fbpx

দ্য ব্যাড গার্ল

(১)

মাস্কাট, ওমান। সকাল দশটা।

তিনতলার জানালায় দাঁড়িয়ে রাস্তার লোকজন দেখছে জোছনা। ওর বয়স পনেরো। মিষ্টি চেহারা। বিশ্বাস করা কঠিন, ও কমলাপুরের এক বস্তির মেয়ে এবং ওর মা আরামবাগ এলাকায় বুয়ার কাজ করেন।

মাত্র গতকাল নতুন দেশে এসেছে জোছনা, তাই ওর কৌতূহলের শেষ নেই। রাস্তায় অনেক ইন্ডিয়ান নারী-পুরুষ দেখে অবাক হচ্ছে সে। তার জানা নেই, এই এলাকাটির নাম দারসিত হলেও সবাই একে বলে ‘লিটল ইন্ডিয়া’। বেশ কিছু পাকিস্তানিও থাকে এখানে।

এই বাসাটি মিসেস রাহেলার। এই শহরে তার ‍বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে, বেশির ভাগই স্টেশনারি দোকান। মিসেস রাহেলার কোনও একটি দোকানে জোছনাকে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতে হবে।

বছর দুয়েক আগে মেয়েটার বাবা মারা গেছেন। ওর মায়ের শরীরটাও ভেঙে পড়েছে। তিনি এখন আর নিয়মিত মানুষের বাসায় কাজ করতে পারেন না। অভাবের কারণে ক্লাস সেভেনের পর জোছনার পড়াশুনা বন্ধ হলো। মা ওর বিয়ে দিতে চাইলেন, কিন্তু ও রাজি হলো না। বাংলাদেশের মেয়েরা বিয়ের পর আয়-রোজগার করলেও নিজের বাবা-মাকে সাহায্য করার অনুমতি পায় না। মায়ের খাওয়া-পরার একটা ব্যবস্থা করে তবেই ও বিয়ে করবে।

এই অবস্থায় বস্তির এক খালা জোছনাকে ওমানে কাজ করার প্রস্তাব দিলো। প্লেনভাড়াসহ সব খরচ চাকরিদাতা দিবে শুনে ও আগ্রহী হলো। ওর মা প্রথমে একমাত্র সন্তানকে বিদেশে পাঠাতে রাজি হননি, কিন্তু মেয়ের পীড়াপীড়িতে শেষে মত দিলেন।

জোছনার পাসপোর্ট-ভিসা, প্লেনের টিকেট – সব করে দিলো মুগদার এক লোক, নাম মুরাদ।

জোছনার সাথে একই ফ্লাইটে আরেকটি মেয়ে এসেছে। তাকেও এই বাসাতেই আনা হয়েছে। মেয়েটি ওর চেয়ে বছর চারেক বড়। নাম সাথি।

মিসেস রাহেলার ডাকে জোছনার চিন্তায় ছেদ পড়লো। ড্রয়িংরুমে গিয়ে আন্টির মুখোমুখি বসলো সে। সাথিও এসে ওর পাশে বসলো।

‘কেমন লাগছে এখানে?’ জোছনাকে জিজ্ঞেস করলেন রাহেলা।

‘ভালো লাগছে, আন্টি।’

‘মাস্কাট শহরটা সুন্দর, তাই না?’

‘জী, আন্টি।’

‘দুবাই আরও সুন্দর।’

হঠাৎ দুবাইয়ের কথা এলো কেন? একটু চিন্তায় পড়লো জোছনা। দেশে থাকতে দুবাই সম্পর্কে অনেক খারাপ কথা শুনেছে সে।

‘তুমি আর সাথি দুবাই গিয়ে কাজ করবে।’ রাহেলার কণ্ঠে নির্লিপ্ততা।

‘কেন, আন্টি? আপনার দোকানে –’

‘আমার দুইজন কর্মচারী চলে যাওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু যায়নি। তোমাদের ভাগ্য ভালো, দুবাইয়ের একটা নাইটক্লাবে চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে।’

নাইটক্লাবের কথা শুনে আঁতকে উঠলো জোছনা। নিশ্চয়ই ড্যান্সারের চাকরি। সংক্ষিপ্ত পোশাকে নাচতে হবে! সাথে ক্লায়েন্টদের ‘মনোরঞ্জন’!

আমি কীসের মধ্যে পড়লাম, ভাবলো ও। সাথি স্বাভাবিক রয়েছে। বোঝা গেল, সে আগে থেকেই জানতো চাকরিটা কী।

‘আমি তো নাচ পারি না, আন্টি,’ বললো জোছনা।

‘সাথি পারে। ও তোমাকে শিখিয়ে দিবে। দিন দশেক নাচ শিখে তারপর দুবাই যাবে।’

‘আমি এই চাকরি করবো না, আন্টি। আপনি আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিন।’

‘বললেই হলো? তোমাকে আনতে কত টাকা খরচ হয়েছে জানো?’

জোছনা হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়লো।

‘আমি মা’র সাথে একটু কথা বলবো,’ কান্না থামিয়ে বললো সে।

‘এসেই তো গতকাল বিকালে কথা বললে। কয়েকটা দিন যাক, তখন আবার কথা বলো।’

রাহেলা উঠে অন্য রুমে গেলেন। জোছনা অনেক ঝামেলা করবে, ভাবলেন তিনি। মেয়েটির আগের কোনও অভিজ্ঞতা নেই। সাথি পুরুষদের মনোরঞ্জনে অভিজ্ঞ।

তবে, এই চাকরিতে অভিজ্ঞতায় আয় কমে। ঝামেলা সহ্য করতে হলেও জোছনাকে দিয়েই তার মূল ব্যবসাটি হবে। ‘অনভিজ্ঞ’ হিসেবে মেয়েটাকে সার্টিফাই করলে দুবাইয়ের ‘ক্লাব সিক্সটিন’ থেকে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। রাহেলা চেক করলেন বাইরের দরজায় ঠিকমত তালা দেয়া হয়েছে কিনা।

মুক্তির কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছে না জোছনা। ওর কিছু হলে ওর মা বাঁচবে না।

মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে আবার কেঁদে ফেললো সে। এক ধরনের অভিমান হচ্ছে ওর। আমি তো তোমার কাছে বেশি কিছু চাইনি, মনে মনে বললো সে। আমার মাকে একটু সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে চেয়েছি। আমাকে এত বড় শাস্তি দিও না। দেশে গিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করবো। আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই।

(২)

সকালের নাস্তা শেষ করে ‘Dhaka Tribune’ পেপারটা হাতে নিয়ে সোফায় বসলো ফাইজা।

ট্রিপল ই-তে মাস্টার্স করে বেকার বসে আছে ও। একটা চাকরির অফার পেয়েছিলো, কিন্তু অফিসটা গুলশানে বলে জয়েন করেনি। আরামবাগ থেকে প্রতিদিন গুলশানে গিয়ে পোষাবে না।

অনেকের মতে, ফাইজা একটা বেয়াদব মেয়ে, মুখে মুখে তর্ক করে। ও যে উচিত কথা বলে, এটা তারা স্বীকার করতে চায় না।

কেউ কেউ বলে, মেয়েটা ভালো না – এলাকার গুন্ডা-বদমাশদের সাথে চলাফেরা করে। অথচ ‘গুন্ডা-বদমাশ’গুলো ফাইজার ছোট ভাইয়ের বন্ধু, যেই ভাইটা বছর তিনেক আগে অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে।

কলিংবেল বাজতেই দরজার দিকে চোখ গেল ফাইজার। কাজের মেয়েটা বাথরুমে কাপড় কাচছে, তাই নিজেই উঠে গিয়ে দরজা খুললো। পুরানো বুয়া মাজেদাকে দেখে অবাক হলো সে।

‘আরে খালা আপনি!’ বলে হাত ধরে তাকে এনে সোফায় বসালো ফাইজা।

মাজেদা খালা ছাব্বিশ বছর ওদের বাসায় কাজ করেছেন, সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ নাই হয়ে গেলেন তিনি। 

ফাইজার বড় ভাইয়ের জন্ম থেকে শুরু করে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত এই সংসারের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পাশে ছিলেন এই খালা। দশ বছর আগে মা মারা যাওয়ার পর এই খালার কাছেই ওরা মায়ের আদর পেয়েছে।

‘আপনি হঠাৎ আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন কেন, খালা?’ জানতে চাইলো ফাইজা।

‘আমি তো ছাইড়া যাই নাই মা। আমার স্বামী মারা গেল, আমি অসুস্থ হইলাম – সব মিলায়ে মাসখানেক কাজে আসতে পারি নাই। তোমার বাবা অন্য বুয়া ঠিক করলেন।’

‘বাবাকে জানিয়েছিলেন আপনার অবস্থা?’

‘হ্যাঁ, মা।’

প্রচন্ড রাগ হলো ফাইজার। ভাবলো, বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে আসুক, তারপর দেখা যাবে।

‘কিন্তু, আপনি কেন এতদিন আমাদেরকে দেখতে আসেননি?’ জিজ্ঞেস করলো সে।

চুপ করে রইলেন মাজেদা। তারপর বললেন, ‘মা, এইসব কথা থাক। আমি একটা দরকারে –’

‘আগে বলুন আপনি কী কারণে রাগ করেছেন?’

‘একদিন আসছিলাম। ‍তুমি ছিলা না। স্বামী মারা গেছে, নিজে অসুখে ভুগছি, টাকার দরকার ছিলো। তোমার বাবা পাঁচশ টাকা দিতে চাইলেন। রাগ কইরা টাকাটা না নিয়া চইলা গেলাম –’

কী বলবে খুঁজে পাচ্ছে না ফাইজা। ছাব্বিশ বছর চাকুরি করলে পেনশন পাওয়া উচিত – যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন মাসে কমপক্ষে অর্ধেক বেতন পাওয়া উচিত। অথবা, এককালীন বড় অংকের টাকা পাওয়া উচিত। নইলে মানুষ বুড়ো বয়সে চলবে কীভাবে?

‘আমার কাছে আসেননি কেন?’ জানতে চাইলো সে।

‘মা, এইসব কথা থাক। আমি একটা বড় বিপদে পড়ছি।’

বিপদ কথাটি শুনে চুপ করলো ফাইজা। মনোযোগ দিয়ে মাজেদা খালার কথা শুনলো সে। জানতে পারলো, খালার মেয়ে জোছনা তিন দিন আগে ওমান গেছে। মাস্কাটের একটা দোকানে মেয়েটা কাজ করবে। দোকানের মালিক রাহেলা সেদিনই রাতে মাজেদার মোবাইলে কল দিয়ে জোছনার সাথে কথা বলতে দিয়েছেন। পরদিন মাজেদা মেয়ের সাথে আবার কথা বলতে চাইলেন। ফোন-ফ্যাক্সের দোকান থেকে রাহেলাকে কল করে দেখলেন নাম্বারটা বন্ধ। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও নাম্বারটা বন্ধ পাওয়া গেল।

কমলাপুরের সালমা আর মুগদার মুরাদ মেয়েটাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। গতকাল বিকালে দু’জনের সাথেই দেখা করেছেন মাজেদা। এদের হাবভাব তার ভালো লাগেনি।  

কেউ কেউ বলছে, দুবাইয়ের কথা শুনলে অনেকে যেতে চায় না, তাই জোছনাকে আগে ওমান নেয়া হয়েছে। ওখান থেকে তাকে দুবাই পাঠানো হবে, খারাপ কাজ করানো হবে।

হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলেন মাজেদা। বললেন, ‘মা, আমার মেয়েটারে বাঁচাও। তোমার অনেক বুদ্ধি। একটা উপায় বাইর করো।’

‘আমি দেখছি কী করা যায়। জোছনার কাগজপত্রের কপি আছে না আপনার কাছে?’

‘হ্যাঁ, সবকিছু নিয়া আসছি।’

কাগজপত্র বলতে রয়েছে জোছনার বার্থ সার্টিফিকেট আর পাসপোর্ট-ভিসার ফটোকপি। মেয়েটার বয়স পঁচিশ দেখানো হয়েছে। কারণটা বোধগম্য, অল্পবয়সী ছেলে বা মেয়েকে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয় না।

একটা কাগজে রাহেলার বাসার ঠিকানা লেখা। সাথে তার মোবাইল নাম্বার, যেটা এখন বন্ধ।

সবচেয়ে দরকারি কাগজটাই নেই, জোছনার ভিসা আবেদনের কপি। ওমান এম্বাসির কোনও পদস্থ কর্মকর্তা জড়িত না থাকলে ভিসা আবেদনে ওমানের ভুয়া ঠিকানা লিখে পার পাওয়ার কথা নয়।

জানা গেল, ভিসার আবেদন ফর্মটি মুরাদ পূরণ করে জোছনার স্বাক্ষর নিয়েছে। খালার কাছে কপি নেই।

সালমা আর মুরাদের মোবাইল নাম্বার নিলো ফাইজা। খালার হাতে দু’হাজার টাকা দিয়ে বললো, ‘আপনি বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করুন। সালমা আর মুরাদের সাথে আর কোনও যোগাযোগ করবেন না। যা করার আমি করবো।’

 (৩)

শুভ্রকে কল দিলো ফাইজা। ছেলেটা ওর ছোট ভাইয়ের বন্ধু, ওর একনিষ্ঠ ভক্ত।

‘তোর একটা ফ্রেন্ড আছে না, মোবাইল ট্যাপিং-এর এক্সপার্ট?’ জিজ্ঞেস করলো ফাইজা।

‘জী, আপু। ওর নাম তিতাস।’

