জুন ২০, ২০২৫

বাবা দিবস

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রবিবার হিসাবে এ বছর ১৬ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন।

উপরের এই কঠিন তথ্যগুলো আমরা অনেকেই জানি।

Baba Dibos 1

কিন্তু বাবা দিবসের আবির্ভাবের পেছনে আছেন একজন নারী এই তথ্যটা অনেকেরই জানা নেই। তার নাম সনোরা স্মার্ট ডড (ফেব্রুয়ারি ১৮, ১৯২২- মার্চ ২২, ১৯৭৮)। তিনি ছিলেন আমেরিকান সিভিল ওয়ার ভেটেরিয়ান উইলিয়াম জ্যাকসন স্মার্ট এর কন্যা।  

সনোরার যখন ১৬ বছর বয়স তার মা তার ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দেবার সময় মারা যান। সনোরা ছিলেন তার বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান, বাবার সাথে তাকে তার ভাইদের বিশেষত নবজাত ভাইকে দেখাশোনা করতে হত।

পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করেন ১৮৭০ সালে জন ব্রূস ডড কে এবং তাতেই তার নামের সাথে ডড যোগ হয়। ১৯০৯ সালে  এক পুত্র সন্তানকে (জ্যাক) জন্ম দেন।

সনোরা তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন তার বাবার রাজকুমারী। ১৯০৮ এ মা দিবস স্বীকৃতি পাবার পর সনোরা উপলব্ধি করেন মা দিবসের মত বাবা দিবসের প্রয়োজন রয়েছে।

মা’র মত বাবাও যে সন্তানকে রক্ষা করেন বিপদ আপদ থেকে। মায়া মমতা স্নেহে ভরিয়ে তুলেন সন্তানের জীবন। নিজের সকল সাধ আহ্লাদ বিসর্জন করে সন্তানের সকল চাহিদা মেটানোই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

Baba Dibos 2
Baba Dibos 2 1

বাবাদের সম্মান জানাতে তাই সনোরা পরিকল্পনা করেন বাবা দিবসের। তার নিরলস চেষ্টায় স্পকেন মিনিস্টেরিয়াল অ্যালায়েন্স বাবা দিবস পালন করবার সিদ্ধান্ত নেয়। সনোরার ইচ্ছে ছিল ৫ জুন তার বাবার জন্মদিনে বাবা দিবস পালিত হবে।

কিন্তু জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকেই বেছে নেয়া হয় বাবা দিবস হিসেবে। আর প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয় ১৯ শে জুন, ১৯১০, স্পকেন, ওয়াশিংটনে ।

এর পরের ইতিহাস আমি আগেই লিখেছি।

সময়ের ব্যবধানে গোটা  বিশ্বে এখন বাবা দিবস পালন করা হয় অনেক ঘটা করে। সামাজিক মাধ্যম গুলোতে বিশ্বব্যাপী বাবাকে নিয়ে আমরা দেখতে পাই কত কত ভালবাসা। এক শ্রেণি বলে কী দরকার বাবা দিবসের? আমরা তো বাবাকে প্রতিদিন ভালবাসি। পাশ্চাত্য সমাজের পারিবারিক বন্ধনবিহীন পরিবারগুলোর জন্য দরকার বাবা দিবসের ।

আমি তা ভাবি না। আমি আমার চারপাশে দেখি বাবাদের অবহেলা। আমরা নিজেরাই তো বাবাকে অবহেলা করি প্রতিনিয়ত। আমাদের চারপাশে গড়ে উঠা এতগুলো বৃদ্ধাশ্রম আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাবারা কত ভাল আছেন।

আর একদিন যদি আমরা বাবাকে নিয়ে একটা দিন পালন করি তাতে ক্ষতি কী?

একজন বাবা তার সন্তানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন, কিন্তু সন্তানরা হয়তো তা পারেন না। আর তাই তো আমরা স্বার্থপর হয়ে পড়ি। বাবারা সারাজীবন থাকেন না, সবার কপালে বাবার ভালবাসা থাকে না। পৃথিবীর ভাগ্যবান সন্তানরা যারা বাবার সাথে এ বাবা দিবস কাটাচ্ছেন, প্রাণ ভরে বাবাকে ভালবাসুন, বাবাদের ভাল রাখুন। কারণ পৃথিবীর সব বাবা তার সন্তানদের জন্য অগুনতি ত্যাগ স্বীকার করেছেন, করে যাচ্ছেন।

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp