fbpx

উলট চণ্ডাল

উলট চণ্ডাল বা গ্লোরিওসা সুপারবা (বৈজ্ঞানিক নাম: Gloriosa superba)

উলট চণ্ডাল বা গ্লোরি লিলি সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি প্রজাতি। ইংরেজিতে এর অনেক নাম রয়েছে যার মধ্যে ফ্রেইম লিলি, ক্লাইমবিং লিলি, ক্রিপিং লিলি, গ্লোরিওসা লিলি, টাইগার ক্লাও এবং ফায়ার লিলি অন্যতম। আগুনের শিখার মতো সুন্দর দেখতে এই লিলিকে ভালোবেসে অগ্নিশিখা নাম দিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উলট চণ্ডাল গাছের মূল কন্দের মতো। প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ গুলোর কন্দের আকৃতি লাঙ্গলের মতো এবং প্রচণ্ড বিষাক্ত বলে এর আরেক নাম বিষ লাঙ্গুলি। উলট চণ্ডাল জন্মাতে তেমন কোনো যত্নের বা উর্বর মাটির দরকার হয় না।

67318965 463721490853496 2270471638543761408 n

উলট চণ্ডাল এক ধরনের লতানো গাঠ, যা পাতার ডগায় অবস্থিত আকর্ষির সাহায্যে অন্য গাছ বা অবলম্বন বেয়ে বেয়ে ওঠে। গাছটির মূল মাটির নিচে থাকে, বর্ষার পানি পড়লে মূল থেকে গাছ বের হয়। এই ফুলের গাছ ৬ ফুট থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কিছুটা ছায়া অথবা যেখানে সব সময় সূর্যালোক থাকে এমন জায়গায় এই গাছ হয়। গাছ দেখতে আগা গোড়াই খুব সুন্দর।

আমাদের দেশে উলট চণ্ডালের যে প্রজাতিটি সাধারণত দেখা যায়, তার ফুলের রং কলি অবস্থায় সবুজাভ হলুদ, ফোটার পর পাপড়ির গোড়ার দিকটা হলুদ আর আগার দিক উজ্জ্বল লাল রঙের। ২/৩ দিন পুরোনো হলে ফুল পুরোপুরি লাল রং ধারণ করে। কোঁকড়ানো পাপড়ি গুলো দেখলে প্রথমেই করলার কথা মনে পড়ে। একটি ফুলে ৬টি পাপড়ি থাকে। ৩ থেকে ৩.৫ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পাপড়ি গুলো উল্টানো অবস্থায় থাকে বলেই বোধ হয় এর নাম উলট চণ্ডাল। প্রায় পাপড়ির সমান লম্বা পরাগদণ্ডের মাথায় চ্যাপ্টা পরাগথলিতে উজ্জ্বল হলুদ রঙের পরাগ থাকে। প্রজাপতি বা পাখির মাধ্যমে পরাগায়ন হয়। পরাগায়ন হলে ফুল শেষে বীজ হয়। বীজ পরিপক্ক হলে আকর্ষণীয় লাল রং ধারণ করে। বীজ পাকলে বীজাধার ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ে। বীজ হবার পর গাছ মরে যায়, কিন্তু এর কন্দ মাটির নিচে অক্ষত থাকে, যা থেকে পরের বছর আবার গাছ হয়। বীজ থেকে নতুন উদ্ভিদের জন্ম। এছাড়া কন্দ বিভাজনের মাধ্যমেও বংশ বিস্তার হয়।

67543306 2387667414890803 5401907104074170368 n

মূল থেকে শুরু করে এই গাছের সমস্ত অংশ বিষাক্ত। বিশেষ করে উলট চণ্ডালের কন্দ এতটাই বিষাক্ত যে খেয়ে ফেললে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা মানুষ বা অন্যান্য প্রাণির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। অল্প পরিমাণে খেলে বমি ভাব, বমি, অসাড়তা, মুখ বা গলা জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

দীর্ঘ দিন যাবৎ আয়ুর্বেদিক বা সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিতে উলট চণ্ডাল ব্যবহৃত হচ্ছে। গাউট, ক্ষত, সাপের কামড়, আলসার, আর্থরাইটিস, কলেরা, কুষ্ঠ ইত্যাদি অনেক রোগের চিকিৎসায় এই উদ্ভিদের ব্যবহার আছে। নাইজেরিয়ার আদি অধিবাসীরা তীরের মাথায় এর বিষ লাগিয়ে ব্যবহার করতো। ভারতে সাপ তাড়ানোর জন্য এর ব্যবহার আছে। বীজ এবং কন্দ উভয়ই পাউডার আকারে বা তেল হিসেবে বিক্রি হয়।

67580354 722390291529472 5141400758998007808 n

ভারতে কিছু কিছু এলাকায় এর চাষ হয় ঔষধে ব্যবহার করবার জন্য। তবে এখনো ঔষধ তৈরিতে প্রয়োজনীয় উদ্ভিদের সিংহভাগ আসে বন থেকে। এই কারণে শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের অনেক জায়গা থেকে এই উদ্ভিদ এখন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার সিঙ্গাপুরসহ আরো কিছু জায়গায় এই গাছ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে উলট চণ্ডাল বনে জঙ্গলে এমনিতেই জন্মে। অনেক সৌখিন বাগানীর বাগানেও শোভা বাড়ায় এই সুন্দর গাছটি। এটি জিম্বাবুয়ের জাতীয় ফুল এবং ভারতের তামিল নাড়ু প্রদেশের জাতীয় ফুল। ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০টি ফুলের তালিকায় উলট চণ্ডালের অবস্থান ষষ্ঠ।

কভার ছবি কৃতজ্ঞতা: নাজমা সুলতানা

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩

জাহিদা গুলশান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