‘ওকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারিস আমার বাসায় চলে আয়। দু’টো সিম-কার্ড নিয়ে আসিস।’

‘ও.কে. আপু।’

ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো ফাইজা। খালার দেয়া কাগজে রাহেলার বাসার ঠিকানা লেখা হয়েছে:

Mrs Rahela Khatun
62, Dohat Al Adab Street
PO Box 1984
Ruwi 112
Muscat, Oman

ফাইজা Google-এ টাইপ করলো, “PO Box 1984, Ruwi 112, Muscat”। দেখা গেল, এটা আদৌ কোনও বাসার ঠিকানা নয়। এটা একটা শিপিং এজেন্সির মেইলিং অ্যাড্রেস।

গুগল ম্যাপ চেক করে আরেকটা বড় অসংগতি ধরা পড়লো। Dohat Al Adab স্ট্রিট আল-খায়ের এলাকায়। রুয়ি-তে এই নামে কোনও রাস্তা নেই।

জোছনা মেয়েটা ভয়ংকর বিপদে পড়েছে।

শুভ্র আর তিতাস এলো কিছুক্ষণ পর। ওদেরকে ঘটনাটা জানালো সে। কী করতে হবে, সেটা ভালো করে বুঝিয়ে বললো।

শুভ্র দু’টো বেনামি সিম-কার্ড নিয়ে এসেছে। একটা সিম-কার্ড ওকে রাখতে বললো ফাইজা, ওর দরকার হবে। আরেকটা সিম নিজের মোবাইলে সেট করলো।

নতুন নাম্বার ব্যবহার করে ‘লাবনি’ নামে একটা ইমেইল অ্যাকাউন্ট খুললো ফাইজা। তিতাস ওকে দেখিয়ে দিলো কল ট্যাপিং-এর জন্য কীভাবে কী করতে হয়।

‘তোরা যা, কাজ শুরু কর,’ বললো ফাইজা।

বেলা এগারোটা থেকে কিছু ঘটনা একের পর এক ঘটতে শুরু করলো। শুভ্রের গার্লফ্রেন্ড ঈশিতা নতুন সিমটা ব্যবহার করে পাচারকারী গ্রুপের সালমাকে কল দিলো। জানালো, ওর নাম দিলারা এবং ও আরব আমিরাত বা ওমানে যেতে চায়। দশ মিনিট পরেই গ্রুপের আরেক সদস্য মুরাদ কল দিয়ে ‘দিলারা’-র খোঁজ-খবর নিতে শুরু করলো।

‘আপনি কী ধরনের কাজ করতে আগ্রহী?’ এক পর্যায়ে জানতে চাইলো মুরাদ।

‘কোনও কাজেই আপত্তি নাই, ভাইয়া। বিদেশে কে দেখবে বলুন?’

মুরাদ দেখা করতে চাইলো। ওকে আরামবাগ মোড়ে চলে আসতে বললো ঈশিতা। মেয়েটা সব সময় হিজাব পরে, এখন পরিচয় গোপন রাখার জন্য নেকাবে মুখ ঢাকলো।

আরামবাগ মোড়ে এসে মুরাদ ঈশিতাকে কল করতেই শুভ্রসহ চারজন ওকে ঘিরে দাঁড়ালো। ঈশিতা দ্রুত ওখান থেকে সরে পড়লো, ওর কাজ শেষ।

মুরাদের মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে স্ক্রিনে তর্জনি দিয়ে রাখলো তিতাস, যাতে লক্‌ড্‌ হয়ে না যায়। লোকটার দু’হাত আর চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হলো ওদের পরিচিত একজনের গ্যারেজে।

শুভ্র মুরাদকে জেরা করতে শুরু করলো – ওর কাজিন দিলারার কাছে লোকটা কী চায়। ওদের আলোচনায় জোছনা নামটা এলোই না।

এদিকে তিতাস কাছেই একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। মুরাদের মোবাইলে একটা প্যাকেজ ডাউনলোড করলো সে। প্যাকেজটা ইনস্টল করার সময় email-এর ঘরে ফাইজার ‘লাবনি’ অ্যাকাউন্টটা লিখলো সে। প্যাকেজের আইকনটা লিস্ট থেকে হাইড করলো।

ফাইজাকে কল করে তিতাস জানালো, কাজ শেষ, সে এখন টেস্ট করবে। মুরাদের মোবাইল দিয়ে সে ফাইজার নতুন নাম্বারে কল দিলো।

‘হ্যালো,’ বললো ফাইজা।

‘কলটা কাটছি। আপনি ইমেইল চেক করেন।’

ফাইজা চেক করে জানালো, এইমাত্র করা কলটির তথ্য ইমেইলে এসেছে এবং ডাউনলোড করে দুজনের কথাই সে শুনেছে।

মুরাদের কললিস্ট থেকে সর্বশেষ কলটা ডিলিট করলো তিতাস। তারপর সবগুলো contact একটা মেমোরি কার্ডে কপি করলো।

কাজ শেষ করে সবার সাথে যোগ দিলো সে। মুরাদের দুই হাত আর চোখ এখনও বাঁধা। তিতাসের কাছ থেকে মেমোরি কার্ডটা নিয়ে ফাইজার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো শুভ্র।

ফাইজা তার ল্যাপটপে আর নতুন সিমে মুরাদের contact-গুলো কপি করে নিলো। চেক করে দেখলো মাস্কাটের তিনটা নাম্বার রয়েছে: Rahela 1, Rahela 2 আর Shahbaz নামে। Rahela 1 নাম্বারটি মাজেদা খালা আর ও বন্ধ পেয়েছে।

শুভ্রকে কল করে ও জানালো মুরাদের সাথে কাজ শেষ।

লোকটার হাত আর চোখের বাঁধন খুলে দিলো শুভ্র। বললো, ‘আর কখনও দিলারার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।’

দ্রুত কেটে পড়লো লোকটা।

(৪)

দুপুর দুইটায় নতুন সিমটা ব্যবহার করে ‘Rahela 2’ নাম্বারে কল দিলো ফাইজা। মাস্কাটে এখন বেলা বারোটা।

ওর সামনে ল্যাপটপের স্ক্রিন জুড়ে মাস্কাটের গুগল ম্যাপ।

‘হ্যালো,’ মাঝবয়সী নারীকন্ঠ।

‘স্লামালেকুম, রাহেলা আন্টি। জোছনার সাথে একটু কথা বলবো।’

ওপাশে নিরবতা।

‘আপনি কে?’ নিজেকে সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলেন রাহেলা।

‘আমার নাম লাবনি। আমি জোছনার আত্মীয়।’

‘এই নাম্বারটা কোথায় পেলেন?’

‘মাস্কাটের এক আংকেলের কাছ থেকে।’ ফাইজা দেখাতে চায় মাস্কাটে ওর আত্মীয় আছে।

‘কোন্ আংকেল?’

