fbpx

ভেরোনিকা ডিসাইড্‌স্‌‌ টু ডাই

সাতাশ

রাতের খাবারের পর ভাতৃসংঘের সদস্যরা যখন একত্রিত হলো তখন তাদের একজন সবাইকে জানালো: মারি সিনেমা দেখতে যায়নি, সে চলে গিয়েছে, আর কখনো ফিরবে না; আর সে তাকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে।

ব্যাপারটাতে কাউকে তেমন গুরুত্ব দিতে দেখা গেলো না: সে সব সময়ই একটু ভিন্ন, বরং একটু বিকারগ্রস্ত এবং ভিলেট-এ তারা সবাই যেভাবে বসবাস করছে সে আদর্শ পরিস্থিতিটা মানিয়ে নিতে অপারগ।

“মারি কখনোই বুঝলো না আমরা কত সুখী,” তাদের একজন বললো। “আমরা একই চিন্তার বন্ধুরা এখানে আছি, আমাদের একটা নিয়মিত রুটিন রয়েছে, কখনো কখনো আমরা একসাথে বাইরে বেড়াতে যেতে পারি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তাকে আমন্ত্রণ করে বক্তৃতা শুনতে পারি, তারপর সে ধারণাগুলো নিয়ে আলোচনাও করতে পারি। আমাদের জীবন একটা চমৎকার ভারসাম্যের মধ্যে রয়েছে বাইরের অনেকেই যেটা অর্জন করতে চায়।”

ভিলেট বেকারত্ব থেকে সুরক্ষিত, বসনিয়ার যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে অর্থনৈতিক সমস্যা ও নৃশংসতা থেকে মুক্ত এ কথাগুলো উল্লেখ না করে একজন বললো, “আমরা এখানে একটা ছন্দ খুঁজে পেয়েছি।

যে মারি’র খবরটা এনেছিলো সে একটা বন্ধ খাম তুলে ধরে বললো, “মারি আমাকে এই চিঠিটা দিয়ে গেছে। সে আমাকে বলে গিয়েছে চিঠিটা তোমাদের সবাইকে পড়ে শোনাতে, কারণ সে আমাদের সবাইকে বিদায় জানাচ্ছে।”

দলের বয়স্ক লোকটা খামটা খুললো এবং মারি যেরকম বললো তাই করলো। অর্ধেক পড়ে সে থেমে যাচ্ছিলো, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাই সে শেষ পর্যন্ত পড়লো।

“আমি যখন একজন তরুণ আইনজীবী তখন একজন ইংরেজ কবির কিছু কবিতা পড়ি এবং কবির কিছু কথা আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করে: ‘ফোয়ারার মতো উপচে পড়ো, চৌবাচ্চার মতো শুধু ধারণ করো না।’ আমি সব সময়ই ভাবতাম তিনি ভুল। উপচে পড়াটা বিপজ্জনক, কারণ এটা আমাদের আপন লোকদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং তাদেরকে আমাদের ভালোবাসা আর উদ্যমে ডুবিয়ে মারতে পারে। আমার সারা জীবন আমি ধারণ করতে চেয়েছি, কখনো আমি আমার অন্তর্নিহিত প্রাচীর সীমার বাইরে যাইনি।

“তারপর, কী কারণে আমি কখনো বুঝিনি আমি প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতে লাগলাম। আমি এমন ব্যক্তি হয়ে গেলাম যেমন হওয়া এড়াতে আমি সব সময় লড়াই করে এসেছি: আমি ফোয়ারার মতো উপচে পড়া মানুষ হয়ে গেলাম এবং আমার চারপাশের সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেলাম। যার ফল হলো আমাকে ভিলেট আসতে হলো।

“আমি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর, আমি আবার ধারণ করা একজন মানুষের অবস্থায় ফিরে গেলাম এবং তোমাদের সবার সাথে আমার দেখা হলো। তোমাদের বন্ধুত্বের জন্য, তোমাদের ভালোবাসার জন্য এবং অনেক সুন্দর মুহূর্তের জন্য তোমাদের ধন্যবাদ। আমরা একুরিয়ামের মাছের মতো একত্রে বসবাস করছিলাম, কারণ আমাদের যখন খাবার দরকার তখন কেউ একজন তা আমাদের ছুড়ে দিতো এবং যখন চাইতাম তখন আমরা কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরের পৃথিবীটা দেখতে পারতাম।

“কিন্তু গতকাল, একটা পিয়ানো ও একজন তরুণী থেকে – যে সম্ভবতঃ এতক্ষণে মৃত, আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিখলাম: ভেতরের জীবন আর বাইরের জীবন সম্পূর্ণ এক। বাইরে ও ভিতরে উভয় জায়গাতেই তারা একত্রে দল তৈরি করে; তারা নিজেদের প্রাচীর তৈরি করে সেখানে অপরিচিত কোন কিছুই যা তাদের মাঝারি অস্তিত্বের জন্য ঝামেলা করতে পারে তার অনুমোদন করে না। তারা এগুলো করে কারণ তারা এগুলো করেই অভ্যস্ত, তারা অর্থহীন বিষয় পড়ে, তারা আনন্দ করে কারণ তারা আনন্দ করে অভ্যস্ত, এবং বাকি সমস্ত পৃথিবী তার মতো থাকে – তাকে তার মতো তারা থাকতে দেয়। প্রায়ই তারা টেলিভিশনে খবর দেখে যেমন আমরা দেখতাম – অনেকটা সমস্যা ও অন্যায়ে পরিপূর্ণ পৃথিবীতে তাদের সুখের বিষয়টা নিশ্চিত করতে।

“আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে ভাতৃসংঘের জীবন ঠিক বাইরের পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকের জীবনের মতোই, একুরিয়ামে কাঁচের দেয়ালের বাইরে পড়ে থাকা জীবনটার বিষয়ে জানা সব কিছুকে যত্ন সহকারে এড়িয়ে চলার মতো। দীর্ঘ সময় ধরে এটা আরামদায়ক ও উপযোগী। কিন্তু মানুষ পরিবর্তনশীল। আর তাই আমি অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে বের হচ্ছি। যদিও আমার বয়স পঁয়ষট্টি বছর এবং আমি আমার বয়স সম্পর্কিত সকল সীমাবদ্ধতা জানি, তারপরও আমি বসনিয়া যাচ্ছি। সেখানে মানুষেরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যদিও তারা আমাকে এখনো চেনে না, আমিও তাদের চিনি না। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমি তাদের উপকারে লাগবো। আর অ্যাডভেঞ্চারের ঝুঁকির মূল্য তো এক হাজার বছরের নিরুদ্বেগ ও আরামদায়ক জীবনের মূল্যের সমান।”

যখন তিনি চিঠিটা পড়া শেষ করলেন, ভাতৃসংঘের সদস্যরা সবাই যার যার রুমে ও ওয়ার্ডে ফিরে গেলো আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো যে, মারি শেষ পর্যন্ত পাগল হয়ে গিয়েছে।

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০