাওয়ালা বিজয়ের ইঙ্গিতে থামে একটা ছোট লাল দোতলা ভবনের সামনে। ভাড়া পরিশোধ করে বিজয় বলে, নে চল। আমরা এইখানে থাকি।

(চলবে)

ফজলুল বাসেত (পুরো নাম: আবদুশ শাকুর ফজলুল ওয়াহেদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ।

বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

পরিসংখ্যান নিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের পত্রিকায় অনিয়মিত কলাম লেখেন।

ফজলুল বাসেত

ফজলুল বাসেত (পুরো নাম: আবদুশ শাকুর ফজলুল ওয়াহেদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক । বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। পরিসংখ্যান নিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের পত্রিকায় অনিয়মিত কলাম লেখেন।