fbpx

কাশ্মীর এক বিতর্কিত উত্তরাধিকার: ১৮৪৬-১৯৯০ (১ম খণ্ড : তৃতীয় অধ্যায়)

জম্মু ও কাশ্মীর এবং বৃটিশ ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : উত্তর সীমান্ত অঞ্চলের সমস্যা

১ম অংশ
লাদাখ ও গিলগিট এজেন্সির সন্ধি সড়ক
(পূর্ববর্তী সংখ্যার পরে)

অল্প কিছু দিন আগেও একজন ভারতীয় পণ্ডিত ড. এইচ. এল. সাক্সেনা মনে করতেন যে কাশ্মীর সমস্যার গভীর মূলে রয়েছে কিছু অঞ্চলের বিষয়ে বৃটিশদের কৌশলগত স্বার্থের প্রকৃতি এবং বৃটিশদের সেই আচরণ যা দ্বারা তারা আশা করতো যে ১৯৪৭ এর ক্ষমতা হস্তান্তরের পরেও তাদের স্বার্থ তারা বজায় রাখতে পারবে। ১৮৪৬ থেকে ১৯৪৭ এর মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে যা কিছু ঘটেছে সবই কোন না কোন ভাবে এই কৌশলগত নীতির ফসল। বৃটিশরা আসলে গিলগিট এজেন্সি (অর্থাৎ গিলগিট প্রশাসনিক বিভাগ)-এর উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছিলো। গিলগিট এজেন্সি ছিলো মধ্য এশিয়া বিষয়ক মূল পর্যবেক্ষণ বিন্দু এবং ঐ দিক থেকে যেকোন শত্রু আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ফাঁড়ি।

ড. সাক্সেনা দাবি করেন যে, ভারতীয় সরকার ১৯৩১ সালে শ্রীনগরে সাম্প্রদায়িক ঝামেলাকে উস্কে দিতে শেখ আব্দুল্লাহকে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছিলো যাতে করে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। এর ফলে মহারাজা স্যার হরি সিং বৃটিশদের চাপে পড়ে গিলগিট অঞ্চল দীর্ঘ সময়ের জন্য বৃটিশদের কাছে হস্তান্তর করেন। ড. সাক্সেনা আরো মনে করতেন যে, ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেন এটা নিশ্চিত করেছিলেন যে, গিলগিট কোন ভাবেই আর জম্মু ও কাশ্মীরে ফিরে না গিয়ে বরং পাকিস্তানের হস্তগত হবে যাতে করে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর মধ্য এশিয়ার এই ফাঁড়িকে ‘অ্যাংলো-আমেরিকানরা’ তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

এক্ষেত্রে এটা দৃঢ় ভাবেই বলা যায় যে, এ সব কিছুতেই ব্যাপক তথ্য বিকৃতি ছিলো এবং প্রাপ্ত রেকর্ডসমূহ মূল তত্ত্বকে খুব বেশি সমর্থন করে না। বৃটিশরা ১৯৩০ এর শুরুর দিকে শ্রীনগরে সংঘটিত গোলমাল সৃষ্টি করেনি কিংবা ইন্ধনও দেয়নি যে বিষয়ে এ বই-এর ৫ম অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে আমরা এটাও দেখতে পাবো যে, লর্ড মাউন্টব্যাটেন গিলগিট এজেন্সিকে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের ন্যূনতম প্রচেষ্টাও নেননি; বরং তিনি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন যাতে করে এই মূল কৌশলগত অঞ্চলে চূড়ান্তভাবে ভারতীয় প্রভাব বিস্তার লাভ করে যা সফল হয়নি। ড. সাক্সেনার মতো লেখকেরা চিরদিনই উপমহাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের পিছনে বৃটিশ নীতির কালোহাতের চিহ্ন খুঁজে বেরিয়েছেন। মাউন্টব্যাটেন সে সময় পাকিস্তানের পক্ষে গিলগিট এজেন্সি ঠেলে দিতে আঙ্গুল পর্যন্ত তোলেননি যেমনটা ড. সাক্সেনা বলেছিলেন; বরং এক শতকেরও বেশি সময় ধরে বৃটিশ নীতির যে সর্বোচ্চ সীমা মাউন্টব্যাটেনকে চূড়ান্ত ভাইসরয়ের অধিকার দিয়েছিলো তা উপমহাদেশের ঐ সীমান্তের নিরাপত্তা বিধানেই নির্দেশ প্রদান করেছিলো যেটা ‘গিলগিট এজেন্সি’ প্রতিকী নামে পরিচিত; এবং ১৯৪৬ সালে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সৃষ্টি থেকে ১৯৪৭ সালে এর সঙ্কট পর্যন্ত ঐ নীতির আওতাতেই বাস্তবায়িত হচ্ছিলো।

