fbpx

দৈবচয়িত ৩

প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দ্বিতীয় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তৃতীয় অধ্যায়
প্রথম রাত

ক্যাম্পাসে সন্ধ্যা নেমেছে। জিমের এ সময়ের চিত্রটা সারা দিনের চেয়ে ভিন্ন। ছাত্ররা বেশির ভাগই ক্লাস শেষ করে হলে ফিরেছে। জিমের ভেতরটা সেজন্য গম-গম করছে। বেশির ভাগ টং-এ মশারি টানানো হয়ে গেছে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে। মশারির ভেতরে বসেই পড়াশুনায় নিমগ্ন কেউ কেউ। অনেক টং-এ আবার কয়েকজন মিলে বসে গল্প চলছে। একটা টং-এ নিউজপেপার বিছিয়ে মুড়ি-চানাচুর খাচ্ছে জনাকয়েক। একটা কোণে দুজন একমনে দাবা খেলছে। এক টং-এ কয়েকজন মিলে তর্ক জুড়েছে – হুমায়ুন আহমেদের উচিত হয়নি টুনিকে মেরে ফেলা। আচ্ছা কোন মানে আছে এমন সুন্দর ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটাকে ক্যান্সার দিয়ে দেওয়ার? অরণ্য বুঝতে পারে ওরা “এই সব দিন রাত্রি” নিয়ে কথা বলছে।

বিজয়ও ফিরেছে – ফিরে আবার ঘুমিয়েও পড়েছে। কেমন ঘুম ঘুমাচ্ছে – ঘুমের ভেতর থেকেই পাশ ফিরে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করল ওর ক্ষুধা লেগেছে কিনা। যদি না লাগে তাহলে মহি এলে মহিসহ খেতে যাবে একসাথে। অরণ্যর একটু ক্ষুধা লাগলেও মহিন ভাইয়ের সঙ্গে যাওয়ার কথা শুনে ও চেপে গেল। বলল, না ক্ষুধা লাগেনি।

সকাল থেকে অরণ্যর মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুর ঘুর করছে। কিন্তু সুযোগ পায়নি জিজ্ঞেস করতে। আর ধরে রাখতে পারল না।

-ভাইয়া, আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?

-না, কেন রে?

-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-বল, কী বলবি।

বিজয় শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসল।

-আচ্ছা এইখানে তো কোন বাথরুম নাই। রাতে বাথরুম লাগলে কী করব?

বিজয় খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল

 -রাতে বাথরুম লাগবে কেন?

-কেন, যদি আসে?

-না আসবে না। এখানে যারা থাকে, তাদের রাতের বেলা বাথরুম আসতে হয় না। বুঝতে পারছিস?

-কি বলেন!

-ঠিকই বলি। শুন, রাতে খাওয়া-দাওয়া করে আসব যখন, তখন একবার বাথরুমে গিয়া আসবি। ভাল করে খালি করে আসবি যাতে রাতে আর যেতে না হয়।

-আচ্ছা। কিন্তু বলা তো যায়না।

-বেশি যদি অসুবিধা হয় তাহলে মসজিদের বাথরুমে যেতে পারিস। দরজা খুলে গেলে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু না যেতে পারলেই ভাল।

অরণ্য চুপ করে গেল। বিজয় বলল, এখানে তো আর বাড়ির মত জঙ্গল নাই যে বাইরে গিয়ে করে আসবি। আচ্ছা, তোর তো কোন প্যান্ট নাই, আছে?

-জ্বী না। জানেন তো।

-কালকে কী পরে পরীক্ষা দিতে যাবি?

-কেন, লুঙ্গি পরে যেতে দেয় না?

-তা জানিনা, কেউ এখন পর্যন্ত লুঙ্গি পরে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া ট্রাই করছে কিনা জানি না। তুই চাইলে ট্রাই করতে পারিস।

বলে দড়ির উপর থেকে একটা প্যান্ট নামিয়ে ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে, এটা ট্রাই করে দেখ। লাগে কিনা।

অরণ্য লুঙ্গিটাকে মুখ দিয়ে কামড়ে ধরে উপরে তুলে প্যান্টটা পরতে থাকে। চেইন লাগানো শেষ হলে বিজয় ঘুরে তাকায়।

-দেখি লুঙ্গি সরা। ঠিক-ই তো লাগছে। একটু লম্বা, এই যা। নিচে ভাঁজ দিয়া নিবি। অলটার করে নিতে পারি, কিন্তু আমার ত মাত্র দুইটা প্যান্ট, আবার আমারও পরা লাগবে। তুই তো মাত্র দুই দিন পরবি – কালকে আর আবার ঘ ইউনিটের পরীক্ষার দিন।

-আচ্ছা।

-আচ্ছা শোন, আব্বু কিছু দেয় নাই আসার সময়?

