মে ১৯, ২০২৫

স্মৃতিচারণ

আমাদের ভেতর খুব কম মানুষই আছেন যারা ভালোবেসে পরিসংখ্যান পড়তে আসেন। আবার যারা আসেন তাদের ভেতরও খুব অল্প কয়েকজনই পরিসংখ্যানের প্রেমে পড়তে পারেন। পরিসংখ্যান খুব ভালো না জানলেও এটা খুব ভালো বুঝতে পারি যে এই বিষয়টার প্রতি আমার অনেকটা প্রেম আছে। সেজন্য পরিসংখ্যান স্বয়ং এবং পরিসংখ্যানের জন্য আজীবন কাজ করে যাওয়া কিছু কিংবদন্তি মানুষই দায়ী। খুব স্পষ্ট করে বলতে চাইলে এই মুহূর্তে দুটো কোর্সের কথা আমার খুব মনে পরছে, আজীবন মনে পরবে। একটা হলো ক্যাটেগোরিক্যাল ডাটা এনালাইসিস, যেখানেই প্রথম দেখেছিলাম যে ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য ধুমপায়ীরা অধুমপায়ীদের থেকে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কোন মুখস্ত বুলি অথবা শেখানো তত্ত্ব নয়। একদম গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে পরিসংখ্যানের তত্ত্ব প্রয়োগ করে বাস্তব ডাটার আলোকে তা প্রমাণ করা যাচ্ছে। এ এক মহান কর্মযজ্ঞ! তারপর থেকেই খুব করে মনে হয় যে পরিসংখ্যান আসলেই সত্য, সুন্দর! আসলেই পরিসংখ্যান কাজ করে, আসলেই পরিসংখ্যান ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রমাণসহ হাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে ধুমপায়ীদের সাবধান করতে পারে! আমি পরিসংখ্যানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি বলে আরেকটা কোর্স আমাকে আশীর্বাদপুষ্ট ভাবতে বাধ্য করেছিল। সেটা হলো “টাইম সিরিজ এনালাইসিস”। কোর্সের বিষয়বস্তুতো বটেই সেই সাথে আরেকটা যে কারণে টাইম সিরিজের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম তা হলো কোর্স শিক্ষক “অধ্যাপক ড. তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক” এর পড়ানোর স্টাইল। খুব অবাক হয়েছিলাম এটা দেখে যে পূর্বের অনেক বছরের ডাটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎকে পুরোপুরি না হলেও অনেকটা অনুমান করে দেখা সম্ভব! স্যার পড়াতেন…অটো রিগ্রেসিভ মডেল, মুভিং এভারেজ মডেল ইত্যাদি। সেই সাথে গাণিতিকভাবে বর্তমানে বসেই অতীতে ঘুরে এসে ভবিষ্যতের দিকে যাওয়ার কৌশল স্যার আমাদের শেখাতেন। কত সুনিপুণভাবে, কত যত্ন করে! এভাবেই পরিসংখ্যান আমার কাছে একটা বিষয় থেকে অনেকটা একটা ব্যাক্তির মতো হয়ে উঠেছিল যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়, যাকে নিয়ে ভাবনার জগতে অনেকটা দূরে চলে যাওয়া যায়। পরিসংখ্যানও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। তাই পরিসংখ্যানকে একান্তই আমার নিজের করে দেয়ার জন্য যে মানুষগুলো সবথেকে বেশি অবদান রেখেছিলেন অধ্যাপক ড. তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক স্যার তাদের মধ্যে অন্যতম। একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। তখন ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। টাইম সিরিজের ব্যবহারিক পরীক্ষার দিন হঠাৎই আমার কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমি নির্দ্বিধায় স্যারের রুমে গিয়ে সব বললাম। যেহেতু পরীক্ষা চলছিল তাই স্যার নির্দিষ্ট করে কিছু না বলে অথবা মনে করিয়ে না দিয়ে এমনকিছু উদাহরণ দিলেন যে আমি নিজেই বিভ্রান্তি দূর করতে পারলাম। অধ্যাপক ড. তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক স্যার এমনই ছিলেন আসলে। শিক্ষকতো এমনই হয় যিনি সঠিক পথটা দেখিয়ে আমাদের উজ্জ্বল গন্তব্যের পথিক করে তোলেন! স্যারের অকালপ্রয়াণে স্যারকে নিয়ে এমন স্মৃতিচারণ করতে হবে সেটা কখনও কল্পনাও করিনি! উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