‘দিপু আংকেল। আমি তার ভালো নাম জানি না।’

‘এখন তো কথা বলা যাবে না। ও ঘুমাচ্ছে।’

‘ডেকে দিন প্লিজ, আন্টি। ঢাকা থেকে ফোন দিয়েছি।’

‘এক ঘণ্টা পরে ফোন দেন।’ কলটা কেটে দিলেন রাহেলা।

তিনি নিশ্চয়ই তার বস্-কে ঘটনাটা জানাবেন, ভাবলো ফাইজা।

ত্রিশ মিনিট পর ফাইজা মুরাদের কল ‍লিস্ট চেক করলো। দুইটা থেকে আড়াইটার মধ্যে তিনটা কল এসেছে। ডাউনলোড করে তিনটা কলেরই কথাবার্তা শুনলো সে। একটা কল গুরুত্বপূর্ণ – মুরাদ কলদাতাকে বস্ বলে ডেকেছে এবং কসম খেয়ে বলেছে জোছনার আত্মীয়কে রাহেলার নাম্বার সে দেয়নি।

মুরাদের contacts-এ নাম্বারটা ‘Boss’ নামেই সেইভ করা। কে এই বস্?

তিনটায় রাহেলাকে আবার কল করলো ফাইজা। এবারও মাস্কাটের ম্যাপ সামনে রেখেছে ও।

‘হ্যালো,’ বললেন রাহেলা।

‘আন্টি, আমি লাবনি। –’

‘জোছনাকে ডেকে দিচ্ছি।’

ফাইজা শুনতে পাচ্ছে, জোছনাকে ডেকে রাহেলা বলছেন, ‘ঢাকা থেকে তোমার লাবনি আপু কল দিয়েছে।’

‘হ্যালো?’ জোছনার কণ্ঠ।

‘জোছনা, আমি তোর ফাইজা আপু। কেমন আছিস?’ 

‘ভালো আছি, আপু।’ তার কণ্ঠে খুশি খুশি ভাব।

হিসেব মিলছে না, ভাবলো ফাইজা। রাহেলার ভয়ে মেয়েটা কান্নাকাটি না করুক, ওর মন খারাপ থাকার কথা। ও খুশি কেন?

হঠাৎ ফাইজা বুঝতে পারলো রাহেলা কী চালাকি করেছে।

‘আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো। তুই শুধু “হ্যাঁ” অথবা “না” অথবা “জানি না” বলবি। ও.কে.?’

‘ও.কে. আপু।’

‘তুই যা বলছিস, রাহেলা আন্টি ‍শুনতে পাচ্ছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছে?’

‘না।’

‘তোকে দুবাই যাবার কথা বলেছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘খারাপ কাজ করাতে চেয়েছে?’

‘হ্যাঁ, আপু।’

‘কিছুক্ষণ আগে কথা চেঞ্জ করেছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘দেশে পাঠিয়ে দিবে বলেছে?’

‘না।’

‘মাস্কাটে ভালো কাজ করাবে বলেছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘মাস্কাট এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে পশ্চিম দিকে গেছিস?’ জিজ্ঞেস করলো সে।

‘না।’

‘পূব দিকে।’                                               

‘হ্যাঁ।’

‘গাড়িতে পনেরো মিনিটের কম লেগেছে?’

‘না।’

‘ত্রিশ মিনিটের কম লেগেছে?’

‘হ্যাঁ, আপু।’

ম্যাপে এয়ারপোর্ট থেকে পূর্বদিকে পঁচিশ-ত্রিশ কিলোমিটার দূরের এলাকাগুলি দেখলো ফাইজা।

‘আন্টির বাসা কি মিনা আল ফাহল-এ?’

‘না।’

‘আল ওয়াতাইয়া-তে?’

‘না।’

‘দারসিত-এ?’

‘হ্যাঁ।’

গুগল ম্যাপে দারসিত এলাকাটা জুম করলো ফাইজা।

‘যাওয়ার পথে কি মেলোডি মিউজিক সেন্টার পড়েছে?’

‘মনে পড়ছে না।’

‘ইন্ডিয়ান স্কুল?’

‘হ্যাঁ।’

‘ওখান থেকে বাসা অনেক দূরে?’

‘না।’

‘লেজার কম্পিউটার সার্ভিসেস চোখে পড়েছে?’

‘হ্যাঁ।’ জোছনার কণ্ঠে উত্তেজনা।

‘এর পাশেই বাসা?’

আমতা আমতা করছে জোছনা।

‘উল্টোপাশে?’

‘হ্যাঁ।’

জুম স্লাইডারে লেজার কম্পিউটার আর আশেপাশের দোকানগুলো দেখলো ফাইজা।

‘বাসা থেকে আবু বাইয়ান স্টেশনারি দেখা যায়?’

‘হ্যাঁ।’

‘দোকানটাতে নীল শাটার?’

‘হ্যাঁ।’

‘বাসা দোতলায়?’

‘না।’

‘তিনতলায়?’

‘হ্যাঁ।’

‘শোন্, আন্টি আবার কথা চেঞ্জ করতে পারে। তোকে যদি দেশে আনতে পারি, চলে আসিস। এখানে তোর একটা ব্যবস্থা করবো আমি। ও.কে.?’

‘ও.কে. আপু।’

‘আমার আসল নাম কাউকে বলবি না। আমি বলেছি আমার নাম লাবনি। ও.কে.?’

‘ও.কে. আপু।’

‘রাখি তাহলে। বাই।’

‘বাই।’

(৫)

ফাইজা দুশ্চিন্তায় পড়লো।

খুব সহজেই জোছনার বর্তমান অবস্থান বের করেছে ও, কিন্তু মেয়েটাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।

একবার ভাবলো, মাস্কাট পুলিশকে ফোন করবে। কিন্তু, কেইসটা ভালো পুলিশের হাতে পড়লে এক ঝামেলা, খারাপ পুলিশের হাতে পড়লে আরেক ঝামেলা।

ভালো পুলিশ দায়িত্ব পেলে রাহেলাকে অ্যারেস্ট করবে ঠিকই, তবে জোছনাকে হেফাজতে নিয়ে মামলার সাক্ষী বানাবে। কয়েক মাসের ধাক্কা। এই লম্বা সময়ে একটা কমবয়সী মেয়ে অন্য কারও তালে পড়তে পারে। অপেক্ষা করতে করতে মাজেদা খালাও পাগল হয়ে যাবেন।

আর, খারাপ পুলিশ তো খারাপ পুলিশ। মাস্কাটে এদের অভাব নেই।

রাহেলার বাসার কাছের দোকানে ফোন করা যেতো। কিন্তু, তাদের সাথে রাহেলার ভালো সম্পর্ক থাকতে পারে। তারা রাহেলার ‘ক্লায়েন্ট’ও হতে পারে। তাছাড়া, তারা সাহায্য করতে চাইলে হয়তো পুলিশেই খবর দিবে।

