fbpx

নভেম্বর ১০, ২০২৪

ধোঁকা

(১)

সকাল ৯ঃ৪২। 

আর মাত্র আঠারো মিনিট আছে আমার হাতে। এর মধ্যে আমাকে অফিসে পৌঁছাতে হবে। বাসা থেকে বের হয়ে দশ মিনিট হেঁটে চৌরাস্তা যেতে হয়। তারপর চৌরাস্তা থেকে টেম্পোতে আরও পনেরো-সতেরো মিনিট যেতে হবে। আজ সময় আরও সংক্ষিপ্ত। তাই অটোরিকশাতেই পুরো পথটা যেতে হবে। বাসার সামনেই মেইন রোড। সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি হবার পর এখনো তার রেশ কাটেনি। তাই এদিকের ব্যস্ত রাস্তাটাও ফাঁকা। অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করে আরও দেড় মিনিট কাটিয়ে দিলাম। এই দেড় মিনিটের অপেক্ষা আমাকে অন্য একজনের অপেক্ষার শেষ প্রান্তে নিয়ে দাঁড় করাবে তা তখনও বুঝিনি। 

যখন বুঝলাম এখানে দাঁড়িয়ে থাকা বোকামি হবে, বরং হেঁটে সামনে যাওয়াই সময় বাঁচাবে তখনই একটা অটোরিকশা এলো। শুধু এলোই না; রীতিমত আমার পাশে এসে থামলো। পেছনে দুজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ বসা আর সামনে চালকের আসনে বসে রিকশা চালাচ্ছেন স্বয়ং এক মহিলা! এসময়ে মহিলারা প্রায় সকল পেশাতেই সমানে কাজ করে যাচ্ছে। তাই বিষয়টি দৃষ্টিকটু মনে হওয়াও ঠিক না। তবে এমন একটা শহরে অবশ্যই অদ্ভুত মনে হতে পারে। আমারও তাই মনে হয়েছে প্রথমে। মুখে বড় একটা ঘোমটা টানা। সকলের কাছ থেকে নিজেকে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা আরকি। 

“উঠে পড়ুুন।” নিজের সিটের পাশের ফাঁকা জায়গা দেখিয়ে বললো মেয়েটি। 

বলে রাখা ভালো এখানের অটোরিকশা গুলো প্রচলিত রিকশার মতো নয়। বির্বতিত রিকশা। পেছনের সিটে যাত্রী নেওয়া যায়। আর সাথে চালকের আসনও বেশ চওড়া। চালকের পাশে আরামসে একজন বাড়তি যাত্রী নিয়ে যাওয়া যায়। তবে মেয়েটির নিজেকে লুকানোর চেষ্টা দেখে মনে হয় না যে সে তার পাশে কোন যাত্রী নিয়ে যায়। মুহূর্তেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। তার অবস্থা দেখে মনে হয়না সে আমাকে না নিয়ে যাবো। অগত্যা আমি চুপচাপ বসে পড়লাম। আমার অফিসে পৌঁছানো জরুরি। 

সামনের চৌরাস্তায় ঐ দুজন যাত্রী নেমে যায়। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। সাথেসাথে পিছনে গিয়ে বসি। লোক দুজন যাওয়ার পর একটা পরিচিত কন্ঠ কথা বলে উঠলো।।

“কোথায় যাবেন আপনি?”

আরে তাইতো! এর আগে খেয়াল করি নি। মেয়েটার গলাটা চেনা ঠেকলো। যদিও কন্ঠে একটা গভীর জড়তা মোড়ানো। যেই মেয়ে এমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এক অটোরিকশা নিয়ে জীবিকা অর্জনে নেমে পরে তার কন্ঠে জড়তা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক মেয়েদের কন্ঠে অভ্যস্ত হওয়ায় মেয়েটিকে গলার স্বর দিয়ে চেনা সম্ভব হলো না।

“চকের মোড়”, র্নিজীব গলায় উত্তর দিলাম।

মেয়েটি আর কথা না বাড়িয়ে চলতে লাগলো। নয়টা আটচল্লিশ বাজে। বারো মিনিটের মধ্যে অফিসে যাওয়া যাবে। যদিও সে নিয়ে আমার এখন কোন ভাবনা নেই। আমার ভাবনাতে শুধু এখন মেয়েটি। 

