fbpx

ভেরোনিকা ডিসাইড্‌স্‌‌ টু ডাই

বাইশ

দিনটা ক্লান্তিকর হলেও ফলপ্রসূ ছিলো। ডা. ইগোর একজন বিজ্ঞানীর মতো তার স্থিরতা ও উদাসীনতা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তিনি তার প্রবল উৎসাহ চেপে রাখতে পারছিলেন না। তিনি ভিট্রিওল বিষক্রিয়ার উপশম খুঁজে বের করতে যে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন তার বিস্ময়কর ফলাফল আসতে শুরু করেছে।

“আপনি আজকে তো কোন সাক্ষাৎ পাবেন না আমার,” তিনি মারিকে বললেন; মারি দরজায় নক্ না করেই ঢুকে পড়েছিলো।

“আমি বেশি সময় নিবো না। আমি শুধু কিছু বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।”

আজকে তো দেখি সবাই আমার মতামত জানতে আসছে, ডা. ইগোর তরুণীটির যৌনতা বিষয়ক প্রশ্ন মনে করে ভাবলেন।

“এডোয়ার্ডকে এই মাত্র বৈদ্যুতিক শক্ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে,” মারি বললো।

“ইলেকট্রোকন্ভাল্সিভ থেরাপি। সঠিক নামটা ব্যবহার করুন প্লিজ, নয়তো মনে হবে আমরা কেবল এক শ্রেণির বর্বর।” ডা. ইগোর তার বিস্ময় গোপন করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু উনি পরে এটা খুঁজে দেখবেন কে এমন সিদ্ধান্ত নিলো। “আপনি যদি এ ব্যাপারে আমার মতামত জানতে চান তাহলে আমাকে পরিষ্কার বলতে হয় যে, ইসিটি যেমন ব্যবহারোপযোগী তেমন আজকাল ব্যবহার হয় না।”

“কিন্তু এটা তো বিপজ্জনক।”

“এটা খুবই বিপজ্জনক ভাবে ব্যবহার হতো; তারা এটা ব্যবহারের সঠিক ভোল্টেজ সম্পর্কে জানতো না, কোথায় ইলেকট্রোড বসাতে হবে তা জানতো না এবং অনেক লোক চিকিৎসার সময় ব্রেন হেমারেজ-এ মারা যেতো। কিন্তু এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আজকালকার দিনে ইসিটি আরো অধিকতর কারিগরি বিশুদ্ধতার সাথে সম্পন্ন করা হয় এবং এর সুবিধা হচ্ছে এটা দীর্ঘ সময়ের ওষুধ ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট রাসায়নিক বিষক্রিয়া এড়িয়ে তাৎক্ষণিক স্মৃতিশক্তি বিলোপের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। মনোরোগ সংক্রান্ত জার্নাল পড়ুন এবং দক্ষিণ আমেরিকান বর্বরদের ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক শক্-এর সাথে ইসিটি গুলিয়ে ফেলবেন না। ঠিক আছে; আপনি তো আমার মতামত শুনলেন। এখন তো আমি আমার কাজে ফিরে যেতে পারি।”

মারি নড়লো না।

“আমি সেটা জানতে আসিনি। আমি এসেছি জানতে আমি ভিলেট ছেড়ে যেতে পারি কি না।”

“আপনি যেখানে খুশি যেতে পারেন এবং যখন খুশি ফিরে আসতে পারেন, কারণ আপনার স্বামীর এ রকম একটা ব্যয়বহুল স্থানে আপনাকে রাখার মতো যথেষ্ট বিত্ত রয়েছে। সম্ভবতঃ আপনি জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছেন: ‘আমি সুস্থ হয়েছি কি না?’ আমার উত্তর হচ্ছে আর একটা প্রশ্ন: ‘কী থেকে সুস্থতা?’ আপনি বলবেন: ‘আমার আতঙ্ক থেকে সুস্থতা, আমার প্যানিক অ্যাটাক থেকে সুস্থতা।’ সেক্ষেত্রে আমি বলবো, ‘মারি, আপনি গত তিন বছর যাবৎ আসলে কোন রোগেই ভুগছেন না’।”

