fbpx

নভেম্বর ২, ২০২৪

কাশ্মীর এক বিতর্কিত উত্তরাধিকার: ১৮৪৬-১৯৯০ (১ম খণ্ড : চতুর্থ অধ্যায়)

গিলগিট ইজারা

(পূর্ববর্তী সংখ্যায় প্রকাশের পর)

১৯৩৪ সালে সম্পূর্ণ উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত, যার শুধুমাত্র পশ্চিমাংশ গিলগিট দ্বারা প্রতিরক্ষার আওতায় ছিলো না এবং যার উপর বৃটিশদের সেই ১৮৮০’র দশক থেকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ছিলো, পুরোপুরি প্রত্যক্ষ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলো।

মা হু-শান এর তুনগান রাজত্বের সাথেই লাদাখ-এর উত্তরে পূর্বাঞ্চলের অর্ধেক খোটানে কেন্দ্রীভূত ছিলো যেখানে বৃটিশ প্রতিরক্ষা একেবারেই অনুপস্থিত ছিলো। এখানে রুক্ষ ও এবড়োথেবড়ো বিস্তৃত ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিক বাঁধা ছিলো, আর এসব কারণে এখানে কোন সীমানাও চিহ্নিত করা সম্ভব ছিলো না (তাছাড়া ১৮৯৯ এর সীমারেখার বিষয়ে চায়নার মনোভাব স্পষ্ট ছিলো না)। জিনঝিয়াং-এ সমস্যার কারণে ‘চুক্তি সড়ক’-টি কার্যতঃ ব্যবহার উপযোগী ছিলো না; ফলে লেহ্-তে বৃটিশ দপ্তরের (লাদাখের জয়েন্ট কমিশনার) অধীন এটি ছিলো বৃটিশ সীমান্ত রেখা এবং খুব কম সংখ্যক বণিক ও পর্যটক সীমান্ত রেখার বিষয়ে সতর্ক থেকে এ পথে অগ্রসর হতো। বণিকদের যারা এ রুটটা ব্যবহার করতো তারা কারাকোরাম পাস অতিক্রম করে আসতো এবং কারাকাশ নদীর উজান ধরে ঠিক পূর্বে এবং আকসাই চিন ও লিনঝিটাং এর উচ্চতায় কোন কিছুই ঘটতে দেখতো না। এই জনমানবহীন সীমান্ত এলাকায় বৃটিশ কিংবা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সশস্ত্র বাহিনীর কেউ-ই টহল দল পাঠাতো না। তিব্বতের দিক থেকে গ্রীষ্মে কিছু সংখ্যক যাযাবর হয়তো এদিকটাতে আসতো, কিন্তু তারা জিনঝিয়াং-এর দিক থেকে আসন্ন বিপদ সম্পর্কে খুব সম্ভবতঃ কোন অগ্রিম সতর্ক বার্তা পেতো না। প্রকৃতপক্ষে এ ক্রান্তিলগ্নে সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় একমাত্র পর্যটক ছিলো ১৯২৯-৩৩ পর্যন্ত জিনঝিয়াং এর চায়না-সুইডিশ অনুসন্ধানী দল (এটা প্রখ্যাত অনুসন্ধানকারী সেভেন হেইডিন এর অনুপ্রেরণায় হচ্ছিলো) যারা চায়না সরকারের পক্ষে আকসাই চিন অঞ্চলে ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করছিলেন এবং যারা সময়ে সময়ে লকঝুং পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে লিংঝিটাং ভ্রমণ করছিলেন; কিন্তু ১৯৩৪ সালে এ ভূতত্ত্ববিদরা প্রস্থান করেন।

উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের পশ্চিমের অর্ধেক অংশ গিলগিট এজেন্সিকে কাশগড়িয়ার যে অংশ থেকে পৃথক করেছিলো সেখানে স্থানীয় কিরগিজদের ও অন্যান্য যাযাবরদের নিয়ন্ত্রণ করা যেতো এবং সেটা শেং শি-সাই এর জারি করা নির্দেশ নিরাপত্তাহীনভাবে ও মাঝে মাঝে কার্যকর করে হলেও। এখানে বৃটিশরা লাদাখের উত্তর অংশ থেকে সামরিক দিক থেকে অধিকরত সজ্জিত ছিলো।