কোনো অটোরিকশা চালিকার সাথে আমার পূর্ব পরিচয় থাকতে পারে এমনটা হবার সম্ভাবনা নেই খুব একটা। ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় থাকি। কোথাও ঘুরাঘুরি করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার ছিলো না তাই ঢাকার বাহিরে যাওয়াও হয় নি তেমন একটা। চাকরিসূত্রে গত চারমাস ঢাকা ছেড়ে মফস্বলে থাকতে হচ্ছে। তবুও এমন কোনো মেয়ের সাথে পূর্ব পরিচয় থাকার কথা না।

কৌতুহল সংবরণ করতে না পেরে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম।

“কিছু মনে করো না, তোমার নাম কী?” যদিও এমন বেকুবের মতো কোনো মেয়েকে নাম জিজ্ঞেস করা ঠিক হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার  ছিলো না।

“আজ্ঞে শিউলি।”

না! অচেনা ঠেকলো নামটা। কন্ঠ যে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো ইউনিক হবে এমন কোথাও লেখা নাই। হালকা হতে চেষ্টা করলাম।

মেয়েটা হয়তো বুঝতে পেরেছে বিষয়টা। আবার সেই জড়তার সাথে মোটা গলায় বলে উঠলো, “শিউলি, বরিশালের শিউলি।”

আমি নির্বাক হয়ে বসে থাকলাম। কী বলা উচিত তাও জানা নাই। বিবেচনা বোধের বাহিরে এটা। শিউলি এখানে কেন! তাও এভাবে, অটোরিকশার চাকা ঘোরাচ্ছে নিজের জীবনের কাটা ঘোরানোর জন্য! 

(২)

শিউলির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো আনুমানিক চার-পাঁচ বছর আগে। বাসার বড় ছেলে হবার সুবাদে বাবাকে নানা কাজে সাহায্য করা লাগে। বাবার আড়াই একরের মতো জমি ছিলো বরিশালে।  উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি। সেবার বাবা চাচ্ছিলেন জমিটি ছেড়ে দিতে, বিক্রি করতে আরকি। ভার্সিটি বন্ধ থাকায় আর বাবাও ব্যস্ত থাকায় সব দায়িত্ব পড়লো আমার ঘাড়ে। জমিজমার কাজ সারতে শেষমেশ আমাকেই বরিশাল গিয়ে উপস্থিত হতে হলো!

বাবার জমিটি একটা গ্রামে ছিলো। আমরা যাকে বলি অজপাড়াগাঁ। বড় এক তিনতলা লঞ্চে করে ভোরে বরিশাল পৌঁছানো এবং সিএনজি করে বাবার সেই গ্রামে যাওয়া। বাবা আগের থেকেই থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন তার এক দূর সম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের বাসায়। চাচার নাম জামিল। গ্রামের পরিস্থিতিতে স্বচ্ছল বলা যায়। বাবা জামিল চাচার ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েছিলেন। পথে কয়েকবার কথা হয়েছিলো ওনার সাথে। লঞ্চ থেকে নেমেও কথা হয়েছে। গ্রামের ভেতর ঢুকতেই একটা টং এর সামনে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমি অবশ্য তাকে চিনতে পারি নাই। তিনিই সিএনজি দাঁড়া করিয়ে আমাকে খুঁজেছিলেন।

তখন জামিল চাচার সাথে তার বাসায় যাই। তার বাসাটা টিনশেড ঘর। ইটের দেয়াল আর রঙ্গিন  টিনের চাল। এ গ্রামে যা দেখলাম তাতে এমন ঘর হাতে গোনা। প্রায় সবই টিনের। খুঁজলে হয়তো মাটির ঘরও পাওয়া যেতে পারে! জামিল চাচার বাড়িতে তিনটি বাসা ছিলো। অর্থাৎ আরো দুইটি পরিবার। জামিল চাচার ঘরে অবশ্য তিনি আর চাচি ছাড়া কেউ থাকতো না। অন্য দুই পরিবারের ব্যাপারে তখনও কিছু জানতাম না।

সকালের নাস্তা করে চাচাকে নিয়ে জমিটা দেখতে গেলাম। চাচার বাসা থেকে পাঁচ-সাত মিনিট মাটির পথ ধরে হাঁটলে জামির সামনে উপস্থিত হওয়া যায়। জমিটা দেখলাম। তারপর গেলাম এলাকার এক ব্যবসায়ীর বাসায়। তিনি জমিটা কিনতে আগ্রহী। দামও বেশ ভালোই দিতে চাচ্ছিলো। বাবা বলেছিলেন সব দেখে যদি ভালো মনে হয় তবে তাকেই যেন দিয়ে দেই জমিখানা। তার সাথে কথা বলে ভালো মনে হয়েছিলো। তাছাড়া জামিল চাচাও বলেছিলেন লোক ভালো। অন্তত টাকা নিয়ে ঝামেলা করবে না। যাইহোক টাকার অঙ্কটা মোটামুটি পাকা করে জামিল চাচার বাড়ি ফিরলাম। ততক্ষণে দুপুর হয়ে আসলো। কাজের অগ্রগতিতে মনে হলো কাল-পরশুর মধ্যেই আবার ঢাকা ফিরতে পারবো।

