fbpx

মধু মঞ্জরী

(Combretum indicum)

“ওগো বধূ সুন্দরী
তুমি মধু মঞ্জরী”

মধুমঞ্জরী ফুল দেখেনি, এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। তবে আমাদের খুব চেনা এই ফুলটিকে অনেকেই ভুল করে মাধবী লতা বলে ডাকেন। প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মার বই পড়ে সেই স্কুলে থাকতে জেনেছি,  মাধবীলতা ও মধুমঞ্জরী দুটি সম্পূর্ণ পৃথক প্রজাতির লতা গাছ।  মাধবী লতার কথা বলেছি  papyrus এর জুন ,২০১৯ সংখ্যায় । আজ মধুমঞ্জরী কে নিয়ে বলি।

মধু মঞ্জরী  Combretaceae পরিবারের  অন্তর্ভুক্ত বহুবর্ষজীবী লতানো গাছ। ইংরেজিতে এর নাম  Chinese honeysuckle বা Rangoon creeper ।  হিন্দি নাম রঙ্গন-কা-বেল। বোম্বে অঞ্চলে বারমাসীলাল চামেলী।   এর আদি বাসস্থান দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইন্দো-মালয়েশিয়া। ফিলিপাইন, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এই সব ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই গাছ ভালো জন্মে।  কেউ কেউ মনে করেন, এটি মালয় দেশের গাছ এবং সেখান থেকে ভারত বা বাংলাদেশে এনে লাগানো হয়েছে। তবে মধুমঞ্জরী আমাদের দেশে বাগান সজ্জায় এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে তাকে আর ভিনদেশি ভাবার উপায় নেই।

78782282 2498378143760042 4744603419308720128 n

মধুমঞ্জরীর লতা খুব শক্ত , ধূসর রঙের, কয়েক বছর হয়ে গেলে মোটা হয়ে মোচড়ানো, দড়ির মতো হয়। খসখসে সবুজ রঙের পাতাগুলি  বিপরীত দিকে সাজানো থাকে। পাতা আয়তকার, ডিম্বাকৃতি ও অগ্রভাগ সরু; পাতার কিনারা কখনো হালকা ঢেউ খেলানো এবং একটু খসখসে।   মধুমঞ্জরী  ফুল থোকায় থোকায় ফোটে,  ফুলের রঙ সাদা থেকে ধীরে ধীরে বদল হয়ে  গোলাপি  ও শেষে লাল হয় । ফুলের  পাপড়ি ৫ টি। ফুলে  মৃদু সুগন্ধ আছে । বিচিত্র  রঙের জন্য এই ফুল প্রজাপতি আর  মৌমাছিদের খুব প্রিয় ।

মধুমঞ্জরী বারোমাসি ফুল গাছ, সারা বছর কিছু দিন পরপর ফুল ফোটে। বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ। মধুমঞ্জরীর গোড়া এবং শেকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। লতা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয়। খুব ক্বচিৎ ফল হয়। মধুমঞ্জরী কষ্টসহিষ্ণু গাছ। সহজে মরে না। ইট কাঠের ঢাকা শহরে অনেক বহুতল ভবনের গা বেয়ে নিচে থেকে ছাদ পর্যন্ত  এই গাছ শোভা ছড়াতে দেখা যায়। কুঞ্জ তৈরির জন্যে  মধু মঞ্জরী আদর্শ গাছ। মধুমঞ্জরী শুধু একটি দৃষ্টিনন্দন ফুল নয়, ভেষজ চিকিৎসাতেও এটি ব্যবহৃত হয়। এর বীজ পরজীবীর জন্য বিষাক্ত এবং পাচনতন্ত্রে পরজীবীকে হত্যা করে। চীনের স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতিতে মূল, বীজ বা ফলের নির্যাস অ্যান্টিহেলমিন্টিক হিসাবে পরজীবী কীট নির্মূল করতে বা ডায়রিয়া দূরীকরণের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে জানা যায়। ফলের নির্যাস গারগলিংয়ের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। নেফ্রাইটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মধুমঞ্জরীর ফল ব্যবহৃত হয় । জ্বর জনিত ব্যথার উপশম করতে পাতার ব্যবহার আছে । বাতজনিত চিকিৎসার জন্য মধুমঞ্জরীর শিকড় ব্যবহৃত হয়।

80188553 456817498351172 6989604935419559936 n

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩

জাহিদা গুলশান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