১৮৯০ দশকে একটা নতুন সড়ক পথে (চাকাযুক্ত গাড়ির জন্য অবশ্য খুব উপযুক্ত না) শ্রীনগর অতিক্রম না করেই গিলগিট থেকে সরাসরি রাওয়ালপিন্ডি যাওয়া সম্ভব হচ্ছিলো; যেটা কাগান উপত্যকা হয়ে বাবুসর পাস উঠে গেছে এবং চিলাস এর ইন্দুতে নেমে এসেছে। বাস্তবিক অর্থে এটা ভারত সরকারের এমন এক উদ্যোগ যাতে এর সম্পূর্ণটাই বৃটিশ অঞ্চলে পরিচালিত হয়, এবং তাত্ত্বিকভাবে এর ফলে দেরিতে হলেও মহারাজার কোন নির্দেশ ছাড়াই বৃটিশ ভারত থেকে গিলগিট এজেন্সি বাহিনীকে শক্তিশালী করা যেতো। বৃটিশ ভারত থেকে চিত্রালের পথ ধরেও গিলগিট পৌঁছানো যেতো; কিন্তু এটা খুব সহজ রাস্তা ছিলো না এবং বাবুসর পাসের উপর দিয়ে আসা রাস্তা থেকে দীর্ঘ ছিলো। বস্তুতঃ বুনজি গ্যারিসন (যেটা গিলগিট থেকে প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরে ইন্দুর পাড়ে অবস্থিত ও ফেরি দিয়ে অতিক্রম করা সম্ভব ছিলো) থেকে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সৈন্যদলে জরুরি শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভবতঃ তখনো প্রয়োজন হতো, যদি না ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক নতুন সৈন্যদল বিন্যস্ত করা না হতো। যদিও শ্রীনগর হয়ে গিলগিট ও লাহোরের মধ্যে টেলিগ্রাফিক যোগাযোগ ১৮৯৪ সাল থেকেই ছিলো তবুও প্রয়োজনের সময় বৃটিশ ভারতের ক্যান্টনমেন্ট থেকে সৈন্য পৌঁছাতে অনেক দিন সময় লাগতো।  

১৮৯১-৯২ সময়ে হুনজা যুদ্ধের সঙ্কটকাল ছাড়া গিলগিট এজেন্সি গ্যারিসন মূলতঃ প্রায় সম্পূর্ণভাবেই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য সৈন্যদলের অন্তর্ভুক্ত ছিলো (এর সংখ্যা ছিলো ২,০০০ এর বেশি)। এর বেশির ভাগ ব্যয়ই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য কোষাগার থেকে বহন করা হতো। পরবর্তীতে কয়েক দফা সংশোধনে এর সংখ্যা ও ব্যয় কিছুটা হ্রাস পেয়েছিলো, কিন্তু নিজস্ব সৈন্যবাহিনী বলতে যেটা বোঝায় গিলগিটের জন্য সেরকম সৈন্যদল বৃটিশরা ১৯১৩ সালের আগে খুঁজে পায়নি। সে বছর গিলগিট সৈন্যদল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সৈন্যদলে স্থানীয়ভাবে গিলগিট এজেন্সি এলাকা থেকেই শিক্ষানবীশ সৈনিক নিয়োগ করা হতো। শক্তিমত্তায় এ সৈন্যদল ছিলো প্রায় ৬০০‘র উপরে যারা বৃটিশ কর্মকর্তা দ্বারা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও নির্দেশিত। যেখানে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য সৈন্যদলের অর্ধেক ব্যয় বহন করতো সেখানে ১৯১৩ থেকে ১৯৪৭ এর নভেম্বর পর্যন্ত সন্দেহের কোন অবকাশ ছিলো না যে এরা তাদের বৃটিশ অধিনায়কদের অনুগত; এবং যখন ১৯৪৭ এর ৩ নভেম্বর তাদের সর্বশেষ বৃটিশ নেতা মেজর ডব্লিউ ব্রাউন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়াকে বেছে নিলেন তখন সৈন্যদল তাকেই অনুসরণ করলো। সে সময় এটা মনে করা হয়নি যে, গিলগিট সৈন্যরা নিজ থেকে সীমান্তের কোন গুরুতর সঙ্কটে (যেমন, রাশিয়া থেকে বা রাশিয়ার মদদে জিনঝিয়াং থেকে কোন বহিঃআক্রমণে) প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারবে; কিন্তু তারা অন্ততঃ অন্য কোথাও থেকে নতুন সৈন্যদল আসার আগে পর্যন্ত সময় ক্ষেপন করতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে; এবং তারা পর্বত অঞ্চলে টহল দিতে পারতো ও অযাচিত ব্যক্তির উপর নজরদারি করতে পারতো।