মাস্কাটে কোনও পরিচিত লোক থাকলে ভালো হতো। সে রাহেলার বাসায় হাজির হয়ে পুলিশের ভয় দেখিয়ে জোছনাকে নিয়ে প্লেনে তুলে দিতো।

সন্ধ্যা সাতটায় রাহেলাকে আবার কল দিলো ফাইজা।

‘স্লামালেকুম, আন্টি। আপনার সাথে একটু কথা আছে।’

‘বলুন।’

‘জোছনার মা খুব কান্নাকাটি করছে। তার শরীরও ভাল না। আপনার যা খরচ হয়েছে, আমি দিয়ে দিচ্ছি, জোছনাকে দেশে পাঠিয়ে দিন।’

কড়া কথা শোনাতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন রাহেলা। বস্ নতুন ঝামেলা বাধাতে না করেছেন। সাবধানে চলতে বলেছেন। ঢাকা ট্রিবিউনের কোন্ রিপোর্টার নাকি সেক্স ট্র্যাফিকিং নিয়ে কাজ করছে, অনেক তথ্য বের করে ফেলেছে। এই মেয়েটি তার পরিচিত হতে পারে, ভাবলেন রাহেলা – নইলে আমার ফোন নাম্বার পেলো কীভাবে?

‘হঠাৎ করে আরেকজন ক্লিনার কোথায় পাবো?’ বললেন রাহেলা। ‘আচ্ছা, দেখি কী করা যায়?’

‘একটু তাড়াতাড়ি করবেন, প্লিজ।’

পরদিন দুপুর দুইটায় রাহেলাকে আবার কল দিলো ফাইজা। তিনি জানালেন, জোছনাকে নিতে তার দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, টাকাটা পেলে মেয়েটাকে দেশে পাঠিয়ে দিবেন।

পাসপোর্ট-ভিসা আর প্লেনের টিকেট – সব মিলিয়ে এক লাখের বেশি খরচ হয়নি, হিসেব করে দেখেছে ফাইজা। দেশে ফেরত পাঠাতে আরও চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা লাগবে। দেড় লাখ টাকার বেশি চাওয়ার যুক্তি নেই। রাহেলাকে এ কথা বলতেই তিনি জানালেন, লোক আনতে নানা জায়গায় টাকা দিতে হয়।

ফাইজা একবার ভাবলো, রাহেলাকে জানাবে যে তার বাসার অবস্থান ওর জানা আছে। ভয় পেলে তিনি হয়তো লাভ করার চিন্তা বাদ দিবেন।

পরক্ষণেই ওর মনে হলো, ঘাবড়ে গেলে রাহেলা বাসা পাল্টে ফেলতে পারেন। দ্বিতীয়বার তাকে খুঁজে বের করা কঠিন হবে।

‘দুই লাখ টাকা দিবো, আন্টি। জোছনাকে দেশে পাঠিয়ে দিন, প্লিজ।’

‘দেখি কী করা যায়,’ বললেন রাহেলা।

(৬)

ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার রিপোর্টার তনিমা হায়দার অফিসের মাইক্রোতে পরীবাগের বাসায় ফিরছে। দুই বছর বয়সী ছেলে সায়ানকে দেখতে মনটা আনচান করছে তার।

গত দুই মাস ধরে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে নারী পাচারের উপর একটা বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করেছে সে। আজ অফিসে বসে রিপোর্টের শেষ অংশটুকু লিখে ফেলেছে। বাসায় গিয়ে সংসারের কাজ সেরে রাতে লেখাটা ঠিকঠাক করবে।

হাসান ভাই কাল দুপুরের মধ্যে রিপোর্টটা ফাইনাল করে এডিটরকে দেখাবে। এডিটর ও.কে. করলে পরশুর পত্রিকায় এটা ছাপা হবে।

তনিমার সন্দেহ নেই, রিপোর্টটা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

পৌনে সাতটায় মাইক্রো থেকে নামলো সে। ডানে বায়ে তাকিয়ে রিক্সা না পেয়ে হেঁটে গলিতে ঢুকলো। ল্যাপটপ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে বিরক্তি লাগছে।

‘তনিমা আপু,’ মার্জিত কণ্ঠে ডাকলো কেউ। ঘুরে তাকালো ও। অপরিচিত মেয়ে, দেখতে ভালো। কিন্তু, চোখে কুটিলতা।

বিপদ টের পেলো তনিমা। চট করে পার্স থেকে একটা পকেট নাইফ বের করলো সে, ভয় দেখিয়ে মেয়েটাকে তাড়াতে চায়।

পিছন থেকে কেউ একজন প্রচণ্ড আঘাত করলো ওর মাথায়। সামনের মেয়েটার গায়ে হুমড়ি খেলো সে, তারপর রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো।

তনিমা বুঝতে পারলো, ও মারা যাচ্ছে। দেখতে পেলো, অন্য মেয়েটার গাল কেটে দরদর করে রক্ত পড়ছে – নিশ্চয়ই ওর চাকুর আঘাতে।

ওর ল্যাপটপ আর মোবাইল এরা নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। তবে, অফিস থেকে বের হওয়ার আগে ওর খসড়া লেখাটা হাসান ভাইকে ইমেইল করেছে সে – এটাই অফিসের নিয়ম।

মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে ছোট্ট সায়ানের মুখটা ভেসে উঠলো ওর মনের পর্দায়। ছেলেটার জন্য কিছু রেখে যেতে পারেনি ও।   

(৭)

সন্ধ্যা সাতটায় মুরাদের ‘বস্’-কে কল করলো ফাইজা। কাজে লাগতে পারে ভেবে কলটা রেকর্ড করছে ও।

‘হ্যালো, কে বলছেন?’ মাঝবয়সী পুরুষ কণ্ঠ।

‘আমি লাবনি।’

কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন ‘বস্’। তারপর জানতে চাইলেন, ‘আপনি এই নাম্বার কোথায় পেলেন?’

‘বলা নিষেধ,’ বললো ফাইজা।

‘আপনি কি সাংবাদিক?’

‘না,’ বললো ফাইজা।

‘কেন ফোন দিয়েছেন?’

‘আপনারা জোছনাকে দেশে পাঠিয়ে দিন, প্লিজ। আপনাদের খরচটা দিয়ে দেয়া হবে।’

‘আপনি কাল ফোন দেন। আজ আমরা একটু ব্যস্ত আছি।’

‘কালক্ষেপণ করা কি ঠিক হচ্ছে, আংকেল?’

‘কালক্ষেপণ না। আমরা সত্যিই ঝামেলায় আছি। কাল সকাল দশটায় ফোন দেন।’

‘ও.কে.।’

একটা ব্যাপার নিয়ে ফাইজা দুশ্চিন্তায় আছে। এরা যদি জোছনাকে দেশে পাঠাতে রাজি হয়, নিশ্চয়ই টাকাটা আগে দিতে বলবে। টাকা হাতে পেয়ে যদি মেয়েটাকে ফেরত না পাঠায়?

