fbpx

অপেক্ষা

এক

ফাগুনের ভর দুপুরে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে নিউ মার্কেটের দিকে রিক্সা লেনে কম করে হলেও দুইশ’ রিক্সা জ্যামে আটকে আছে। প্রতিটি রিক্সাই যেন এক একটা ভিন্ন জীবন। এই ভিন্ন জীবনগুলোর মধ্যে খুব কলরোল শোনা যাচ্ছে একটা রিক্সা থেকে। কলরোল না বলে ক্রমাগত বক্ বকানি বললে বোধ হয় ভালো হয়। এই বক্ বকানিটা যে করছে তার নাম হিমেল। নামে হিমেল হলেও হিমেল মোটেও ঠান্ডা প্রকৃতির ছেলে নয়। তাই বলে তাকে খুব মাথা গরম ছেলেও বলা যাবে না। হিমেলের প্রকৃতি অনেকটা শরতের মেঘের মতো – হালকা হয়ে ভেসে বেড়ানোই যার স্বভাব। মার্কেটিং-এ গ্রাজুয়েট চব্বিশ বছর বয়েসী হালকা-পাতলা শ্যামলা-লম্বা গড়নের হিমেল কথা বলতে ভালোবাসে। আর যা ভালোবাসে তা হচ্ছে স্বপ্ন দেখতে। হিমেলের সব স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ নিতো তাহলে এতোদিনে পৃথিবীকে স্বর্গ বানিয়ে ফেলা যেতো। হিমেলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে বেশি দিন ধৈর্য ধরে রাখতে পারে না। মার্কেটিং-এর ছাত্র হওয়ায় নানা ধরনের নতুন নতুন ইনোভেটিভ আইডিয়াতে হিমেলের মাথা গিজগিজ্ করে সব সময়। সেই আইডিয়া বাস্তবায়নের পথ চিন্তা করতে করতে হিমেলের প্রায়ই মনে হয় তার এই ধারণা দিয়েই এই পৃথিবীতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। শুধু দরকার একে বাস্তবে রূপ দেয়ার কয়েকটা মানুষ। হিমেলের নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে পৃথিবী পাল্টে ফেলার পুরো পরিকল্পনা প্রায় সময়ে প্রথমেই যাকে শুনতে হয় সে রিক্সাতে এই মুহূর্তে হিমেলেরই পাশে বসা। হিমেলের পাশে বসা এই তরুণীর নাম কথা।

কথা কিন্তু হিমেলের প্রায় উল্টো প্রকৃতির একটা মেয়ে। নাম কথা হলেও কথা এমন একজন মেয়ে যার প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেই কিছুটা বিরক্ত লাগে। কথার ধরনটাই এমন যে, বলার চেয়ে শুনতেই যেন তার আনন্দ। কথার আনন্দ যে আসলে কিসে সেটাও এক রহস্য। কথা বেশির ভাগ সময়ই বেশ চুপচাপ থাকে। খুব উচ্চ স্বরে কথা বলতে বা অট্ট হাসিতে ফেটে পড়তে কথাকে কেউ কখনো দেখেছে বলে শোনা যায়নি। হিমেলের চেয়ে এক বছরের বড় কথার গড়ন হিমেলের মতো এতোটা হালকা পাতলা নয়; প্রায় পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার কথার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা বলা যায়। মাথার বেশ ঘন কালো চুল আর থ্যাবড়ানো নাকের সাথে একটু মোটা ঠোঁটটাতে কথাকে খুব সুন্দরী বলা যাবে না। সুন্দরী না হলেও যে জিনিসটা মানুষকে কথার প্রতি আকৃষ্ট করে সেটা হচ্ছে কথার দৃষ্টি। কথার সরু ভ্রু দুটোর নিচে স্বচ্ছ চোখ দু’টোতে দৃষ্টিটা একেবারেই উদাসীন। এই উদাসীন দৃষ্টির কোন সীমা পরিসীমা নেই যেন! কথার স্নিগ্ধ, স্থির, গভীর দৃষ্টিতে চোখ পড়লে যেন অতলে হারিয়ে যেতে হয়। কথার দৃষ্টির সাথে কথার বিরল হাসির বিষয়টাও বলতে হয়। কথার হাসিটা যেন খুব মাপা হাসি। বিভিন্ন সময় কোন আড্ডায় বা আলোচনাতে খুব হাসির কোন বিষয়েও কথা খুব সামান্যই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। অনেক ক্ষেত্রে একটু হেসেই আবার হাসিটা মুছে ফেলে তখনই যেন হাসিটা তার জন্য অপরাধ। ভুল করে হেসে ফেলে অপরাধ করে ফেলেছে এবং অপরাধের কথা মনে পড়তেই হাসিটা আবার মুছে ফেলেছে।

হিমেল আর কথা দু’জন দু’জনের বন্ধু। এই দুই তরুণ তরুণীর পরিচয় হয় বেশ কয়েক বছর আগে যখন তারা দু’জনেই ভার্সিটিতে এক-দুই বছর পার করে ফেলেছে। তাদের বন্ধুত্বের ঘনিষ্ঠতা এমন যে, দু’জনের মধ্যে তুই-তোকারি সম্পর্ক।

– তুই ভালো করে শুনলিই না আমারা কথাটা। ভালো করে শুনলে বুঝতে পারতি যে এখনকার সময়ে এই জিনিসের কত প্রয়োজন।

কথা হিমেলের দিকে ভ্রু কুচকে স্থির তাকিয়ে রইলো। হিমেল রিক্সায় উঠার পর থেকে বক্ বক্ করে মাথাটা প্রায় ধরিয়ে ফেলেছে। পুরো রাস্তাই সে তার নতুন এক আইডিয়া নিয়ে প্যাচাল পাড়তে পাড়তে শুধু যে কথার মাথা ধরানোর উপক্রম করেছে তা-ই না, জ্যামের মধ্যে আশে পাশে লোকজনেরও কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের রিক্সাগুলোতে লোকজন উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে।

লোকজনের কৌতুহল দৃষ্টির দিকে হিমেলের কোন মনোযোগই নেই। কিছুটা হতাশ দৃষ্টিতে নিঃশ্চুপ কথার দিকে তাকিয়ে হিমেলের মনে হচ্ছে উলু বনে মুক্তো ছড়াচ্ছে। তীব্র সম্ভাবনার একটা উদ্যোগের গুরুত্বই বুঝতে পারছে না কথা। ডিস্গাস্টিং!