১৯৩৪ সাল নাগাদ এ ব্যবস্থার সবচেয়ে অপ্রীতিকর দিকটা ভারত সরকারের সামনে উঠে আসে। ১৯১৩ সালে বৃটিশরা যখন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন মহারাজা প্রতাপ সিং-এর অপসারণের মাধ্যমে ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠিত সরকার অনেকাংশেই কার্যকর ছিলো; তখন জম্মু ও কাশ্মীর বাহিনীর উপর হুনজা যুদ্ধের সময়কার মতোই খুব সম্ভবতঃ আস্থা রাখা যেতো। কিন্তু ১৯২৫ সালে প্রতাপ সিং-এর মৃত্যুতে যখন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র হরি সিং ক্ষমতায় আসেন তখন অধিকাংশ নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়া হয়। হরি সিং কি তবে বৃটিশদের একজন বিশ্বস্ত জোট হতে পারতো? ১৯৩৪ সাল নাগাদ এ আশা দুরাশায় পরিণত হয় মূলতঃ দু’ টা কারণে। এক, ১৯৩০ এ লন্ডনে গোল টেবিল বৈঠকে হরি সিং-এর বক্তব্য কিছু বৃটিশ কর্মকর্তাদের কাছে ভারতে বৃটিশদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং গুরুতর পরিস্থিতিতে বিশ্বস্ততা ও সহযোগিতার বিষয়টি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয়ত, ১৯৩১ সালের শেষ নাগাদ এটা স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয় যে, কাশ্মীর উপত্যকায় ডোগরা রাজত্ব বেশ কিছু মারাত্মক বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে রাজ্যের পীড়াদায়ক ও দুর্নীতিপরায়ন প্রশাসনের অসন্তোষজনক প্রকৃতির কারণে; এ থেকে বোঝা যাচ্ছিলো যে, মহারাজা চাইলেও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বৃটিশদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারবেন না।

গিলগিট এজেন্সিতে ১৯২৫ এর পর থেকে পলিটিক্যাল এজেন্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। এখানে একটা দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার ‍সৃষ্টি হয় যেখানে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিলো বৃটিশদের হাতে আর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ছিলো মহারাজার দায়িত্বে। মহারাজা একজন গভর্নরের বা ওয়াজির-ই-ওয়াজারাত এর মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন যিনি ডোগরা রাজত্ব এবং হুনজা ও নগরের মতো রাজ্যের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্কের খাতিরে মহারাজার একজন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। প্রকৃতপক্ষে দ্বিমতের বিষয়গুলোতে যদি ওয়াজির-ই-ওয়াজারাতকে শেষ পর্যন্ত পলিটিক্যাল এজেন্টের পরামর্শ মানতে প্ররোচিত করা যেতো তবে প্ররোচনার প্রক্রিয়া হয়তো আরো দীর্ঘ ও তীব্র হতো; কিন্তু পলিটিক্যাল এজেন্ট এ বিষয়ে সতর্ক ছিলো যে, যে কোন একটা সুযোগেই ওয়াজির-ই-ওয়াজারাত বৃটিশ কর্তপক্ষকে ডোবানোর এবং বৃটিশ মর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। ফলে জিনঝিয়াং এর দিক থেকে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়টি এতোটাই প্রমাণিত যে ভারত সরকার মনে করলো যে, গিলগিট এজেন্সির জন্য নতুন ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।

জিনঝিয়াং-এ শেন শি-সাই রাজত্ব প্রতিষ্ঠা অবশ্যম্ভাবীভাবে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রতিরক্ষা প্রশ্নে নীতিমালা পুনর্বিবেচনায় অনেকগুলো দিকের একটি হয়ে দাঁড়ায়। ভারতীয় পররাষ্ট্র বিভাগ এর ডেপুটি সেক্রেটারি ওলাফ ক্যারো (যিনি এ ধরনের বিষয়ে তার বিভাগের প্রধান স্যার অব্রে মেটকাফের সাথে কখনোই একমত ছিলেন না) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আফগানিস্তান থেকে বার্মা পর্যন্ত সমস্ত ভারতীয় সীমান্ত এলাকা নতুন করে পরীক্ষা শুরু করে এবং দেখতে পায় যে, জিনঝিয়াং-এর মধ্যে দিয়ে রুশ বহিঃ আক্রমণের মুখে সীমান্ত নিরাপত্তা একেবারে ভঙ্গুর। এ পরীক্ষার ফলাফলটা অনেকটা এমন দাঁড়ায় যে, ইংরেজ-তিব্বত সম্পর্কের অবস্থা বেশ অসন্তোষজনক এবং ১৯১৪ সালের তুলনায় এখন আসাম ও তিব্বতের মধ্যকার সীমান্তে ভারত সরকারের আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। তাই ১৯৩৫-১৯৩৭ এ উইলিয়ামসন ও গোল্ড এর লাসা মিশনের পাশাপাশি গিলগিট প্রশ্নের বিষয়টিও সমান্তরাল ভাবে মাথায় রাখতে হবে; এবং সেই সাথে ঐ মুহূর্তে আসাম হিমালয়ে ১৯১৪’র ম্যাকমোহন লাইন সীমান্তরেখা পুনঃবৈধ করার বৃটিশ তৎপরতাও। এসব কিছুর মধ্যে অবশ্যই শেন শি-সাই একটি বিষয়। ভারত সরকার ১৯৩৪ সালে লাসাতে একটি চায়না কুটনীতিক মিশন যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলো; এবং চায়না কম্যুনিস্টদের তৎপরতা, বিশেষ করে সে সময়ে মূল চায়না থেকে তিব্বত ও জিনঝিয়াং এর মধ্যকার সীমান্ত এলাকার দিকে পরিচালিত লং মার্চ ক্যারো ও দিল্লীতে তার সহকর্মীদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।১০

