fbpx

তিস্তার বুকে শুকিয়ে যাওয়া স্বপ্নঃ পর্ব-২

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিস্তা পাড়ের বিক্ষুব্ধ জনতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে এসে স্লোগান দিচ্ছে। তাদের উত্তাল স্লোগানের তীব্রতায় সবার মাঝে একটা আতংকজনক অবস্থা বিরাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কর্মকর্তা উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে নিয়ে মিটিংয়ে বসেছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে জনগণকে বোঝাতে। উত্তাল জনতা সান্ত্বনার বাণী শোনে আরো ক্ষেপে যায়। একজন বলে উঠে- হুগনা কতায় চিড়া ভিজব না, তিস্তায় পানি কবে আইব হেইডা কন? এর উত্তর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারও  জানা নেই। তারা নির্বাক কিন্তু তাদের নির্বাকে অবাক হয়ে জনতার বসে থাকার সময় নেই। উত্তাল জনতা জোর করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভিতরে ঢুকতে চায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের গাড়ি দেখা যায়। তারপর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারসেল বিনিময় ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে। তিস্তা পাড়ের গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিরাজ করছে অজানা আতংক। সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ায় অজ্ঞাত কিছুসংখ্যক লোককে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। সে হিসেব বিচার করলে এ গ্রামের সবাই আসামী। পুরো গ্রাম প্রায় পুরুষ শুন্য। গ্রামের এ সহজ সরল মানুষগুলো থানা পুলিশকে জমের মত ভয় পায় তাই প্রায় সবাই গাঁ ঢাকা দিয়েছে। রাতের গভীরতা বেড়ে গেছে। আকাশে মেঘ আছে। পূর্ণিমার চাঁদটা আলো আঁধারির মাঝে কিছুক্ষণ পর পর উঁকি দিচ্ছে। কল্পনার চোখে ঘুম নেই। তার বাবা ভয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। একা বাড়িতে কল্পনার কিছুটা ভয় হচ্ছে। সে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। আকাশের মেঘের ভাজে তবু চাঁদ মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে কিন্তু তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্যাকাশের চাঁদ উদিত হবার কোন সম্ভাবনা কল্পনা দেখতে পায় না। ভাগ্যের ময়ূরকণ্ঠী নৌকা তিস্তার বালু চড়ে আটকে গেছে। কল্পনা এলাকার মাষ্টারের কাছে শুনেছে তিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ তিন হাজার পাঁচশত কিউসেক কিন্তু বর্তমানে মাত্র চারশ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্ত জটিল হিসাব কল্পনা বুঝে না তবে সে বুঝে তিস্তায় জল নাই। সারাদিন জাল ফেলে দশ টাকার মাছও পাওয়া যায় না অথচ এক সময় তিস্তার মাছ নিয়ে এ অঞ্চলে কাড়াকাড়ি অবস্থার সৃষ্টি হতো। এ সবই এখন স্মৃতি। কল্পনা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। হঠাৎ কারো চাপা কণ্ঠ শোনা যায়। কল্পনা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

“কল্পনা, ডরের কিছু নাই। আমি মাঝি, দরজাটা খোল।”

“এত রাইতে, কী ব্যাপার মাঝি?“

“আমি গ্রাম ছাইড়া পলাইতাছি. হুনলাম আমি নাকি এক নম্বর আসামী।”

“এইডা কী হুনাইলা মাঝি!”

“বিদায় বেলায় তোমারে দেখতে মন চাইল তাই আইলাম।”

“আমারে নেওন যায়না মাঝি?”

“আমার যে নেওনের জায়গা নাই, একটা ভাঙা ঘর আছে হেইহানে অ তো থাকনের সুযোগ নাই আইজ।

“আমগো ভবিষ্যতের কী অইব মাঝি?”

“আমগো ভবিষ্যৎ তিস্তার জলের লগে হুগায় গেছে কল্পনা, হুগায় গেছে।”

“মাঝি, যদি তিস্তায় আবার জল আহে?”

“মরা গাছে কহনো ফুল ফুডে না কল্পনা, ফুল ফুডেনা। আমি গেলাম. তুমি ভালো থাইকো?”

কল্পনা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, “আমি তোমার অপেক্ষায় থাকুম মাঝি, অপেক্ষায় থাকুম।” কল্পনার কণ্ঠ মাঝির কানে পৌঁছায় না। সে ততক্ষণে মেঘে ঢাকা চাঁদের আড়ালে হারিয়ে গেছে।

