জুন ২০, ২০২৫

ছোঁয়া

ধুর! কবিতাটা গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না। মাথায় ঘুরছিল অনেক কিছুই। কোনো এক বিকেলে এক নির্জন বনের মাটিতে ঝরা শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় যে মর্মর আওয়াজ হয় কিংবা একদম ঝড়ের ঠিক আগ মুহূর্তের হাওয়া প্রবাহে গাছের পাতায় পাতায় যেমন অস্থিরতা তৈরি হয়, কান পেতে শুনলেও বুঝা যায় না তারা তখন কী বলে; এসবই ভাবছিলাম ছন্নছাড়ার মত। এরকম সবসময় হয় না, মাঝেমাঝে যখন চিন্তার সাথে লিখার সমন্বয় করতে পারা যায় না। আমার মন কী ভাবছে, মনোদৃষ্টি কী দেখছে আমি তা ঠিক ধরতে পারছি না এমন।

কাগজপত্র নিয়ে লিখতে বসে, উত্তরোত্তর ভেবেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু লিখতে পারছিলাম না কিছুই। পরিণতি ডেস্কের পাশে ছোট্ট ঝুড়িটা মোড়ানো কাগজে টইটম্বুর। এমন সময় হুট করেই আমার পাশে এসে দাঁড়ালো ছোঁয়া, আমার স্ত্রী। রান্নাঘর থেকে অনেকক্ষণ ডেকে সাড়া পাচ্ছিল না তাই ঘরে এসে হাজির। চেহারার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার জন্যই ডেকেছিল আমাকে সে।‌ অপরাধ যেহেতু হয়েই গিয়েছিলো তাই ভালো মানুষের মতো তার সব প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম, যদিও কবিতাটার বাস্তব রূপ না আসায় আমার অবস্থা তখন বেগতিক। স্ত্রীর ডাকে সাড়া না দেওয়া যে মহা অপরাধ। যাহোক তাকে‌ বলবার সুযোগ না দিয়েই আমি বলা শুরু করলাম-

-জানো?

-কী?

-লেখনীটা আগের মতো আসে না।

-কেন?

-অন্তরটা যে হাসে না।

-আর?

-শব্দগুলো এলোমেলো ছোটে, কিন্তু

-কিন্তু?

-চোখের সামনে ভাসে না।

-বেশ, ছন্দটা খোঁজ তবে।

-আরেহ, অন্ত্যমিল তো পেতে হবে!

-লেখাটা তবে ছেড়েই দিও।

-বলেছ বটে, এর চেয়ে বরং মৃত্যুই শ্রেয়।

-তাহলে?

-তাহলে! হা হা হা।

-হাসছ যে?

-উত্তর যে আমার বশে না।

জবাবটা শুনে আমার দিকে কিছুক্ষণ অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারপর আবার নিজের কাজে চলে গেল সে। আমি চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ মনে হল আমাদের কথোপকথনে দারুন এক ছন্দ তৈরি হয়েছে নিজেদের অজান্তেই। আরে এতো অদ্ভুত কাণ্ড! আমার বস্তুবাচক ভাবনার ঠিক ব্যক্তিবাচক রূপ যেন এটা! বিশ্বাসই হচ্ছিল না সুন্দর কিছু একটা তৈরি হয়ে গেল একটুখানি সময়ের মধ্যে। ছোঁয়া, সে এক অভিমানী ঝড়, মাই গার্ডিয়ান এঞ্জেল। ঝড়ের মতই এসে একটা জাদুর কাঠির ছোঁয়া দিয়ে গেল সে। প্রচণ্ড উৎফুল্লতার মাঝেই হঠাৎ মনে হল ও কী যেন একটা বলতে এসেছিল, না বলেই চলে গেল! দু’লাইনের ছন্দ মাথায় খেলে গেল ঠিক ঐ মুহূর্তেই।

আমার তো বেশ কার্যসিদ্ধি হল,
তাঁর কথা যে অব্যক্ত রয়ে গেল!

ছন্দের ঘোর কাটতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম- নাহ, এখনো দিব্যি বসে আছি এখানে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আমি! তৎক্ষনাৎ ছুটলাম ছোঁয়ার খোঁজে, মান ভাঙাতে হবে যে তার। কাগজ-কলম এলোমেলোভাবে পড়ে রইলো ডেস্কে। আকাশটা মেঘে ছেয়ে, ঝড়ের প্রস্তুতি চলছিল বোধহয়; বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল ইতোমধ্যে। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছিল ইলিশ-ভাতুড়ির চমৎকার সুবাস।

Rahat Hasan Priyo
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন: ২০১৩-২০১৪

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp