fbpx

নভেম্বর ২, ২০২৪

আলোর ঝনঝনানি

খুব বেশি দিন আগের কথা না-
যখন এই শহরে অন্ধকার নামতে শুরু করলে
সোডিয়াম আলো হামলে পড়তো রাস্তা জুড়ে।
আর, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকতাম
পৃথিবীর সবচেয়ে মিস্টেরিয়াস আলোতে।

সোডিয়াম আলোতে একধরণের জাদু ছিল বটে!
পরিচিত রংগুলোর অদ্ভুত পরিবর্তন হতো;
তখন মনে হতো ওগুলোই যেন আসল রং।
মেরুন, লাল, খয়েরি – কিছুই চেনা যেত না।
উত্তপ্ত সূর্যের আলোতে যে রংগুলো সবসময় দেখেছি,
তা মিথ্যে মনে হতে শুরু করতো।

সেইসাথে মিথ্যে মনে হতো-
চলন-বলন, চামড়ার ধরণ,
মানুষের বিবরণ-সহ সবকিছুই।
রাতের গভীরতার সাথে যেন-
প্রহেলিকা প্রতিযোগিতার বিরাট আয়োজন।

তারপর ঝাঁ চকচকে শাদা আলো এলো;
রাস্তার সারিবদ্ধ ল্যাম্পপোস্টগুলোতে
নতুনত্ব জায়গা করে নিলো।
হারিয়ে গেলো একঝাঁক বিস্ময় একটি মাত্র মুহূর্তে।

চোখের পিউপল, কপালের ভাঁজ আর মনের ভাব-
প্রখর সূর্যের আলোতেও যতটা বিক্ষোভ করেনি কখনও;
যেন এই আলোতে তার থেকেও বেশি,
অনেক বেশি বিক্ষোভে ফেটে পড়তে শুরু করলো।
রাতগুলো বদলে গেল, জামার বোতাম গড়িয়ে গেলো,
রং-বেরং সব শুধরে নিলো।
জামার রং, চামড়ার ধরণ, সাময়িক আবরণ-
সবকিছু।
সবকিছুই শুধরে গেল।

এতকিছু শুধরে যাওয়া বা শুধরাতে চাওয়া
বদলে দিয়েছে আবেগের রং আর মনের ধরণ।
এত শুধরে গিয়ে কী লাভ হয়েছে কিংবা হয়েছে কোন ক্ষতি!?
সে হিশেব মনের আঙিনাতে মুখ থুবড়ে পড়লেও
সেই পুরোনো আলো, সেই মিস্টেরিয়াস আলোর স্মৃতিকথা
আমাকে ঘুমাতে দেয়না আজ বহুদিন।
হারিয়ে যেতে বলে-
রাজপথের নিঃসঙ্গ আইল্যান্ডে লাগানো ফুলগাছের মাঝে।

মনের এককোণে জমে ওঠা দ্রোহের এই রাতগুলোতে
একসময় ঠিকই ভোর হয়, ভোর এলে।
আরও আলোকিত হয় সবকিছু;
সূর্যের দোর্দণ্ড প্রতাপে।
এইতো, খুব বেশিদিন আগের কথা না-
যখন এই শহরে সোডিয়াম বাতির কিছু দুঃখ ছিল;
আর ছিল নিজের সাথে নিজের কিছু বিষাদ-আলাপন।