– তুই মনোযোগ দিয়ে বুঝে দেখ ব্যাপারটা।

হিমেল পূর্ণোদ্যমে আবার শুরু করলো।

– ভ্রাম্যমাণ ম্যাসেজ পার্লার জিনিসটাই এদেশে নতুন। ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির মতো ছোট ও বড় পিক্ আপ বা বাসের ইন্টেরিওর ডিজাইন পরিবর্তন করে খুব সহজেই একটা পার্লার করা যায়। এ রকম একটা পার্লারে বয়স্কদের জন্য ফুট ম্যাসেজ, বডি ম্যাসেজ সুবিধা তো থাকবেই; পাশাপাশি যে কোন বয়সী পুরুষ মহিলাই এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন। পুরো গাড়িটাই একটা চমৎকার ম্যাসেজ পার্লারে পরিবর্তন করে ফেলা হবে ভিতরে ও বাইরে। বাইরের দিকটাতে গাড়ির ছাদে বিভিন্ন গাছ দিয়ে সাজানো হবে যা দুই পাশের কাঁচের দেয়াল বেয়ে লতানো ঝাড়ের মতো নেমে আসবে।

– কাঁচের দেয়াল মানে? কথা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।

– আরে গাধা, বুঝলি না। গাড়ির দু’পাশের দেয়াল থাকবে কাঁচের। ঐ দেয়াল দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে ভেতরে উষ্ণ পরিবেশ তৈরি করবে। আর ভেতরে তো এসি থাকবেই। ভেতর থেকে মনে হবে শীতের সকালে হালকা ওম্ দেয়া রোদের পরশ। ভেতরটাতে হালকা পর্দা টানা থাকবে, চাইলে পর্দা সরিয়ে সরাসরি প্রকৃতির সান্নিধ্যে চলে আসা যাবে। গাড়িতে দু’টা আলাদা বেড থাকবে পর্দা দিয়ে আলাদা করা – একটা ছেলেদের আর একটা মেয়েদের জন্য। এছাড়া চেয়ারের ব্যবস্থাও থাকবে। তুই বুঝতে পারছিস বিষয়টা। একদম অন্যরকম একটা ব্যাপার!

– হুম। বুঝতে পারছি। তো, তোর এই পার্লার কোথায় থাকবে? ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে না গুলিস্তানে?

– তুই কি আমার সাথে মজা করছিস? একটু যেন বিরক্ত হয়েই বললো হিমেল।

– মজা করবো কেন? তুই এমন একটা নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবছিস। এটার প্রচারের জন্য তো লোক সমাগম আছে এমন জায়গায় চালালেই ভালো হয়, না কি?

কথা যে মজা করে বলছে না এটা মনে হলেও সিরিয়াসলি বলছে এ বিষয়টাও হিমেল ঠিক মানতে পারছে না। তবুও হিমেল বললো,

–  তুই আসলে সৌন্দর্যের বিষয়টাই বুঝিস না। আরে এটা কি ফার্মগেটের পাবলিক টয়লেটের সামনে নিয়ে চালালে হবে? না কি গুলিস্তানের মাজারের পাশে চলবে? এটা তো ভ্রাম্যমান রাখাই হয়েছে প্রয়োজন মতো সুন্দর পরিবেশে গিয়ে তুই ম্যাসেজ নিতে পারবি।

– আমি!?

– হ্যাঁ, তুই। অবাক হচ্ছিস কেন?

– আমি যাবো তোর পার্লারে বডি ম্যাসেজ করাতে!?

– যাবি, সমস্যা কী?

– তো ম্যাসেজ কে করবে? তুই?

– এই যে, তোদের আসলে কাণ্ড-জ্ঞান নেই। আমি করবো কেন? ম্যাসেজ পার্লারে লোক থাকবে সে করবে। ছেলেদের জন্য ছেলে আর মেয়েদের জন্য মেয়ে। আফটার অল, এটা তো একটা মুসলিম কান্ট্রি। এখানে তো বেলেল্লাপনা চলবে না। আর তোদের তো সমস্যা। ম্যাসেজ পার্লারের নাম শুনলেই তোরা ভ্রু কুঁচকে ফেলিস। আরে এটা একটা প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা যা হাড় আর মাংসপেশি সচল রাখতে সাহায্য করে।

অনেকটা মূর্খ বাচ্চাকে জ্ঞান দেয়ার মতো করেই বললো হিমেল। মুখে একটা স্বপ্নীল আভা নিয়ে হিমেল আবার বলতে শুরু করলো।

– তুই একটু চিন্তা করে দেখ। রমনা পার্ক কিংবা সংসদ ভবন এলাকায় ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় কাঁচে ঘেরা একটা শুভ্র ফেনিল ঘরে তুই নরম চেয়ারে বসে আছিস। হালকা রোদের উষ্ণ ওম্ নিতে নিতে তুই ফুট ম্যাসেজ করাচ্ছিস আর হাতে একটা বই নিয়ে পড়ছিস। চারদিকে গাছের সারির মধ্যে একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশে পুরো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যে ম্যাসেজ হবে তাতেই তো তুই ঘুমিয়ে পড়বি।

কথার ভ্রু কুঁচকে আছে অনেকক্ষণ ধরে। বিরক্তি মেশানো কণ্ঠে হিমেলকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

– হয়েছে। বক্ বকানি থামা। বেলেল্লাপনা করবি না? তুই খালি গায়ে শুয়ে থাকবি আর একটা মানুষ তোর শরীর নিয়ে দলাই-মলাই করবে। তা-ও আবার কাঁচের ঘর। বাইরে তো তামাশা দেখতে ভীড় পড়ে যাবে।

এবারে হিমেল একটু ক্ষেপে গিয়েই বললো,

– এই তোদের, আজকালকার মেয়েদের সৌন্দর্যবোধটাই নেই। তোরা নানা রঙের নেইলপলিশ, জ্বলজ্বলে লিপস্টিক, আই লাইনার এগুলো মেখে মুখের জিওগ্রাফি পাল্টে ফেলে আর বাংলা বর্ণমালার ছাপমারা কাপড় দিয়ে জামা বানিয়ে একটা জগাখিচুরি করে ঘুরে বেড়াস আর ভাবিস যে সেরা সুন্দরীদের কাতারে উঠে গেছিস। মনের সৌন্দর্যবোধটাই তুলে দিয়েছিস তোরা দুনিয়া থেকে। প্রকৃতির সাথে মনের যে একটা আধ্যাত্মিক সম্পর্ক তা জোরদার করতে যে খোলা মন আর দৃষ্টিভঙ্গির দরকার – এই তোদের – আজকালকার মেয়েদের মধ্যে এই বোধটাই নেই। খালি খালি তোর সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করলাম। এ ধরনের একটা এক্সট্রা অর্ডিনারি আইডিয়া বোঝার মতো কমন সেন্স যে তোর নেই এটা আগে জানলে আমি তোর সাথে আসতামই না । মনে হচ্ছে এখনই রিক্সা থেকে নেমে বাসায় চলে যাই।

– তো যা, তোকে বাঁধা দিচ্ছে কে?

