fbpx

ভেরোনিকা ডিসাইড্‌স্‌‌ টু ডাই

বিশ

ভেরোনিকা বিছানায় যাবে বলে ঠিক করলো, কিন্তু এডোয়ার্ড এখনো পিয়ানোর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

“আমি ক্লান্ত, এডোয়ার্ড। আমার ঘুমানো দরকার।” ভেরোনিক এডোয়ার্ড-এর জন্য পিয়ানো বাজিয়ে যেতে পারে; সে তার অবশ হয়ে আসা মস্তিষ্ক খুঁড়ে তার জানা সব সোনাটা, প্রার্থনা সঙ্গীত ও ধীর লয়ের সুর বাজিয়ে যেতে পারে, কারণ এডোয়ার্ড জানে কী করে কোন কিছু না চেয়েই কারো প্রশস্তি করা যায়। কিন্তু তার শরীর আর নিতে পারছিলো না।  

এডোয়ার্ড একজন সুদর্শন যুবক। সে যদি তার জগত থেকে এক পা বাইরে বেরিয়ে আসতো এবং তাকে একজন নারী হিসেবে দেখতো, তাহলে তার জীবনের শেষ রাতটা এই পৃথিবীতে তার সম্পূর্ণ জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত হতো: এডোয়ার্ড একমাত্র ব্যক্তি যে বুঝতে সক্ষম হয়েছিলো যে ভেরোনিকা একজন শিল্পী। একটা সোনাটা বা মিনিউট এর নিখুঁত আবেগের মাধ্যমে সে এই ছেলেটার সাথে একটা কৃত্রিম বন্ধন তৈরি করেছে যেন সে অন্য আর কাউকে চেনে না।   

এডোয়ার্ড হচ্ছে একজন আদর্শ মানুষ, সংবেদনশীল ও শিক্ষিত; এমন একজন মানুষ যে একটা অভিন্ন জগতকে ধ্বংস করেছে তার মস্তিষ্কে পুনরায় এটা সৃষ্টি করতে নতুন রঙে, নতুন চরিত্রে, নতুন গল্পে। এবং এই নতুন জগতে এসেছে একজন নারী, একটা পিয়ানো এবং একটা চাঁদ, আর জগতটা বেড়েই চলছে।  

এডোয়ার্ড কিছুই বুঝতে পারছে না জেনে ভেরোনিকা বললো, “আমি এখনই তোমার প্রেমে পড়তে পারি এবং আমার সব কিছু তোমাকে দিতে পারি। কিন্তু তুমি সামান্য মিউজিক ছাড়া আমার কাছে কিছু চাওনি। আমি নিজেকে যেমন জানতাম তার থেকেও বেশি কিছু রয়েছে আমার মধ্যে। আমি আরো অন্য অনেক কিছু তোমার সাথে শেয়ার করতে পারতাম যেগুলো আমি কেবল বুঝতে শিখেছি।”

এডোয়ার্ড হাসলো। সে কি কিছু বুঝতে পারলো? ভেরোনিকা একটু কুণ্ঠা বোধ করলো – ভালো আচরণের সব নিয়মই বলে কাউকে এতো সরাসরি ভালোবাসার কথা বলতে নেই এবং স্বল্প পরিচিত কাউকে তো নয়ই। কিন্তু সে বলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো, কারণ তার হারাবার কিছু নেই।  

“পৃথিবীতে তুমিই একজন যার প্রেমে আমি পড়তে পারি, এডোয়ার্ড । কারণটা খুব ছোট্ট – যখন আমি মারা যাবো আমি তোমাকে মিস করবো না। আমি জানি না, সিজোফ্রেনিকরা কেমন অনুভব করে, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে তারা কাউকে মিস করে না।  

“সম্ভবতঃ শুরুতে তোমার এটা মনে হবে যে তোমার রাতগুলো সুরহীন, কিন্তু চাঁদ তো আকাশে থাকবে। কেউ একজন হয়তো থাকবে যে তোমাকে বিশেষ করে এই হাসপাতালে সোনাটা সুর বাজিয়ে শোনাবে, যেখানে আমরা প্রত্যেকেই ‘উন্মাদ’।”