চাচার বাসায় এসে বুঝলাম ঘরের ভেতর নেট পাওয়া দুষ্কর। গ্রামে এমন সমস্যা হয় তা আগেই জানা ছিলো। জামিল চাচা অবশ্য বললেন পাশের পুকুর পাড়ে বসে নাকি মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়। এর থেকে উপায় না পেয়ে বসে গেলাম পুকুর পাড়ে। পুকুরের খানিকটা সামনে যাওয়ার জন্য ৩-৪টা বাঁশ বাঁধা আছে। আসলে এগুলোকে কী বলে তা আমার জানা নেই। আমি একদম ভেতরের দিকে বসে রইলাম। হাতে মোবাইল ফোন আর কানে হেডফোন গোঁজা। সামনে একটা কাঁঠাল গাছের উপর থেকে একটা পাখির ডাক ভেসে আসছিলো। পশুপাখির ব্যাপারে অজ্ঞ হওয়াতে নাম বলতে পারলাম না। তখনই সে আসলো। হাতে কিছু ময়লা বাসন হবে। আমাকে দেখে হয়তো বেশ কিছুটা বিব্রত হয়েছিলো। কিন্তু আমি আহাম্মকের মতো বসে রইলাম। সেও ঐ বাঁশের পাটাতনের উপর এসে বসলো। হ্যাঁ, শিউলি সেই প্রথম বারের মতো আমার পাশে বসলো। যদিও দূরত্ব কয়েক ফিটের ছিলো যা সময়ের সমানুপাতিক হয়ে আজ অসীমে দাঁড়িয়েছে। 

দুপুরের খাবারের পর বিছানায় শুয়ে ছিলাম। আমার একটা নেশা আছে, ফটোগ্রাফি। সময় পেলেই শহরের নানা ঢঙ্গের ইট-সিমেন্টে বন্দি জীবনের ছবি তুলে বেড়াই। এবারই প্রথম সুযোগ পেলাম সত্যিকারের আকাশের ছবি তোলার যেখানে উঁচু বিল্ডিং-এর আহাম্মকী মাথা ফ্রেমে ঢুকে ছবিটি কৃত্রিম করে তুলবে না। গাছের ফাঁকে ইট ধরা পরে নি। আহ্, শান্তি! হঠাৎ কোথা থেকে আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে আমার কাছে হাজির হলো! ওরে আপেক্ষিকতা! চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আপেক্ষিকতার সূত্র বলতে লাগলো নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে।

তবে এই আইনস্টাইনের গলা একটা মেয়ের গলা। এখন পড়াশোনার ব্যাপারটা সবার কাছেই গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে এমন অজপাড়াগাঁয় হঠাৎ কোনো মেয়ের গলাতে আইনস্টাইনের সুর শুনতে পাওয়াতে আঁকড়ে উঠলাম। জানালা দিয়ে দেখি পাশের ঘর থেকে আওয়াজ আসছে। একটু আগের সেই মেয়েটা। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য লাগলো। কিছু সময় বিছানায় বসে ওর এই জোর গলা শুনে চাচার বাসার থেকে বের হলাম। মেয়েটা ওদের ঘরের সামনের রুমে বসে পড়ছিলো। তাই বিনা সংকোচে ঘরের ভেতর ঢুকলাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়েটি তার মাইক বন্ধ করলো। আমি তার থেকে কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কিসে পড়ো?”

“ইন্টারে, ফাস্ট ইয়ার।”

“প্রথম বর্ষ? মানে তো মাস দুই আগেই ক্লাস শুরু হয়েছে? এখনই আপেক্ষিকতা পড়তেছো?”

“আমার সব বই-ই মোটামুটি শেষ, একবার করে শেষ।”

বলে কী মেয়েটা! দুমাসে কোর্স কমপ্লিট! আজগুবি মনে হলো।

মেয়েটি থেমে আবার বলতে লাগলো, “আমিতো এক বছর আগেই ইন্টারে উঠছি। আব্বায় ইয়ার ফাইনালের টাকা দেয় নাই তাই পরীক্ষা দিতে পারি নাই।”

“কেন দেয় নাই?”