একটু পরেই ‘বস্’-এর কল পেয়ে অবাক হলো ফাইজা।

‘জোছনাকে আমরা ফেরত দিবো, খরচের টাকাও নিবো না, যদি আপনি আমাদের একটা কাজ করে দেন।’

‘কী কাজ?’

‘একটা স্যুটকেস নির্দিষ্ট একটা বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। বাসায় যেই লোকটা থাকে, নাম হাসান, তার সাথে ভাব জমিয়ে তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করতে হবে।’

‘তাকে আপনারা মেরে ফেলবেন?’

‘মেরে ফেলতে চাইলে এত কষ্ট করার দরকার কী? তার কোন শারীরিক ক্ষতি করার ইচ্ছা আমাদের নাই।’

‘আপনারা নিজেদের লোককে দিয়ে কেন কাজটা করাচ্ছেন না?’

‘একজন শিক্ষিত মেয়ে দরকার। যাকে দিয়ে করানোর প্ল্যান ছিলো, সে ঝামেলায় পড়েছে।’

‘আমি যদি রাজি না হই?’

‘আপনি কাজটা না করলে আমরা অনেক ঝামেলায় পড়বো। তখন আপনি ঝামেলা করলেও যা, না করলেও তা – তাই জোছনাকে ফেরত দেয়ার কোন কারণ নাই।’

‘আমি কাজটা করার পর যদি জোছনাকে ফেরত না দেন?’

আলোচনা করে ঠিক করা হলো, জোছনাকে এখনই মাস্কাট এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে, তবে সে চেক-ইন করবে ফাইজার কাজ শেষ হবার পর।

মাস্কাট-ঢাকা ফ্লাইটের রাত দশটার (বাংলাদেশের সময় রাত বারোটার) টিকেট পেয়ে নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কিনে ফেললো ফাইজা। টিকেট করার কাজটা ওদের হাতে দিতে চায়নি সে। ওরা ইচ্ছা করে কোনও ভুল করে মেয়েটার দেশে আসা ঠেকিয়ে দিতে পারে।

রাহেলাকে ফোন করে ই-টিকেটের প্রিন্ট নিতে বললো সে। জোছনার সাথে কথা বলে জানতে পারলো, সে প্রায় রেডি।

‘হাসান’-এর সেগুন বাগিচার ঠিকানা ফাইজাকে দেয়া হয়েছে। রাত সোয়া আটটায় বিল্ডিং-টার সামনে উবার থেকে নামলো সে। পরিচয় গোপন রাখার জন্য হিজাব-নেকাব পরে আছে। অপেক্ষা করছে, স্যুটকেস নিয়ে লোক আসবে।

ওদিকে তনিমা হায়দারের মোবাইল থেকে হাসানকে একটা মেসেজ পাঠানো হয়েছে: “হাসান ভাইয়া, দরকারি কথা আছে। আমার এক বান্ধবীকে নিয়ে আমি আসছি।”

রাহেলা এসএমএস করে ফাইজাকে একটা নাম্বার পাঠালো। শর্ত অনুযায়ী, জোছনাকে সিম-কার্ডসহ একটা মোবাইল দেয়ার কথা, এটা নিশ্চয়ই সেই নাম্বার। দ্রুত কল করলো সে।

‘হ্যালো,’ জোছনার কণ্ঠ।

‘এয়ারপোর্টে এসেছিস? ঢাকা থেকে গিয়ে যেখানে নেমেছিস?’

‘হ্যাঁ, আপু।’

‘পাসপোর্ট আর টিকেট তোর কাছে?’

‘হ্যাঁ।’

‘টিকেটটার ছবি তুলে আমাকে পাঠিয়ে দে। যদি না পারিস –’

‘পারি। পাঠাচ্ছি।’

ফাইজা দেখলো, টিকেটটা ঠিক আছে। জোছনাকে আবার কল দিলো সে। বললো, ‘সাবধানে থাকবি। কোনও অবস্থাতেই পাসপোর্ট, টিকেট বা মোবাইল কাউকে দিবি না। কোনও সমস্যা হলে আমাকে মিসকল দিবি। ও.কে.?’

‘ও.কে. আপু।’

সাড়ে আটটার দিকে একটা গাড়ি আসতে দেখলো ফাইজা। কিছুটা দূরে থামলো সেটা। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এমনটাই বলে রেখেছে ও। গাড়ির হেডলাইট দুইবার অন-অফ করা হলো।

হাত তুলে সিগনাল দিয়ে দ্রুত পায়ে বিল্ডিং-এ ঢুকে পড়লো ফাইজা। সিকিউরিটি গার্ডকে বললো, ‘6C-তে হাসান সাহেবের কাছে যাবো। আমি তনিমা হায়দার।’

6C-তে কল করে শিওর হয়ে গার্ড বললো ‘যান, লিফটের পাঁচ।’

গাড়ি থেকে একটা লাল ট্রলিব্যাগ নামিয়ে গেটে দিয়ে গেল একজন লোক। সেটা নিয়ে লিফটে ঢুকলো ফাইজা। চেক করে দেখলো ট্রলিব্যাগটা লক করা। একটা পকেটে ‘ঘুমের ওষুধ’ পাওয়া গেল। ফাইজা সেটা ওর পার্সে রাখলো। তবে, এই অচেনা ওষুধ ও ব্যবহার করবে না। ওরা লোকটাকে মারতে না চাইলেও ভুল ডোজ ব্যবহারে সে মারা যেতে পারে। সাথে করে অন্য ঘুমের ওষুধ নিয়ে এসেছে ও।

মুখের নেকাব সরিয়ে লিফ্‌ট্‌ থেকে নামলো ফাইজা। 6C-এর দরজার পাশে ট্রলিব্যাগটা এমনভাবে রাখলো, যাতে দরজা খুলে কথা বলার সময় লোকটা এটা দেখতে না পায়।

মোবাইলের ক্যামেরায় নিজের মুখটা একবার দেখে কলিংবেল বাজালো সে।

(৮)

অমিত হাসান ঢাকা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার। বয়স বত্রিশ, এখনও বিয়ে করেনি। মাস তিনেক আগে তার মা মারা গেছে। তখন থেকে একাই থাকে সে।

তনিমা ওর বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। মেয়েটার ‘দরকারি কথা’ মানে নিশ্চয়ই বিয়ের আলাপ। বান্ধবীকে কেন নিয়ে আসছে, তা অমিত বুঝতে পারছে।

কলিংবেল বাজতেই উঠে গিয়ে দরজা খুললো সে। মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ের কাজল-পরা চোখ ওকে মুগ্ধ করলো।

‘স্লামালেকুম,’ হাসিমুখে বললো মেয়েটি। ‘আমি লাবনি, তনিমার বান্ধবী।’

‘তনিমা কোথায়?’