সে ঠিক জানে না উন্মাদ আর চাঁদের মধ্যে সম্পর্ক কী, কিন্তু নিশ্চয় জোরালো কোন সম্পর্ক রয়েছে নইলে চাঁদকে বর্ণনা করতে ‘উন্মাদ’ শব্দটা ব্যবহার হলো কেন।

“আমি তোমাকে মিস করবো না এডোয়ার্ড, কারণ আমি মরে যাবো, এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। যেহেতু তোমাকে হারানোর আমার কোন ভয় নেই, তাই তুমি আমাকে নিয়ে কী ভাবলে না ভাবলে সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আজ রাতে আমি প্রেমাতালের মতো তোমার জন্য বাজিয়েছি। এটা যে কি চমৎকার ছিলো! এটা ছিলো আমার সমস্ত জীবনের সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত।”

সে মারিকে বাগানে দেখতে পেলো। মারি’র কথা তার মনে পড়লো। আবার সে তার সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার দিকে তাকালো।

ভেরোনিকা তার সোয়েটার খুলে এডোয়ার্ড-এর কাছে সরে আসলো। সে যদি কিছু করতে চায় তাহলে করে ফেলা উচিত। মারি দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে ঠান্ডার মধ্যে ছিলো, এই মাত্র সে ভেতরে গেলো।

এডোয়ার্ড পেছনে সরে গেলো। তার চোখে একটাই প্রশ্ন: কখন ভেরোনিকা আবার পিয়ানো বাজাবে? কখন সে আবার এমন একটা সুর বাজাবে যেটা তার অন্তরকে একই রকম রঙ, ব্যথা, কষ্ট এবং আনন্দ দিয়ে পূর্ণ করে ফেলবে যেমনটা কিছু বিকারগ্রস্ত সুরকারকে করেছিলো আর সে কারণে তারা যুগের পর যুগ মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন?

বাইরের ঐ মহিলা আমাকে কামোত্তেজিত হতে বলেছেন এবং দেখতে বলেছেন আমি কত দূর যেতে পারি। আমি কি আসলেও সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারি যেটা আমি আগে কখনোই করিনি?

সে এডোয়ার্ড-এর হাত ধরলো এবং তাকে সোফার দিকে টানলো, কিন্তু এডোয়ার্ড খুব শান্তভাবে সরে গেলো। সে যেখানে ছিলো সেই পিয়ানোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলো। আবার কখন তার জন্য পিয়ানো বাজানো হবে সে জন্য সে অপেক্ষা করতে চাইলো।  

ভেরোনিকা প্রথমে একটু হতবুদ্ধি হয়ে গেলো, কিন্তু তার মনে হলো তার তো কিছু হারাবার নেই। সে একজন মৃত মানুষ; তাহলে শঙ্কা ও অনুমান নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন কী যেখানে এ অনুভূতিগুলো তার জীবনকে সব সময় সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে? সে তার জামা, ট্রাউজার, অন্তর্বাস খুলে ফেলে তার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালো।

এডোয়ার্ড হাসলো। ভেরোনিকা জানে না কেন, কিন্তু সে খেয়াল করলো যে এডোয়ার্ড হাসলো। সে আস্তে করে এডোয়ার্ড-এর হাতটা নিয়ে তার যৌনাঙ্গে স্পর্শ করালো; তার হাতটা ওখানেই স্থির হয়ে থাকলো। ভেরোনিকা এ চিন্তা বাদ দিয়ে তার হাতটা সরিয়ে দিলো।  

এ ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্কের তুলনায় অন্য কিছু তাকে আরো পুলকিত করতে পারে: কারণ সে তো যা খুশি করতে পারে, এখানে তো কোন সীমা নেই। বাইরের ঐ মহিলা ছাড়া হয়তো যে কোন সময় ফিরে আসতে পারে, আর কেউ জেগে নেই।