মেয়েটি চুপ করে রইলো। পুনরায় আহাম্মকী কাজ করলাম বোধ হয়। “তোমার নাম?”

“শিউলি।”

এটাই ছিলো শিউলির সাথে আমার প্রথম কথোপকথন। তারপর আরও কিছু কথা বলে ওদের ঘর থেকে বিদায় নিলাম।

বিকাল বেলা বারান্দায় বসে ছিলাম ক্যামেরাটা নিয়ে। উদ্দেশ্য ছবি তুলতে বের হবো। জামিল চাচা বাসায় নেই। থাকলে সুবিধা হতো। জায়গাগুলো দেখাতে পারতো আরকি। তখনই শিউলি সামনে এসে দাঁড়ালো।

“আপনে ছবি তোলেন?”

“একটু-আধটু তোলা হয় আরকি।”

“কিসের ছবি তোলেন?”

“যা পাই তাই তুলি। কখনও মানুষ আবার কখনো শহরের জঞ্জাল।”

“মোগো এহানেও একজন আছে। ছবি টবি তোলে। মাইয়াগো” – মেয়েটি অনেক চেষ্টা করছিলো বিশুদ্ধ বাংলা বলার জন্য। এখন সে ব্যর্থ হলো। “সুন্দর মেয়েদের ছবি তোলে।”

“তোমার ছবি তুলেছে?”

“না। আমার ছবি তুলবে ক্যান? আমি কি ফর্সা নাকি?”

আমি হাসলাম। “চলো আমিই তুলবো তোমার ছবি।”

শিউলি না করলো না, বরং খুশি হলো। হয়তো ও নিজেও চাচ্ছিলো ছবি তুলতে। ওকে নিয়ে পুকুর পাড়ে গেলাম। আমিও ছবি তুললাম। সারাক্ষণই ওর মুখে একটা চাপা হাসি লেগে ছিলো। মেয়েটি ফর্সা নয়। কিন্তু অসুন্দর বা সৌন্দর্যের কোন ঘাটতি আছে তাও বলা যাবে না। প্রাণোচ্ছল শিউলিকে যে কেউ পছন্দ করবে। ও আমাকে কাছের নানান জায়গা ঘুরিয়ে দেখালো। আমি ব্যস্ত ছিলাম ক্যমেরার লেন্সে উঁকি দিতে। সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসলাম দুজনে। ও ওর ঘরে গেলো। আমি জামিল চাচার ঘরের বারান্দায় বসলাম। একটু পরেই অবশ্য শিউলি আসলো ছবিগুলো দেখতে। ছবিগুলো আমার মোবাইলে কপি করে নিয়েছিলাম। শিউলিকে দেখতে দিলাম। 

“আচ্ছা তুমি কী হতে চাও?”

“অ্যস্ট্রো ফিজিক্সে পড়তে চাই।”

“তাই? আমিতো ফিজিক্সেই পড়ি। জাবিতে; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।”

“হুম, জামিল চাচায় কইসে।” হালকা থেমে, “আপনে নাকি অনেক ভালো ছাত্র।”

আমি পাত্তা না দিয়েই কথা ঘোরালাম। “প্রেম করা হয়?”

শিউলি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। “না, এইসব ভুলেও না। আব্বায় জানলে আমারে খাইয়া ফেলবো।”

“আরে এসব এখন হয়তো।”

“আপনেগো শহরে হয়। মোগো এইখানে এসব করলে বিচার-শালিস হয়।”

“আচ্ছা তাহলে চলো আমরা প্রেম করে সবাইকে দেখিয়ে দেই।” হাসি দিলাম।

“আপনে এমন মশকরা করবেন না।” শিউলি বিরক্ত হলো না ভয় পেলো বোঝা গেলো না।

আমি হাসলাম। আরও কিছু কথা হলো। একটু পরপর চাচিও আমাদের কথায় যোগ দেন। এভাবেই আরও চব্বিশটি ঘণ্টা অতিবাহিত করলাম বেশ ভালোভাবেই। শিউলিও আমার সঙ্গ উপভোগ করছিলো। আমারও বেশ ভালো লাগা শুরু হলো, আকর্ষণ শুরু হলো শিউলিকে ঘিরে। পরের দিনও ওর সাথেই সময় কাটিয়েছিলাম। সকালে নদীর পাড়ে গেলাম, তারপর বিলে, তারপর? আরও অনেক জায়গায় নিয়ে গেলো শিউলি আমাকে।

তবে ওর মধ্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা বড় হবার। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পূর্ণতা দেওয়ার। সব ঠিকঠাক থাকলে পারতোও হয়তো। কিন্তু সেদিন রাতেই বিপত্তি আসলো। ঘোরতর বিপত্তি! 

