fbpx

নভেম্বর ১০, ২০২৪

‘দুই’য়ের গল্পনামা’

টুসি যখন প্রথম আমার সাথে ওর ভিডিও বানানোর আইডিয়াটা শেয়ার করে শুনে বেশ আনন্দ লাগে। তখন সময় হাতে ছিল খুবই কম। টুসি আমাকে বলে আমি এই কাজে ওর সাথে থাকবো কী না। প্রত্যুত্তরে থমকে যাওয়া আমার প্রথম প্রথম ভয়ই লাগতে থাকে, কারণ ভিডিও বানানো আর যাই হোক আমার কাজ নয়। টুসি আমাকে সাহস দেয়, যে দুইজন কাজটার পেছনে শ্রম দিলে আসলেই ভালো কিছু তৈরি করা সম্ভব হবে। আমরা ঠিক করি নিজেদের মত কিছু পয়েন্ট চিন্তা করে ফেলবো। পরদিন রাতে স্ক্রিপ্ট লিখতে বসে পড়ি দুইজন। ব্যাপক আলোচনা আর চিন্তাভাবনা শেষে দুই ঘন্টারও বেশি সময় পর শেষ হয় আমাদের প্রাথমিক স্ক্রিপ্ট তৈরির ভার্চুয়াল বৈঠক। এরপর আরও বেশ কিছু কাটাছেড়ার মধ্য দিয়ে স্ক্রিপ্টটির সংশোধন, পরিবর্ধন চলতে থাকে পরদিন পর্যন্ত। ওদিকে টুসি শুরু করে দেয় ভিডিওর লেআউট তৈরির কাজ। এরই সাথে স্ক্রিপ্ট পরপর দুইজন ভাগ করে নিই ভয়েস দেওয়ার জন্য।

রাত তখন আড়াইটা। সে রাতেই আমি অর্ধেকের মতো রেকর্ডিং করে ফেলি। ঘুমের কারণে আর চোখমুখ আর চলছিল না বলে বাকি অর্ধেক পরদিন সকালের জন্য রেখে দিই। পরদিন সকালে বাকি অংশগুলো রেকর্ডিং করতে গিয়ে দেখি কোনোভাবেই গত রাতের ভয়েস মুডের সাথে খাপ খাচ্ছে না! অগত্যা আবারও শুরু থেকে নির্ধারিত সবগুলো অংশের রেকর্ডিং করতে হয়। তাতে খানিকটা দেরিও হয়ে যায় টুসির ভিডিও তৈরির কাজে। কারণ ভয়েসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে লেআউটগুলো কাটছাট করে ভিডিও সামনের দিকে আগানোটা ঝামেলায় পড়ে যাচ্ছিল। তাই তড়িঘড়ি করে আমি দুপুরের মধ্যে রেকর্ডিংগুলো টুসিকে পাঠিয়ে দিই।

গল্পের পরের অংশে টুসিই একমাত্র যোদ্ধা। ভিডিও বানানোর এই বিশাল যুদ্ধে ও সামনে থেকে বীরদর্পে কাজগুলো একের পর এক গুছিয়ে নিয়ে করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরপরই আমাদের কথা হতে থাকে কাজের ব্যাপারে, টুসি আমাকে বলতে থাকে কখন কী করা লাগবে, কীভাবে করা লাগবে, কী খুঁজে বের করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সাড়ে এগারোটা নাগাদ টুসি জানায় ড্রাইভে ভিডিওটা আপলোড হয়ে গেছে। অধীর হয়ে বারবার রিফ্রেশ করতে করতে চটজলদি ভিডিওটা দেখে ফেলি রুদ্ধশ্বাসে। অইসময়ের অনুভূতি প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। সাথে সাথে টুসিকে কল দিয়ে কথা বলি। এই ছুঁইছুঁই ডেডলাইনের চাপ মাথায় নিয়ে কী দুর্ধর্ষ একটা কাজ সে করে ফেলেছিল ভাবতেই গা শীতল হয়ে যায়।

সময়স্বল্পতার কারণে আমরা একবার ধরেই নিয়েছিলাম সাবটাইটেল হয়তো শেষমেষ রাখা সম্ভব হবে না। কেননা পরদিন বেলা বারোটার মধ্যে সাবমিট করতে হবে, আর ভর সকালের অনলাইন ক্লাস তো আছেই। তবু সেসব কিচ্ছুর পরোয়া না করে টুসি এবার সাবটাইটেল যুক্ত করার মাঠে নামে। দুই ঘণ্টার মধ্যেই সাবটাইটেল সহ ভিডিওটা ফাইনালি প্রস্তুত করে ফেলে টুসি।

ল্যাপটপ হ্যাং থাকা, এক্সপোর্ট হতে সময় নেওয়া, মোবাইল হ্যাং করা, মেইল পাঠাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হওয়াসহ না জানি আরও কত ঝক্কি সামলানোর পরে ফাইনাল ভিডিওটা অবশেষে তসলিম স্যারের কাছে মেইল করা হয়। এরপর দুজনেরই চোখের পাতায় নেমে আসলো স্বস্তি। আর ঘড়ির কাঁটাও তখন বারোটায় পড়লো বলে!

এরপরের সময়টা কেবলই অপেক্ষার। নিজেদের দিক থেকে আমরা আমাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকায় যেকোনো ফলাফলের জন্যই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। টুসিকে বারবার বলছিলাম, এই দুইদিনের মাথায় যে কাজটা ও করে ফেলেছে সেটা কোনোভাবেই সামান্য কিছু না। এরপর আসে বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবসের সেই উৎসবমুখর সকাল। ভিডিও তৈরির সেগমেন্টে শুধুমাত্র একটা টিমকে বিজয়ী ঘোষণা করার কথা থাকলেও অপ্রত্যাশিতভাবেই আমরা রানার-আপ টিম হওয়ার স্বীকৃতি পাই। খুশিতে চোখ ভিজে যাচ্ছিল অই মুহূর্তে যখন ভিডিওটা ওয়েবিনারে দেখানো হয়। টুসির সাথে তক্ষুনি কথা বলে বুঝতে পারি সে নিজেও একইভাবে আর্দ্র আবেগের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এখনও সেই অনুভূতি সদ্য ঝরে পড়া শিউলির মত সতেজ হয়ে আছে।

এই যে রাশিরাশি আনন্দের ঝুলি, এক অপূর্ব সুন্দর অভিজ্ঞতা, আর তসলিম স্যারের কাছ থেকে পাওয়া শুভেচ্ছা মেইল, এই পুরো পথচলায় আমাকে সঙ্গী করে নেওয়ার সুবাদে টুসির প্রতি আমার অঢেল ভালবাসা, কৃতজ্ঞতাও অশেষ। আর এই কাজের প্রতি যারা ভালবাসা ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন তাদের প্রতি আমরা দুজনে কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ কাজী মোতাহার হোসেন ক্লাবকে, গৎবাঁধা সিলেবাসের বাইরে নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য। সর্বোপরি, কৃতজ্ঞতা আর প্রশংসা সৃষ্টিকর্তার প্রতি, প্রতি মূহুর্তে যাঁর উপর ভরসা না রাখলে কোনো কিছুই সম্ভবপর হতো না। ভবিষ্যতে এ অঙ্গনে এমন আরও নতুন নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হোক, বাড়ুক সৃষ্টি সুখের উল্লাস। রইলো প্রত্যাশা।

Smrity Taiyeba Mukta
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ২০১৬-২০১৭