বাংলাদেশকে বলা হয় ভাটির দেশ। প্রায় কয়েকশ নদী জালের মত সারা দেশে ছড়িয়ে আছে। তাই আমরা নদী মাতৃক দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশে অভিন্ন আন্তঃ নদীর সংখ্যা ৫৭টি। এর মধ্যে ৫৬টি নদী সরাসরি ভারতের সাথে সর্ম্পকিত আরেকটি নদী হচ্ছে নাফ যেটি মায়ানমারের সাথে সর্ম্পকিত। ভারত চাচ্ছে তাদের দেশের সাথে সর্ম্পকিত সবগুলো নদীতে বাঁধ দিতে যা আর্ন্তজাতিক নদী আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ উদ্দেশ্যে তারা আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যা তারা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিশাল অঞ্চল স্থায়ী মরুভূমিতে পরিণত হবে এবং প্রায় তিনকোটি লোক জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে যাবে। যা এদেশের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসধ্বংস করে দিবে।। জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার সুন্দরবন বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং উপকূলের বিশাল অঞ্চল লবণণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাবে ফলে ১কোটি লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রকোপ যেকোন সময়ের তুলনায় বেড়ে যাবে। মানুষের সামগ্রিক জীবন যাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সব মিলিয়ে পুরো বাংলাদেশ এক গভীর সংকটে পতিত হবে যা এক ধরনের মানবিক সংকটের সৃষ্টি করবে।

কল্পনা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। তার বাবা রহিম সর্দার খুব অসুস্থ। তিস্তায় পানি নেই তাই এ বছর ধান হয়নি। বাধ্য হয়ে রহিম সর্দার ইটের খোলায় কাজ করতে গিয়েছিল। রহিম সর্দার মূলত একজন কৃষক। কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কাজ সে জানে না তাই ইট খোলার কাজ তার কাছে কঠিনই মনে হয়েছে। কয়েকদিনের অমানুষিক পরিশ্রমে শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে সে। কল্পনাকে আস্তে ডাকে সে।

“মা আমার বোধহয় যাওনের সময় অইয়্যা গেছে, কয়দিন ধইরা তোর মায়রে স্বপ্নে দেহি, হেয় একটা পালকি নিয়া আহে। আমারে পালকিতে উঠতে কয়।”

“বাজান, তুমি এইসব কী কও, তোমারে ছাড়া আমি ক্যামনে থাকুম।”

রহিম সর্দার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।

“আমারে মাফ কইরা দিস মা আমারে মাফ কইরা দিস।”

“বাজান, তুমি ভালো অইয়া যাইবা।”

“নারে মা, আমার যে ডাক আইছে। ঐ যে দেখ আসমান তন মেহমানরা আমারে নিতে আইছে, দেখ মা।”

কল্পনা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।

“কান্দিস না মা, কান্দিস না। তরে আল্লায় দেখব।”

কল্পনা তার বাবার মাথার উপর মূখ গুঁজে কাঁদছে কিন্তু কোন সারা শব্দ পাচ্ছে না। একটা সময় লক্ষ্য করে তার বাবার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। কল্পনা প্রচণ্ড চিৎকারে আছড়ে পরে।

“বাজান গো ও বাজান তুমি কতা কও না কেন? বা…জা…ন…।” তার চিৎকার তিস্তার দুই পাড়ের গরম বালুতে গিয়ে থেমে যায়।

সমাজে বয়ে যাওয়া ঘটনা প্রবাহেরও একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে এটা যেমন বৈজ্ঞানিক সূত্র দ্বারা প্রমাণিত তেমনি সামাজিক বৈষম্য দ্বারা সৃষ্ট সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াগুলোও বৈজ্ঞানিক সূত্র দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। একটি ন্যায়ভিত্তিক বা ইনসাফ পূর্ণ সমাজে কোন অপরাধ দানা বাঁধতে পারে না। কিন্তু যখন সমাজের একটি স্তরের ভারসাম্য বিনষ্ট হয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দেয়ালে পিষে মারার ব্যবস্থা করা হয় তখন বাঁচার তাগিদেই তাদের ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতে হয়। এটা যেমন শ্রীলংকার তামিল টাইগারদের বেলায় সত্য তেমনি সত্য সোমালিয়ার জল দস্যুদের বেলায়ও। সোলেমান এখন একটা বড় ডাকাত দলের সর্দার। তার নাম সোলেমান ডাকু। কালাম ও তার সহযোগী। তিস্তার শুষ্ক বুক তাদের ডাকাতির পেশায় নামতে বাধ্য করেছে। যে হাত ব্যস্ত থাকত তিস্তার জলের মাছ ধরতে, যে হাতে ছিল বৈঠা সে হাত আজ নিষিদ্ধ অস্ত্রে সজ্জিত। যে মন ছিল সহজ সরল সে মনে আজ নিষ্ঠুরতা খেলা করে যেখানে দয়া মায়ার কোন স্থান নেই। সোলেমানের মাঝে মাঝে কল্পনার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে তিস্তার জল। জ্যোৎস্নাভেজা রাত। একটি ডিঙি নৌকা। নৌকার মাঝে কল্পনা বসে আছে। জ্যোৎস্নার খানিকটা আলো তিস্তার ডাবের মত ¯স্বচ্ছ জলে প্রতিবিম্ব হয়ে কল্পনার মুখে খেলা করছে। দূরে কোথাও ভাটিয়ালী সুর শোনা যাচ্ছে।