সন্ধ্যার একটু পরেই শিউলির বাবা জামিল চাচার বাসায় আসলো। আমি চাচার সাথে জমি নিয়ে কথা বলছিলাম। আগামীকালই জমি বিক্রির টাকা পাওয়া যাবে। তাহলে কালই ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতে পারবো। জামিল চাচা শিউলির বাবাকে দেখে নজর তার দিকেই সরালো।

“আরে রহমত মিয়া, এই সময়ে কী মনে কইরা?”

“আজ্ঞে, মোগো শিউলির লেগা একখান পোলা দেখছি। ভালো পোলা, নাম বাচ্চু। গাছতলা বাজারের উপর মুদি দোকান আছে। পোলা-আলারা ওরে দেখতে আইবো। আপনেও যদি আইতেন।”

জামিল চাচা হয়তো ছেলেটিকে চিনে। “গাছতলার বাচ্চু!” বলে এমন ভাবে শব্দ করলো যেন আকাশ থেকে পড়েছেন তিনি। আর কিছু বললেন না। হয়তো বলে লাভও হতো না। রহমত লোকটা গোঁয়ার টাইপের। কারো কথা কানে তোলে না। নেশা করারও অভ্যাস আছে বোধহয়। যদিও শিউলি কিছু বলে নি। তারপরও এটা বোঝা যায় যে মানুষটা বাপ হলেও মেয়েকে শান্তিতে রাখেনি। শিউলির আবার মা নেই। রহমত মিয়া যাওয়ার সময় আমাকেও বলে গেলো যাওয়ার জন্য চাচার সাথে। আমি নীরবে সম্মতি দিলাম।

সন্ধ্যার একটু পরপর ছেলে তার এক মামাতো ভাই আর এক বন্ধু নিয়ে শিউলিকে দেখতে আসলো। তারা চেয়ারে বসলো। জামিল চাচাও চেয়ারে বসা। আমি তাদের সামনে পা নামিয়ে খাটের উপর বসে রইলাম। আমার পাশে অন্য ঘরের ষাটোর্ধ এক মুরুব্বি বসা। ছেলের বয়স চল্লিশ ছাড়িয়েছে। আগে একটা বউ ছিলো। মারা গেছে তিনমাস হলো। বাচ্চা হয়নি কোন। মাথায় চকচকে টাক। শিউলি এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করবে! 

জামিল চাচি শিউলিকে নিয়ে আসলো। শাড়ি পড়া, লাল শাড়ি। শ্যামলা মেয়েরা শাড়িতে মারাত্মক রকমের একটা সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম। শিউলি একটা চেয়ারে বসলো। সরকারি-বেসরকারি যে কোন চাকরির মতোই একটা ভাইবা বোর্ডের আয়োজন করা হলো ছেলেদের পক্ষ থেকে।

“এই, তুমি রান্না জানো?”

“হ্যাঁ।”

“এই, তুমি হাতের কাজ পারো?”

“হ্যাঁ।”

“এই, তুমি একটু হেঁটে দেখাও তো।”

( শিউলি নম্রতা সহকারে তার হাঁটার ভঙ্গি দেখালো। )

“ওই পড়াশোনা জানো না তো আবার?” (এতো সময় পর ছেলে তার প্রথম প্রশ্ন ছাড়লো।)

“হ্যাঁ, জানি।”

“উহ্। মেয়েছেলে শিক্ষিত হইলে ঘরের কাজ করতে চায় না।” ( ছেলের ভাই বললো )

রহমত মিয়া অবশ্য সফল ভাবে ভুলত্রুটির সমাধান দিচ্ছিলো। আরও দশ মিনিট ধরে নানান উদ্ভট প্রশ্ন চলতে লাগলো। শিউলিও চাকুরিপ্রার্থীর মতো সব উত্তর দিতে লাগলো। অবশেষে ছেলের পক্ষ থেকে ফলাফল ঘোষণার পালা। ফলাফল অনুকূলে ছিলো। শিউলি উত্তীর্ণ হলো। এবার তার বিয়ের ফুল ফুটলো। 