-না, আমারে খালি দুইশ’ টাকা দিছে। আর বলছে আপনারে বলতে যে আপনের টাকা পাঠাইতে একটু দেরি হবে।

-ও আচ্ছা।

বিজয় এমনভাবে “ও, আচ্ছা” বলল যে অরণ্য বুঝে নিল যে বিজয় আশা করেছিল বাবা টাকা পাঠাবেন ওর হাতে। অরণ্য বলল, ভাইয়া, আমার তো টাকা লাগবে না। আসার সময় খালি পাঁচ টাকা খরচ করছি। আপনে লাগলে নিয়া নেন বাকিটা।

-না, না। তুই ওইটা রাখ তোর কাছে। সাত দিনের মত থাকবি, কাজে লাগবে। দুপুরে আমি যখন ক্লাস টাসে যাব, তখন তো তোকে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। আমি একটু হাত-মুখ ধুয়ে আসি। মহি আসলে সবাই মিলে খেতে যাব।

অরণ্যর মাথায় তখন অন্য চিন্তা ঘুরছে। আচ্ছা এটা হচ্ছে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সারা দেশের ক্রীম ছাত্ররা পড়তে আসে। এদের যদি থাকা-খাওয়া-ঘুমানো-বাথরুম এসব নিয়ে এরকম চিন্তা করতে হয়, তাহলে এরা পড়াশুনা করবে কখন, আবিষ্কার করবে কখন, দেশ জাতি এসব নিয়ে ভাববে কখন। এ দেশটার ভবিষ্যৎ কী হবে তা কি এ চিত্র থেকে বলে দেয়া যায় না? যে দেশের ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের দয়া-দাক্ষিণ্যে ভর করে রাত্রিযাপন করে, যে দেশের ছাত্ররা রাতে বাথরুম চাপিয়ে ঘুমায় কারণ ওদের বাথরুমে যাবার জায়গা নেই, সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়েরই বা ভবিষ্যৎ কী?

মহিন ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওরা চানখারপুলের দিকে রওনা হয়ে যায়। শহীদুল্লাহ হলের এক্সটেনশন-১ এর সামনে পুকুর পাড়ের রাস্তা দিয়ে হয়ে ওরা শহীদুল্লাহ হলের প্রধান ভবনের সামনে পৌঁছে। বিজয় আগে আগে হাঁটছিল আর মহিন আর অরণ্য ওর পেছন পেছন। মহিন অরণ্যকে সব চিনিয়ে দিচ্ছিল।

-এটা হলো হুমায়ুন আহমেদ স্যারের বাসা। স্যার দোতলায় থাকেন। খুব একটা বের হন না। তবে খুব সিগারেট খান।

-ও তাই!

-এটা হল শহীদুল্লাহ হলের সেকেণ্ড এক্সটেনশন। এটা ওদের ক্যান্টিন। এখানে কিনে খাওয়া যায়। দাম ডাইনিং এর চেয়ে একটু বেশি। আর এটা দেখছো, এই জায়গায় হলের লন্ড্রি, ইমামের বাচা, অন্য কর্মচারীদেরও বাসা।

-সুন্দর তো বিল্ডিং গুলা!

-হ্যাঁ। এই গেট দিয়ে বের হলে সামনে পড়বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ। মাঠে ঢুকতে হলে অবশ্য অনেক দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হবে। আর একদিন নিয়ে যাব তোমাকে। ডানের দিকে হাঁটলে দোয়েল চত্বর পড়বে। তোমার পরীক্ষা শেষ হোক। কালকে বিকালে পরীক্ষা শেচ হলে আমার সাথে যেও।    

অরণ্য ভাবছে – নাহ, মহিন ভাইয়ের চ’ মুদ্রাটার কোন প্যাটার্ন বের করা যাচ্ছে না। কোন বিশেষ শব্দেই হচ্ছে না ওটা। আবার শুধু যে স’ কে চ করছে তাও না, ষ, শ কোনটাই বাদ যাচ্ছে না। এক শব্দ একবার ঠিক করে বলছেন আবার পরক্ষণেই সেই শব্দের ভেতরে চ ঢুকিয়ে দিচ্ছেন অনায়াসে।

