আজ পহেলা বৈশাখ। পাড়ায় পাড়ায় কত মেলা বসেছে; ফেরিওয়ালার ও কমতি নেই। বাড়ির ছেলে মেয়েরা হাওয়াই মিঠাই ও টুকটাক কিনছে। নিধিও কিছু কিনবে বলে দৌড়ে নিজের ঘরে গেল ভাংতি টাকা খুঁজতে কিন্তু একি! কোথাও কোন ভাংতি টাকাই পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুটা বিরক্ত হয়েই নিধি ছোটবেলার খাজানা ভর্তি ড্রয়ারটা খুলল। সেখানে ‘Popeye the Sailor Man’ এর কার্টুন ওয়ালা একটা ছোট ব্যাগ রয়েছে। নিধি কিছু ভাংতি টাকা পাওয়ার আশায় ব্যাগটা খুলল এবং পেলও কিন্তু সেগুলো সে বের করলো না। খুব মনোযোগ সহকারে ব্যাগের ভেতর চোখ বুলিয়ে রেখে দিল কারণ এই দুই টাকা, দশ টাকা এবং পাঁচ টাকার নোট গুলো তিন বছর আগে নিবিড় তাকে ফেরত বাবদ দিয়েছিল। এই টাকাগুলো তাই ওর কাছে খুবই স্পেশাল; এগুলোতে যে নিবিড় এর ছোঁয়া রয়েছে। নিবিড় এর দেয়া সব জিনিসই নিধি খুব যত্নে রাখে, তা কোন গিফটই হোক কিংবা এরকম ফেরত দেওয়া টাকা। নোটস আটকাতে দেয়া সেই জেমস ক্লিপ এর প্রত্যেকটা এখনো আছে খুবই সযত্নে, পুরাতন ‘Ponds Cream’ এর কৌটোয়। আর প্রথম ফাউন্টেন পেন এবং এর কালি, সে তো পরম মূল্যবান বস্তু। লিখতেও ভয় করে পাছে নিবটা ভেঙে যায়। এমনই ছেলেমানুষ নিধি।
নিবিড় এর কথা মনে পড়তেই ড্রয়ারটা আটকে নিধি ছুট দিল নিবিড়কে ‘শুভ নববর্ষ’ উইশ করে মেসেজ পাঠাতে। নিবিড় এখন অনলাইনেই আছে, সেও ফিরতি ‘শুভ নববর্ষ’ জানালো। কথায় কথায় হঠাৎ নিবিড় বলল, “জানো এক বৈশাখে তোমার জন্য একজোড়া কানের দুল কিনেছিলাম।”
নিধি: কই! তুমিতো আমায় কোনো কানের দুল দাওনি ?
নিবিড়: হ্যাঁ, দেইনি ফেলে দিয়েছিলাম।
নিধি: kকী? ফেলে দিয়েছিলে! মানে?
নিবিড়:মানে সেদিন মন খুব খারাপ ছিল; পরে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গেলাম। হঠাৎ দেখি সামনে এক বৈশাখী মেলা বসেছে, ওই মেলায় কতক্ষণ ঘোরার পর ভাবলাম কিছু কিনি তোমার জন্য।কিন্তু পকেটের টাকা ছিল না; তিরিশ টাকা ছিল মাত্র তাই তখন দশ টাকা দিয়ে একটা কানের দুল কিনলাম। কিন্তু ফিরে আসার সময় হঠাৎ মনে হল তুমি এটা কোন দিন পরবে না, এত সস্তা জিনিস! তাই ফেলে দিলাম।
নিধি: কেন তোমার এমন মনে হল?
নিবিড়: বাহ রে! তোমার কত দামি দামি দুল আছে,কেন তুমি এই সস্তা জিনিস পড়বে?
নিধি: কেন তোমার এমন মনে হল? আমি অবশ্যই পড়তাম। এটা তুমি কী করলে? এক্ষুনি বল কোথায় ফেলেছিলে দুল জোড়া?