সে সময়ে ভারতের আকাশে যত রকমের ভীতিকর মেঘ দানা বেঁধেছিলো তার মধ্যে জিনঝিয়াং মেঘ থেকে সবচেয়ে মারাত্মক ও তাৎক্ষণিক ঝড়ের সম্ভাবনা ছিলো প্রবল। ভারতীয় অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছিলেন যে, গিলগিট এজেন্সি প্রত্যক্ষভাবে শেং শি-সাই এর হুমকির মুখে রয়েছে (এবং সোভিয়েট রাশিয়া এর পেছনে রয়েছে বলে মনে করা হতো)। জিনঝিয়াং পরিস্থিতি বৃটিশদের প্রবল পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় এবং বিপদের প্রকৃত আশঙ্কা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও দপ্তরগুলোর মধ্যে প্রচণ্ড যুক্তি তর্ক চলতে থাকে।

১৯৩৫ সালে পিটার ফ্লেমিং – যিনি শুধুমাত্র লন্ডনের দ্য টাইমস্ এর সাথেই যুক্ত ছিলেন না, যৌক্তিক ভাবেই সন্দেহ করা হতো যে তিনি বৃটিশ গোয়েন্দা বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন১১ – এবং পিকিং-এ বৃটিশ দূতাবাসের চায়না সেক্রেটারি স্যার এরিক টাইকম্যান জিনঝিয়াং অতিক্রম করে চীন থেকে ভারত সফর করেন।১২  এক্ষেত্রে ফেম্লিং এর ভাবনা আসলে কী ছিলো তা পরিষ্কার নয়। তবে টাইকম্যানের মতে ভারত সরকারের কিছু সতর্ককারী যেমনটা মনে করতেন জিনঝিয়াং তেমনটা চরম ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো না। তার মতে, সেখানকার চায়না কর্মকর্তারা কিছুটা রুশ মনোভাবাপন্ন হতে পারেন কিন্তু তারা চায়না দেশপ্রেমিকও যারা রাশিয়া কর্তৃক এলাকা বর্ধিত করার যে কোন প্রচেষ্টা রুখে দিতে যুদ্ধও করতে পারেন।১৩ স্যার জর্জ ম্যাকার্টনি তার অবসরকালে ভারত দপ্তরকে একই মতামত জানিয়েছিলেন।১৪ এমন কি ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব স্যার অব্রে মেটকাফও বলেন, “ভারত ও জিনঝিয়াং এর মধ্যকার পর্বতশ্রেণির বাঁধার কারণে কাশগড়ে রুশ কর্মকাণ্ডের কারণেও কোন ধরনের মারাত্মক কৌশলগত বিপদের আশঙ্কা নেই।”১৫

কিন্তু সে সময়ে বৃটিশ ভারতীয় বৈদেশিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠায় সত্যিকার অর্থে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি অলাফ ক্যারো এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, জিনঝিয়াং এর দিক থেকে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত চরম হুমকিতে রয়েছে এবং কিছু একটা করতেই হবে। ক্যারো’র এই দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট পরিমাণে ইন্ধন যোগান আর. এ. বাটলার। সে সময় আর. এ. বাটলার ছিলেন ভারত দপ্তরের একজন জুনিয়র মিনিস্টার এবং ১৯৩৮ সালে তিনি ঘোষণা করেন যে, প্রমাণ সাপেক্ষে – যদিও প্রমাণগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় – “সিদ্ধান্তে আসা যায় যে রাশিয়া জিনঝিয়াং এর উপর নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে বদ্ধ পরিকর…।”১৬