কথার এ কথা শুনে হিমেলের মেজাজ সপ্তমে চড়ে গেলো। সে তখনই রিক্সা থামিয়ে লাফ দিয়ে নেমে হাঁটা দিলো।

হিমেল হাঁটা দিতেই পেছন থেকে কথার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো, “অ্যাই, জান!”

কথার গলার স্বর শুনে হিমেল থেমে পেছনে ঘুরে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?

কথা একটু বিরক্ত হয়েই বললো, “কী হবে?” এর পর রিক্সাওয়ালাকে দেখিয়ে বললো, “উনাকে বলেছি – ভাই, যান”।

এ কথা শুনে হিমেলের পিত্তি জ্বলে গেলো। আর কথা না বাড়িয়ে সোজা হাঁটা দিলো লোকজনের ভিড়ে।

হিমেল কোন দিকে না তাকিয়ে লোকজনের ভীড়ে হাঁটা ধরলো। কিছুক্ষণ পরই মোবাইল ফোনের কম্পন থেকে বুঝতে পারলো কোন এসএমএস এসেছে। হাতে নিয়ে দেখে কথা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, “রিক্সা ভাড়া দিয়ে গেলি না?”

রাগে হিমেলের শরীর কিরমির করতে লাগলো। ভালো মানুষ পেয়ে একেবারে মাথায় উঠেছে আর কি!

এর মধ্যে আবারও বেশ কিছু এসএমএস-এর জানান দিচ্ছিলো পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা। বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনে কলও আসা শুরু করলো। হিমেল ভাবলো – এবার আর পাত্তা দেয়া যাবে না। নিশ্চয়ই এখন কথা ক্রমাগত ফোন দিচ্ছে। পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের কম্পন বুঝেও হিমেল ভাবলো ফোনই ধরবে না আজ। হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির মল চত্ত্বরে এসে এক কাপ চা’র অর্ডার দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখতেই হিমেলের আত্মা খাঁচা ছাড়া হবার অবস্থা।

বিরাট ঝামেলা হয়ে গেছে! এতো কথার ফোন ছিলো না, ছিলো অবন্তীর ফোন। সর্বনাশ! আজ তো অবন্তীর সাথে দেখা করার কথা। কথার সাথে নতুন পরিকল্পনা শেয়ার করতে গিয়ে আর রাগারাগি করতে গিয়ে তো ভুলেই বসে আছে। এবার তো খবর আছে। গত দুই বছর যাবৎ প্রেম করে হিমেলের এই শিক্ষাই হয়েছে যে অবন্তীর সাথে দেখা করার ক্ষেত্রে প্রায় দিনই সে একটা না একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে। অবন্তীর ফোন আর ম্যাসেজ চেক করে দেখা গেলো অবন্তী প্রায় পনের মিনিট অপেক্ষা করে তাকে দশ মিনিট ধরে ফোন দিয়ে না পেয়ে আরো পনের মিনিটের আল্টিমেটাম দিয়ে সর্বশেষ ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। সে হিসেবে হিমেলের হাতে আর মাত্র সাত মিনিট সময় বাকি।

হিমেলে আর দেরি না করে ছুটতে লাগলো। আর ছুটতে ছুটতে ভাবতে লাগলো এতক্ষণ যে কথার সাথে ছিলো এ খবরতা অবন্তীকে জানালে খবর আছে! এটা আগেই বলে রাখতে হবে কথাকে। কিন্তু এটা বলতে নিষেধ করার জন্য কথাকে বলতে হবে এটা ভাবতেই একটা পরাজয়ের দীর্ঘশ্বাস খুব গোপনে বেরিয়ে আসলো হিমেলের বুক থেকে। এই মাত্র রাগ দেখিয়ে চলে আসার পর এখনই হিমেলের হয়ে উমেদারি করতে কথাকে ফোন দিতে দিতে হিমেল ভাবছিলো ফোন পেয়ে কথার মুখে বিজয়ীর যে হাসিটা ফুটে উঠবে তা সহ্য করাই কঠিন। কিন্তু কী আর করা। দিন একদিন হিমেলেরও আসবে।

এদিকে হিমেলের গটগট করে চলে যাওয়া দেখতে দেখতে কথা ভাবছিলো উদ্ভট ভাবনা আর পরিকল্পনার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে হিমেল এতো দিনে পুরস্কারে ঘর ভরিয়ে ফেলতে পারতো নিশ্চিত। তবে এমন নিত্য নতুন আইডিয়াবাজ থাকারও প্রয়োজন আছে। এরকম আইডিয়াবাজরাই হয়তো উৎসাহ আর প্রেরণা পেয়ে এক সময় বড় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠে। হিমেলের রাগ যে বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না তা কথা জানে। তবুও একটু খারাপই লাগছিলো। বেচারা! এতো শখ করে তার নতুন আইডিয়া নিয়ে আলাপ করছিলো।

যাক গে! সমস্যা নেই। এক সময় মাথা ঠান্ডা হবে।

রিক্সার জ্যাম আস্তে আস্তে এগুচ্ছে। এ সময় হঠাৎ কথার খেয়াল হলো কথার হাতে হিমেলের একটা প্যাকেট রয়ে গেছে। রাগের মাথায় ফেলে গেছে। প্যাকেটের মুখটা একটু খুলতেই কথার চেহারায় বিজয়ীর আভা ফুটে উঠলো। এতো অবন্তীর জন্য কেনা গিফট। কথা অবন্তীকে একটা ফোন দিয়ে বললো, ওর জন্য কেনা গিফটটা হিমেল ওর কাছে রেখে গিয়েছে। রাগারাগির কথাটা আর বললো না। কথার মনে হলো এবার হিমেলকে একটু খোঁচানো যায়। “রিক্সা ভাড়া দিয়ে গেলি না!” বলে একটা ম্যাসেজ পাঠালো হিমেলকে। কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। কথার বুঝতে বাকি রইলো না যে, হিমেলের রাগ এখনো পড়েনি।

কথার রিক্সা নিউ মার্কেটের গেটে পৌঁছাতেই হিমেলের ফোন। কথা মুচকি হেসে ফোনটা কেটে দিলো। ভাবলো, থাকুক একটু দুঃশ্চিন্তায়।