-ওই যে ওইটা দেখতেছ, ওইটা ঢাকা মেডিকেল কলেজ। এর পাশে সব ফার্মেসীগুলা। ওষুধ কিনতে আমরা এখানে আসি।

মহিনকে ভেঙ্গিয়ে বিজয় বলল – আচ্ছা, ভাল কথা, তুই ওষুধ কিনতে এখানে আচচ। এখন দেখে চুনে রাস্তা পার হ। নইলে ট্রাকের তলায় পড়ে তোর চ চুলোয় যাবে।

ওরা সেক্রেটারিয়েট রোড পার হয়ে হাতের বাঁয়ে মৃতপ্রায় গ্যাস ষ্টেশনটাকে রেখে এগিয়ে যায় চানখারপুল মোড়ে। এ জায়গাটায় অনেক ভীড় চোখে পড়ে অরণ্যর। রাস্তার এপাশে ওপাশে অনেকগুলো বাসের সারি। বাসের হেল্পাররা দু’দিক থেকেই সমানে ডেকে যাচ্ছে। একদিকের বাসগুলা ডাকছে – গুলিস্তান, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ি…। আর এক দিকের বাসগুলা বলছে পলাশী, আজিমপুর, নিউমার্কেট, …। রাস্তা পার হয়ে কোণার একটা একতলা হোটেলে ঢুকে পড়ে বিজয়। তার পেছনে মহিন আর অরণ্য। সাইনবোর্ডগুলো অরণ্যের চোখ এড়ায়না সাধারণত। হো মো এরশাদ ক্ষমতায় এসে যখন প্রথম সকল দোকানে সাইনবোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক করেছে, তখন থেকেই যে কোন রাস্তা দিয়ে চলার সময় ও আগ্রহ নিয়ে সাইনবোর্ডগুলো পড়ে। প্রথম প্রথম সাইনবোর্ড লেখার মত এত দোকানও ছিল না। ফলে কাঁচা হাতের কাঁচা জ্ঞানের সাইনবোর্ডগুলো দেখতে ও পড়তে খুব মজাই লাগত ওর। যেমন কাল রাতে নোয়াখালী এক্সপ্রেসে আসার সময় বজরা স্টেশনের কাছাকাছি একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়েছে। দেখে ও হাসি ধরে রাখতে পারছিল না অনেকক্ষণ।

“আলা-ভোলার হানের দোয়ান।”

তার নিচে সুন্দর করে লেখা,

“ইঁয়ানে হোন হানি হড়া হান যা।”

নোয়াখালীর ভাষা যারা জানে তাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে এ দোকানটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ পানি পড়া দেন। সাইনবোর্ডের সমস্যা হল “হোন” শব্দটায়। “হোন” শব্দটার দুটো মানে হয়। এক, পরিষ্কার। দুই, পশ্চাতদেশ। কাজেই পুরো বাক্যটার দুটো সম্ভাব্য অর্থ হতে পারে। এখানে পরিষ্কার পানি পড়া পাওয়া যায়, অথবা এখানে পশ্চাতদেশের জন্য পানি পড়া পাওয়া যায়। কে জানে দোকানদার কোনটি বোঝাতে চেয়েছে!

এ রেস্টুরেন্টটার নাম মিতালী। বাহ, সুন্দর নাম তো! ভাবলো অরণ্য।

হাত মুখ ধুয়ে ওরা তিনজন কোণের একটা টেবিলে খেতে বসে গেল। অরণ্য খুব কম সময়েই হোটেলে ভাত খেয়েছে। দরকার পড়ে নি। দরকার কখনো যখন পড়েছে তখন পকেটের যাতনায় ক্ষুধা পালিয়েছে।

-মামা, কীখাইবেন?

-কী আছে, বল?

-মাছ খাইবেন, না মাংস খাইবেন।

-কী  মাছ আছে?

-শিং মাছের ঝোল, কই মাছের দোপিয়াজা, রুই, আর মুড়িঘণ্ট। ইলিশ আছিলো, শেষ অয়া গ্যাছে গা।

-কী খাবি, অর্ণি।

-আপনি যেটা নিবেন।

-আচ্ছা, এই শোন, এখানে একটা কই মাছ দিস, আর মহি, তুই কিয়া লইবি?

