আমি আবীর। পুরো নাম সাইমুম আবীর চৌধুরী। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজিতে পি এইচ ডি করছি। শেষ বর্ষে আমার থিসিসের বিষয় এসে দাঁড়ায় কোনো একজন সাইকোপ্যাথ কিলারের ব্যাপারে। সামারের ছুটিতে তাই দেশে ছুটে আসি বন্ধ আর থিসিসের কাজে সহায়তা দুটিই একই সাথে হয়ে যাবে বলে। ঝোপ বুঝে কোপ মারা যাকে বলে আর কি!
ঢাকায় পা রাখতেই চিরচেনা বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। জন্মের পরপরই ঢাকার এই অসহ্য জ্যাম, ভ্যাপসা গরম আর এই বিপুল মানুষের চাপও যে মিস করা যায় তা বিদেশ বিভুঁইয়ে না গেলে কেউই জানবে না। সে যাই হোক, একটানা বেশ কিছুদিন বাসায় থেকে একটা সময় হাপিয়ে গেলাম। ভাবলাম প্রাণের ঢাকা ভার্সিটি দিয়ে ঘুরেই আসা যাক একটু আর এই সুযোগে রেজা স্যারের সাথে দেখা হলেও মন্দ হয় না। স্যারকে আইডল ভেবেই সাইকোলজিতে ক্যারিয়ার গড়তে সাহস পাওয়া। স্যারের ব্যাপারে আরেকটা মজার তথ্য হলো স্যার দেখতেও যেমন স্মার্ট তার ইংরেজিও ঠিক ততটাই চোস্ত। কিন্তু কথা বলার সময় ব্যবহার করেন একদম আঞ্চলিক ভাষা । স্যারের ভাষ্যমতে, “আমারে টাকা দেয় আপনাগোরে বোঝানের জন্য আর ভদ্র বইয়ের ভাষায় কথা বললে আপনাদের সাথে একটা দূরত্ব থাইকা যায়। তাই আমি একদম ঠিক আপনাদের ভাষাতেই কথা কই যাতে আপনারা আমারে নিজেগো লোক ভাবতে পারেন। পরে ভার্সিটিতে পড়ার সময় সত্যিই উপলব্ধি করেছি স্যার আসলেই আমাদেরই লোক। বিশেষত আমার জীবনের এক অবিচ্ছিন্ন অংশ ছিলেন তিনি। কাজেই, থিসিসের কাজে তার থেকে বেশি হেল্প বোধহয় আর কেউ করতে পারবে নাহ।
ভার্সিটিতে পা দিয়ে ঠিক যতটা আনন্দ পেয়েছিলাম ঠিক ততটাই অবাক বিস্ময় আর প্রবল দুঃখবোধ গ্রাস করলো একটা খবর। রেজা স্যার নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন আর পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে খুন করে এখন মানসিক হাসপাতালে আছেন। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না ছুটে গেলাম স্যারকে এক নজর দেখার জন্য।
মানসিক হাসপাতালে স্যারকে খুঁজে পেতে তেমন একটা কষ্ট করতে হলো না। স্যার আছেন আগের মতোই, বদলাননি একদমই। দেখলে কে বলবে এতো বড় একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বসে আছেন তিনি। আমায় দেখেই চিনতে পারলেন আর সহাস্যে এগিয়ে এলেন “আরে! আবীর সাহেব যে! কেমন আছেন? আসেন আসেন, ভিতরে আসেন, বসেন এইখানে। না, না ভয় পাইয়েন নাহ, আমি নির্ঝঞ্জাট মানুষ। আমায় বসিয়েই স্যার তার গল্প শুরু করলেন যেখানে আমি কেবলই শ্রোতা।
আপনে মনে হয় আমারে এইখানে দেইখা একটু অবাক হইছেন। হাজার হোক পাগলাগারদ বইলা কথা। গুরুরে পাগলা গারদে দেখলে আত্নপরিচয় নিয়া সন্দেহ উইঠা যায়। তয় আমার কথা কিন্তু ভিন্ন। পাগল কারে কয় জানেন? যারা দুনিয়ার উল্টা দিকটা দেখবার পারে দুনিয়া নিয়া আরেকটু বেশি দেখবার চায় জানবার চায় পরীক্ষা করবার চায় তাগোরে। প্রকৃতি নিজের রহস্য জানবার দিবার চায় না। কেউ খুঁইজা পাইলে তারে পাগলের নাম দিয়া গুম কইরা ফালায়। আপনে কিন্তু আবার আমারে পাগল ভাইবেন না কারণ পাগলের কথা কেউ মন দিয়া শুনে না! গুরু হিসাবে আমার অধিকার আছে নিজের গল্প আপনারে শুনানের। শুনেন তাইলে আমার এইখানে আসার কাহিনি-
