fbpx

আমার প্যাপাইরাসনামা

দিনের বেশ ব্যস্ত এক সময়ে হঠাৎই মোবাইলে ক্রিং শব্দ। শব্দের কারণ খুঁজতে তাকালাম মোবাইলের স্ক্রিনে, একটা মেইল, প্যাপাইরাস থেকে। অবাকই হলাম একটু, গত এক বছরে মেইল হিসেবে শুধুমাত্র ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের লেকচার এবং ক্লাস লিংকই পেয়ে এসেছি, তাই মেইলবক্সে প্যাপাইরাসের নাম বেশ অবাকই করলো আমাকে। কৌতুহল মেটাতে এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। “হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমাদের অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা প্যাপাইরাস দুই বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে আগামী আঠারো এপ্রিল”- এতটুকু পড়েই যেন হাজার রকমের স্মৃতির মাঝে ডুবে গেলাম। আজ লিখতে বসে ভাবলাম, হালকা স্মৃতিচারণই করে ফেলি নাহয়!

প্রথম বর্ষেই জানতে পেরেছিলাম, পরিসংখ্যানের মতো এরকম কাঠখোট্টা একটা ডিপার্টমেন্ট থেকে নাকি পত্রিকা বের হতো একটা সময়ে, তাও কিনা আবার সাহিত্য পত্রিকা! তো এই পত্রিকার অন্তত একটা সংখ্যা কোথায় কার কাছে পাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল বন্ধুদের সাথে। পরে অবশ্য প্রথম বর্ষে বেশ গুরুত্বের সাথে পড়াশুনা করতে গিয়ে প্যাপাইরাস পড়ার ইচ্ছা বেশ একটু চাপাই পড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বর্ষে বন্ধুরা সবাই মিলে প্রকাশ করলাম আমাদের দেয়ালিকা ‘নবারুণ’, পরোক্ষভাবে যেটার পেছনে উৎসাহ হিসেবে কাজ করেছিল সেই প্যাপাইরাসই।

অতঃপর তৃতীয় বর্ষে জোর গুঞ্জন, আবারো প্রকাশ হতে যাচ্ছে প্যাপাইরাস। তবে, এখন থেকে আর কাগজে নয়, অনলাইন ভার্সন হিসেবে প্রকাশিত হবে প্রতি মাসে। সব গুঞ্জন সত্যি করে অনলাইন ভার্সন উদ্বোধনের দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেল, একটা করে দিন শেষ হয়, সেইসাথে আমাদের উত্তেজনা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে, কবে আসবে আঠারো এপ্রিল!

উদ্বোধনের মোটামুটি এক সপ্তাহ আগে, উত্তেজনার পারদ যেন আকাশে ওঠালেন সাকিব ইবনে সালাম ভাইয়া, হঠাৎই ডেকে বললেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে আমাকে বক্তব্য দিতে হবে। ছোটখাটো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো মাথায়, কারণ জীবনে কোনোদিনই বক্তব্য দেইনি। বক্তব্যের ফর্মাল কথাবার্তাও ঠিকভাবে বলতে জানিনা। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনোমতে একটা বক্তব্য তৈরি করলাম, সাকিব ইবনে সালাম ভাইয়া যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন এ বিষয়ে। ভাইয়ার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা!

অবশেষে এলো ১৮ এপ্রিল, ২০১৯। সকালে কয়েকটা ক্লাস, এরপর অনুষ্ঠান। কিন্তু এমন এক সকালে ক্লাস করতে গিয়ে উত্তেজনার সাথে মনোযোগের বেশ একটা লড়াই হয়ে গিয়েছিল বলা চলে। কোনোরকমে ক্লাসের পর্ব শেষ করে দৌড়, ৪০১ নম্বর রুমে। যথাসময়ে শুরু হয়ে গেল অনুষ্ঠান। শুরুর দিকেই ছিল আমার বক্তব্য। মঞ্চভীতি আমার সামান্য কম থাকলেও, সামনে দাঁড়িয়ে সব শিক্ষকদের সামনে দেখতে পেয়ে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম বৈকি, তবুও মোটামুটি ভালোভাবেই বক্তব্য শেষ করতে পেরেছিলাম, অন্তত বন্ধুরা তেমনটাই বলেছিল! অতঃপর বেশ সুন্দরভাবেই প্যাপাইরাসের অনলাইন ভার্সনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে পর্দা নামলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের।

এমন সুন্দরভাবে যেই প্যাপাইরাসের যাত্রা শুরু, অসম্ভব ইচ্ছা ছিল এই যাত্রার পথিক হওয়ার। লেখালেখির হাত যতটা বেহাল, তাতে করে লেখা জমা দিয়ে প্যাপাইরাসের সাথে যুক্ত থাকার প্রসঙ্গ তো প্রথমেই বাতিল, বরং প্যাপাইরাসের পেছনের কাজগুলোর সাথে যুক্ত থাকার ইচ্ছাটাই ছিল বেশি করে, এমনকি ছিলামও প্রথম কিছুদিন, কিন্তু এরপর পড়াশুনা এবং পেশাগত কারণে আর সময় দিয়ে উঠতে পারিনি। সেই আফসোস এখন অবশ্য নেই বললেই চলে, কেননা যারাই প্যাপাইরাসের সাথে যুক্ত ছিলেন, তারা কতটা নিষ্ঠার সাথে প্যাপাইরাসকে আজ এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তা স্পষ্ট। আজ আমরা দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করছি, সংখ্যাটা একদিন এক অঙ্ক থেকে দুই অঙ্কে পৌঁছে যাবে, এই প্রত্যাশাই রাখছি। প্রিয় প্যাপাইরাসের অনাগত ক্ষণ হোক আরও সুন্দর, উচ্ছল হোক দিনগুলো, এই আমার প্রার্থনা।

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়