“তার মানে আমি সুস্থ।”

“অবশ্যই না। আপনার অসুস্থতা সে সম্পর্কিত না। স্লোভেনিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেস এর জন্য লেখা গবেষণা পত্রে” – ডা. ইগোর ভিট্রিওল সম্পর্কে বিস্তারিত কোন কিছুতে যেতে চান না – “আমি চেষ্টা করেছি তথাকথিত স্বাভাবিক মনুষ্য আচরণ-এর গবেষণা করতে। আমার আগেও অনেক চিকিৎসক একই ধরনের গবেষণা করেছেন এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে স্বাভাবিকতা একটা ঐকমত্যের ব্যাপার; অর্থাৎ অনেক মানুষ যখন চিন্তা করে কোন কিছু সঠিক, তখন সেটা সঠিক।

“কিছু বিষয় সাধারণ জ্ঞান দিয়ে চলে। একটা শার্টের সামনের দিকে বোতামটা একটা যুক্তির ব্যাপার, যেহেতু এক পাশে বোতাম দিলে এটা ব্যবহার করা খুবই কঠিন, এবং পিছনে দিলে এটা ব্যবহার করা অসম্ভব।

“আবার কিছু বিষয় আছে একদম নির্ধারিত হয়ে গেছে, কারণ বেশি বেশি লোক বিশ্বাস করে এটা এমনই হওয়া উচিত। আমি আপনাকে দু’ টা উদাহরণ দেই। আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কেন টাইপ রাইটার-এর কি গুলো একটা নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানো?”

“না, ভেবে দেখিনি।”

“আমরা একে বলি QWERTY কি-বোর্ড, কারণ কি-বোর্ডের প্রথম সারি এই বর্ণক্রমে সাজানো। একবার আমার মাথায় আসলো এটা এমন কেন এবং আমি যে উত্তরটা পেলাম সেটা হচ্ছে: প্রথম মেশিন আবিষ্কার হয় ১৮৭৩ সালে ক্রিস্টোফার শোল্জ কর্তৃক ক্যালিগ্রাফি উন্নয়নের লক্ষ্যে, কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিলো তখন। কেউ যদি খুব দ্রুত টাইপ করতে যায় তাহলে কীগুলো একসাথে আটকে গিয়ে মেশিন কাজ করা থামিয়ে দেয়। তখন শোল্জ QWERTY কি-বোর্ড এর নকশা করেন, এমন কি-বোর্ড যেটা টাইপিস্টদের আরো ধীরে টাইপ করতে বাধ্য করে।”

“আমার এটা বিশ্বাস হয় না।”

“কিন্তু এটা সত্য। এরকমটা ঘটায় রেমিংটনা – যারা এক সময়ে সেলাই মেশিন ও বন্দুক তৈরি করতো – তারা তাদের প্রথম টাইপরাইটারদের জন্য QWERTY কি-বোর্ড ব্যবহার করে। তার অর্থ যত বেশি লোক এই নির্দিষ্ট পদ্ধতি শিখতে বাধ্য হবে তত বেশি কোম্পানি ঐ ধরনের কি-বোর্ড প্রস্তুত করা শুরু করবে যতদিন না এটা একমাত্র সহজলভ্য মডেল হয়ে ওঠে। আমি আবার বলছি টাইপরাইটার ও কম্পিউটারের কি-বোর্ড প্রস্তুত করা হয়েছে যাতে মানুষ ধীরে টাইপ করে, বেশি দ্রুত না; বুঝতে পেরেছেন? আপনি যদি বর্ণগুলো এদিক ওদিক করে দেন, দেখবেন আপনার পণ্য কেউ কিনছে না।”