১৮৪৬ সালে বাস্তবিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বৃটিশরা খুব সম্ভবতঃ কাশ্মীর উপত্যকা ধরে রাখতে পারতো যেটা ১০ ফেব্রুয়ারি ১৮৪৬ তারিখে সোব্রা’র যুদ্ধে শিখদের পরাজিত করে অর্জিত হয়েছিলো। তার পরিবর্তে তারা এটা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে জম্মুর রাজা গুলাব সিং-কে হস্তান্তর করেছিলো। স্যার হেনরি (পরবর্তীতে লর্ড) হার্ডিঞ্জ-এর ভারতীয় সরকারের এই সৃষ্টি উত্তরাঞ্চল সীমান্তের প্রতিরোধ হাতিয়ার হিসেবে একে কাজে লাগাতে একটা সমাধানের পথ তৈরি করেছিলো।

উত্তরাঞ্চল সীমান্ত কারাকোরাম এবং তৎসংলগ্ন উঁচু পবর্তমালার মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে যেটা তারিম অববাহিকার মধ্য দিয়ে মূল জল বিভাজিকা সৃষ্টি করেছে; এটা অভ্যন্তরীণ জল নিষ্কাষণে বিস্তার লাভ করেছে যেটা বর্তমানে চীনের সিনকিয়াং প্রদেশের অংশ এবং ইন্দু নদীর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ভারত মহাসাগরে পড়েছে। পশ্চিমে এ পবর্তমালা পামিরের (যেটা আজকের সোভিয়েত তাজিকিস্তান) এবং আফগানিস্তানের হিন্দুকুশের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে; পূর্ব দিকে এগুলো উঁচু তিব্বত মালভূমির পশ্চিম প্রান্ত ছুঁয়ে গিয়েছে যেটা উত্তরে কুনলুন আর দক্ষিণে হিমালয় দিয়ে আবদ্ধ। এই দুর্দান্ত এলাকাগুলোকে ছকবদ্ধ ভাবে চিন্তা করলে অনেকটা ইংরেজি বর্ণ H এর আদল পাওয়া যায় যার আনুভূমিক রেখা হিসেবে কারাকোরাম অবস্থান করছে দু’টো উল্লম্ব রেখার সংযোগস্থল হিসেবে।

আনুভূমিক রেখা ধরে দু’টো প্রধান রুট প্রধান জলবিভাজিকার দিকে এগিয়ে গিয়েছে। পূর্বে হচ্ছে লাদাখ রুট যেটা লাদাখের লেহ থেকে কারাকোরাম পাস (বা এর নিকটবর্তী) হয়ে খোটান, ইয়ারখন্দ (শাচি) ও শিনঝিয়াং-এর কাশগড় (কাশা) পর্যন্ত গিয়েছে। আর পশ্চিমে রয়েছে গিলগিট রুট যেটা গিলগিট থেকে ইন্দুর উপনদীর উপর দিয়ে হুনজার মধ্য দিয়ে মিনটাকা, খুনজেরাব ও পশ্চিম কারাকোরাম রেঞ্জের উপর দিয়ে কাশগড় পর্যন্ত গিয়েছে। শ্রীনগর থেকে উভয় পথেই পৌঁছানো যেত যেটা শুধুমাত্র লেহ-তে প্রবেশের সবচেয়ে সহজ রাস্তাই ছিলো না, এটা ১৯৪৭ এর আগে পর্যন্ত স্থলপথে গিলগিটে যাওয়ার যৌক্তিক যাত্রাবিন্দুও ছিলো। উভয়ই ছিলো পুরাতন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যাঞ্চলের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশ থেকে বহির্গমন পথ।