ভারত সরকারের একটা মহল বিপদাশঙ্কার বাস্তবতা সম্পর্কে বিশ্বাস করতো যাকে অনেকে ‘ক্যারো প্রবণতা’ বলতো; মহলটি এ বিষয়ে ওকালতি করতে থাকে যেমনটা প্রকৃতপক্ষে ১৮৮৬ সালে কর্ণেল লকহার্ট বলেছিলেন যে, গিলগিট এজেন্সিকে প্রত্যক্ষ বৃটিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে এবং এর মাধ্যমে ‘দ্বৈত শাসনব্যবস্থা’ – যেখানে মহারাজার কিছু বলার অধিকার ছিলো – তার অবসান ঘটাতে হবে।১৭ বাস্তবে এ প্রস্তাব ছিলো নীতির দিক থেকে একটি বড় ব্যত্যয়। ১৯৩১ সালে ভারত সরকারের বাজেটের উপর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবের ফলে এ ধরনের পরামর্শ ছিলো যে, গিলগিট এজেন্সিতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে বৃটিশ প্রতিশ্রুতি হ্রাস করা যেতে পারে। গিলগিট বাহিনীতে স্থানীয়ভাবে নিয়োগকৃত সৈন্য বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যেতে পারে (যাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম লজিস্টিক সমস্যা ছিলো) এবং জম্মু কাশ্মীরের মহারাজাকে কমপক্ষে তিন-চতুর্থাংশ ব্যয় (যেটা আগে অর্ধেক ছিলো) বহন করতে চাপ প্রয়োগ করা উচিত। ১৯৩১ সালের শেষের দিকে এ সব কিছু মহারাজার কাছে উত্থাপন করা হয়।১৮ মার্চ ১৯৩৩ এর আগে মহারাজা এ বিষয়ে কোন সাড়া দেননি। এরপর মহারাজা জানান যে, তিনি গিলগিট এজেন্সি প্রতিরক্ষার সমুদয় ব্যয় বহনের দায়িত্ব নিতে পারেন এই শর্তে যে, ‘দ্বৈত শাসনব্যবস্থা’ তুলে নিয়ে সমস্ত কর্তৃত্ব ওয়াজির-ই-ওয়াজারাত এর হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ভারত সরকারকে স্থানীয় প্রশাসনের যাবতীয় ব্যয়ের বোঝা, সাথে প্রতিরক্ষা ব্যয়, গিলগিট ওয়াজারাত বা জেলার ব্যয় (অন্ততঃ ইন্দুর উত্তর অংশের) এবং এর উপর নির্ভরশীল এলাকার ব্যয় বহন করতে হবে তা অনুমান করা যাচ্ছিলো।১৯ মহারাজা আশা করছিলেন এবং চাচ্ছিলেন যে, ভারত সরকার নির্দ্বিধায় প্রথম পছন্দটাই বেছে নিক।

তবে মহারাজার উপদেষ্টারা নিজেদের সুবিধার বিষয়ে যথেষ্ট চতুর ছিলেন। ভারত সরকার গিলগিট এজেন্সির যাবতীয় ব্যয়ের বোঝা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের কোষাগারের উপর চাপিয়ে দেয়ার (যেটা আসলে ১৯৩১ সালেই দেয়া হয়েছিলো) পরিবর্তে ঐ অঞ্চলের সমস্ত অধিকার বৃটিশদের কাছে হস্তান্তর করার অনুরোধ করতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো যেহেতু মহারাজা দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে এর উল্লেখ করেছেন। ফলে বৃটিশরা গিলগিট এজেন্সির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বৃটিশ ভারত থেকে আসা বিশেষজ্ঞ কর্তৃক সহায়তাকারী গিলগিট বাহিনীর সৈন্যদের উপর নির্ভর করতে লাগলো; এবং তারা প্রত্যক্ষ শাসনাধীন এলাকা থেকে সৈন্য সমাবেশের পরিকল্পনা করতে লাগলো। এটা করতে হতো হয় ব্যয়বহুল সড়ক পথে (বাবুসর পাসের সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে যাতে মোটর গাড়ি চলাচল করতে পারে, অথবা ইন্দুর উপর সম্পূর্ণ নতুন সড়ক তৈরি করে) কিংবা আকাশ পথে। দ্বিতীয় অপশনটি ছিলো সবচেয়ে সহজ এবং অবশ্যই কম ব্যয়সাপেক্ষ। গিলগিটে বিমান ঘাটি প্রস্তুত করা হয় ১৯২৯ সালে যে বছর আরএএফ কাবুল থেকে এক অপারেশনের আওতায় ইউরোপিয়ানদের সরিয়ে নেয়, যেখানে এ সময়েও বিমান ব্যবহার করা সম্ভব ছিলো।২০ ১৯৩৬ সালে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব স্যার অব্রে মেটকাফ বিমানে করে নিজে এ বহিঃ চৌকি পরিদর্শন করেন; এ সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন ছিলো প্রায় ছয় সপ্তাহের।২১ এ সব পরিস্থিতি থেকে মনে করা হচ্ছিলো যে, গিলগিট এজেন্সির পদাতিক বাহিনী ও পাহাড়ি বাহিনীতে জম্মু ও কাশ্মীর সৈন্যদল অবদান রাখতে পারে।

