fbpx

ডিসেম্বর ৫, ২০২৪

টগর কথা

টগরের বৈজ্ঞানিক নাম Tabernaemontana divaricata (L.) Br.। এটি Apocynaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি চিরহরিৎ গুল্ম। আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা।

টগর অনেক নামে পরিচিত। এর মধ্যে আছে কাঠ মালতি বা কাঠ মল্লিকা। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে  একে দুধফুল বলে ডাকা হয়। গাছের পাতা বা ডাল ছিঁড়লে সাদা দুধের মতো কষ ঝরে বলে একে “ক্ষীরী বৃক্ষ”ও বলা হয়।

togor 2

সারা পৃথিবীতে টগরের প্রায় ৪০টির মতো প্রজাতি আছে। বাংলাদেশ ও ভারতে মূলত দুই রকমের টগর পাওয়া যায়। একটি টগরের একক পাপড়ি, অন্যটির গুচ্ছ পাপড়ি।

টগর যদিও সমতল ভূমির গাছ, তবে পর্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখা যায়। বাংলাদেশের বনে-বাদাড়ে টগর এমনিতেই জন্মে। ভীষণ কষ্ট সহিষ্ণু টগরের কাণ্ড খসখসে, রং ধূসর। টগর গাছের সৌন্দর্য তার ঝোপালো আকৃতি আর ঘন সবুজ পাতায়। ডালগুলো বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। নিয়মিত ছেঁটে দিলে ঘন ঝোপ হয়, ফুলের সংখ্যাও বাড়ে। পাতাগুলি ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ও এক থেকে দেড় ইঞ্চি চওড়া হয়। পাতার অগ্রভাগ ক্রমশ সরু। ফুল দুধ-সাদা। ১ থেকে ২ ইঞ্চি চওড়া। সারা বছর কম বেশি ফুল ফুটলেও বর্ষা কালে সবচেয়ে বেশি ফুল ফোটে। বড় টগরের বোঁটা মোটা এবং একক ফুল হয়। পাতাও একটু বড়। প্রায় সব সাদা ফুলই সুগন্ধ বিশিষ্ট হলেও টগর অনেকটা ব্যাতিক্রম। থোকা টগরের কাছে গেলে যদিওবা মৃদু সুগন্ধ পাওয়া যায় কিন্তু একক টগর গন্ধহীন। তবে বর্ষায় গাছ ভরা ফুলের সৌন্দর্য সুগন্ধের অভাব অনেকটাই পুষিয়ে দেয়। তাই কবির ছন্দেও টগরের দেখা মেলে-

togor3 1

“কে নিবি ফুল
কে  নিবি ফুল
টগর, যূথী, বেলা, মালতি  ..”।

টগরের ফুল থেকে ফল হয়। তার মধ্যে ৩ থেকে ৬টি বীজ হয়। টগরের চারা করা খুবই সহজ। বীজ থেকে যেমন চারা জন্মে, তেমনি কলম করে অথবা বর্ষাকালে গাছের ডাল পুতলেও সহজেই চারা হয়। বীজের চারার চেয়ে কলম এর বা ডাল কেটে লাগানো চারাই বেশি জনপ্রিয়।

টগরের মূল ও শেকড় আয়ুর্বেদ ওষুধে ব্যবহৃত হয়। শেকড় তেতো ও কটু স্বাদের। এতে কৃমি ও চুলকানি দূর হয়। ঘামাচিতে টগরের কাঠ ঘষে প্রতিদিন চন্দনের মতো গায়ে মাখলে উপকার হয়। দাঁতের অসুখে কোথাও কোথাও টগরের কাঁচা ডাল চিবানোর কথা জানা যায়।

টগর আমাদের অতি চেনা এক ফুল। বাগানের এক কোণে একটি টগরের গাছ সারা বছর প্রায় বিনা যত্নেই ফুল ফুটিয়ে যায়। তাই শৌখিন হোক বা না হোক, অনেক বাগানেই টগরের দেখা মেলে।

togor5
profile pic

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন: ১৯৯২ - ১৯৯৩