১৯৪৭ এর কাশ্মীর বিতর্কের কারণে উত্তরাঞ্চল সীমান্ত বিভক্ত হয়ে দু’টা রুট বৃটিশরাজের দুই উত্তরাধিকারের মাঝে গিয়ে পড়ে। ভারত লাদাখ রুটের মালিক বনে যায় যেটা খুব শীঘ্রিই চীন-ভারত সীমান্ত বিতর্কের পশ্চিম ভাগের সাথে জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে। চাইনিজ মধ্য এশিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়া সংক্রান্ত বৃটিশ স্বার্থের ব্যাপ্তি বিবেচনায় এ সীমান্তে আকসাই চীনকে ভারত দাবি করে বসে যেটা বর্তমানে চীনের দখলে রয়েছে। অপরদিকে, গিলগিট রুট পাকিস্তানের অধিকারে চলে আসে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এটা কারাকোরাম মহাসড়কে পরিণত হয়েছে; এটা সেই সড়ক পথ যেটা ১৯৭৮ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলে দেয়া হয়েছিলো চীন এবং আরব সাগরের মধ্যে সরাসরি সংযোগ সড়ক হিসেবে (এ বিষয়ে বিস্তারিত ১৩শ অধ্যায়ে দ্রষ্টব্য)।

১৮৪৬ সালে উত্তরাঞ্চল সীমান্তের গঠন সম্পর্কে সরকারের অনেক কিছু জানাই বাকি ছিলো। এখানকার ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বের প্রধান বিষয়ে অনেকাংশেই জানা যায় ১৮২০ এর গোড়ার দিকে উইলিয়াম মুরক্রফটের ভ্রমণ থেকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে ঘোড়া সরবরাহের উদ্দেশ্যে ১৮১২ সাল থেকে উত্তর আফগানিস্তানে ১৮২৫ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত মুরক্রফট ভারতীয় উপমহাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকা ব্যাপক ভ্রমণ করেন। এ সময় তিনি ব্যবসা, প্রাকৃতিক সম্পদ ও রাজনীতির খোঁজ খবর অনুসন্ধান করতেন। তিনি পশ্চিম তিব্বতে উলের কাঁচামাল পশমের উৎস সম্পর্কে খোঁজ খবর করেছিলেন যেটা ছিলো কাশ্মীরের মূল্যবান শাল শিল্পের ভিত্তি। তিনি কারাকোরাম পাস হয়ে লাদাখ থেকে চায়না তার্কিস্তান যাবার রুটের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন (এ রুটটাতে মির ইজ্জত উল্লাহ নামে এক সহকারী ভ্রমণ করেছিলেন)। তিনি ভারতে রাশিয়ার আগ্রহের বিষয়ে এবং শিখ শাসক রঞ্জিত সিং এর সাথে ঐক্য সম্পর্কের উল্লেখ করেছিলেন। ১৮২০-২১ সালে তিনি যখন লাদাখের রাজধানী লেহ-তে ছিলেন তখন তিনি সেখানে পরিদর্শনকারী চাইনিজ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেন। কাশ্মীর উপত্যকা দখলকারী শিখদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিষয়ে লাদাখবাসীর বৃটিশ সহযোগিতা আহ্বানসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর বিষয়ে তিনি ভারতের সরকারকে জোরালো সুপারিশ করেন। এই অঞ্চলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাব বিস্তারে সুপারিশ করতে গিয়ে তিনি যুক্তি দেখান যে, এক্ষেত্রে মধ্য এশিয়ার সমৃদ্ধ বাণিজ্যে প্রবেশের পাশাপাশি পিকিং-এর মাঞ্চু রাজবংশেও প্রবেশাধিকার সম্ভব হবে যার চেষ্টা অন্যান্য দিক থেকে অনেক দিন থেকেই প্রতিহত হয়ে আসছিলো। মুরক্রফট মুউরক্রফ্ট একজন সরকারি অনুমোদনহীন পর্যটক হলেও বৃটিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সাথে তার উঠা-বসা ছিলো। ১৮৪১ সালে তার জীবনের শেষ ছয় বছরের (১৮১৯-২৫) ঘটনা পুঞ্জি প্রকাশিত হয়। সে সময় এর ব্যাপক প্রচার হয়েছিলো এবং সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় যে, ভারত সরকারের যে সকল কর্মকর্তা কাশ্মীর উপত্যকাকে গুলাব সিং-এর কাছে বিক্রির বন্দোবস্ত করেছিলেন তারা এ প্রকাশনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন। মুরক্রফট সত্যিকার অর্থেই মধ্য এশিয়ায় বৃটিশদের বাণিজ্য আগ্রহ এবং জম্মু ও কাশ্মীর গঠনকারী এলাকাগুলো সাথে বৃটিশদের কৌশলগত সংশ্লিষ্টতা – উভয়েরই পথ-প্রদর্শক ছিলেন।