ভারত সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের মধ্যে ১৯৩৪ সালের অক্টোবরে সমাঝোতা শুরু হয়। সমঝোতা আলোচনায় মহারাজার প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী কর্ণেল কোলভিন আর বৃটিশদের পক্ষে কাশ্মীরের রেসিডেন্ট লেঃ কর্ণেল ল্যাং এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া খুব দ্রুত সম্পন্ন হয় বি. জে. গ্ল্যান্সি’র সহায়তায় যিনি তখন রাজ্যে উপস্থিত ছিলেন গোলমালের তদন্ত কাজে এবং সাংবিধানিক পরিবর্তনের কাজে।২২ ১৯৩৫ সালের ২৬ মার্চ এর সমঝোতার যে ফলাফল আসে সেটা হচ্ছে ইন্দুর উত্তরের গিলগিট ওয়াজারাত (গিলগিট জেলা) ও এর নির্ভরশীল এলাকাগুলো ষাট বছরের জন্য বৃটিশদের কাছে বন্ধক দেয়া হয় (সত্ত্ব ত্যাগ করে বন্ধক নয়)।২৩ এ অঞ্চলের সকল লোকপ্রশাসন ও সামরিক প্রশাসন ভারত সরকারে কাছে হস্তান্তর করা হয়। “স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে” বৃটিশরা বৃটিশ ভারতীয় সৈন্যদের বন্ধককৃত এলাকায় স্থানান্তর করতো না (যেখানে “সাধারণ” পরিস্থিতিতে তারা স্থানীয় গিলগিট সৈন্যবাহিনীর উপর নির্ভর করতো)। একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া উচিত যে, বন্ধক সত্ত্বেও  এ এলাকা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অংশ ছিলো। মহারাজা সেখানে জনগণের সম্মানের পাত্র ছিলেন; এবং তিনি এখানের সকল খনিজের অধিকারী ছিলেন। ১৯৩৫ সালের সেপ্টেম্বরে মহারাজা বন্ধকী এলাকায় তাঁর সামান্য ক্ষমতার প্রতিকী প্রদর্শন করেন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য জুড়ে গোহত্যা বন্ধের নির্দেশ বলবৎ করে যেটা গিলগিট ওয়াজারাতের জন্যও প্রযোজ্য ছিলো।২৪ মজার বিষয় হচ্ছে বন্ধকটা শুধুমাত্র সুনির্দিষ্টভাবে ইন্দুর উত্তর অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য ছিলো। আর তাই কৌশলগত দিক থেকে কাগান উপত্যকা ও বাবুসর পাসের মধ্য দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি থেকে ইন্দুর যে রুট সে অঞ্চল মহারাজার প্রত্যক্ষ শাসনাধীন ছিলো। তবে বাস্তবে গিলগিটে যাওয়ার এ পথটা বৃটিশরা নিজেদের বলে মনে করতো।

গিলগিট বন্ধকের সমঝোতা আলোচনায় এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছিলো যে, ভারত সরকারের দৃষ্টিতে হুনজা রাজ্য যেটা জম্মু ও কাশ্মীর মহারাজার আধিপত্য স্বীকার করেছিলো তা আর জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের কোন অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকবে না (যদি বা কখনো থেকে থাকে)। বস্তুত এটা বৃটিশ রাজের সাথে নিজস্ব সম্পর্ক রক্ষায় চুক্তি বজায় রেখেছিলো, কিন্তু এখন সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী এটা সম্ভবতঃ একটি ভারতীয় রাজকীয় রাজ্যে পরিণত হবে বৃটিশ পরাশক্তির আধিপত্যাধীন হওয়ার নিজস্ব অধিকারে যেমনটা হয়েছিলো ইয়াসিন, ইক্ষুমান ও পুনিয়ালের ক্ষেত্রে। কিন্তু এক্ষেত্রে চিলাস ও অ্যাস্টোর রাজ্যের মর্যাদা পরিষ্কার ছিলো না। তবে মহারাজা হুনজা ও অবশিষ্ট অংশগুলোকে কখনোই তাঁর উপ অঞ্চল ব্যতীত কিছু মনে করেননি যেটাকে শুধুমাত্র জম্মু ও কাশ্মীর সাম্রাজ্য বলা যায়। ১৯৪৭ সালে মহারাজা হরি সিং এর অন্তর্ভুক্তিকে নতুন ভারত একই দৃষ্টিভঙ্গিতে উত্তরাধিকার সূত্রে নিয়েছিলো।