‘কী একটা দরকারে নিচে নেমে গেল। বললো, তুই গিয়ে বস, আমি পনেরো মিনিটের মধ্যে আসছি।’

সোফায় মুখোমুখি বসলো দু’জন। ফাইজা হঠাৎ চিনতে পারলো, লোকটা অমিত হাসান। ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় এর লেখা ও নিয়মিত পড়ে। এ পর্যন্ত দুটো রহস্য উপন্যাস বেরিয়েছে তার।

‘লাবনি, আপনি কী করেন?’ অমিতের প্রশ্ন।

‘ট্রিপল ই-তে মাস্টার্স করেছি। এখনও কিছু করি না।’ একটু থেমে ফাইজা যোগ করলো, ‘আমি আপনার লেখা দু’টো উপন্যাসই পড়েছি। আপনার প্রথম উপন্যাসটা, দ্য সাইলেন্ট কিলার, অসাধারণ।’

‘থ্যাংক ইউ।’

‘আপনার দ্বিতীয় উপন্যাসটাও অসাধারণ হতো, যদি প্লট হোল্ বা অসংগতি না থাকতো।’

‘প্লট হোল্ কোন্ জায়গায়?’ অমিতের কণ্ঠে কৌতূহল।

‘খুনটা হলো রোজার ঈদের দু’দিন পর, রাত এগারোটায়। আপনি লিখেছেন, রেহান চাঁদের আলোয় খুনিকে দৌড়ে যেতে দেখেছে। চাঁদের মাসের তিন তারিখে রাত এগারোটার অনেক আগেই তো চাঁদ ডুবে যায়।’

‘মাই গড! আপনি তো ঠিক ধরেছেন!’ বললো অমিত।

একটু হেসে ফাইজা বললো, ‘আপনার বাসায় প্রথম এলাম, চা-কফি খাওয়াবেন না?’

‘ওহ,’ বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালো অমিত। ‘আমি ভেবেছি তনিমা এলে –’

ফাইজাও দাঁড়ালো। বললো, ‘আপনি বসুন, প্লিজ। চা-কফি বানাতে আমার ভালো লাগে। আপনি এই ফাঁকে আপনার সেকেন্ড বইয়ের থার্ড চ্যাপ্টারটা চেক করে দেখতে পারেন, আরেকটা প্লট হোল্ আছে সেখানে। দেখি বের করতে পারেন কিনা।’

কিচেনে বিষণ্ন মনে কফি বানাচ্ছে ফাইজা। মুরাদের ফোনালাপ শুনে ও বুঝতে পেরেছে, তনিমা-হত্যার দায়ে অমিতকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরে তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে ও, কিন্তু তার সামনে এসে আর দাঁড়াতে পারবে না।

অমিতের চোখে ও মুগ্ধতা দেখেছে। যদি ভিন্ন পরিস্থিতিতে ওদের পরিচয় হতো!

একটা ট্রেতে দুই মগ কফি নিয়ে ড্রয়িংরুমে এলো ফাইজা।

অমিত হেসে বললো, ‘প্লট হোল্ পেয়েছি। ঘটনা রোববার শুরু হলো। কিন্তু, দু’দিনের ঘটনা দেখিয়ে বলেছি পরের দিনটা শুক্রবার।’

‘হ্যাঁ,’ বললো ফাইজা। ‘সমস্যা হলো, শুরুটা রোববার না হলে চলছে না। আবার, শেষে শুক্রবার না দেখালেও চলছে না।’

‘মাঝখানে অনেক ঘটনা থাকায় আমি ভেবেছি কয়েকদিন পার হয়েছে,’ হেসে বললো অমিত। ‘আপনার তো অনেক বুদ্ধি! সব পাঠক আপনার মতো হলে আমাকে লেখা বন্ধ করতে হতো।’

হাসলো ফাইজা। বললো, ‘দ্বিতীয় বইটা লেখার সময় আপনি মনোযোগ কম দিয়েছেন।’

অমিত কফি শেষ করেছে!

‘ওহ, বলতে ভুলে গেছি,’ বললো ফাইজা, ‘তনিমা আপনাকে ইমেইল চেক করতে বলেছে।’

ল্যাপটপে ইমেইল চেক করলো অমিত। টলছে সে। জড়ানো কণ্ঠে বললো, ‘নতুন কোনও ইমেইল তো দেখছি না। সন্ধ্যা ছয়টায় লাস্ট –’

ফাইজা উঠে দাঁড়ালো। অমিত কাত হয়ে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিলো। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরলো সে। সোফায় শুইয়ে দিয়ে মাথার নিচে কুশন দিলো।

অবিশ্বাস ভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অমিত।

এটাই ওদের শেষ দেখা, ভাবলো ফাইজা। রেমন্ড চ্যান্ডলারের একটা বইয়ের নাম মনে পড়লো ওর। বিষণ্ন কণ্ঠে বললো, ‘ফেয়ারওয়েল, মাই লাভলি।’

অমিত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ট্রলিব্যাগটা নিয়ে এসে ঘরের মধ্যে রাখলো ফাইজা। তারপর অমিতের ল্যাপটপটা নিয়ে ব্যস্ত হলো।

উবার কল করে নেকাব পরে নিচতলায় নামলো সে। গাড়িতে উঠে দেখলো সোয়া নয়টা বাজে। জোছনাকে কল করে জানতে পারলো, কোনও সমস্যা নেই। ‘বস্’-কে ফোন করে জানালো, কাজ শেষ।

পনেরো মিনিট পর ডিবি-র জ্যাকেট পরা দু’জন লোক ঢুকলো বিল্ডিং-এ। সিকিউরিটি গার্ডদের সাথে কথা বলে তারা অমিতের ফ্ল্যাটে চলে গেল। দু’জনের আপ্রাণ চেষ্টায় রাত দশটায় কোন রকমে উঠে বসলো অমিত। ওর বাসার ফ্রিজারে তনিমার লাশ রয়েছে দেখে অবাক হলো। জেরার মুখে জানালো, নারী পাচারের উপর কাজ করছিলো মেয়েটা।

অমিতের ল্যাপটপ আর মোবাইল খুঁটিয়ে দেখতে শুরু করলো তারা। পনেরো মিনিট পর ওকে বাসায় অপেক্ষা করতে বলে তারা নিচে নেমে গেল। বিল্ডিং-এর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে শুরু করলো। মিনিট দশেক পর চলে গেল তারা।

রাত সাড়ে দশটায় (মাস্কাট সময় সাড়ে আটটায়) জোছনা মিসকল দিলো। ফাইজা কল দিয়ে জানতে পারলো, মেয়েটা চেক-ইন করছে।