-আঁই হইল মাছ খামু।

-তুই হইল কোনাই হাইছস, হ্যাতে কি হইলের কতা কিছু কইছে নি?

-না, ক’ন’। আঁর খাইতো মন চার! মামু, তুই শোল মাছ এনে দিতে পারবি পাশের কোন দোকান থেকে?

-মামা, অনেক হাইট্টা যাওন লাগব। ম্যানেজার বকা লাগাইবো।

-আচ্ছা থাক, দে রুই মাছ দে।

-আচ্ছা তাহলে একটা রুই, একটা কই, আর আমারে একটা আলু ভর্তা দিস। ডাল খাবি তো? তিনটা ডাল।

ওয়েটার অর্ডার নিয়ে চলে যায়। অর্ণি জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া, আপনি কোন মাছ নিলেন না যে?

-না রে। দুপুরে বেশি খেয়ে ফেলেছি।

কথাটা অরণ্যর বিশ্বাস হল না। ও জানে বিজয়কে কিভাবে চলতে হয়। বাবা মাসে পাচশ’ টাকা করে পাঠান, সে টাকায় ওকে সারা মাস চলতে হয়। প্রিলিমিনারির ছেলে বলে টিউশনির ভাগ্যও মন্দ। এ জন্যেই প্রায়ই হঠাৎ হঠাৎ বিজয় ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে থাকে। গ্রামের বন্ধুরা টিটকিরি দিতে ছাড়ত না – গ্রামে প্রেমিকা রেখে নাকি ও ঢাকায় থাকতে পারে না।

-অসুবিধা নাই, আমি আর আপনি ভাগ করে খাব কই মাছটা।

-তা কেন, বললাম যে আমার খাবার ইচ্ছে নেই!

-তারপরও।

মহিন মনোযোগ দিয়ে ওদের কথা শুনছিল। বলল, শুন, আমি একটু আসছি। বলে চলে গেল। ও ফিরে আসতেই ওয়েটার দুটো কই মাছ, একটা রুই, ভাত আর ডাল দিয়ে গেল। বিজয় বলল,

-এই তোকে না বলছি একটা কই? দুটো দিয়েছিস কেন? একটা নিয়া যা।    

-না, এই মামায় তো চাইল।

-বিজু, আঁই অর্ডার দিছি। চল ব্যাকে মিলি খামু। অর্ণি, তুমি নেয়া শুরু কর।

বিজয় আর অরণ্যর অগোচরেই হোটেলের বিলটা পরিশোধ করে এল মহিন। এ কাজটি মহিন বিজয়ের জন্য অনেকবারই করেছে এ যাবত। পরীক্ষার ফি শর্ট পড়েছে, বাড়ি যাবার ভাড়া নেই, মানি-অর্ডার আসেনি এ মাসে – সব কিছুতেই মহিন মহা-আনন্দে বিজয়ের পাশে থেকেছে। বিজয়ের পরিবার, ওর বাবার জীবনের গল্প – মহিনের জীবনে সন্ধ্যার দূর আকাশে দেখা এক শুকতারার মত। শুকতারার আলো পৃথিবীতে আসে না, কিন্তু শুকতারার ক্ষীণ আলো মানুষের মনে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে চিরন্তন।

এগারোটা বাজতেই বিজয় বলল, পরীক্ষার আগের রাতে বেশি পড়ে লাভ নেই। ঘুমায়া পড়। আমি মশারি টেনে দেই।

-আপনি শুবেন কখন?

-আমি একটু পরে শুব। তুই ওই পাশে ঘুমা, আমি এপাশে বসে একটু পড়ব। শাহেদা ম্যাডামের একটা পরীক্ষা আছে। 

বলে বিজয় মশারি খাটাতে থাকে।

-আচ্ছা। মহিন ভাই কোথায় থাকবে?

-চিন্তা করিস না। ও এক্সটেনশনে আমাদের একটা ফ্রেন্ড আছে, মুজিব, ওর সাথে থাকবে। সকালে আবার চলে আসবে। বাথরুমে যাবি?