১৮৪৬ সালে কাশ্মীর উপত্যকা বিক্রির পরপরই গুলাব সিং-এর রাজত্বের এই পশ্চাৎভূমির খোঁজ খবর দাপ্তরিক ভাবে শুরু হয়। এটা শুরু হয় মূলত যখন ভারত সরকার নতুন রাজ্যেও সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি ‘সীমানা কমিশন’ প্রেরণ করে। এ সময়ে বৃটিশদের মূল আগ্রহ ছিলো পূর্ববর্তী সীমান্ত যেখানে লাদাখ তিব্বতের সাথে গিয়ে মিলেছে (যেটা গুলাব সিং ১৮৩০ সালে জয় করেছিলেন); কিন্তু পরে এ আগ্রহ স্থিমিত হয়ে আসে কারণ বৃটিশদের কাছে কোন কারণে মনে হয় যে, এ অঞ্চল চীন সাম্রাজ্যের অংশ। পরবর্তীতে ১৮৪৬-৪৭ সালে ‘সীমানা কমিশন’-এর বৃটিশ সদস্যরা তিব্বত বা চীনের অংশগ্রহণ ছাড়াই লাহুল এর প্রান্ত থেকে উত্তরের প্যাঙ্গুং লেকের পর্বত পর্যন্ত এলাকা আবিষ্কার করেন। অবশ্য অন্যান্য কিছু গবেষণামূলক পুস্তিকা জোরালো ভাবেই দাবি করে যে, তাদের অনুসন্ধান অমৃতসর চুক্তির শর্তানুযায়ী সম্পন্ন হয়নি। আর এভাবেই ১৮৪৭ সালে ‘সীমানা কমিশন’-এর একজন সদস্য ভ্যান্স অ্যাগ্নু বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্স-এর লেফটেনেন্ট ইয়ং-কে সাথে নিয়ে গুলাব সিং-এর রাজত্বের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনুপ্রবেশ করেন। এ অঞ্চলকে সুবিধাজনক ভাবে কখনো কখনো দারদিস্তান বলা হতো যেটা ছিলো কাশ্মীর উপত্যকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল প্রান্ত থেকে কারাকোরাম শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত এক গুচ্ছ পাহাড়িরাষ্ট্র। তিনি সে সময় গিলগিট পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয়েছিলেন যেটা পূর্ববর্তী শিখ কাশ্মীরের (বর্তমানে ডগরাদের কাছে হস্তান্তরিত) একটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। পরের বছর ‘সীমানা কমিশন’ এর অপর এক সদস্য প্রকৃতিবিজ্ঞানী ড. থমাস থমসন লাদাখের উত্তরে কারাকোরাম পাসে গিয়ে পৌঁছান কিন্তু তিনি কারাকোরাম অতিক্রম করে তার পেছনে থাকা চাইনিজ তুরকিস্তানে পা রাখেননি। এভাবেই ১৮৪৮ এর মধ্যে দাপ্তরিক ভাবে লাদাখ ও গিলগিট এ উভয় রুট সম্পর্কে অবহিত হয়; যদিও এ সময় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সাথে এ অঞ্চলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক সম্ভাব্যতা এবং বাস্তব প্রশাসনিক সমস্যাবলীর অনেকাংশ একেবারেই অনুদ্ঘাটিত ছিলো যেটা বৃটিশরা টেনে এনেছিলো।


