fbpx

দীপ্তিমান একজন শিক্ষক

পৃথিবীতে কিছু ক্ষণজন্মা দীপ্যমান মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যাঁদের দীপ্তিতে অন্যেরা আলোকিত হয়। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক ড. তসলিম সাজ্জাদ মল্লিক স্যার ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। মৃত্যু শাশ্বত সত্য। যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু ঘন্টাধ্বনি বাজিয়ে আলিঙ্গন করবে আমাদের। তারপরেও সাদামাটা, নিরহংকার, অমায়িক ও সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারছি না। মনে হচ্ছে ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন দেখছি। ঘুম ভেঙ্গে গেলে জানবো তিনি বেঁচে আছেন, প্রিয় কর্মস্থল পরিসংখ্যান বিভাগের চিরচেনা তাঁর বসার কক্ষে সহকর্মী অথবা শিক্ষার্থীদের সাথে গবেষণার কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তাঁর নির্মল হাসিমাখা মুখ আর কোনদিন দেখতে পাব না, ভাবলেই সীমাহীন শূন্যতা আমাকে গ্রাস করে। আমি মনে করি তাঁর সাহচর্যে আসা সকলের অনুভূতি অভিন্ন, আমার মতোই।

আমি তাঁর পাঠগ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছিলাম দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ষে। শ্রেণিকক্ষে তাঁর পাঠদানের সৃজনশীলতা, কথা বলার ধরন ও বোঝানোর আন্তরিক চেষ্টায় মুগ্ধ হতাম আমরা সবাই। তিনি সময়নিষ্ঠ ও কর্তব্যপরায়ণ শিক্ষক ছিলেন। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি সততা, সময়ানুবর্তিতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার দীক্ষাও আমি পেয়েছি তাঁর কাছেই। তিনি অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ মানুষ ছিলেন। নিজের স্নেহবাৎসল্য ও মহৎগুণের দ্বারা তিনি আদর্শের দীপ জ্বেলে গেছেন শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর অসংখ্য গুণগ্রাহী ছাত্র-ছাত্রীদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন দিশারি হয়ে।

স্যারকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, ছাত্র-ছাত্রী এবং আরও অনেকে সমবেত হয়েছিলেন। স্যারের মা একসময় আমাদের বললেন- “পারতু (স্যারের ডাক নাম) অসুস্থ অবস্থায়ও পরিসংখ্যান বিভাগে যেতে চাইতো। খুবই কাজ পাগল ছেলে আমার। বিভাগই ছিল তাঁর প্রাণ। তোমরা পারতুকে ভুলে যেয়ো না। সবাই ওর জন্য দোয়া করো।”

সেদিন কিছু বলতে পারিনি। আজ বলতে চাই- স্যার চলে গেছেন সকলকে কাঁদিয়ে। কিন্তু, তাঁর স্মৃতি-বিজড়িত প্রিয় পরিসংখ্যান পরিবার, অসংখ্য গুণমুগ্ধ ছাত্র-ছাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়ে তিনি প্রোথিত আছেন এবং চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবেন।

তিনি সাদা মনের মানুষ ছিলেন, শুভ্রতায় ছিল যাঁর বিচরণ। প্রার্থনা করি, মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর পরকালের জীবনকে শান্তিময় করে দিবেন।

সহকারী অধ্যাপক | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়