fbpx

সম্পাদকীয় – এপ্রিল ২০২০

প্যাপাইরাস পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ যাত্রা শুরু করেছিলো ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল। তাই পত্রিকার এপ্রিল ২০২০ সংখ্যাটি বর্ষপূর্তি সংখ্যা হিসেবে মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল)-এর পরিবর্তে ১৮ এপ্রিল প্রকাশ করা হলো। এ উপলক্ষে পত্রিকাটি নিয়ে কিছু লিখবো ভেবেছিলাম। কিন্তু, মাথায় ঘুরছে শুধুই করোনাভাইরাস।

বাংলাদেশে করোনা-সংকট অচিরেই যে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর জন্য জনগণ ও সরকার সমানভাবে দায়ী।

প্রথমে দেখলাম, বিদেশ থেকে দলে দলে লোক দেশে ফেরত এলো। সবচেয়ে বেশি এলো ইতালি থেকে। এদের অনেকেই কোয়ারান্টিনের মানে বোঝেন বলে মনে হয়নি। অথচ, কোয়ারান্টিন শব্দটির উৎপত্তি ইতালিতে। আজ থেকে প্রায় ছয়শ’ বছর আগে প্লেগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ভেনিস বন্দরে জাহাজ ভিড়লে চল্লিশ দিন (ইতালীয় ভাষায় quaranta giorni, উচ্চারণ: কোয়ারান্তা জোর্নি) অপেক্ষা করে ল্যান্ডিং করতে হতো। এই কোয়ারান্তা বা চল্লিশ থেকে কোয়ারান্টিন শব্দটি তৈরি হয়েছে। যদিও করোনাভাইরাসের জন্য কোয়ারান্টিন চল্লিশ দিনের বদলে মাত্র চৌদ্দ দিন, অনেক বিদেশফেরত মানুষের তাতেও আপত্তি দেখলাম। তারা ঘোরাঘুরি করে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছেন নানা এলাকায়।

বাংলাদেশে এখন কোয়ারান্টিনের মানে দাঁড়িয়েছে চল্লিশা (চেহলাম)। আমরা আগে কিছু করবো না, মানুষ মারা গেলে চল্লিশা করবো।

এরপর দেখলাম লকডাউন উপেক্ষা করে নানা এলাকা থেকে আসা মুসল্লিদের জমায়েত। এদের অনেকে মনে করেন, ‘করোনায় আমাদের কিছু হবে না। কারণ, আমরা পাঁচ ওয়াক্ত অজু করি।’ এই ধর্মান্ধ মুসলিমদের কার্যকলাপ ধর্মান্ধ হিন্দুদের ‘করোনা প্রতিরোধে গো-মূত্র পান’-এর সাথে তুলনীয়।

অথচ, মহানবী (সা:) ছোঁয়াচে রোগের মোকাবেলায় পরিষ্কার ভাষায় লকডাউনের কথা বলেছেন। হাদীসে আছে, ‘কোন এলাকায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে শুনলে সেখানে প্রবেশ করো না। আবার, তুমি কোন এলাকায় অবস্থানকালে যদি সেখানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, সেই এলাকা ত্যাগ করো না।’ (আল-বুখারী, ৭: ৬২৪)

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে করোনার টেস্ট ও চিকিৎসার সুযোগ ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে। পরে অন্যান্য জেলায় ব্যবস্থা করা হলেও তা অপ্রতুল। এখনও ডাক্তার-নার্সসহ ‍স্বাস্থ্য-কর্মীদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

এখনও করোনার টেস্ট বা চিকিৎসা করাতে রোগীকে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হয়। কোন্ হাসপাতালে গেলে কাজ হবে, তা জনগণ তো দূরের কথা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে বলে মনে হয় না। কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই।

লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্রদের জন্য পাঠানো চাল যেসব স্থানীয় নেতা চুরি করেছেন, তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য প্রশাসনকে অতটা তৎপর দেখলাম না। রাত বারোটায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে প্রতিবাদী সাংবাদিককে যদি জেল দেয়া যায়, তাহলে তাৎক্ষনিকভাবে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে চাল-চোরদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যায় না কেন? কেন মাত্র ছয় মাসের জেল বা দশ-বিশ হাজার টাকা জরিমানা? কেন তাদের সম্পত্তি ক্রোক করা হয় না? প্রথমদিকে কড়া শাস্তি দিলে চোরের সংখ্যা ও চুরির পরিমাণ দ্রুত কমে যাবে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তাই আমাদের একমাত্র ভরসা।

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

জাফর আহমেদ খান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