দুই

হিমেলের কাণ্ড-জ্ঞান নিয়ে অবন্তী বিরক্তির প্রায় শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে। প্রায় বছর দুই আগে যখন হিমেলের সাথে পরিচয় হয় তখন ওর নতুন নতুন আইডিয়া আর স্বপ্নগুলো শুনতে ভালোই লাগতো। কিন্তু ইদানিং আর ভালো লাগে না। কোন আইডিয়া নিয়েই স্থিরতা নেই। কোন অ্যাম্বিশন নেই, যাচ্ছে তাই অবস্থা। খুবই বিরক্তিকর! জীবন যাপনে বাস্তব চিন্তা বলতে খুব কম জিনিসই হিমেলের মধ্যে কাজ করে বলে ইদানিং অবন্তীর মনে হচ্ছে। গত তিন মাস যাবৎ অবন্তী হিমেলের সাথে যোগাযোগটাও কমিয়ে দিয়েছে। তাতেও হিমেলের কোন মাথা ব্যথা নেই। অবন্তী আজ কাল খুব ভালো করেই অনুভব করছে যে অবন্তীর বিষয়ে হিমেল যথেষ্ট উদাসীন। এটা মানা যায় না। একটা মানুষ সারাক্ষণ তার স্বপ্ন আর আইডিয়া নিয়ে থাকবে, আর কোন কিছুর খোঁজ খবর করবে না এমন হলে তো তার সাথে জীবন যাপন করাই কঠিন। অন্ততঃ অবন্তীর পক্ষে সম্ভব না। গত কাল রাতেও এসব নিয়ে এক চোট উচ্চ বাচ্য হয়ে গেছে হিমেলের সাথে। অবন্তী গত কালই ঠিক করে রেখেছিলো হিমেল যদি আজও সময় রাখতে না পারে তবে আজই ওর সাথে শেষ দেখা।

কয়েক বার ফোন দিয়ে যখন হিমেলকে পাওয়া গেলো না তখন অবন্তীর মেজাজ খারাপ হতে শুরু করলো। ঠিক এমন সময়ই ফোনটা আসলো। ফোনের স্ক্রিনে কথার নাম্বার ভেসে উঠতে দেখে অবন্তীর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। এই মেয়েটাকে অবন্তী একদমই সহ্য করতে পারে না। কথাকে দেখলে অবন্তীর প্রায়ই মনে হয় একটা আলগা ভাব নিয়ে থাকে। চেহারায় একটা মেকি গাম্ভীর্য ধরে রেখে সব সময় নিজেকে আলাদা করে তুলতে চায় সবার মধ্য থেকে। ফোনটা ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতেই খুব বিরক্তি নিয়ে ফোনটা ধরলো অবন্তী। এক মিনিট খুব ঠান্ডা একটা ফোনালাপ হলো। হিমেল না কি ওর একটা প্যাকেট কথার কাছে ফেলে এসেছে – এটা জানাতেই ফোন করেছিলো।

এ কথা জানার পর রাগে অবন্তীর শরীর কাঁপতে লাগলো। অর্থাৎ হিমেল এতক্ষণ কথার সাথে ছিলো। তার মানে অবন্তীর সময় বা অবন্তী নিজে কোনটাই হিমেলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না। অবন্তী ভাবছিলো – যথেষ্ট হয়েছে, আর না। এমন সময়ই হিমেলকে আসতে দেখা গেলো।    

হিমেল অনেকটা দৌড়াতে দৌড়াতে টিএসসি’র অডিটোরিয়ামের সামনে গিয়ে পৌঁছালো। এরই মধ্যে কথার সাথে আলাপ করে রাখতে না পারায় হিমেলের টেনশন আরো খানিকটা বেড়ে হালকা ফাগুন হাওয়াতেও ঘাম ছোটানো অবস্থা তৈরি করে ফেলেছে। টিএসসি’র করিডোর দিয়ে এগিয়ে যেতেই অবন্তীকে দেখতে পেলো হিমেল মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। একবার ঘড়ি দেখে নিলো হিমেল।

না, ঠিক আছে; শেষ সময়ের এক মিনিট আগে পৌঁছানো গেছে। এই দেখে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে হিমেল যখন অবন্তীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে, তখনই খেয়াল হলো অবন্তীর জন্য কেনা গিফটের প্যাকেটটা হাতে নেই। আচমকাই ব্রেক কষতে হলো হিমেলকে। প্যাকেটটা কোথায় গেলো – ভাবতে ভাবতেই হিমেলের কপালে আবারো বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো। তাহলে কি চা’র দোকানে ফেলে এসেছে? না, সে রকম তো মনে পড়ছে না। হঠাৎ-ই মনে হলো প্যাকেটটা তো রিক্সা থেকে নামার সময়ই নিয়ে নামা হয়নি! কী সর্বনাশা কথা!!

অবন্তীর মেজাজ এমনিতেই তিরিক্ষি হয়ে ছিলো, হিমেলকে নিঃশ্চুপ দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে আর চুপ থাকতে পারলো না।

– অ্যাই! এই যে!! কী দেখছো ঐ দিকে?

অবন্তীর চিৎকারে হিমেলের সম্বিত ফিরলো।

– না, কিছু না।

– কিছু না তো মুর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?

– না, মানে…

– মানে আবার কী? হ্যাঁ? এমনিতেই দাঁড় করিয়ে রেখেছো আধ ঘন্টা ধরে, তার উপর এসে নাটক শুরু করেছো। সমস্যা কী তোমার?

রাগে অবন্তী গুছিয়ে কথাও বলতে পারছিলো না। আর হিমেল ঠিক কী বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না। হিমেলের মনে হলো একটু ডিফেন্ড করা উচিত। তাই অনেকটা কৈফিয়তের সুরেই বললো,

– আরে যে জ্যাম রাস্তায়, তুমি যদি দেখতে! এই জ্যামে পড়লে তাতে বসে ধ্যান করে গৌতম বুদ্ধ হয়ে যাওয়া যায়। আর তুমি যদি এই জ্যামে থাকতে তাহলে বুঝতে…

হিমেল কথা শেষ করতে পারলো না। অবন্তী হিমেলকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

– না, না, আমি তো জ্যামে থাকি না। আমি তো উত্তরা থেকে প্লেনে এসে ল্যান্ড করলাম সরওয়ার্দী উদ্যানে। আর রাস্তায় না হয় জ্যাম ছিলো। তাই বলে তোমার ফোনের নেটওয়ার্কও জ্যামে ছিলো? ফোন দিলে ফোন ধরো না, তাহলে এই ফোন রাখার দরকার কী, হ্যাঁ?