প্যাটারসন ব্রাদার্সের নাম তো শুনছেন। নীল প্যাটারসন আর গ্রেগ প্যাটারসন। তোহ উনিশ শতকের শেষ দিকে উনাদের একটা থিউরি বেশ আলোচনার খোরাক যোগায়। উনারা বলছিলেন মানুষের শরীরেই আছে অমরত্বের মহৌষধ। এরপর অনেকদিন গেলে বিশ শতকে আইসা ডানকান হার্ভে নামে এক লোক খুব গোপন একটা বই লেখে যার কপিই ছিল আট জোড়া। বইটার নাম ছিল “দি এন্ড অফ ডেথ”! তোহ তার একটা কপি এই অধমের হাতে আসে, হেহে! সেইখানে উনি দেখান গর্ভবতী মায়েদের দেহে একটা সময় ৬৫টা বিশেষ ক্যামিক্যাল উৎপন্ন হয়। এইগুলা কিন্তু আমরা প্রকৃতিতে পাই না। আবার একটা সময় হারাইয়াও যায়। মজার কাহিনি হইলো এগুলার মাঝের ৪৩টা ক্যামিক্যালের কোনো সোর্সও জানা যায় নাই। পুরাটাই গায়েবি ব্যাপার। উনার ভাষ্যমতে এগুলার সঠিক কম্বিনেশন দিয়েই সম্ভব অমরত্বের মহৌষধ তৈরি করা কারণ মায়ের পেটে জীবন তৈরিতে এদের ভূমিকা আছে। তো আমি ভাবলাম ব্যাপারটা একটু টেস্ট কইরা দেখি আর কি। তো এই গারদে তো আমার হরদম যাতায়াত। গভঃ রে বইলা বিল পাশ করাই গবেষণার জন্য প্রেগনেন্ট পাগলি লাগবো বুঝলেন। চলতেছিলো ভালই সবকিছু কিন্তু স্যাম্পল কালেক্ট কইরা পুশ করতেই কয়েকটা পাগলি মারা যায়। সরকারও অফ কইরা দিলো সব। পরে আর উপায় না পাইয়া আপনার ম্যাডামরেই গিনিপিগ বানাইলাম আর কি হেহে! আমার ইচ্ছা ছিলো এই ক্যামিক্যাল এর পরিমাণ বাড়ানো যায় কী না। কিন্তু তার জন্য একটু অত্যাচার করতে হইতো আরকি। ধরেন অন্ধকার করে বন্ধ কইরা রাখা টাইপ বলতে পারেন। জানেন এই প্রথম আমি মনে হয় সফল হইতে নিছিলাম! বডি ভালো রেস্পন্স করতেছিলো দেইখা আমিও একটু আলসে দিছিলাম। ছয়মাস অন্ধকারে রাইখা আলোতে আনলে কী পরিবর্তন হয় বুঝতে চাইছিলাম। আপনে বোধহয় আমারে অমানুষ ভাবতেছেন। কিন্তু আমি কাজ করছি বৃহত্তর স্বার্থে এইটা খালি চোখে বুঝবেন না। যাইহোক আপনার ম্যাডাম প্রথম সুযোগ কাজে লাগায় ছাদ থেকে লাফ দিলো। বাকিটা তো পুলিশের কাজ পুলিশ করলো। কিন্তু তাও এতোটা সমস্যা হইতো না যদি না আইসা দেখতো মিনু মিতু দুইজন মারা গেছে। আরে না আমি মারি নাই। ওদের মায়ের জন্য কান্না করলে ভয় দেখাইলে চুপ কইরা যাইতো তাই আগের দিন হলোগ্রাফিক ফিল্ম দিয়া ওদের মায়ের ভূত বানাইয়া ওদের সামনে দাঁড়া করায় দিছিলাম। তাও রাত ২টায়। যতটা ভয় পাবে পাবছিলাম ততটাও পায় নাই। খালি মিনু দুর্বল কইরা একবার মা ডাকছিলো। কিন্তু মারা যে গেছে অইটা আমি তখনো জানি না। হেহেহে……এরপর কী হইছে জানেন…….
আর নিতে পারছিলাম না উঠে বাইরে বের হয়ে এলাম আর পেছনে কানে বাজতে লাগলো স্যারের সেই বিকট উচ্চ হাসির আওয়াজ।
“ডাইরিতে আর কিছু নেই, কোনো সুইসাইড নোটও নেই। কেসটা লেখে রাখো, আরো অনেক কিছু ভাবতে হবে।”, কন্সটেবলের দিকে না তাকিয়েই ডাইরি বন্ধ করতে করতে এসআই তাপস বললেন। লাশটার দিকে আরেক নজর দেখেই বললেন, “আবীর সাহেবের লাশটা নামায় ফেলো, আমি অফিসে গেলাম কাজ শেষে রিপোর্ট দিও।“
সমাপ্ত
- মীর তোজাম্মেল হোসেন (শিশির)https://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%bf/বৃহস্পতিবার, মার্চ 11, 2021
- মীর তোজাম্মেল হোসেন (শিশির)https://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%bf/বৃহস্পতিবার, অক্টোবর 14, 2021
- মীর তোজাম্মেল হোসেন (শিশির)https://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%bf/বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি 10, 2022
- মীর তোজাম্মেল হোসেন (শিশির)https://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%a4%e0%a7%8b%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%b2-%e0%a6%b9%e0%a7%8b%e0%a6%b8%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a6%bf/বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি 12, 2023