১৯৩৫ সালের ১ আগস্ট গিলগিটের নতুন এজেন্ট মেজর জি. ক্রিকব্রাইড আনুষ্ঠানিক ভাবে বন্ধকী অঞ্চলে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর এ দায়িত্ব তাকে রাসকাম ও তাঘদুম্বাশ পামিরের উপর অধিকার বিষয়ক পুরাতন হুনজা সমস্যার মুখে নিয়ে হাজির করে।

(চলবে)

৬.   এটা প্রমাণিত যে খোটানের কর্তৃপক্ষ আকসাই চিন থেকে তারিম বেসিনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য রুট সম্পর্কে জানতো যেটাকে তারা রাষ্ট্রীয় গোপন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতো। তাই সময় সময়ে যখন কোন তিব্বতীয় যাযাবর এ রাস্তা দিয়ে খোটান অঞ্চলে নেমে আসতো তখন তাকে সাথে সাথে মেরে ফেলা হতো যেন এ রুটের অস্তিত্ব প্রকাশ না পায়।
৭.  সীমান্ত এলাকায় চায়না-সুইডিশ অনুসন্ধানের বিস্তারিত A. Lamb, Tibet, China & India 1914-1950. A History of Imperial Diplomacy,Hertingfordbury 1989, pp 385-386, 400 দ্রষ্টব্য।
৮.  ১৮৯৬ সালে এজেন্সির বাহিনী এজেন্সির ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত দুই শ’ জম্মু ও কাশ্মীর পদাতিক সৈন্য, তিন রেজিমেন্ট (সব মিলে ১,৮০০) জম্মু ও কাশ্মীর পদাতিক সৈন্য, একদল জম্মু কাশ্মীর মাউন্টেন ব্যাটারি, এবং দুই কোম্পানি জম্মু ও কাশ্মীর ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিস্ফোরক সৈন্য যার সাথে চল্লিশ জনের মতো বাঙ্গালি ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিস্ফোরক সৈন্য – এ সব নিয়ে গঠিত ছিলো।
৯.  ওলাফ ক্যারো ১৮৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। উইনচেস্টার ও ম্যাগডালেন কলেজ, অক্সফোর্ড পেরিয়ে তিনি ১৯১৯ সালে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ভারতীয় পররাষ্ট্র ও রাজনৈতিক বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান, এবং ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত তিনি জয়েন্ট ফরেন সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি খুব স্বল্প সময়ের জন্য ১৯৪৬ সালে সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর হন এবং বৃটিশ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাক্কালে অবসরে যান। ১৯৮১ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ক্যারো অত্যন্ত মেধাবী একজন ব্যক্তি ছিলেন এবং কুটনীতির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় নবজাগরণ যুগের রাজনৈতিক দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পরও ভারতের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনায় তার প্রেরণায় গড়ে উঠা উত্তরসূরি উদাহরণ হিসেবে পাওয়া যায়।
১০. তিব্বতের সমস্যা ও ম্যাকমোহন লাইন নিয়ে বিস্তারিত Lamb, Tibet, China & India op. cit.,Chapters VIII and XII দ্রষ্টব্য।
১১. পিটার ফ্লেমিং তার ভাই ইয়ানের মতোই যুদ্ধের সময় বিভিন্ন গুপ্তচর বৃত্তিতে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং কম-বেশি এরকম সম্ভাবনা রয়েছে যে প্রাক-যুদ্ধ বছরগুলোতে বৃটিশ গুপ্তচর সম্প্রদায়ের সাথে তার দহরম-মহরম ছিলো। যুদ্ধের সময়কার ফ্লেমিং-এর গুপ্তচর বৃত্তির কিছু পরিচয় জানতে দেখুন A. Stripp, Codebreaker in the Far East,London 1989, pp. 179-181; D. Hart-Davis, Peter Fleming, a Biography,London 1974 ।
১২.  দু’ জনেই তাদের সফরের বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। সে সময়ে ফ্লেমিং-এর বিবরণ ব্যাপক সাড়া ফেলেছিলো, সে তুলনায় টাইকম্যানেরটা কম ছিলো। দেখুন: P. Fleming, News From Tartary. A Journey from Peking to Kashmir,London 1936; E. Teichman, Journey to Turkistan,London 1937. Teichman’s official report on this journey is to be found in the IOL, L/P&S/12/2371।