– আসলে ফোন পকেটে ছিলো তো?

– ফোন তো পকেটেই থাকবে – না কি? তাই বলে ফোনের কাঁপাকাঁপিও বন্ধ হয়ে গেছে। ভাইব্রেশন নেই তোমার ফোনে?

হিমেলকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো অবন্তী,

– আর কোথায় ছিলে তুমি এতক্ষণ? তোমার ক’টায় আসার কথা? কোন দিনও কি তুমি সময় রাখতে পারবে না?

– আমি তো বাসাতেই ছিলাম, বাসা থেকে সোজা আসতে গিয়েই তো জ্যামে পড়ে দেরি হয়ে গেলো!

– ও, তাই! বাসা থেকে আসতে দেরি হয়ে গেছে? মিথ্যা কথা বলতে লজ্জা করছে না?

অবন্তীর গলা হঠাৎ-ই বেশ উচ্চ স্বরে চড়ে গেলো। আশ পাশ থেকে অনেকেই তাকিয়ে দেখছে।

হিমেল খুব বিব্রত ভঙ্গিতে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই অবন্তী বেশ জোরে ধমকে উঠলো,

– চুপ, একদম চুপ। আমি কোন কথা শুনতে চাই না। খুব সস্তা পেয়েছো আমাকে? তুমি আমাকে দাম দাও না, আমার সময়কে দাম দাও না! আমার কোন মূল্যই নেই তোমার কাছে। তোমার কাছে মূল্য শুধু তোমার আইডিয়া আর তোমার ঐ কথা।

কথার প্রসঙ্গ আসতেই চমকে উঠলো হিমেল। কথাকে নিয়ে অবন্তীর এলার্জি আছে এটা হিমেলের জানা। কিন্তু হঠাৎ কথার প্রসঙ্গ কেন আসলো বুঝতে পারলো না। এদিকে কৌতুহলী লোকজনের দৃষ্টি উপেক্ষা করে অবন্তী চিৎকার করেই যাচ্ছে।

– কথা তোমার কী, হ্যাঁ? বলো, কথা তোমার কী? রাগে কাঁপতে কাঁপতে প্রশ্ন করছিলো অবন্তী। তুমি কথাকে সময় দিতে পারো, আর আমাকে সময় দিতে পারো না। কথার সাথে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে তুমি আমাকে মূল্য দিচ্ছো না!? এই তোমার জন্য আমি আজও আধ ঘন্টা অপেক্ষা করে ছিলাম।

– আই অ্যাম রিয়েলি স্যরি! অনেকটা মিন্ মিন্ করে বলার চেষ্টা করলো হিমেল।

হিমেলের এই কথায় রাগে ফেঁটে পড়লো অবন্তী।

– ইউ জাস্ট শাট্ আপ! আই ড্যাম কেয়ার অ্যাবাউট ইয়োর স্যরি!! এনাফ ইজ এনাফ। তুমি আর কোন দিন আমাকে বিরক্ত করবে না।

রাগে কাঁপতে কাঁপতে চোখ মুখ লাল করে অবন্তী বেরিয়ে গেলো। হিমেল অসহায়ের মতো অবন্তীর চলে যাওয়া পথে চেয়ে রইলো।

তিন

নিউ মার্কেটের গেটের বাইরে ফুটপাতের দোকানে বই-এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ করেই সামনের রিক্সাটায় চোখ আটকে গেলো তারেকের। বুকের ভেতরটা ধক্ করে উঠলো। সব সময়ই এমন হয়। তারেক নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করলো – ভুল দেখছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। না, ভুল দেখছে না – কথাকেই দেখা যাচ্ছে। সেই মৌন ভঙ্গিমায় সেই গভীর দৃষ্টি – ভুল হওয়ার কথা না। রিক্সায় বসে রিক্সা ভাড়া দিচ্ছে। তারেকের সাথে প্রায় ছয় মাস পর দেখা। এমন হঠাৎ কথার দেখা পাওয়া যাবে তারেক ভাবেনি, যদিও প্রতি মূহুর্তেই আশা করে দেখা হবে। মনের গভীরে এ প্রত্যাশা প্রতি মূহুর্তেই বয়ে বেড়ায় তারেক, কিন্তু দেখা পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হয় না। কথাও পছন্দ করে না দেখা করাটা।

তারেক অনেকক্ষণ থেকেই খেয়াল করছিলো কথাকে। রিক্সা ভাড়া নিয়ে কিছু একটা হয়েছে। কথা রিক্সাওয়ালাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে এবং অসহায় দৃষ্টি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তারেক ভাবছিলো দেখা দেয়াটা ঠিক হবে কি না। পরমূহুর্তেই মনে হলো কোন সমস্যায় পড়েছে মেয়েটা। ভাবনাকে আর বাড়তে না দিয়ে তারেক এগিয়ে গেলো রিক্সার দিকে।

রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে হ্যান্ডব্যাগ খুলে নিজের প্রতি কথার বিরক্তির সীমা থাকলো না। পার্সটা ফেলে এসেছে। এখন রিক্সা ভাড়া দিবে কী করে? পুরো হ্যান্ডব্যাগ খুঁজে দুটা পকেটে পাওয়া গেলো সতের টাকা, তাও একটা দশ টাকার স্কচটেপ লাগানো নোট, একটা পাঁচ টাকার কয়েন আর একটা দুই টাকার ছেড়া অর্ধেক অংশ। স্কচটেপ লাগানো দশ টাকার নোটের অবস্থা চরম খারাপ – যে কোন সময় দু’ টুকরা হয়ে যেতে পারে। কাজেই পাঁচ টাকার কয়েন ছাড়া রিক্সাওয়ালাকে দেয়ার কিছুই নেই। ষাট টাকা ভাড়ার জায়গায় তো আর পাঁচ টাকা দেয়া যায় না। ভালো বিপদে পড়া গেলো! কথা ভাবছিলো। পার্স ছাড়া তো নিউ মার্কেটে ঢুকে লাভ নেই। বরং বাসায় ফিরে যাওয়াই ভালো। বাসায় গিয়ে ভাড়া দিয়ে দেয়া যাবে।

– ভাই, চলেন যেখান থেকে আসছি, সেখানে যাবো।

– কই যাইবেন? রিক্সাওয়ালার প্রশ্ন।

– যেখান থেকে আমাকে তুললেন ঐখানে যাবো, নামবো না এখানে।

– ঐ দিক যাইতাম না। রিক্সাওয়ালার নির্বিকার উত্তর।

– কেন? যাবেন না কেন?