নিবিড়: বাহ রে, এখন বুঝি তুমি পাবে সেটা? কী যে ছেলেমানুষি করো না তুমি; হাসি পায়।
নিধি: তুমি বড্ড বাজে লোক।
নিবিড়: তা বাজে হওয়ার মত কী করলাম শুনি?
নিধি: আমার জিনিস আমাকে না বলে ফেলে দিলে, এটা কি বাজে হওয়ার প্রমাণ নয়?
নিবিড়: জানো, তোমাকে দেওয়ার মত খুব কম জিনিসই আছে আমার।
নিধি: কম হোক আর বেশি হোক আমার সেসব চাই ই চাই। তা কী কী আছে শুনি? লিস্ট বানাবো। সব পেলাম কিনা হিসাব নিতে হবে তো।
নিবিড়: কী কী দিতে পারি তোমায় শুনবে?
নিধি: হ্যাঁ, শুনতেই তো বসে আছি। এখন বলো দেখি।
নিবিড়: তোমায় আমি কী আর দেবো?
অভাব জড়ানো কান্না দেবো?
দশ টাকার ওই দুলটি দেবো,
এক বেলা না খেয়ে চুম্বনের সুরাহা দেবো।
তোমায় আমি কী আর দেবো?
আকাশের ঐ নীলের মাঝে সাদা মেঘের ছোঁয়া দেবো,
অর্থ আমার নেই জেনো ভাই কান্না শুধু কান্না দেব।
তোমায় আমি রঙে নয় আমার রক্তে লাল করব।
নিধি: হুম, বুঝলাম। এবার আমি বলি আমায় কী কী দিতে হবে ?
নিবিড়: বল।
নিধি: দশ টাকার ওই দুলটি দিও,
তোমার বুকের অশ্রু দিও।
দুই ঠোঁটের ওই হাসি দিও,
মনের রঙে রাঙিয়ে দিও
শুধু করো না কভু ভালোবাসায় হিসাব;
করোনা কভু অবহেলা,
তোমার কাছে হলে হব রানী নইলে পথের অপরিচিতা
আমি যদি হতে পারি তোমার দীপ্তি,
তবে বন্ধু তুমি যে হবে আমার প্রাপ্তি।
তোমার কাছে এ সব ই চাই, কী পারবে তো দিতে?
নিবিড়: হ্যাঁ, পারবই মনে হচ্ছে। জানো; আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার সীমার মাঝে তোমায় আমার অসীমটুকু দিতে।
নিধি: তাহলে এখন নিয়ে চলো বৈশাখী মেলায়। কিনে দাও সেই দশ টাকার দুল।
নিবিড়: বাহ রে, এখন বুঝি দশ টাকার দুল আর দশ টাকার আছে? বাজারের দ্রব্যমূল্য কত বৃদ্ধি পেয়েছে জানো? তবে সমস্যা নেই তোমায় দশ টাকার দুল আজ তিরিশ টাকায় কিনে দেবো ।
নিধি: শুধু দুল দিলেই হবে না, তোমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে সাথে ফুচকা, আইসক্রিম এবং হাওয়াই মিঠাইও কিনে দিতে হবে।
নিবিড়: আচ্ছা বাবা, ফুচকা আইসক্রিম হাওয়াই মিঠাই সব কিনে দিবো ।
নিধি: ও কে আসছি।
নিবিড়: আরে আরে শোনো, তোমার ওই মেজেন্ডা রংয়ের জামদানি পড়ে এসো কিন্তু; তোমায় বেশ মানায়।
নিধি: আবার শাড়ি পড়তে হবে? এই গরমে? আচ্ছা পড়বো এক শর্তে। যদি তুমি সেই আকাশি রঙের পাঞ্জাবিটা পরো।
নিবিড়: আচ্ছা বাবা তাই পরে আসছি। আর কোন ফরিয়াদ আছে নাকি ফুরিয়েছে ম্যাডাম? নিধি: ইশ! ভাব যেন নিজে কোন ফরিয়াদ করে না। হ্যাঁ হ্যাঁ ফুরিয়েছে জনাব। আমার কথাটি ফুরোলো, নটে গাছটি মুড়োলো ।
- তানিকা ইসলামhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%ae/বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ১১, ২০২১