১৩. India Office Library and Records (IOL), L/P&S/12/2376, Teichman to Cadogan, 1 February 1936
১৪. L/P&S/12/2376, Macartney to India Office, 20 February 1936
১৫. L/P&S/12/2376, Macartney to India Office, 8 November 1934
১৬. L/P&S/12/2376, Memorandum by R. A. Butler, 5 October 1938. বাটলার যখন এটা লিখেন ততক্ষণে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে পরিস্থিতি সংকটে রূপ নেয়। ১৯৩৮ সালে বাটলার যে উপসংহার টানেন তা ক্যারোর ভাবধারাপন্থীরা ১৯৩৪ সালেই ভেবেছিলো। বস্তুতঃ এটা ১৮৯০ দশকে স্যার জন আরদাঘ-এর ভাবনা আর ১৯১২ সালে লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর ভাবনার পুনরুত্থান ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।
১৭. গিলগিট বন্ধকের মূল সূত্র হচ্ছে India Office Library and Records file L/P&S/12/3287।
১৮. India to Jammu and Kashmir, 23 December 1931
১৯. Kashmir Durbar to British Resident, 20 March 1933
২০. আফগানিস্তানে ১৯২৮ সালের শেষভাগে আমানুল্লাহ্’র শাসন বরবাদ হয়ে গেলে কাবুলে অবস্থানকারী বৃটিশ মন্ত্রী স্যার ফ্রান্সিস হামফ্রেস আফগানিস্তানের রাজধানী থেকে সকল বৃটিশ নাগরিককে (এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরও) বিমানে করে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেন। ডিসেম্বর ১৯২৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ এর মধ্যে (তেরটি দেশের) ৫৮৫ জন পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে রয়েল এয়ার ফোর্সের (আরএএফ) ভিকার্স ভিক্টোরিয়া বিমানের মাধ্যমে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। আকাশে পথের ক্ষমতার এ সম্ভাবনাময় প্রদর্শন ভারত সরকারের অনেক প্রভাবশালী সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। দেখুন: L.B. Poullada, Reform and Rebellion in Afghanistan, 1919-1929,Ithaca, N.Y., 1973, p. 118; Government of Great Britain, Accounts and Papers. Report on the Air Operations in Afghanistan, December 12, 1928, to February 25, 1929. C. 3400,London 1930।
২১. টাইকম্যান তার সফর শেষে জিনঝিয়াং হয়ে গিলগিট থেকে দিল্লীতে এক দিনে পৌঁছেছিলেন, নয়তো এ সফরে তার তিন সপ্তাহ সময় লাগতো।
২২. কিছু ভারতীয় লেখক যুক্তি দেখান যে, রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রাজনৈতিক দপ্তর থেকে সাময়িক ভাবে দায়িত্ব প্রদান করা একজন বৃটিশ কর্মকর্তা এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনে গ্ল্যান্সি কমিশনের যে তদন্ত চলছিলো তা কোনভাবেই গিলগিটের সন্ধানে বৃটিশ তৎপরতার সাথে অসম্পর্কিত ছিলো না। বিষয়টা সম্পূর্ণ অবান্তরও না; বর্তমান তথ্য প্রমাণ সংক্রান্ত রায় খুব সম্ভবতঃ ‘প্রমাণিত নয়’।
২৩. গিলগিট বন্ধক ভাইসরয় লর্ড উইলিংডন কর্তৃক ৩ এপ্রিল ১৯৩৫ তারিখে অনুসমর্থন করা হয়েছিলো। বন্ধকের বিবরণ Chohan, Gilgit Agency, op. cit.,pp. 219-210 দ্রষ্টব্য।
২৪. ভারত সরকার এ ব্যাপারে প্রচলিত আইন রদ করার কোন ব্যবস্থা নেয়নি এ চিন্তা থেকে যে, ১০০% মুসলিম অঞ্চলে এ আদেশের কোন বাস্তবিক কার্যকারিতা নেই। তাই তারা সুনির্দিষ্টভাবেই গোহত্যা বন্ধে আইন প্রয়োগ করতে যায়নি।
Rokonuzzaman
ব্যবস্থাপক | 

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০