-জ্বী। একবার গিয়ে আসি। মসজিদেরটায়ই যাই।

-আচ্ছা।

বাইরে থেকে এসে শুয়ে পড়ে অরণ্য। ওর চোখে কোন ঘুম নেই। ঘুম আসার কোন লক্ষণও বুঝতে পারছে না ও। চারিদিকে অনেক শব্দ। বিভিন্ন টং-এর কথাবার্তার শব্দ যেমন ভেসে আসছে, তেমনি কারো কারো রেডিও থেকে অনুরোধের আসরের গানের শব্দও আসছে। শুয়ে শুয়ে অরণ্য ডুব যায় ওর স্মৃতিতে। বিদায় নিয়ে আসার সময়কার মায়ের মলিন চেহারাটা ভেসে উঠে। মা বলতে গেলে ঘর থেকে বেরোননা কখনো। ওকে এগিয়ে দিতে হাঁটতে হাঁটতে একেবারে রাস্তার মাথায় চলে এসেছেন। গা মুছে দিয়েছেন বারবার। চোখ-ভর্তি জল নিয়ে আকুতি করেছেন যেন কাউকে দিয়ে ঠিকমত পৌঁছার খবরটা পাঠায়। বাড়ি ছেড়ে এই প্রথম ও সাতদিনের বেশি সময়ের জন্য কোথাও এসেছে। এর আগে বড়জোর দুই কি তিন দিন। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই অন্য বড় কেউ ছিল সাথে। মায়ের মুখটা মনে করে ওর মন খারাপ হয়ে যায়। আহা, মা নিশ্চয়ই ঘুমাতে পারছে না।

-ভাইয়া?

-কী রে?

-মগ্নি মামার দোকানে ত ফোন আছে। মা বলছিল, কাউকে দিয়ে খবর দিতে যে আমি ঠিকমত পৌঁছেছি। 

-কিচ্ছু হবে না। ঘুমা। মা প্রথম প্রথম এরকম করে। পরে দেখবি ঠিক হয়ে যাবে।

অরণ্য অন্যদিকে পাশ ফিরল। আচ্ছা ও কি টিকবে এখানে? মনে মনে আল্লাহর কাছে একবার দোয়া চেয়ে নিল আবার।  ওকে টিকতেই হবে। নানান স্মৃতি উঁকি দিয়ে যায় অরণ্যর মনে।

নোয়াখালী ইউনিয়ন হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা। সকাল সাড়ে নটায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবার কথা। অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে এসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার বদিউল আলম স্যারের দরজার পাশে। অরণ্যর হাতে ঘড়ি নেই, কিন্তু এসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার কক্ষের ঘড়িটা জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। এখন বাজে ন’টা চল্লিশ। প্রবেশপত্র নেই বলে অরণ্যকে পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেননি আব্দুন নুর হুজুর। তিনি বলেছেন, বদিউল আলম স্যারের কাছে যাও। দেখ উনি কী বলেন।

বদিউল আলম স্যার ভীষণ পানখোর। একটার পর একটা পান চিবাচ্ছেন, আর সামনে বসা কারো সাথে জমিয়ে গল্প করছেন। কার সঙ্গে গল্প করছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না এখান থেকে। অরণ্য দু একবার খোলা দরজার দিকে গিয়ে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সাড়া মেলেনি। পরীক্ষার সময়টা স্যারদের জন্য মহা আনন্দের। পরীক্ষা এলে ছাত্র-ছাত্রীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হয়। স্যারদের বকেয়া বেতনও সে সময় ঘরে আসে। পরীক্ষার সময় ক্লাস থাকে না। টহল দিতে গিয়ে নকল ধরার যে আনন্দ, সেটাও সিনেমা দেখার চেয়ে কম কিছু না। ফুরফুরে মেজাজ। কেমন যেন শিষ দেয়া শিষ দেয়া একটা ভাব। 

ঘড়ির কাঁটা টিক-টিক করে এগিয়ে যাচ্ছে। ন’টা একচল্লিশ, বিয়াল্লিশ, তেতাল্লিশ, … পঞ্চাশ। হঠাত দেখতে পেল হেড স্যার বের হয়েছেন উনার রুম থেকে। হেড স্যার ইব্রাহিম খলিল সাক্ষাত যম। ভয়ে উনার ত্রি-সীমানা মাড়ায়না কেউ। যে কোন বেয়াদবির প্রথম শাস্তি প্যান্টের বেল্ট খুলে দশ ঘা। একই প্রকার অপরাধের দ্বিতীয় শাস্তি টি সি – ট্রান্সফার সার্টিফিকেট। তৃতীয় সুযোগ বলে তার কাছে কিছু নেই। যমদূতকে মানুষ কতটা ভয় পায়, সেটা অরণ্যর জানা নেই, কিন্তু যমদূতের কথা যখনি কোন বইতে পড়েছে, ইব্রাহিম খলিল স্যারের চেহারাটা ভেসে উঠেছে তখনই। সাক্ষাত যমদূতকে এগিয়ে আসতে দেখে অরণ্য দেয়ালে লেপটে গেল। সাদা শার্ট আর সাদা পাজামার সাথে সাদা চুনকাম করা দেয়াল – নাও বুঝতে পারে।