– ঐ দিক যাইতাম না। ভাড়া দ্যান, বিদায় হই।

ক্যাম্পাসে নিশ্চয়ই কাউকে পাওয়া যাবে চিন্তা করে কথা বললো,

– আচ্ছা, চলেন কলাভবন যাবো।

– হেই দিক যাইতাম না।

কথার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এর আগেও খেয়াল করে দেখেছে ঝামেলায় পড়লেই রিক্সাওয়ালারা আর কোথাও যেতে চায় না। কথা উপায়ান্তর না দেখে শেষে অনুরোধই করলো,

– ভাই শোনেন, আমার পার্স আমি ভুল করে বাসায় ফেলে এসেছি। আপনি আমার সাথে চলেন, আমি বাসা থেকে আপনার ভাড়া দিয়ে দিবো।

– ঐ দিক এহন যাইতাম না, আপনে ভাড়া দ্যান, যাই গা। রিক্সাওয়ালা আগের মতোই নির্বিকার উত্তর দিলো।

– আরে ভাই চলেন না, আপনার ভাড়া বাড়ায় দিবো।

– এহন কুনু খানে যামু না। আপনে ভাড়া দ্যান। দিয়া বিদায় করেন আমারে। 

কথা সমস্যার বিষয় বলেও একটা ঝামেলায় পড়লো। রিক্সাওয়ালা এখন মনে হয় জেদ করেই যাবে না। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হিমেলকে বিদায় করা ঠিক হয়নি, মনে হচ্ছে এখন। 

– কোন সমস্যা?

পরিচিত কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো তারেক দাঁড়িয়ে সামনে। খুবই কাকতালীয় ব্যাপার! তারেকের তো এখানে থাকার কথা না!! তারেককে দেখে কথা একটু অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো।

– কী? কোন সমস্যা? তারেক একই প্রশ্ন করলো আবার। এ বারে কথার সম্বিৎ ফিরলো।

– না, সমস্যা না। মানে, হ্যাঁ একটা ছোট্ট সমস্যা। একটু বিব্রত হয়েই বললো কথা। আরো কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আবার তারেকের প্রশ্ন,

– রিক্সা ভাড়া দিতে পারছো না?

– হুম। কথার উত্তরটা শোনাই গেলো না প্রায়।

তারেকের এই একটা ব্যাপার কথা সব সময়ই খেয়াল করেছে যে অনেক কিছু না বললেও খুব সহজে সমস্যা বুঝে ফেলতে পারে। ওর রিক্সা ভাড়া দিতে না পারার সমস্যা তারেক কী করে যেন ধরে ফেললো সহজেই। এর পর সমস্যা থেকে মুক্তিও পাওয়া গেলো। কিন্তু কথার মনটা খচখত করতে লাগলো। তারেকের সাথে ওর সব সময়ই এমন হয়। আর কথার কপালও এমন যে ঝামেলার সময়ই তারেকের সাথে কোন ভাবে ওর দেখা হয়ে যায়। ওদের পরিচয়টাও অবশ্য ঝামেলার মাধ্যমেই। বেশ মজারও। ঐ দিনের ঘটনা মনে পড়লে কথার হাসিও পায় এখনো।

তারেকের সাথে কথার যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিলো সেদিন কথা বাসস্ট্যান্ডে খুব তাড়াহুড়ো করে ভীড় ঠেলে একটা বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো যে, ওর দু’ পায়ের এক পায়ে স্যান্ডেল নেই। বাসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার সময় বুঝতে পারছিলো না, শুধু এক পায়ে কেমন গরম লাগছিলো। কিছুক্ষণ পর যখন বসার জন্য সিট পেলো সে সময়ই প্রথম বুঝতে পারলো যে বা পায়ের স্যান্ডেল নেই। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক সিটের আশে পাশে, নীচে খোঁজ খবর করে বুঝতে পারলো যে, স্যান্ডেল বাসে ওঠার সময় পড়ে গেছে। এদিকে বাসে কথার স্যান্ডেল খোঁজাখুঁজি দেখে লোকজনের মধ্যে একটা কৌতুহলের সৃষ্টি হয়ে গেলো ততক্ষণে। উৎসাহী কিছু লোকজন আশ পাশের সিটের নীচে খোঁজ শুরু করলো; আবার কেউ কেউ এখন কী করতে পারে এ পরামর্শও দিতে লাগলো। করুণ বিব্রতকর পরিস্থিতি কথার! কথা ভাবছিলো ও কি ওর ডান পায়ের স্যান্ডেলটা ফেলে দিবে, না কি ওটা পড়েই খোড়াতে খোড়াতে যাবে। বাসও জ্যামে খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। এক সময় মনে হলো আজ বাসায় ফিরে যাওয়াই ভালো। এই ভেবে বাস থামিয়ে নেমে পড়ে কথা এক পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলো রিক্সার জন্য বাসায় ফিরে যাবে ভেবে। এমন সময় কথার সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়ালো। রিক্সায় নম্র্র, ভদ্র, সাধারণ চেহারার এক যুবক, হাতে এক পাটি স্যান্ডেল। কথার বিস্ময়ের সীমা রইলো না যখন ঐ যুবক কথার দিকে স্যান্ডেল বাড়িয়ে বললো, “নিন।” কথা খুব বিরক্ত হয়ে যখন ঐ যুবকের দিকে তাকালো, তখন সে আবারো বললো, “নিন, আপনার স্যান্ডেল।” এই হচ্ছে তারেক। কথার সাথে তারেকও বাসে উঠতে গিয়ে উঠতে না পেরে দাঁড়িয়েছিলো। পরে বাস জ্যামে থাকায় স্যান্ডেল হাতে রিক্সা নিয়ে বাসের পেছন পেছন পৌঁছে দিতে এসেছে।

সেই থেকে তারেকের সাথে আলাপ। কথার থেকে তিন বছর সিনিয়র তারেক একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো চাকরি করে। নিজের কাজ, ভালো লাগা নিয়ে নিজের মতো চলা একজন খুব দায়িত্বশীল ব্যক্তি তারেক। কথা তারেককে যত দেখেছে এবং চিনেছে কথার মনে হয়েছে পুরুষ মানুষের আসলে এমনই ব্যকিত্বসম্পন্ন হওয়া উচিত। কিছুটা মিশুক, কিন্তু বাঁচাল নয়; যথেষ্ট সাধারণ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন এবং সাধারণের চেয়ে বেশ উন্নত চিন্তার খোলা মনের মানুষ তারেক। তারেকের সাথে কিছু ঘনিষ্ঠতার পর মনে হয়েছে এ ধরনের উন্নত পরিষ্কার চিন্তার মানুষের আমাদের সমাজে বেশ অভাব। এরা চিন্তার দিক থেকে মূল্যবান ব্যক্তিত্ব কিন্তু এদেরকে আমরা গুরুত্ব দিই খুবই কম। কিন্তু এদের থেকে সবটুকু আদায় করতে আমরা তৎপর যদিও এসব নিয়ে এ ধরনের মানুষের কোন অভিযোগ কখনো থাকে না।