১.  বিস্তারিত H. L. Saxena, The Tragedy of Kashmir, New Delhi 1975 এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য। যারা ড. সাক্সেনার দৃষ্টিভঙ্গিকে একেবারেই ফালতু বলে মনে করেন তারা পি. এন. হাকসার এর ভূমিকাসমৃদ্ধ V. D. Chopra, Genesis of Indo-Pakistan Conflict on Kashmir, New Delhi 1990 বইটি পড়ে দেখতে পারেন। চোপরা ভারতীয় প্রকাশনা Link এর সাথে জড়িত ছিলেন এবং তিনি মনে করতেন যে, ১৮৪৬ সালে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ভিত্তি থেকে ১৯৯০ এর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত কাশ্মীর গদ্যের প্রতি পরতে পরতে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র রয়েছে। এটা যদি ভারতের গণমানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে থাকে তাহলে যে কোন নির্বাচিত ভারতীয় সরকারের জন্য কাশ্মীর বিতর্কের বিষয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ ও বাস্তবসম্মত সমঝোতার আশা খুবই ক্ষীণ। যে কেউই ধরে নিতে পারেন যে এটা হবে না।
২.  লাহোরে রাজধানী করে যে শিখ সাম্রাজ্য স্থাপন করা হয় সেটা রণজিৎ সিং-এর সৃষ্টি। এটা পাঞ্জাবের উপর সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধিপত্য বিস্তার করেছিলো এবং একটি প্রাবর-রাষ্ট্র হিসেবে পূর্বের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত এলাকা ও পশ্চিমে আফগানিস্তানের মধ্যে অবস্থান করছিলো। ১৮৩৯ সালে রণজিৎ সিং-এর মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য ভাঙ্গতে শুরু করেছিলো এবং বৃটিশ সীমান্তে রাজনৈতিক হাঙ্গামার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো। এ পরিস্থিতি ১৮৪৫ এর শেষাংশে শিখ সেনাপতিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে। ১৮৪৬ এর ফেব্রুয়ারিতে সোব্রা’র যুদ্ধটি প্রাথমিক পর্যায়ে বৃটিশদের একটি অনিশ্চিত জয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৮৪৮ সালে এ যুদ্ধ আরো ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৪৮ এর শেষ ভাগে রামনগর, চিলিয়ানওয়ালা এবং গুজরাটে তিনটি চরম রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে বৃটিশরা শিখদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে দেয় এবং ১৮৪৯ এর মার্চে শিখরা চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পন করে। ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্য পাঞ্জাব পর্যন্ত বর্ধিত হয়। এভাবেই এটি বৃটিশ ভারতীয় প্রদেশে রূপান্তরিত হয় যেটা ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়েছিলো এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের পরবর্তী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলো। শিখরা যদি দলবদ্ধ থাকতো এবং বিশ্বাসঘাতকতা থেকে মুক্ত থাকতো তাহলে শিখদের দুর্দান্ত সৈন্যবাহিনী ‘খালসা’-কে জয় করা বৃটিশদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হতো; এবং বৃটিশ ভারতের ইতিহাস নিশ্চিত ভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো। এ বিষয়গুলোতে গুলাব সিং এবং ডগরাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ভারত সরকার গুলাব সিং-এর কাছে কাশ্মীর উপত্যকা বিক্রিকে সুনিশ্চিত ভাবে একটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড- হিসেবে বিবেচনা করে থাকে যেটা ছিলো ১৮শ শতক থেকে ভারতে বৃটিশ শাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ঝুঁকি হতে পারে এমন এক পক্ষের জন্য পুরষ্কার স্বরূপ। প্রথম ইংরেজ-শিখযুদ্ধ এবং কাশ্মীর উপত্যকা অর্জনে গুলাব সিং-এর ভূমিকার বিস্তারিত জানতে George MacDonald Fraser, Flashman and the Mountain of Light, London 1990 দ্রষ্টব্য। এ কাজটি খুব যথার্থ ভাবে যে পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজকে তুলে ধরেছে তার জন্য Khushwant Singh, A History of Shikhs, Volume 2, 1839-1964, Princeton, New Jersey, 1966 দ্রষ্টব্য।