যমদূত এসে দাঁড়াল ওর সামনে। ওর বন্ধু নুরু এখানে থাকলে নির্ঘাত পেচ্ছাব করে ফেলত। নুরু ভয়ে এ কাজটা করে। খসরু স্যারের অঙ্ক ক্লাসে বাড়ির কাজ আনে নি বলে স্যার যেই বেত তুলেছেন উপরে, অমনি ছরছর করে নিচে পানি পড়া শুরু হয়ে গেল। বেত ত পিঠে পড়লই, ক্লাস ছেড়ে বাড়িতে দৌড়াতে হয়েছিল বেচারাকে। মেঝে পরিষ্কার করার সময় দফতরী আহম্মদ ভাইয়ের চেহারাটা তখন দেখার মত হয়েছিল!

ধমকে সম্বিত ফিরল অরণ্যর।

 -কী রে, তুই এখানে কী করছিস, পরীক্ষা দিচ্ছিস না!

-জ্বী।

-জ্বী মানে কী? পরীক্ষার হলে না গিয়ে এখানে কী? (অরণ্যর মনে হল বজ্রপাতের শব্দ হল কোথাও)

-জ্বী, আব্দুন নুর স্যার বলেছেন-

-কী বলেছেন আব্দুন নুর স্যার? এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে? নকল টকল করেছিস নাকি?

-জ্বী না। প্রবেশ পত্র নাই, পরীক্ষা দিতে দেননি।

কথা শুনে ততক্ষণে বদিউল আলম স্যার বের হয়ে এসেছেন।

-স্যার, ওর পুরো ছ’মাসের বেতন বাকি। গত পরীক্ষার সময় যে দিয়েছিল, আর দেয় নি।

-আমাকে বলেন নি কেন আগে? এরকম আর কেউ আছে?

-জ্বী না। বাকী সবাই পরিশোধ করেছে।

-আসেন আমার সঙ্গে। এই ছেলে, এখানে দাঁড়াও, এক পা নড়বে না কোথাও।

হেড স্যার ঢুকে পড়লেন তার রুমে। তার পিছু পিছু বদিউল আলম স্যার। উনাদের দুজনের রুম পাশাপাশি। এখান থেকে অরণ্য স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে উনাদের কথোপকথন।

-এই ছেলে কতক্ষণ থেকে – এট লিস্ট পরীক্ষা শুরু থেকে আপনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি দেখতে পান নি?

-জ্বী স্যার।

-আপনি কী করছিলেন?

-স্যার, স্কুলের সেক্রেটারি সাহেব আসছেন। কিছু হিসাব দেখতে চাইলেন।

-ভাল কথা, কিন্তু আপনার দরজার পাশে একটা ছেলে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে আপনি সেটা খেয়াল করবেন না?

বদিউল আলম স্যার নিশ্চুপ।

-কত বাকি পড়ছে অরণ্যর বেতন বাবদ?

-জ্বী একশ বিশ টাকা বেতন, আর চল্লিশ টাকা পরীক্ষার ফি।

-শুনেন এই নেন, দুশ’ টাকা, ওর প্রবেশপত্র ইস্যু করেন। আর ভবিষ্যতে এরকম আর কোন কেস হলে আমাকে আগেভাগে জানাবেন।

-জ্বী স্যার।

বদিউল আলম স্যার রুম থেকে বের হচ্ছিলেন। হেডস্যার আবার ডাকলেন।

-বদি স্যার।

-জ্বী স্যার।

-একটু কাছে আসেন।

এর পরের কথাগুলো অরণ্য শুনল না। কিন্তু বদিউল আলম স্যার ওকে শুধু প্রবেশ পত্র ইস্যুই করলেন না, ওকে সাথে করে আব্দুন নুর স্যারকে গিয়ে বললেন – হেড স্যার বলেছেন ওকে যেন অন্য সবার মত ঠিক তিন ঘন্টা সময় দেয়া হয় পরীক্ষা শেষ করার জন্য।

যমদূতরা বুঝি এমনই হন!