তার ধমনীতে রক্ত দ্রুত ছুটতে লাগলো এবং শীত শীত ভাবটা – যেটা কাপড় ছাড়ার সময় সে অনুভব করছিলো – কমে আসছিলো। ভেরোনিকা আর এডোয়ার্ড দু’ জনেই দাঁড়িয়ে, মুখোমুখি, একজন নগ্ন আর অপরজন পুরো শরীর ঢেকে। ভেরোনিকা নিজের হাতটা যৌনাঙ্গে নিয়ে গেলো এবং নিজেকে কামোত্তেজিত করতে শুরু করলো; সে আগেও এমন করেছে একা অথবা কোন সঙ্গী সহ, কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে নয় যেখানে একজন পুরুষ কী ঘটছে সে ব্যাপারে আদৌ কোন কৌতুহল দেখাচ্ছে না।  

এটা রোমাঞ্চকর, খুবই রোমাঞ্চকর। দাঁড়িয়ে দু’ পা ফাক করে ভেরোনিকা তার যৌনাঙ্গ, স্তন, চুল স্পর্শ করে যাচ্ছিলো। সে নিজেকে পুরোপুরি সপে দিলো নিজের কাছে যেন কোনদিন এমন ভাবে নিজেকে তুলে দেয়নি। সে এটা এ কারণে করছে না যে এডোয়ার্ড তার সুদূর জগৎ থেকে ফিরে আসুক, বরং সে এটা করছে এমন অভিজ্ঞতা নিতে যা তার কোন দিন ছিলো না।

সে কথা বলতে শুরু করলো, অকল্পনীয় শব্দ ব্যবহার করে কথা বলতে লাগলো যেগুলো তার মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব, তার পূর্বপুরুষরা চরম নোংরা বলে মনে করে। সে তার চরম অবস্থায় পৌঁছে গেলো এবং তার ঠোঁট দু’ টা কামড়ে রাখলো যেন কোন পুলকিত শীৎকার বের না হয়ে আসে।

এডোয়ার্ড তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার চোখে অন্য আলোর ঝিলিক দেখা যাচ্ছিলো যেন সে সব বুঝতে পারছে, এমন কি ভেরোনিকার শরীর নিসৃত শক্তি, তাপ, ঘাম ও ঘ্রাণ সব বুঝতে পারছিলো যেন। ভেরোনিকা হাঁটু গেড়ে বসে আবার নিজেকে উত্তেজিত করে তুলতে লাগলো।

সে কামোত্তেজনার চরম সুখে মরতে চায়। সে ভাবছিলো ও বুঝতে পারছিলো এটা তার জন্য নিষিদ্ধ। এডোয়ার্ডকে সে আর্তস্বরে তাকে স্পর্শ করতে, তাকে জোর করতে, তাকে যেমন খুশি তেমন ভাবে ব্যবহার করতে আহ্বান জানাচ্ছিলো। তার মনে হচ্ছিলো জেডকা যদি এখানে থাকতো! একজন নারী তো পুরুষের চেয়ে ভালো জানে অন্য নারীকে কী করে স্পর্শ করতে হয়, কেননা নারী তো নারীর সব গোপনীয়তা জানে। 

এডোয়ার্ডের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার মনে হচ্ছিলো এডোয়ার্ড তাকে আবিষ্ট করে রেখেছে, স্পর্শ করে রেখেছে; সে নোংরা শব্দ ব্যবহার করে বলতে লাগলো এডোয়ার্ডকে সে কীভাবে চায়। আগের চেয়েও চরম উত্তেজিত হলো সে, যেন তার চারদিকের সবকিছু বিস্ফোরিত হয়ে যাবে এখন। সকালে হয়ে যাওয়া তার হার্ট অ্যাটাকের কথা মনে পড়লো। কিন্তু তাতে কী, সে আনন্দের চরম বিস্ফোরণে মারা যাবে। এডোয়ার্ডকে স্পর্শ করতে সে প্রলুব্ধ হচ্ছিলো – এডোয়ার্ড তার সামনেই দাঁড়ানো – কিন্তু সে তার মুহূর্তটা নস্যাৎ করার ঝুঁকি নিতে চাইলো না। সে অনেক দূর, অনেক অনেক দূর গিয়েছে যেমন মারি বলেছিলো।  