মারি যখন প্রথম কি-বোর্ড দেখেছিলো তখন সে অবাক হয়ে ভেবেছিলো বর্ণগুলো ক্রমানুসারে সাজানো নয় কেন, কিন্তু এটা তখনই সে ভুলে গিয়েছিলো। তার অনুমান ছিলো এটা হয়তো সবচেয়ে ভালো লেআউট যেটাতে মানুষ দ্রুত টাইপ করতে পারে।

“আপনি কি কখনো ফ্লোরেন্স গিয়েছেন?” ডা. ইগোর জিজ্ঞেস করলেন।

“না।”

“আপনার সেখানে যাওয়া উচিত; এটা খুব দূরে নয়। সেখানে গেলে আপনি আমার দ্বিতীয় উদাহরণটা দেখতে পাবেন। ফ্লোরেন্সের ক্যাথেড্রালে একটা সুন্দর ঘড়ি রয়েছে যেটা ১৪৪৩ সালে পাউলো উশেল্লো’র নকশা করা। ঘড়িটার বিষয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এটা অন্য ঘড়ির মতো সময় দিলেও এর কাঁটাগুলো সাধারণ ঘড়ির উল্টো দিকে ঘোরে।”

“এর সাথে আমার অসুস্থতার সম্পর্ক কী?”

“আমি আসছি সে কথায়। যখন তিনি এটা তৈরি করেন, পাউলো উশেল্লো মৌলিক হতে চেষ্টা করেননি। বিষয়টা হচ্ছে সে সময় তার ও অন্যান্যদের হাতে যে ঘড়ি ছিলো সেটা আমরা যেরকমটা পরিচিত এখন তেমনি ছিলো। কোন এক অজানা কারণে, সম্ভবতঃ ডিউক এর হাতে যে ঘড়ি ছিলো সেটা হয়তো আমরা যেটা ‘সঠিক’ দিক মনে করি সে দিকে চলতো; ফলে সেটাই ঘড়ি চলার একমাত্র দিক হয়ে দাঁড়ায়। আর তখন উশেল্লো’র ঘড়ি দেখে মনে হচ্ছিলো এটা মতিভ্রম বা পাগলামি।”

ডা. ইগোর একটু থামলেন। তিনি জানতেন মারি তার যুক্তি অনুসরণ করছে।

“এখন আসুন, আপনার অসুস্থতার ব্যাপারে: প্রত্যেক মানুষই অনন্য, প্রত্যেকেই তার গুনাগুন, সহজাত প্রবৃত্তি, আনন্দের ধরণ, এবং অ্যাডভেঞ্চারের জন্য আকাক্সক্ষা প্রভৃতি দিক থেকে আলাদা। তবে সমাজ সব সময়ই আমাদের উপর এক গাদা আচরণ বিধি চাপিয়ে দেয়, এবং মানুষ সব সময়ই অবাক হয়ে ভাবে কেন তারা এমন ভাবে চলে। তারা কেবলমাত্র এটা মেনে নেয়, যেমনটা টাইপিস্টরা মেনে নিয়েছে যে QWERTY কি-বোর্ডই সম্ভাব্য সেরা কি-বোর্ড লেআউট। আপনি কি আপনার সারা জীবনে এমন একটা লোক খুঁজে পেয়েছেন যে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছে কেন ঘড়ির কাঁটা একটা নির্দিষ্ট দিকে ঘোরে, বিপরীত দিকে ঘোরে না?”

“না।”

“কেউ যদি এ প্রশ্ন করতো, খুব সম্ভবতঃ যে উত্তর তারা পেতো: ‘আপনি কি পাগল!’ যদি তারা জোর করতো উত্তরের জন্য তাহলে মানুষ চেষ্টা করতো একটা কারণ খুঁজে বের করতে; কিন্তু তারা দ্রুতই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতো। কারণ এখানে আমি যেটা বললাম এর বাইরে কোন উত্তর নেই। তো আপনার প্রশ্নে ফিরে আসি। কী যেন ছিলো আপনার প্রশ্ন?”