অরণ্য খেয়াল করল তেল চিটচিটে বালিশটা কেমন ভেজা ভেজা লাগছে। চোখের কোণে হাত দিয়ে জলের অস্তিত্ব টের পেল। তাড়াতাড়ি মুছে পাশ ফিরে শুলো ও। ওকে টিকতে হবে ভর্তি পরীক্ষায়। যমদূতের খাতিরে হলেও!

——

শোরগোল, চিৎকার, আর ঢুং-ঢাং শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় অরণ্যর। ওর হাতে ঘড়ি নেই, কাজেই ও বুঝতে পারছে না কয়টা বাজে। কিন্তু বুঝতে পারছে বেশিক্ষণ ঘুমায়নি কারণ, কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় ওর মাথাটা টনটন করছে।

বিজয়ও উঠে বসেছে। জিমের বেশির ভাগ বাসিন্দারাও জেগে উঠেছে। চিৎকার – ঢুং-ঢাং শব্দ যেদিক থেকে আসছিল, সেদিকে তাকিয়ে অরণ্য দেখল বিলু নামের ছেলেটার টং-কে ঘিরে কতগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে।   

-এই ব্যাটা, তোরে ক’মাস সময় দিছি, তুই-ই ক’? তুই খালি একমাস, দুইমাস – এরকম কইরা সিট দখল কইরা বইসা আছস। এই যে এই পোলারে দ্যাখ। পুরা এক বছর হইছে, পোলাডা ফ্লোরে ঘুমাইতেছে।

-আচ্ছা, তোমরা বল, আমি কই যাব?

-তুই কই যাবি, সেইটা আমরা কেমনে কমু। তোর কাজ সিট খালি করা। তুই সিট খালি করবি। এই ফেলা। তোষক ফেলাই দে।

-দাঁড়াও, দাঁড়াও। সকালে ত ফারুকের সাথে কথা বললাম। ও তো বলছে দুই সপ্তাহ দেখবে।

-রাখেন আপনের দুই সপ্তাহ। আপনেরে সময় দিতে দিতে আমরা এখন রাস্তায় ঘুমাই।

বলেই একটা ছেলে উঠে তোষক গুটাতে শুরু করল। আরেকটা ছেলে মশারির দড়ি টেনে ছিঁড়ল। সব কিছু দলা-পাকড়া করে মেঝেতে ছুঁড়ে দিল। বিলু অসহায়ের মত ওর দলা-পাকানো তোষকের কাছে গিয়ে বলল, তোমরা এটা করতে পার না।

একটা ছেলে হঠাত করে গিয়ে বিলুর চুল ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বলল, কী কইছস? আমরা কী করতে পারি না? তুই শিখাবি আমাদের, আমরা কী পারি, আর কী পারি না?

অরণ্য ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে বিজয়ের হাতে ঠেলা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, ভাইয়া, হাবিব ভাইকে বলা যায় না?

তারও চেয়ে ফিসফিসিয়ে বিজয় বলল, চুপ কর। শুনে ফেলবে। পরে বলছি।

ওদের ভেতর থেকেই একটা ছেলে বিলুর কাছাকাছি গিয়ে বলল, এই সোহাগ, ছাড় তো! ভাই মুরব্বী মানুষ। এমনিতে চলে যাবেন। এই চল তোরা সব।

“ভাই মুরব্বী মানুষ” কথাটা শুনে হোক আর যে কারণেই হোক, বিলুর চোখ দিয়ে জল নেমে এল নিঃশব্দে।

ওরা প্রস্তুত হয়েই এসেছিল। যে ছেলেটা মেঝেতে ঘুমায় বলে বলা হচ্ছিল, তার বগলে মোড়ানো কিছু একটা ছিল। বের করতেই দেখা গেল তোষকের মত কিছু একটা। সেটা বিছিয়ে দেয়া হল খালি টং-টার উপর।

-এখন থেকে এ থাকবে এখানে। আর একটা ছেলেও আসবে – ফার্ষ্ট ইয়ার এর।

বলেই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বের হয়ে গেল ছেলেটি। সকালে বিলুর সাথে কথা বলা ফারুক ছেলেটিকে অরণ্য এদের মাঝে দেখতে পেলনা।