ছেলেপক্ষ বিদায় নিলো। আগামী পরশু বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। আমরাও বাসায় চলে আসলাম। ছেলে যেমনই হোক আমি মনে করেছিলাম শিউলির সায় আছে বিয়েতে। তবে ভুল প্রমাণিত হতে এক রাতের বেশি সময় লাগলো না।

পরের দিন সকালে শিউলি আমার কাছে আসলো না। অগত্যা আমিই গেলাম তার ঘরে, তার খোঁজে। 

“অভিনন্দন নতুন জীবনের জন্য।”

“আপনে এইসব বইলেন না আমারে।”

“কেন? আগামীকালই তো তোমার বিয়ে। জামিল চাচাও বেশ জোরাজুরি করলো তোমার বিয়েতে থেকে যাওয়ার জন্য। তাই আমাকেও থাকতে হবে। আর আমি তোমার বিয়েতে সুন্দর করে ছবি তুলে দিবো, অনেকগুলো।”

“বিয়াডা আমি চাই না।”

“কেন? ছেলে ভালো লাগে নাই? তোমার আব্বু তো বললো ছেলে অনেক ভালো, ভদ্র।”

“ভদ্র না ছাই! মদ খাইয়া পইরা থাকে। আগের বউডারেও মারছে। আমার মরার ইচ্ছা নাই। আর আমারে পড়ালেখাও করতে দিবে না। আমি এখনই সব বন্ধ কইরা ঘরে বইসা থাকতে চাই না।”

ঘোরতর সমস্যা। কিন্তু আমার কিছু করণীয় আছে বলে মনে হয় না। কোনো সমাধানও নাই মাথাতে। অবশিষ্ট ছিলো সান্ত্বনা দেওয়া। ভালো কিছুর আশা রাখতে বলা। যদিও এমন ছেলেকে বিয়ে করলে ভালো কিছু হবে বলে মনে হয় না। তারপরও সান্ত্বনা দিলাম। 

দুপুরের দিকে শিউলি একটা কাগজে কিছু একটা লিখে পাঠালো। প্রেরক শিউলি, প্রাপক আমি, ডাক বিভাগের কাজ করলো পাশের বাসার একটা বাচাল পিচ্চি। নাম সুমন। চিরকুটটিতে লেখা- “আব্বায় কোনো কথাতেই বিয়া ভাঙ্গবো না। আমিও বিয়া করমু না। আব্বায় আপনের লগেও কথা কইতে মানা কইরা দিছে। আমি পালামু। আপনে আমারে একটু এই বরিশালের বাহিরে নিয়া যান। আমি আর জ্বালাবো না আপনেরে।”

অবশেষে আমিও বিপদে পড়লাম! বিপদ বলাও ঠিক না যদিও। আমিও চাচ্ছিলাম বিয়েটা না হোক। এটা ছাড়া ভালো কোন উপায়ও নাই। রহমত মিয়ারে বোঝাবে কার সাধ্য! কিন্তু একটা মেয়েকে এভাবে ঘর থেকে বের করে আনা কতটা নৈতিক হবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান। তারপরও কবি বলেছেন, এ বয়সে রক্ত গরম থাকে। কোনো দুঃসাহস দেখানোর আগে দুবার ভাবে না অনেকেই। আমারও তাই হলো। ঠিক করলাম শিউলিকে সাহায্য করবোই। ও রাতের বেলা ঘরের বাসন মাজতে আর পানি নিতে বের হয়। তখন কিছু একটা করা যেতে পারে। শিউলির চিরকুটের একটা প্রতিউত্তর লিখে পাঠালাম সুমনকে দিয়ে। 