“আমি কি সুস্থ?”

“না। আপনি এমন একজন যিনি অন্যদের থেকে ভিন্ন, কিন্তু যে অন্যদের মতো একই রকম হতে চায়। আর সেটা আমার দৃষ্টিতে, ভয়ানক অসুস্থতা।”

“ভিন্ন হতে চাওয়াটা একটা ভয়ানক অসুস্থতা?”

“এটা একটা ভয়ানক অসুস্থতা যদি আপনি নিজেকে অন্যদের মতো একই রকম করতে জোর করেন। এটা স্নায়বিক পীড়া, মনোব্যাধি ও মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণ ঘটায়। এটা প্রকৃতির একটা অসমাঞ্জস্যতা, এটা ঈশ্বরের নিয়মের বিপক্ষে যায়, কেননা সমগ্র বিশ্বের বন-জঙ্গলে তিনি এমন একটা পাতা তৈরি করেননি যেটা হুবহু অন্যটার মতো। কিন্তু আপনি ভাবছেন ভিন্ন হওয়া মানে বিকারগ্রস্ত হওয়া, আর এ কারণে আপনি ভিলেট-এ থাকাটা বেছে নিয়েছেন। কারণ এখানে সবাই ভিন্ন, এবং তাই আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনি সবার মতোই। বুঝতে পেরেছেন?”

মারি মাথা ঝাকালো।

“মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায় কারণ তাদের ভিন্ন হতে সাহসের অভাব রয়েছে। এরপরে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে ভিট্রিওল বা তিক্ততা উৎপন্ন হতে শুরু করে, সাধারণ ভাবে বিষ হিসেবে বেশি পরিচিত।”

“ভিট্রিওল কী?”

ডা. ইগোর বুঝতে পারলেন তিনি বেশি বলে ফেলেছেন, তাই তিনি প্রসঙ্গ ঘুরালেন।

“সেটা বিষয় না। আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি: এ সব কিছুই নির্দেশ করে যে আপনি সুস্থ হননি।”

মারি’র অনেক বছরের আইন আদালতের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সে তার এই অভিজ্ঞতা এখানে এখনই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলো। তার প্রথম কৌশল হচ্ছে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে একমত হওয়া যাতে তাকে তখনই অন্য যুক্তিতে নিয়ে যাওয়া যায়।

“আমি একমত। আমার এখানে আসার কারণ খুব স্পষ্ট। আমার প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছিলো। আমার এখানে অবস্থানের কারণ দুরূহ: চাকরি ও স্বামী ছাড়া আমি ভিন্ন জীবনের ধারণার মুখোমুখি হতে পারতাম না। আমি আপনার সাথে একমত যে আমি একটা নতুন জীবন শুরু করার আগ্রহ হারিয়েছি; এমন একটা জীবন যে জীবনে আমি আবার অভ্যস্ত হতে পারবো। আমি আরো স্বীকার করছি যে, একটা মানসিক হাসপাতালে বৈদ্যুতিক শক্ – দুঃখিত, ইসিটি যে নামে ডাকতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, কঠিন টাইমটেবল, এবং মাঝেমধ্যেই কোন কোন নিবাসীর হিস্টিরিকাল কোলাহলের মধ্যে নিয়ম মেনে নেয়া যতটা সহজ, একই রকম হওয়ার জগতটাতে ততটা সহজ না।

“গতরাতে আমি এক ভদ্রমহিলার পিয়ানো বাজানো শুনছিলাম। সে অসাধারণ বাজাচ্ছিলো, এ রকমটা আমি আগে খুব কমই শুনেছি। ঐ সুর শুনতে শুনতে আমি ঐ সব সুরকারের কথা চিন্তা করছিলাম যারা এ সব সুর বাঁধতে কষ্ট ভোগ করেছেন। তারা এটা অনুভব করে কতটা বোকা বনেছেন যখন তাদের এই সুরগুলো বাজিয়েছেন – যেগুলো তখনকার সুরের জগতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো! আমি ভাবছিলাম একটা অর্কেস্ট্রাকে অর্থ যোগাতে একজনকে কত না কঠিন ও অপমানজনক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে! আমি ভাবছিলাম সে সকল ছি ছি করা লোকের কথা যারা এ ধরনের সুরের সাথে কখনোও অভ্যস্ত নয়।