ওরা চলে যেতেই বিলু নিচু হয়ে খাটের নিচ থেকে ওর ট্রাঙ্কটা বের করতে গেল। চোখ থেকে জলের ধারা ছুটছিল তখনো। টিনের ট্রাঙ্কটা সিমেন্টের ফ্লোরের ঘসায় গায়ে কাঁটা দেয়ার মত শব্দ করল। কিছুটা বের করে ও আর পারছিলনা নিজেকে ধরে রাখতে। মেঝেতে দু’হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে পড়ল। পাশের টংগুলো থেকে একজন দুজন করে অনেকজন এসে ওর গায়ে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।

বিলুর চারদিকের বৃত্তাকার বন্ধুবেষ্টনীকে কিছুটা আলগা করে ঢুকল একটা ছেলে। অরণ্য চিনতে পারল, এ ছেলেটিই সেই ছেলে যার তোষক বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বিলুর টং-এ। ছেলেটা আস্তে করে বিলুর হাত ধরল।

-ভাই, উঠুন। আমি সরি, ভাই। আমার কিছু করার নাই। আপনি যে কয়দিন লাগে এখানে আমার তোষকে থাইকেন। আমি দরকার হয় এই নিচে ফ্লোরে থাকব। ভাই, আমারে মাফ কইরা দিয়েন। জানেন ত, আমার কোন হাত নাই এইটাতে ভাই।

বিলু হাঁটুর ভিতর থেকে মাথা তোলে। আস্তে করে হাত রাখে ছেলেটার কাঁধে।

-ভাই, আমারে মাফ করছেন তো, ভাই। ভাই, আপনে বদ-দোয়া দিলে ভাই আমার জীবন ছারখার হইব। আমি ভাই বুঝি নাই ওরা এমন করবে ভাই। 

বিলু আস্তে আস্তে বলল, চিন্তা করোনা ভাই। আমি তোমার উপর রাগ করি নি।

ছেলেটা আস্তে আস্তে বের হয়ে গেল জিম থেকে। মনে হয় এ পরিস্থিতিতে আর কী করবে, সেটা বুঝতে পারছিল না।

নাসির নামে টং-এর একটা ছেলে এগিয়ে এল। ও বিলুর বই-পত্র, কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিল। মোট চারটে বস্তামত হল। তোষক-চাদর-বালিশ-মশারি, ট্রাঙ্ক, বই-পত্র, আর কাপড়-চোপড়। গুছানো শেষে ও বলল, বিলু ভাই, আসেন আমার সাথে। এই, তোমরা একটু এই জিনিসগুলা নিয়া আসো।

বিলু আস্তে আস্তে বলল, কই যাব, নাসির?

-ভাই, আপনি বাকি রাতটা আমার সাথে থাকবেন। সকালে আমি আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যাব।

বিলু নাসিরের পেছন পেছন হাঁটা শুরু করল। কয়েকজন তাদের পিছু পিছু বাক্স-পেটরাগুলো নিয়ে নাসিরের টং-এর দিকে চলে গেল।

বিজয় এবার মুখ খুলল।

-এটা আরেক গ্রুপ, বুঝছিস। এটা হাবিবের গ্রুপ না। এটা হল ফারুকের গ্রুপ। হাবিব কিছু করতে পারবে না। পোলাপান এই গ্রুপরে পছন্দ করে না, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। এরা মাসল দেখায়। চাঁদাবাজি করে। এই যে এই ছেলেকে উঠায়া দিছে, এর কাছ থেকেও টাকা নেবে, আবার এ ছেলেকে দিয়ে মিছিল করাবে। ছেলেটাকে দেখছস না, কেমন শান্ত, ভদ্র? দুই বছর পরে আর এই চেহারা দেখবি না। থাক, তোর এত কিছু চিন্তা করতে হবে না। তুই একট ঘুমায়া নে। আবার উঠতে হবে। ফজরের আর বেশি বাকি নাই।

অরণ্য শুয়ে পড়ে বাধ্য ছেলের মত।

——

ফজলুল বাসেত (পুরো নাম: আবদুশ শাকুর ফজলুল ওয়াহেদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ।

বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।

পরিসংখ্যান নিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের পত্রিকায় অনিয়মিত কলাম লেখেন।

ফজলুল বাসেত

ফজলুল বাসেত (পুরো নাম: আবদুশ শাকুর ফজলুল ওয়াহেদ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক । বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। পরিসংখ্যান নিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের পত্রিকায় অনিয়মিত কলাম লেখেন।