fbpx

ভেরোনিকা ডিসাইড্‌স্‌‌ টু ডাই

ঊনত্রিশ

এডোয়ার্ড-এর মনে হচ্ছিলো কেউ তার কাঁধে তীক্ষ্ন কিছু দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে। চোখ মেলে দেখে সকাল হচ্ছে। 

“তোমরা চাইলে গিয়ে টাউন হলে আশ্রয় নিতে পারো,” একজন পুলিশ এডোয়ার্ড-কে উদ্দেশ্য করে বললো। “তোমরা এখানে থাকলে বরফ হয়ে যাবে।”

এক সেকেন্ডের মধ্যে এডোয়ার্ডের গত রাত থেকে সব কিছু মনে পড়লো। একটা মেয়ে তার বাহুতে কুঁকড়ে শুয়ে আছে।

“সে… সে মারা গেছে।”

এডোয়ার্ড-কে বিস্মিত করে মেয়েটি নড়ে উঠলো এবং চোখ মেলে তাকালো।

“কী হয়েছে?” ভেরোনিকা জিজ্ঞেস করলো।

“কিছু হয়নি,” তাকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করতে করতে বললো, “একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটে গেছে, জীবনের আর একটা দিন চলে এসেছে।”

ত্রিশ

ডা. ইগোর তার কনসাল্টিং রুমে এসে বাতি জ্বালালেন – দিনের আলো পৌঁছাতে এখনো দেরি এবং শীতও লম্বা সময় ধরে চলছে। ঠিক এ সময়ই একজন নার্স তার দরজায় নক্ করলো। 

কাজ তো দেখি আজ খুব সকালেই শুরু হয়ে গেছে, তিনি নিজেকেই বলছিলেন।

আজকে তার জন্য একটা কঠিন দিন যাবে কারণ তাকে ভেরোনিকার সাথে কথা বলতে হবে। তিনি সারা সপ্তাহ এটা নিয়ে ভেবেছেন এবং গত রাতে একটু শুধু চোখ বন্ধ করতে পেরেছেন।

“আমি কিছু খারাপ খবর নিয়ে এসেছি,” নার্সটি বললো। “আমাদের দু’ জন নিবাসী পালিয়েছে; অ্যাম্বাসেডর-এর ছেলে আর হার্টের সমস্যার ঐ মেয়েটি।”

“সত্যি কথা বলতে, তুমি একজন অযোগ্য লোক; এই হাসপাতালের নিরাপত্তা কি কখনো এমন কঠিন ছিলো,” ডা. ইগোর বিরক্তি নিয়ে বললেন। “তোমাদের খেয়াল রাখা উচিত ছিলো।”

“আগে কখনো তো কেউ পালায়নি,” নার্সটি ভয়ে ভয়ে বললো। “আমরা জানতাম না যে এটা সম্ভব।”

“বেরিয়ে যাও! এখন আমাকে মালিক পক্ষের জন্য একটা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হবে, পুলিশকে জানাতে হবে, অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে বলো আমাকে কেউ যেন বিরক্ত না করে; এসব করতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগবে।”

নার্সটি ফ্যাকাশে মুখে বের হয়ে গেলো। তার মনে হলো এ সমস্যার একটা বড় দায়ভার তার উপর এসে পড়বে কারণ দুর্বলরা সব সময়ই সবলের অত্যাচারের কবলে পড়ে। নিশ্চয়ই আজ দিন শেষ হওয়ার আগেই তার চাকরি যাবে। 

ডা. ইগোর একটা প্যাড নিয়ে নোট লিখতে বসলেন; কিন্তু তারপরই তিনি মন পরিবর্তন করলেন।

তিনি বাতি নিভিয়ে দিয়ে প্রথম সূর্যালোকের ক্ষীণ আলোয় বসে রইলেন। ডা. ইগোর-এর ঠোঁটের কোনায় একটা হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এটা কাজ করছে।

এর মধ্যেই তিনি ভিট্রিওল-এর একমাত্র জানা উপশম বর্ণনা করে প্রয়োজনীয় নোট নিয়ে নিলেন: ‘জীবনের সতর্কতা’ শিরোনামে; এবং ওষুধের বর্ণনা করে নোট নিলেন যেটা তিনি রোগীদের উপর প্রথম মূখ্য পরীক্ষা চালাতে ব্যবহার করেছেন: ‘মৃতুর সতর্কতা’ শিরোনামে।

হয়তো আরো ওষুধ আছে, কিন্তু ডা. ইগোর ঠিক করলেন তিনি তার গবেষণা পত্রে একটির কথাই লিখবেন যেটা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। তরুণীটিকে ধন্যবাদ যে কি না সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে তার অদৃষ্টের অংশ হয়ে পড়েছিলো। সে যখন এখানে পৌঁছায় তখন ভয়ঙ্কর অবস্থায় ছিলো। মারাত্মকভাবে অতিরিক্ত ওষুধ নেয়ায় সে কোমাতে চলে গিয়েছিলো। যে জীবন মৃত্যুর মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে; ঠিক এ সময়টুকুই প্রয়োজন ছিলো তার চমৎকার পরীক্ষাটা তৈরি করতে।

সব কিছুই একটা জিনিসের উপর নির্ভর করছিলো: মেয়েটির বেঁচে উঠার সক্ষমতা।

কোন ধরনের মারাত্মক ফলাফল বা কোন ধরনের নিরাময় অযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াই মেয়েটির টিকে যাওয়ার সক্ষমতা ছিলো। সে যদি তার নিজের দিকে তাকাতো, তাহলে সে যত দিন খুশি বেঁচে থাকতে পারতো।

তবে ডা. ইগোরই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিষয়টা জানতেন, যেমন তিনি জানতেন যে, ব্যর্থ আত্মহত্যা শীঘ্রি বা দেরিতে হলেও আবার আত্মহত্যার প্রচেষ্টা নিতে প্ররোচিত করে। তাহলে তাকে যদি একটা গিনিপিগ বানানো হয় যেটা তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে ভিট্রিওল সম্পূর্ণ দূর করে ফেলে কি না তা পরীক্ষা করবে, তাহলে কেমন হয়?