তার নিজেকে রাণী ও ক্রিতদাসী, কর্তৃত্বপরায়ণ রক্ষিতা ও ভুক্তভোগী উভয়ই মনে হচ্ছিলো। তার কল্পনায় সে মিলিত হচ্ছিলো সকল বর্ণ ও শ্রেণির পুরুষের সাথে – শ্বেত, কৃষ্ণ, তামাটে – সমকামী, ভিক্ষুক সবার সাথে। সে নিজেকে যে কেউ হিসেবে কল্পনা করতে পারছিলো এবং যে কেউ তার সাথে যে কোন কিছু করতে পারছিলো। সে একবার, দু’ বার, তিন বার চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পৌঁছালো, একের পর আরেক। সে সব কিছু কল্পনা করতে পারছিলো যেটা সে আগে কখনোই পারেনি; এবং সে নিজেকে সবচেয়ে কুৎসিত ও সবচেয়ে খাঁটি জিনিসটা দিতে পারছিলো। সবশেষে নিজেকে আর সামলাতে না পেরে সে চরম ভালো লাগায় শীৎকার করে উঠলো; এ আনন্দের সাথে ছিলো তার চরম উত্তেজিত হওয়ার সব কষ্ট, সব নারী-পুরুষ যারা তার মনের দরজা দিয়ে তার শরীরে প্রবেশ করেছে আর বের হয়েছে।

সে মাটিতে শুয়ে পড়লো এবং সেখানেই পড়ে রইলো, তার সারা শরীর ঘামে ভিজে গিয়েছে আর আত্মা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেছে। কেন জানি সে নিজের থেকেও তার গোপন কামনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলো, তবে এর উত্তরও সে জানতে চায় না। এটাই যথেষ্ট যে সে যা করেছে তো করেছে। সে নিজের কাছে নিজেকে সপে দিয়েছে।

ক্রমে পৃথিবীটা আবার তার জায়গায় ফিরে আসলো। ভেরোনিকা উঠে দাঁড়ালো। এডোয়ার্ড এই পুরো সময়ে একটুও নড়েনি, কিন্তু তাকে কিছুটা অন্যরকম মনে হচ্ছিলো। তার চোখে একটা কমনীয়তা ফুটে উঠছিলো, মানবিক কমনীয়তা।

এটা তো চমৎকার যে আমি সব কিছুতে ভালোবাসার আবেশ দেখতে পারছি, এমন কি একজন সিজোফ্রেনিক-এর দৃষ্টিতেও।

এক সময় তার মনে হলো রুমে তৃতীয় কোন ব্যক্তি আছে। সে দ্রুত তার পোশাক পরে নিলো।

মারিকে দেখা গেলো। ভেরোনিকা জানে না মারি কখন এসেছে কিংবা সে কী শুনেছে কিংবা দেখেছে; কিন্তু এতে সে কোন লজ্জা বা শঙ্কা বোধ করছিলো না। সে কেবল দূর থেকে তাকে দেখছিলো।

“আমি তোমার কথা মতো করেছি,” সে বললো, “এবং আমি অনেক অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছিলাম।”

মারি কিছু বললো না; কিছুক্ষণ আগে সে তার অতীত জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের মধ্যে ছিলো। সে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলো। সম্ভবতঃ বাইরের জগতের মুখোমুখি হওয়ার জন্য পৃথিবীতে ফেরার সময় হয়েছে। এটাও বলতে হয় যে প্রত্যেকের একটা বৃহৎ ভাতৃসংঘের সদস্য হওয়া উচিত এমন কি সে যদি কোন মানসিক হাসপাতালে নাও থেকে থাকে।