“ঐ সব সুরকারের কষ্টের চেয়েও কষ্টকর হচ্ছে যে মেয়েটা সুর বাজাচ্ছিলো তার অবস্থা। সে এমন একটা মন নিয়ে বাজাচ্ছিলো যখন সে জানে সে মরতে যাচ্ছে। আমি কি মরবো না? আমার এমন মন কোথায় যে এরকম উদ্দীপনা নিয়ে আমার নিজের জীবনের সুর বাজাতে পারে?”

ডা. ইগোর নিরবে শুনছিলেন। মনে হচ্ছে তার সমস্ত ধারণা ফল দিতে শুরু করেছে, কিন্তু এটা নিশ্চিত হওয়ার এখনো সময় আসেনি।

“আমার মন কোথায়?” মারি আবার জিজ্ঞেস করলো। “অতীতে না কি আমি যেমন জীবন চাই তাতে। আমি আমার মনকে বন্দী করে রেখেছি ঐ মুহূর্তে যখন আমার একটা সংসার ছিলো, স্বামী ছিলো, চাকরি ছিলো; আমি এসব ছেড়ে আসতে চেয়েছি, কিন্তু কখনো সাহস পাইনি।

“আমার মন আমার অতীতে পড়ে ছিলো। কিন্তু আজকে এটা এখানে। আমি একে আবার আমার শরীরে অনুভব করতে পারছি, উদ্দীপনায় ভরপুর। আমি জানি না কী করা উচিত। আমি শুধু জানি আমার তিন বছর লেগেছে বুঝতে যে জীবন আমাকে এমন দিকে ঠেলছে যে দিকে আমি যেতে চাইনি।”

“আমার মনে হয় আমি কিছু উন্নতির লক্ষণ দেখছি,” ডা. ইগোর বললেন।

“আমার জানার প্রয়োজন নেই যে আমি ভিলেট ছাড়তে পারবো কি না। আমি শুধু হেঁটে বের হয়ে যেতে পারি এবং আর নাও ফিরতে পারি। কিন্তু আমার এ সব কিছু কাউকে না কাউকে বলা প্রয়োজন, আর তাই আমি আপনাকে এ সব বললাম। ঐ তরুণীর মৃত্যু আামকে আমার নিজের জীবন বুঝিয়েছে।”

“আমার মনে হয় এই উন্নতির লক্ষণগুলো একটা বিস্ময়কর চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মতো কিছুর দিকে মোড় নিয়েছে,” ডা. ইগোর হেসে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কী করবেন তাহলে?”

“আমি এল সালভেদর-এ যাবো এবং বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করবো।”

“এতো দূর যাবার তো প্রয়োজন নেই। সারাইভো এখান থেকে মাত্র দু’ শ কিলোমিটার দূরে। যুদ্ধ শেষ, তবে সমস্যা রয়েছে এখনো।”

“তাহলে আমি সারাইভো যাবো।”

ডা. ইগোর তার ড্রয়ার থেকে একটা র্ফম বের করে যত্ন করে পূরণ করলেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে মারিকে সাথে নিয়ে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।

“ভালো থাকুন,” তিনি বললেন। তারপর সাথে সাথে তার অফিসে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করলেন। তিনি সব সময়ই চেষ্টা করেন তার রোগীদের ভক্ত না হয়ে যাওয়ার, কিন্তু কখনোই সফল হন না। ভিলেট-এ মারি’র বেশ অভাব বোধ হবে।

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০