তারেকের সাথে আলাপ ও বেশ অল্প ঘনিষ্ঠতার পরই তারেক একদিন হঠাৎ করেই কথাকে প্রপোজ করে। কথার কাছে হঠাৎ মনে হলেও তারেক আসলে অনেক চিন্তা ভাবনা করেই প্রপোজ করেছে বলে কথার ধারণা। কারণ তারেকের ধরনটাই এমন – ধী সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। খুব অবাক করা বিষয় কথা তারেককে সরাসরি না বলতে পারেনি, কিন্তু হ্যাঁ বলাতেও কথার শঙ্কা ছিলো। কথার সব সময়ই মনে হয়েছে তারেকের মতো পরিষ্কার চিন্তার উন্নত মানসিকতার মানুষকে ও ডিজার্ব করে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ওর জীবনে তারেকই একমাত্র ছেলে যাকে ও নিজের মানুষ হিসেবে ভেবে পুলকিত বোধ করে। এমনটা আর কারো ক্ষেত্রেই হয়নি। কথা যখন ওর পরিবার আর পরিবারের প্রতি ওর দায়িত্ব বোধের কথা ভাবে, তখন সব সময়ই শঙ্কা জাগে যে তারেকের কাছে ও হয়তো তারেকের মনের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারবে না। এই শঙ্কা ওকে তারেকের প্রস্তাবে কখনোই পুরো হ্যাঁ বলতে দেয়নি। কিন্তু অনেক ছেলেকেই ও সরাসরি ‘না’ বলে কিংবা এর চেয়েও কড়া কথা বলে বিদায় করেছে। তারেককে পারেনি। কেন পারেনি সেটা ও নিজেও জানে না।

রিক্সা ভাড়া দিয়ে তারেক আর কথা একটা স্ন্যাক্সের দোকানে গিয়ে বসলো। কথাই প্রথম আলাপ শুরু করলো,

– এখানে কী করছো?

– কিছু না। ছোট খাটো কিছু কেনা-কাটা ছিলো, তো কাজ হয়নি। চলে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম একটু বই দেখে যাই।

– তোমার এই অভ্যাসটা ভালো। তুমি এখনো পড়ার অভ্যাস রাখতে পেরেছো। আমার তো এখন তেমন পড়তেই ইচ্ছা হয় না।

– এই আর কি। তোমার কী খবর?

– চলছে, আগের মতোই। কথার সংক্ষিপ্ত উত্তর। প্রসঙ্গ ঘোরাতেই কথা জিজ্ঞেস করে বসলো,

– বিয়ে করেছো?

– কী মনে হচ্ছে তোমার? তারেক একটু শুকনা হাসি হেসে পাল্টা প্রশ্ন করলো।

– মনে হচ্ছে করেছো। কথা এ উত্তরটা দিলেও মনে মনে অন্য কিছুই ভাবছিলো।

– না, করিনি।

– করোনি কেন? প্রশ্নটা করেই কথার মনে হলো অর্থহীন একটা প্রশ্ন করা হয়েছে। তারেক খুব শক্ত একটা প্রতিউত্তর দিতে পারে।

– এমনি। একটু চুপ থেকে তারেক বললো, তুমি তো জানোই কেন করিনি, প্রশ্ন করছো কেন?

এ প্রশ্নে কথা চুপ হয়ে গেলো।

এর পর আর আলাপ খুব জমলো না। কিছুক্ষণের মধ্যেই যে যার মতো বিদায় নিলো। রিক্সায় ওঠার সময় তারেক ভাড়াটা দিয়ে দিলো। রিক্সাওয়ালাকে সাবধানে নিয়ে যেতে বলে কথাকে বললো, “আচ্ছা, যাই।” তারেকের মন খারাপ হয়েছে বুঝতে পারছিলো কথা। কথারও মন খারাপ লাগছিলো ফিরতে ফিরতে। তারেকের সঙ্গ ওর ভালই লাগে। কিন্তু তারেকের জীবনে নিজেকে জড়াতে কেন যেন ওর শঙ্কা কাটে না। কথা জানে তারেক যেমন মানসিকতার লোক মুখে কিছু না বলেও ওর জন্য অপেক্ষা করে যাবে। এটা কথার কষ্টকে আরো বাড়িয়ে দেয় যদিও কথার মনে হয় তারেক অন্য কারো সাথে জীবন কাটাচ্ছে জানলে সেটাও ওকে ভালো রাখবে না। 

চার

অনেক দিন পর হিমেল আর কথা রিক্সা করে যাচ্ছে এক সাথে। প্রায় মাস চারেক আগে কথার সাথে রাগারাগি করে হিমেল যে রিক্সা থেকে নেমে গিয়েছিলো তার পর অনেক পানি গড়িয়েছে। অবন্তীর সাথে ব্রেক আপটায় হিমেল কিছু কষ্ট পেলেও কথার সান্নিধ্য হিমেলকে অনেকটাই স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করেছে। অন্ততঃ হিমেলের তাই মনে হয়েছে। শুধু তা-ই না। গত বেশ কয়েক দিন থেকে হিমেলের মনে হচ্ছে কথা আসলে হিমেলকে যতটা বুঝতে পারে সেটা অন্য কেউ পারে না। কথাও হিমেলকে এখন যথেষ্ট সময় দেয়। হয়তো বা নির্মোহ একটা বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধনের কারণেই।

জ্যামে আটকে থাকা রিক্সায় বসে হিমেল অনেকক্ষণ ধরেই কী যেন বলে যাচ্ছে। কথার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। ঢুকছে না ঠিক না, কথার মাথা ঠিক ভাবে কাজ করছে না। আজ দিনটাই অন্য রকম। কথার ভাবতেও অবাক লাগে। গতকাল আর আজকের মধ্যে কী আকাশ পাতাল তফাৎ! কাল রাতে কথার এক ফোঁটা ঘুম হয়নি। আজও সকাল দশটার দিকে বের হয়েছে। কিন্তু শরীরে ক্লান্তি বলতে এক বিন্দু অনুভূতি নেই। এরকম সময়ে বুঝি এমনই হয়!

