fbpx

ভেরোনিকা ডিসাইড্‌স্‌‌ টু ডাই

পঁচিশ

এডোয়ার্ড যখন তার গল্প বলা শেষ করলো ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে গেছে। তারা দু’ জনেই শীতে কাপছিলো।

“চল ভিতরে যাই,” এডোয়ার্ড বললো, “রাতের খাবার দিবে এখন।”

“ছোট বেলায় আমি যখন আমার দাদীকে দেখতে যেতাম তখন আমি তার বাড়ির একটা ছবির প্রতি খুব অনুরক্ত ছিলাম। ছবিতে একজন মহিলা – কুমারী মেরি, ক্যাথলিকরা যে নামে ডাকে – পৃথিবীর উপরিতলে ভারসাম্য রক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর হাত দু’ টা মাটির দিকে প্রসারিত এবং তাঁর আঙ্গুলে শীর্ষভাগ দিয়ে আলোকচ্ছটা বের হচ্ছে।

“ছবির যে জিনিসটা আমার মাঝে সবচেয়ে বেশি কৌতুহল জাগাতো সেটা হচ্ছে তিনি একটা জীবিত সাপের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আমার দাদীকে জিজ্ঞেস করতাম: ‘উনি কি সাপটাকে ভয় পান না? এটা তো তাকে কামড়ে দিতে পারে এবং বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে পারে?’”

আমার দাদী বলতেন: “বাইবেলের ভাষ্যমতে সাপ পৃথিবীতে ভালো-মন্দ দু’টাই নিয়ে এসেছে। আর তিনি ভালো-মন্দ দু’ টাকেই তার ভালোবাসায় নজরবন্দী করে রেখেছেন।”

“এটার সাথে আমার গল্পের সম্পর্ক কী?” এডোয়ার্ড জানতে চাইলো।

“আমি তোমাকে মাত্র এক সপ্তাহ হলো জানি, কাজেই এটা বেশ তাড়াহুড়া হয়ে যায় যদি বলি আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু যেহেতু আমি এই রাত পর্যন্ত বাঁচবো কি না জানি না, তাই না বলাটাও অনেক দেরি হয়ে যায়। আর নারী-পুরুষের জন্য সবচেয়ে বড় উন্মাদনা একটাই: প্রেম।

“তুমি আমাকে একটা প্রেম কাহিনী শুনিয়েছো। আমি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করি যে, তোমার মা-বাবা তোমার জন্য সবচেয়ে ভালোটা চেয়েছেন, কিন্তু তাদের ভালোবাসা তোমার জীবনকে প্রায় ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কুমারী মেরি যেমন আমার দাদীর ঘরের ছবিটাতে রয়েছেন একটা সাপকে পদদলিত করে, সেটা থেকে বোঝা যায় ভালোবাসার দু’টা দিক রয়েছে।”

“আমি বুঝতে পারছি তুমি কী বলতে চাচ্ছো,” এডোয়ার্ড বললো। “আমি নার্সদের আমাকে বৈদ্যুতিক শক্ দিতে প্ররোচিত করেছিলাম। কারণ দেখেছো আমি পুরো এলোমেলো অবস্থায় ছিলাম। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারবো না যে আমি কী বোধ করছিলাম, কিন্তু এটা ঠিক যে ভালোবাসা আমাকে একবার প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে।”

“ভেবো না। আমি আজকে ডা. ইগোরকে বলেছি আমাকে এ জায়গা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে এবং এমন একটা জায়গা বেছে নেয়ার সুযোগ দিতে যেখানে আমি চিরদিনের মতো চোখ বুজতে পারি। কিন্তু নার্সরা যখন তোমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখলাম, তখন আমার মনে হলো আমি পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার সময় যেটা শেষবার আমার দৃষ্টির সামনে দেখতে চাই সেটা হচ্ছে তোমার মুখ। আর তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি ভিলেট ছেড়ে যাবো না।

“তুমি যখন বৈদ্যুতিক শক্-এর কারণে ঘুমাচ্ছিলে, তখন আমার আর একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো আর আমার মনে হচ্ছিলো আমার সময় হয়ে এসেছে। সে সময় আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর তোমার জীবনের গল্পটা অনুমান করতে চেষ্টা করছিলাম; সে সময় আনন্দের সাথে মৃত্যুকে বুকে টেনে নিতে নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম। কিন্তু মৃত্যু আসেনি। আমার হার্ট আবারও টিকে গেছে, খুব সম্ভবতঃ আমার তরুণ বয়সের কারণে।

এডোয়ার্ড মাথা নীচু করে রইলো।

“প্রেমে পড়া নিয়ে তুমি বিব্রত বোধ করো না। আমি তোমার কাছে কিছু চাচ্ছি না, শুধু তোমাকে ভালোবাসতে দাও, আর আজ রাতে আবার পিয়ানো বাজিয়ে শোনাতে দাও, মাত্র আর একবার, যদি সে পর্যন্ত আমার বাজানোর অবস্থা থাকে। তার পরিবর্তে আমি একটা জিনিস চাইবো: তুমি যদি শোন কেউ বলছে আমি মারা যাচ্ছি, সোজা আমার ওয়ার্ডে চলে আসবে। আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করবে।”

এডোয়ার্ড অনেকক্ষণ যাবৎ নিশ্চুপ হয়ে রইলো। ভেরোনিকার মনে হচ্চিলো সে নিশ্চয়ই আবার তার ভিন্ন জগতে পালাবে, এবং সেখান থেকে আর দীর্ঘ সময় ফিরে আসবে না।

ভিলেট প্রাচীরের পেছনে পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে এডোয়ার্ড বললো: “তুমি যদি ভিলেট ছেড়ে যেতে চাও, আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারি। আমাকে শুধু দু’ টা জ্যাকেট আনতে দাও, আর কিছু টাকা। তারপরই আমরা যাবো।”

“আমাদের তো খুব বেশি সময় নেই, এডোয়ার্ড। তুমি তো জানো এটা।”

এডোয়ার্ড কিছু বললো না। সে ভেতরে গেলো এবং তখনই দু’ টা জ্যাকেট হাতে ফেরত আসলো।

“আমাদের হাতে অনন্তকাল পর্যন্ত সময় রয়েছে, ভেরোনিকা; অন্ততঃ যত গুলো দিন ও রাত আমি এখানে কাটিয়েছি তার থেকে বেশি সময়। এখানে আমি ক্রমাগত চেষ্টা করেছি আমার ‘অপার্থিব স্বপ্ন’ ভুলে যাওয়ার জন্য। আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম, কিন্তু চিন্তাটা আবার ফিরে আসছে বলে আমার মনে হচ্ছে।

“চলো, যাই। পাগলেরা তো পাগলামিই করে।”

এডোয়ার্ড ভেরোনিকার হাত ধরে ভিলেট-এর পেছনের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেলো।

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০