আমার ইচ্ছা ছিলো, দুপুরের মধ্যে জমি বিক্রির টাকা গুলো হাতে পেয়ে গেলে আমার এখানে সব কাজ শেষ। তারপর রাতে যা করার করা যাবে। শিউলিকে নিয়ে এখান থেকে বের হতে পারলেই হলো। তারপর ওকে ঢাকার কোন একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। আমি প্রাইভেট পড়িয়ে যা পাই তা দিয়ে সহজেই সব হয়ে যাবে। কিন্তু সময় আমাদের দুজনেরই খারাপ যাচ্ছিলো। সুমন দুটো চিরকুটই পড়েছিলো। বাচালটা কাকে না কাকে সব বলেছে। গ্রামে কথা আর ভাইরাস দুটোই খুব দ্রুত ছড়ায়। তাই হলো। খুব অল্প সময়ে জানাজানি হয়ে গেলো। শুধু তাই না, সবাই বলতে শুরু করলো শিউলি আর আমার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে। এ কথা ছেলের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেলো এক বিকালের মধ্যেই। গ্রামের যে আলাদা স্বতন্ত্র এক বিচার ব্যবস্থা আছে তাও জানতে পারলাম। আমাদের শালিসি করা হবে। গ্রামের কিছু  মাতব্বর টাইপের লোকেরা মিলে বসবে এই শালিসি। সম্ভাব্য সময় কাল সকালে, ভ্যেনু জামিল চাচার বাসা। বিকালে রহমত মিয়া এসে অনেকক্ষণ গলা শুনিয়ে গেলো। আমি অবশ্য কোনো প্রতিউত্তর দেইনি কোনো। জামিল চাচার লজ্জায় মাথা কাঁটা অবস্থা। চাচাকে অবশ্য সব খুলে বলেছি। তিনি বুঝতে পারলেও পরিস্থিতিতে নীরব ছিলেন। তাকে বেশ অনুনয়-বিনয় করে সাহায্য করতে রাজি করলাম। গ্রামের মানুষের বিশ্বাস নাই। শালিসির নামে কী না কী করবে আমার ধারণা নাই। তাই আজ রাতেই কেটে পড়তে হবে এখান থেকে চুপিচুপি।  সঙ্গে শিউলিকেও নিয়ে যেতে হবে। ওর জন্য এতটুকু ঝুঁকি নেওয়া যায় কারণ মেয়েটা মায়াবী। একটা মায়ার আবেশ সৃষ্টি করার ক্ষমতা আছে ওর। আমার শিউলির সাথে দেখা করাতে বারণ থাকলেও জামিল চাচার ছিলো না। তারই সুযোগ নিলাম। জামিল চাচাকে সব বললাম কীভাবে বের হবো ওকে নিয়ে। চাচি প্রথমে আপত্তি করলেও পরে সুর নরম করলেন।

রাত দশটার পরে মোবাইল চালানোর জন্য পুকুর পাড়ে যাবো বলে বের হলাম। চুপিচুপি টাকার ব্যাগটাও বের করে নিলাম। প্রিয় ক্যামেরাটা নিয়ে বের হতে ভুলে গিয়েছিলাম। পুকুর পাড়ে দু-চার মিনিট অপেক্ষা করার পর শিউলি আসলো। বাসায় রহমত মিয়া থাকলেও খাবার বাসন-কাসন দেখিয়ে বের হয়ে এসেছে সে। গ্রামে হয় কী, রাতে তাড়াতাড়ি সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। না ঘুমালেও বাসাতেই থাকে। গুটি কয়েক জায়গাতে আড্ডা বসলেও বাকি রাস্তাঘাট সুনশান নীরবতার মধ্যে থাকে। তাই গ্রাম থেকে একটা মেয়ে নিয়ে বের হওয়াতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হলো না।

বের হয়েই একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে করে লঞ্চঘাট চলে গেলাম ঢাকা যাওয়ার কোনো উপায় পাওয়ার আশায়। ঐখানের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারলাম রাত বারোটায় পটুয়াখালী থেকে একটা লঞ্চ আসে যেটা ঢাকা যায়। যাক, বাঁচলাম! শিউলিকে অনেক বেশি চিন্তিত লাগছিলো। যথেষ্ট ঘাবড়ে আছে মেয়েটা। শেষটুকু ভালো হলেই হয়। তখন রাত এগারোটার বেশি বেজে গিয়েছিলো। ঘাটের একটা প্লাটুনে বসে লঞ্চের অপেক্ষা করছিলাম। পঁচিশ মিনিট দেরি করে বারোটা পঁচিশে লঞ্চের ফ্লাইড লাইটের দেখা মিললো। বারোটা পয়ত্রিশে আমরা লঞ্চে উঠি। শিউলির ঘুম পেয়েছে। লঞ্চের ডেকে ছোট্ট একটু জায়গা নিলাম। কিছু সাথে না থাকায় মেঝেতেই শুয়ে রইলাম। এতোটাই ক্লান্ত ছিলাম সবশেষে একটা মেয়ের সাথে এতটুকু জায়গাতে রাত কাটিয়ে দিবো তাও মাথায় আসলো না। পরিশেষে আমি সুখী মানুষ। শিউলিকে বের করে আনতে পারেছি। শিউলের মানসিক অবস্থা যে এখন ভালো নেই তা বোঝার জন্য সাইকোলজি লাগে না। সান্ত্বনা দিলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। আরে, আমি আছি তো নাকি!