আজ বের হওয়ার সময় কথা অনেক ভেবে হালকা নীল জামাটা পড়েছে। অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে প্রসাধন করে বের হয়েছে। তারপরও মনে হচ্ছে চুলটা বোধ হয় একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। একটু অস্বস্তি হচ্ছে। প্রথমে মনে হচ্ছিলো সাজটা বোধ হয় সবার চোখে পড়ছে। অন্য দিন এমন মনে হয় না, আজই হচ্ছে। মনে হচ্ছে আজ যে একটু বিশেষ উদ্দেশ্যে সাজগোজটা করা সেটা বোধ হয় সবাই বুঝে ফেলছে। কথার একটু লজ্জাই লাগছে। আর এ কারণেই হিমেলের কোন কথাই কানে ঢুকছে না।

কাল সন্ধ্যা থেকেই কথার মন ভালো ছিলো না। রাতে হিমেল যখন ফোনে কথা বলতে বলতে আজ একটা বিশেষ কারণে ওর সাথে দেখা করতে চাইলো কথা তখন প্রথমে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলো। কী বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিলো না। ফোন কেটে দিয়ে চুপচাপ বসে ছিলো কিছুক্ষণ। কিছু ক্ষণের মধ্যে হিমেলের একটা এসএমএস কথাকে যেন বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনলো -“কাল সকাল দশটায় তোর জন্য অপেক্ষা করবো; যদি না আসিস বুঝে নেবো আর কোন দিন তোর দেখা পাবো না।” কথার শরীরটা ঝিমঝিম করছিলো। এরপর সারা রাত এক ফোঁটা ঘুম হয়নি কথার। গভীর রাতে আরো একটা এসএমএস পায় কথা। এর পর বেশ সকাল সকাল উঠেই বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে কথা। একটু সাজ করারও ইচ্ছে হলো। খুব পছন্দের সুগন্ধী আর কিছু অচেনা ভালো লাগার আবেশ নিয়ে সময় মতোই বের হলো কথা।

হিমেল কী বলবে তা অনেকটা অনুমান করেই এসেছিলো কথা। তবুও কেন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিলো কথার মুখটা। মনের ভেতর অজানা টেনশন কাজ করছে তা খুব আঁচ করতে পারছে ও।

এদিকে হিমেলের অবস্থাও কথার থেকে খুব যে অন্য রকম তা নয়। রিক্সায় আসতে আসতে হিমেল কী বলছে তা নিজেও বুঝতে পারছে না। একটা সময় শুধু বুঝতে পারলো যে, আজ কথাগুলো বেশ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কাল রাতের পর থেকে দুঃশ্চিন্তায় ঘুম হয়নি ভালো। কাল রাতে কথার সাথে ফোনে আলাপ করতে গিয়ে হিমেলের কী যে হলো। কী এক আবেগের ঝড়ে পড়ে আজ সকালে সময় নিয়ে বসলো কথার কাছ থেকে।

রাতের ঘুম ভালো না হওয়ায় চোখের নিচে হালকা কালি পড়েছে হিমেলের। সকালে একটু ফিটফাট হয়ে বের হলো হিমেল অনেক শঙ্কা আর দ্বিধা নিয়ে। প্রতিটা সেকেন্ড যেন এক একটা ঘন্টা। ঘড়ির কাঁটা যতই দশটার দিকে যাচ্ছিলো ততই হিমেলের হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিলো অনাকাক্সিক্ষত আশঙ্কায়। শেষ পর্যন্ত যখন কথার দেখা পাওয়া গেলো হিমেল তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কথার মলিন হাসি হিমেলের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে গেলো; শঙ্কার নয়, ভালো লাগার।

রিক্সায় গল্প করে যেতে যেতে হিমেল ভাবছিলো এ তো এক অদ্ভূত সুখের অনুভূতি! সবই ভালো লাগছে আজ। এই যে রাস্তার জ্যাম, হকারের চিৎকার, ভিখিরির নাছোড়বান্দা পিছে লেগে থাকা, রাস্তার ভীড় হট্টোগোল, ফাল্গুনের চড়া রোদ – সব কিছু।

কথা হিমেলের আবোল তাবোল বক্ বকানি শুনে মুচকি মুচকি হাসছিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে কয়েক টুকরো মেঘ এসে ঢেকে ফেললো আকাশটাকে। ঝুম করে বৃষ্টি নামলো শহরটা ছাপিয়ে। লোকজনের ছুটোছুটি আর যানবাহনের তাড়াহুড়োর মধ্যেই জ্যাম ছুটে রিক্সার গতি আসলো। রিক্সা ততক্ষণে ভার্সিটি এলাকায় ঢুকে পড়েছে। বাতাসের দাপট কমে এখন বৃষ্টির প্রতিপ্রত্তি শুরু হয়েছে। রিক্সার পর্দা না থাকায় এক নিমেষে ভিজে চুপসে গেলো দু’জনে। বৃষ্টির কাছে পরাজিত হয়েই এক সময় রিক্সার হুড ফেলে দিয়ে ভিজতে ভিজতেই এগিয়ে চললো হিমেল আর কথা।

গল্পটা এভাবেই চলতে পারতো। বৃষ্টিতে আটকে পড়া মানুষের অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে কথাকে আবেগের কথা বলেই ফেলতে পারতো হিমেল। আর কথার লাজুক নিরবতার সম্মতি বৃষ্টি ভেজা বাতাসের সাথে আমাদের অনেকেরই অতীত সুখ স্মৃতিকে নাড়া দিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু জীবন তো গল্পের চেয়েও অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর! আর তাই হিমেলের আবেগের মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত কথা আগের দিন রাতেই নিয়ে নেয়। যতটুকু দ্বিধা ছিলো তা-ও দূর হয়ে যায় গভীর রাতে তারেকের এসএমএস-টা পেয়ে – “আমি অপেক্ষায় থাকবো।” এরপর তারেক যখন জানায় যে, আজ সেই দিন যেদিন প্রথম কথার সাথে তারেকের দেখা হয়, তখন তারেকের সাথে দেখা করতে কথা আর কোন আাপত্তি করে না; যদিও আগের দিন সন্ধ্যায় দেখা করতে চাওয়ায় তারেকের সাথে কথা বেশ রূঢ় ব্যবহারই করেছিলো। কথা তাই সকাল সকালই বের হয় হিমেলকে পরিস্কার ভাবে কিছু কথা বলবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। এদিকে তারেক জানে কথার সাথে দেখা হবে, কথা হবে কিন্তু একসাথে পাশাপাশি চলার জন্য অপেক্ষার শেষ হবে না। তবু তারেক বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অপেক্ষা করে।

ব্যবস্থাপক |

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০