আর এ কারণে ডা. ইগোর তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেন।

ফিনোটাল নামে পরিচিত একটা ওষুধ দিয়ে তিনি হার্ট অ্যাটাকের ফলাফলগুলোকে জাগিয়ে তুললেন। এক সপ্তাহ ধরে তরুণীটি এ ওষুধের ইনজেকশন নিয়েছে, এবং সে খুব ভীত হয়ে পড়েছে কেননা এ সময়ে সে মৃত্যু ও তার নিজের জীবনকে মূল্যায়ন করার সুযোগ পেয়েছে। এই ভাবে, ডা. ইগোর-এর গবেষণা পত্র মোতাবেক (তার কাজের শেষ অধ্যায়-এর শিরোনাম হবে “মৃত্যু সতর্কতা আমাদের আরো গভীরভাবে বাঁচতে উদ্বুদ্ধ করে”) মেয়েটি তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে ভিট্রিওল সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে শুরু করে এবং সম্ভবতঃ আর কখনোই সে আত্মহত্যা করার প্রচেষ্টা নিবে না।

আজকে তার ভেরোনিকার সাথে কথা বলার পরিকল্পনা ছিলো এবং তাকে বলার কথা ছিলো যে, ইনজেকশনগুলোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ; তিনি এখন হার্টের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন। ভেরোনিকা পালিয়ে উনাকে বাঁচিয়েছে তাকে মিথ্যা বলার মতো একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে।

ডা. ইগোর যেটা বিবেচনায় নেননি সেটা হচ্ছে ভিট্রিওল বিষক্রিয়ার জন্য তার উপশমের সংক্রমন প্রকৃতি। ভিলেট-এর অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে যেতে পারে তাদের ধীর ও অনিরাময়যোগ্য মৃত্যু চিন্তায়। তারা কী হারাচ্ছে সেটা নিয়ে সবাই ভেবে অস্থির হয়ে যেতে পারে এবং জোর করে নিজেদের জীবন মূল্যায়ন করতে যেতে পারে।

মারি তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ নিয়ে এসেছিলো। অন্য রোগীরাও তাদের অবস্থা পুনঃ বিবেচনা করতে বলতে পারে। কুটনীতিক-এর ছেলের বিষয়টা বেশি দুশ্চিন্তার যদিও সে শুধু পালিয়েই গেছে, সম্ভবতঃ ভেরোনিকাকে পালাতে সাহায্য করতে গিয়ে।

হয়তো তারা এখন এক সাথেই আছে, তিনি ভাবছিলেন।

যে কোন মূল্যেই হোক কুটনীতিকের ছেলে জানে ভিলেট কোথায়, সে ফিরে আসতেও পারে। ডা. ইগোর এতোটা উত্তেজিত ছিলেন যে এসব ছোটখাটো বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার মতো অবস্থা তার ছিলো না।

কিছু সময়ের জন্য তিনি আর একটা সন্দেহ নিয়ে অভিভূত হয়ে রইলেন: আগে বা পরে কোন এক সময় ভেরোনিকা বুঝতে পারবে যে সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছে না। সে কোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারে যে তাকে বলতে পারে যে তার হার্ট সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সে ভাবতে পারে যে চিকিৎসক তাকে ভিলেট-এ দেখেছেন সে একেবারে অযোগ্য। কিন্তু কে আছে যে এই নিষিদ্ধ বিষয়ে গবেষণার সাহস রাখে। কেননা এর জন্য পর্যাপ্ত সাহস এবং ভালো পরিমাণ অনুপলব্ধি বোধ উভয়ই প্রয়োজন।

কিন্তু যে দিনগুলো সে আসন্ন মৃত্যু ভয়ে বেঁচে থাকবে তার কী হবে?

ডা. ইগোর দীর্ঘ সময় ও জটিল ভাবে যুক্তিগুলো ভেবে দেখলেন এবং সিদ্ধান্তে আসলেন যে এটা কোন সমস্যা না। প্রতিটা দিনকেই সে অলৌকিক হিসেবে বিবেচনা করবে – আসলেই তো অলৌকিক, কেননা কারো প্রতি মুহূর্তের ভঙ্গুর অস্তিত্বের বিপরীতে যখন অভাবনীয় ঘটনা ঘটে তখনই তো তা অলৌকিক।

তিনি লক্ষ্য করলেন সূর্য রশ্মি তীক্ষ্ন হয়ে উঠছে; এ সময়ে নিবাসীরা সব সকালের নাস্তা করছে। খুব তাড়াতাড়িই তার ওয়েটিং রুম পূর্ণ হয়ে যাবে, সাধারণ সমস্যাগুলো সামনে চলে আসবে। আর তাই সবচেয়ে ভালো হয় তার গবেষণার নোটগুলো এখনই লিখে ফেলা।

ডা. ইগোর খুব নিখুঁত ভাবে ভেরোনিকাকে নিয়ে তার পরীক্ষার বিষয় লেখা শুরু করলেন; তিনি ভবনের নিরাপত্তার অভাব বিষয়ক প্রতিবেদনটি পরে লেখার জন্য ফেলে রাখলেন।

(সমাপ্ত)

ব্যবস্থাপক |

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০

রোকনুজ্জামান

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশন:১৯৯৯-২০০০