পুলিশ অমিতের বাসায় এলো রাত এগারোটায়। চেক করে দেখলো অমিতের ল্যাপটপ আর মোবাইলে তনিমার কোনও ফাইল, ইমেইল বা মেসেজ নেই। বিল্ডিং-এর সিসিটিভি ফুটেজও হাওয়া। ডিবি এসেছে শুনে পুলিশ বললো, ডিবি তো আমাদের আগে আসার কথা নয়।

অমিতকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো।

রাত সাড়ে এগারোটায় জোছনাকে কল করলো ফাইজা। জানা গেল, মেয়েটা বোর্ডিং পাস নিয়ে ডিপার্চার লাউঞ্জে অপেক্ষা করছে।

পরদিন ভোরে এয়ারপোর্টে জোছনাকে রিসিভ করলো ফাইজা। ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো মেয়েটা।

‘মা আসেন নাই?’ কান্না থামিয়ে জানতে চাইলো সে।

‘এখনও তাকে বলিনি। ভেবেছি তুই আগে আয়।’

ঘড়ি দেখলো ফাইজা। মাজেদা খালা ওর সাথে দেখা করার পরে আটচল্লিশ ঘণ্টা পার হয়েছে।

(৯)

মুরাদের কললিস্ট চেক করলো ফাইজা। সন্দেহজনক কয়েকটা কলের রেকর্ড শুনে বুঝলো, অমিতকে ফাঁসানোর কাজে এই লোকটাই নেতৃত্ব দিয়েছে। তনিমা হত্যার সাথে লোকটার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, বোঝা গেল না। হয়তো দলের অন্য কেউ কাজটি করেছে।

বেলা এগারোটায় ‘লাবনি’ অ্যাকাউন্ট থেকে ঢাকা ট্রিবিউনের এডিটরকে মুরাদের কয়েকটা ফোনালাপের রেকর্ড পাঠালো সে। ‘বস্’-এর সাথে ওর আলাপের রেকর্ডগুলিও পাঠালো।

গতকাল অমিতের বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তনিমার রিপোর্টটা পেনড্রাইভে কপি করে নিয়েছে ফাইজা। সেটাও ‘লাবনি’ অ্যাকাউন্ট থেকে এডিটরকে পাঠালো সে। ইমেইলে লিখলো: “স্যার, তনিমা হায়দারের রিপোর্টটা সুলিখিত ও বিস্তারিত। দয়া করে কাটছাঁট করবেন না।”

রাহেলা কীভাবে নারীপাচার করছে, তা লিখে মাস্কাট পুলিশকে একটা ইমেইল পাঠালো সে। রাহেলার বাসার অবস্থান আর মোবাইল নাম্বারগুলি তাদেরকে জানিয়ে দিলো।  

দুপুরে ঢাকা ট্রিবিউনের এডিটরের ইমেইল এলো: “রিপোর্টটা পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ। পুলিশ আপনাকে খুঁজে বের করার আগে আপনি নিজে থানায় গেলে ভালো হয়। সব ঘটনা আমাদেরকে জানালে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারবো।”  

নিজের আসল পরিচয় উল্লেখ করে বিস্তারিত ঘটনা এডিটরকে লিখে পাঠালো ফাইজা। জানালো ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ও থানায় যাচ্ছে।

পল্টন থানার এসআই বারেক ফাইজার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন ঠিকই, কিন্তু সবকিছু শোনার পরও ওকে গ্রেফতার করলেন। অমিতকে নিয়ে এসে ওকে ‘সনাক্ত’ করানো হলো। বিব্রত বোধ করলো মেয়েটা।

ফাইজার এক মামার ফোন পেয়ে ওসি তাকে ডেকে নিয়ে বিস্তারিত ঘটনা শুনলেন। যখন জানতে পারলেন মুরাদের মোবাইল ও ট্যাপ করেছে, ‘লাবনি’ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নিয়ে তিনি নিজে সবকিছু চেক করলেন।

এসআই বারেককে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ফাইজা নিজে থানায় এসেছেন, তাই না?’

‘জী, স্যার।’

পুলিশকে সহায়তা করবে, এই শর্তে ফাইজাকে ছেড়ে দেয়া হলো।

পরদিন ঢাকা ট্রিবিউনের প্রথম পৃষ্ঠার প্রায় সবটা জুড়ে থাকলো তনিমা হায়দারের রিপোর্ট। তনিমা দেখিয়েছে কোন্ কোন্ রুটে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান আর দুবাইয়ে নারী পাচার হচ্ছে। দেশের কোন্ কোন্ রাঘব বোয়াল পাচারের সাথে জড়িত, তার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

সারা দেশে হৈ চৈ পড়ে গেল।

ঢাকা ট্রিবিউনের অন্য একটা রিপোর্টে লেখা হয়েছে, কীভাবে তনিমাকে হত্যা করে অমিতকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং কীভাবে ‘লাবনি’কে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে।  

জানা গেল, ‘বস্’ লোকটা একজন স্বনামধন্য এমপি-র ব্যক্তিগত সহকারী। এমপি সাহেব দাবী করেছেন, তিনি কিছু জানতেন না।

আসল খুনি ধরা পড়ায় সন্ধ্যায় ছাড়া পেলো অমিত।

পরদিন আলোড়ন হলো সারা বিশ্বে।

ভারতের The Times of India, পাকিস্তানের Dawn আর দুবাইয়ের The National পত্রিকায় তনিমার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ফলো-আপ রিপোর্ট প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপা হলো রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার আর পলায়নের খবর।

ফাইজা ভাবলো, কলমের জোরে মানুষ মরে গিয়েও বেঁচে ওঠে। হ্যারি পটার বইয়ের অনুকরণে ও মনে মনে বললো, ‘টু তনিমা হায়দার, দ্য গার্ল হু লিভ্‌ড্‌।’

(১০)

পরদিন বিকাল চারটায় ফাইজার মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো।

‘হ্যালো,’ বললো সে।

‘ঢাকা ট্রিবিউন থেকে বলছি,’ মার্জিত নারীকণ্ঠ। ‘ফাইজা রুবাইয়া বলছেন?’

‘জী, বলছি।’

‘এডিটর স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন।’

‘হ্যালো,’ এডিটরের রাশভারী কণ্ঠ।

‘স্লামালেকুম, স্যার।’

‘ওয়ালাইকুম আস সালাম। ফাইজা, আপনি কি রিপোর্টার হিসাবে কাজ করতে ইচ্ছুক?’

‘অবশ্যই, স্যার। কিন্তু, যা করেছি –’

‘ওটা কোনও ব্যাপার নয়। অমিত বুঝতে পেরেছে। আপনি ইন্টারেস্টেড?’

‘অবশ্যই, স্যার।’

‘তাহলে আপনার CV নিয়ে কাল চলে আসুন। সকাল দশটায়?’

‘শিওর, স্যার।’

ফাইজার মুখে হাসি।

(শেষ)

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

জাফর আহমেদ খান

প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