(৩)

আজ সেই শিউলি মাত্র কয়েকটা বছরের ব্যবধানে এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে! হিসাব মিললো না। এতোগুলো টাকা তাহলে কী করলো?

শিউলিকে বললাম, “বিয়ে করে নিয়েছো?”

“জী, করেছিলাম। তারপরের দিনই।”

“আমাকে বললেই পারতে।”

“ক্যামনে কইতাম? এইসব করার দরকার ছিলো।”

“ছেলেটা কে ছিলো?”

“জসিম নাম। ঢাকাতেই থাকতো। নানা বাড়ি মোগো এলাকায়। ওখান থেকাই অরে চিনসি।”

“তো ছেলেটার কথা আমাকে আগে বলতে। সাহায্য তো করতামই।”

“মোগো সাহায্য লাগতো না। দরকার ছিলো টাকার।”

“বুঝলাম। বুদ্ধিটা কার ছিলো?”

“জসিমেরই। আমি আপনের কথা বলছিলাম যে জমি বেচতে আসছেন। জসিমই বুদ্ধিটা বার করছে। আমি শুধু ওর কথা শুনে গেছি। কী আর করতাম কন? ভালোবাসতাম ওরে অনেক।”

“বুঝলাম। অনেক গুলো টাকা ছিলো। পঁচিশ লাখের উপরে। এত টাকা পেয়েও এখন এসব করতে হচ্ছে কেনো?”

“আমার আর কী হইলো? টাকা সব তারে নিয়া দিলাম। বিয়া হইলো। চার মাস সংসারও করসি। হঠাৎ একদিন আমারে মারধর কইরা বাসা থেকা বাহির কইরা দিলো। অনেক চেষ্টা চালাইসি। কোনো লাভ হয় নাই। আমার পেটে তখন দুই মাসের বাচ্চা। পরে আর কুলাইতে না পাইরা এক আপার বাসায় গিয়া উঠলাম ঢাকার বাহিরে। মানুষের বাসায় কাজ করতাম। বাচ্চা হইলো। সব আবার ঠিক হইয়া আইতেছিলো। বাচ্চাডারে নিয়া ভালোই আছিলাম। হঠাৎ কইরা বাচ্চাডার শরীর খারাপ হইতে থাকলো। ডাক্তার দেখাইলাম। কিছু ধরা পরে নাই। কত কবিরাজও  দেখাইছি। লাভ হয় নাই। পরে এক ডাক্তারে কইলো খারাপ কোনো অসুখ করসে পোলাডারে। ডাক্তারের পিছে অনেক টাকা যাইতে লাগলো। যেই টাকা পাইতাম তাতে হয় না। পোলাডারে তো বাঁচাইতে হইবো! তাই এই ভাড়া অটোরিকশা নিয়া পথে নামসি। আমার আর কিছু করোনের ছিলো না।”

শিউলি অঝোরে কাঁদছে। আমিও বলার মতো কিছু পাচ্ছিলাম না। শিউলি আমাকে ধোঁকা দিয়েছিলো। ঐ রাতে লঞ্চে ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি শিউলি নেই। চারদিকে দেখলাম। লঞ্চ সদরঘাট, কিন্তু শিউলি নেই। আর একটা জিনিস ছিলো না। আমার টাকার ব্যাগ। মানতে কষ্ট হচ্ছিলো শিউলি ব্যাগটা নিয়ে চলে গিয়েছিলো। অনেক থিওরিও দাঁড় করিয়েছিলাম। হয়তো অন্য কেউ ব্যাগটা নিয়ে ভেগেছে। আর শিউলি? জানা নেই। আজ শিউলিও ধোঁকা খেয়েছে। বড় ধোঁকা। 

শিউলিকে নিয়ে শিউলির বাসায় গেলাম। কোন একটা বস্তিতে। ছেলেটাকে কোলে নিলাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো বয়সের থেকে অসুখটা অনেক বেশি ভারি হয়ে গেছে বাচ্চাটার জন্য। হাসিতেও মলিনতা। কিছুক্ষণ থেকে বের হয়ে গেলাম। বাসায় চলে আসলাম। আসার সময় আমার ফোন নম্বরটা দিয়ে আসলাম শিউলিকে। বললাম বাচ্চার জন্য যে সাহায্য লাগে আমি করবো। জানা নেই কখনো ফোন আসবে কিনা। তবে আশায় থাকবো। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো, “পোলাডারে তো বাঁচাইতে হইবো!”

(শেষ)

IMG 20200212 182724
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ২০১৯ - ২০২০