৩.  W. Moorcroft & George Trebeck, ed. H. H. Prinsep, Travels in the Himalayan Provinces of Hindustan and the Punjab from 1819 to 1925, 2 vols., London 1841 দ্রষ্টব্য। মুরক্রফট-এর অর্জনগুলো নির্ভুল গবেষণার মাধ্যমে G.J. Alder এর দুইটি বই-এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে: British India’s Northern Frontier 1865-1895, London 1963, এবং Beyond Bokhara. The Life of Willian Moorcraft, Asian Explorer and Pioneer Veterinary Surgeon 1767-1825, London 1985। এছাড়াও দেখুন: J. Keay, When Men & Mountains Meet, London 1977. মুরক্রফট-এর সময় ও ১৮৪৬ এর মধ্যে বেশ কিছু ইউরোপিয়ান পর্যটক কাশ্মীর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ভ্রমণ করেন। তাদের মধ্যে ভিক্টর জ্যাকমন্ট, জোসেফ উল্ফ, ব্যারন ভন হুগেল, জন হ্যান্ডারসন, জি. টি. ভিইনিয়া এবং আলেকজ্যান্ডার গার্ডিনার এর ভ্রমণের বিস্তারিত Keay, Men & Mountains, op. cit.
৪.  ‘সীমানা কমিশন’-এর পেছনের ইতিহাস জানতে বিস্তারিত দেখুন: A. Lamb, British India and Tibet 1766-1910, London 1986, Ch. III. আরও দেখুন: A. Cunningham, Ladak, Physical, Statistical and Historical, London 1954; H. Strachey, The Physical Geography of Western Tibet, London 1953. অমৃতসর চুক্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে এ ধরনের একটি ‘সীমান কমিশন’-এর উল্লেখ রয়েছে যেটা (চীন ও তিব্বতের সাথে) নতুন রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সীমানা নির্ধারণ করবে।
৫.  ভ্যান্স অ্যাগ্নু তার সফরের কোন দলিল রেখে যাননি। ড. জি. ডব্লিউ লেইটনার ছিলেন গিলগিট ভ্রমণকারী প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি ঐ স্থানের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছিলেন এবং তিনি ১৮৬৬ সালে সেখানে গিয়েছিলেন। ‘দারদিস্তান’ শব্দটি ব্যবহারে লেইটনারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি তার ভাষা বিষয়ক বিশ্লেষণ দ্বারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে বিশ্বের এ অঞ্চলের অধিবাসীরা পৃথক একটি গোষ্ঠীর ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে থাকেন। লেইটনার এটাও উল্লেখ করেন যে, এ লোকগুলো ভারতীয়, তুর্কি বা তিব্বতীয় জাতিগোষ্ঠীর অংশ নয়, বরং সম্পূর্ণ নিজস্ব অন্য একটি গোষ্ঠী। তিনি পরবর্তীতে এঁদেরকে ‘দার্দ’ নামে অভিহিত করেন। এ কারণে জন কেএ বলেছেন, “the Daradas of Sanskrit literature and the Daradae of classical geographers”. John Keay, The Gilgit Game. The Explorers of the Western Himalayas 1865-95,London 1979 দ্রষ্টব্য। ড. লেইটনার দারদিস্তান-এর উপর বিষদ লিখেছেন। দৃষ্টান্তরূপে দেখুন: G. W. Leitner, The Languages and Races of Dardistan, Lahore 1877.
৬.  থমসনের বর্ণনার জন্য T. Thomson, Western Himalaya and Tibet, London 1853 (reprinted, New Delhi 1978)।
ব্যবস্থাপক |

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০