যেমন, এই তরুণী যার ভিলেট-এ অবস্থান করার একমাত্র কারণ সে নিজের জীবনের উপর কিছু আঘাত করতে গিয়েছিলো। সে কখনোই আতঙ্ক, বিষণ্নতা, রহস্যময় দৃষ্টি, মনোবিকার এসব সম্পর্কে জানতো না – যার শেষ সীমায় মন আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও সে অনেক পুরুষকে চিনতো, কিন্তু সে তার নিজের গোপন কামনার অভিজ্ঞতা পায়নি কখনো; ফলে জীবনের অর্ধেক তার কাছে অচেনা ছিলো। প্রত্যেকে যদি তার অন্তর্নিহিত বিকারগ্রস্ততা সম্পর্কে জানতো এবং বিকারগ্রস্ততা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতো! তাহলে কি পৃথিবীটা এতো খারাপ হতো? না, মানুষ তাহলে আরো মনোরম ও সুখী হতো।

“কেন আমি এমনটা আগে করিনি?”

“ও চাচ্ছে তুমি ওকে আরো সুর বাজিয়ে শোনাও,” মারি এডোয়ার্ড-এর দিকে তাকিয়ে বললো। “আমার মনে হয় এটা ওর প্রাপ্য।”

“আমি বাজাবো, কিন্তু তার আগে প্রথমে আমার প্রশ্নের জবাব দাও: আমি কেন এমনটা আগে করিনি? আমি যদি মুক্ত হয়ে থাকি, আমি যদি যেমন খুশি তেমন চলতে পারি, তবে আমি কেন নিষিদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলেছি সব সময়?”

“নিষিদ্ধ? শোন, আমি একজন  আইনজীবী ছিলাম, এবং আমি আইন জানি। আমি একজন ক্যাথলিকও, এবং আমি বাইবেল-এর সব পরিচ্ছদ সম্পর্কেও জানি। ‘নিষিদ্ধ’ বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছো?”

মারি তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো এবং তার সোয়েটার এগিয়ে দিয়ে তাকে সাহায্য করছিলো।

“আমার চোখের দিকে তাকাও, এবং আমি যা বলতে যাচ্ছি তা ভুলে যেও না কখনো। দু’টা বিষয়ে মাত্র নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, একটা মানুষের আইন অনুযায়ী, আর একটা ঈশ্বরের আইন অনুযায়ী। যৌন সম্পর্ক তৈরিতে কাউকে কখনো জোর করো না, কারণ তাহলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এবং কখনো শিশুদের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরি করো না কারণ এটা সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাপ। এ দু’টো ছাড়া তুমি মুক্ত। কেউ না কেউ আছে, যে ঠিক তুমি যা চাও তা-ই চাইবে।”

যে প্রায় মারাই যাচ্ছে তাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখানোর ধৈর্য মারি’র নেই। সে একটা হাসি দিয়ে শুভরাত্রি বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

এডোয়ার্ড নড়লো না; সে মিউজিক এর জন্য অপেক্ষা করছিলো। এডোয়ার্ড শুধুমাত্র তার সাথে থেকে এবং ভয় না পেয়ে অথবা পালিয়ে না গিয়ে তার পাগলামি দেখে ভেরোনিকাকে যে ব্যাপক আনন্দ দিয়েছে তার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা উচিত। ভেরোনিকা পিয়ানোতে বসে আবার বাজানো শুরু করলো।

তার অন্তর হালকা হয়েছে, এমন কি মৃত্যু আতঙ্কও তাকে এখন যন্ত্রণা দিচ্ছে না। সে সব সময় নিজের কাছে যা গোপন করে রেখেছিলো তার অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। সে কুমারী ও বেশ্যার মতো পুলক অনুভব করেছে, ক্রীতদাসী ও রাণীর মতো পুলক অনুভব করেছে; যদিও রাণীর চেয়ে ক্রীতদাসীর অনুভূতিই বেশি।

সে রাতে অলৌকিক ভাবে ভেরোনিকার জানা সব সুর তার স্মৃতিতে ফিরে আসলো, এবং এডোয়ার্ডকে নিজের পাওয়া আনন্দের মতো আনন্দ দিতে বাজিয়ে চললো।

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০