কল্পনা হেসে বলে, “মাঝি ঐ আসমানের চান্দের আলো আর এই গান যদি কোনদিন শেষ না অইত।”
সোলেমান হেসে বলে, “আর এই ডিঙি নৌকা যদি এমনি কইরা সারাজীবন ভাইসা থাকত।”

“তুমি চাইলেই ভাসব মাঝি।”

“আমি তো চাই কিন্তু পাইতো না।”

“পাইবা মাঝি, চাওয়ার মত চাও।”

“কী যে কও, কল্পনা। চাইতে কি আর কম চাই।” হঠাৎ কালামের ডাকে সোলেমানের ভাবনায় ছেদ পড়ে।

“সোলেমান শিগগির উঠ, পুলিশ আইছে।”

“কছ কী?”

“হ হ তাড়াতাডি কর। দেরি করনের সময় নাই।” সোলেমান তার দলবলসহ দৌড় দেয়। ওদিকে পুলিশের বাঁশির তীব্র আওয়াজ শোনা যায়।

কল্পনার চোখের সমস্ত কল্পনা আজ হারিয়ে গেছে। তার মনের অন্ধ গলিতে যে আল্পনা নিভৃতে সুর তুলত সে সুর আজ পানসে হয়ে গেছে। পূর্ণিমার চাঁদ আজ ঝলসানো রুটি হয়ে বার বার তার কাছে ফিরে আসে। কল্পনা আজ মাদবরের বউ! মাদবর কল্পনার বাবার বয়সী সেটা কোন ব্যাপার না বড় ব্যাপার কিছুটা নিরাপত্তা, দু বেলা দু মুঠো ভাতের নিশ্চয়তা। তিস্তার শুকনা বুকের দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস নিলে তো আর কল্পনার পেটে খাবার জুটবে না। খুব সঙ্গত কারণেই তাকে বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়েছে। যারা প্রেমের বড় বড় সংজ্ঞা দেন তাদের সব সংজ্ঞাই একটি অসহায় নারীর অবস্থানের কাছে এসে থেমে যায়। যখন কল্পনার বাবা মারা গেল তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়াতে কেউ আসেনি, কেউ বলেনি আমরা আছি তোর চিন্তার কিছু নাই। এই বিশ্বসংসারের নিদারুণ ঘূর্ণিপাকে পোড় খাওয়া একটি নারীর কাছে তখন ভাটিয়ালী গানের সুর কিংবা কবিতার ছন্দ ভালো লাগে না সে তখন হাতের কাছের মরা খড়কুটাকে সবচেয়ে বড় গান মনে করে, সবচেয়ে বড় কবিতা মনে করে। মাদবর সাহেবের আরো তিনটি বিবি আছে তাদের সাথে কল্পনার মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও সব জল্পনাকে ছুঁড়ে ফেলে তাকে হাসি মূখে সব মেনে নিতে হয়। কল্পনার মাঝে মাঝে সোলেমানের কথা মনে পড়ে কিন্তু ভাবনাটাকে বেশি দূর আগাতে দেয় না সে। মাঝে মাঝে তিস্তার পানে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় সে। তিস্তা বুকে ধূ ধূ বালুর চর। যত দূর চোখ যায় খা খা শব্দের হাহাকার। কল্পনা কাঁদে। কল্পনায় ভেসে উঠে তিস্তার ভরা যৌবন, উচ্ছল গতিময় পানির স্রোত। বড় বড় ডিঙি নৌকাগুলি পাল তোলে স্রোতের টানে এগিয়ে যায়। মাঝিদের দারুণ ব্যস্ততা দুই পাড়ে সবুজ ধানের সারি। কিন্তু পাশের গরুটির হাম্বা রবে কল্পনা বাস্তবে ফিরে আসে। হেসে বলে, “তিস্তারে, আমার চোখে তো কানলে পানি হয় কিন্তু চোখে তো কান্দনের পানিও নাই, কান্দনের পানিও নাই।

মাদবরের বাড়ি ডাকাত পড়েছে। প্রায় পনেরো বিশ জনের একটি গ্রুপ রাতের আঁধারে মাদবরের বাড়ি আক্রমণ করেছে। সবার মূখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। মাদবরকে বাড়ির উঠানে বাঁধা হয়েছে। ভয়ে তার মূখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। শালারে গুলি কইরা মাইরা ফালা, শালার পেটেরতন সব সুদের টাহা বাইর কর।

“আমারে মা..ই..রে..ন না, আপনেরা যা চান হেইয়াই দিম।”

“ব্যাটা কতা কম ক, ভন্ডামী অনেক করছস, আইজ তোর নিস্তার নাই।” একজন বন্দুকের নলা দিয়ে তার ভুড়িতে খোঁচা মারে। ব্যথায় গুঙিয়ে উঠে মাদবর। দলনেতা সবাইকে বাইরে দাঁড়াতে বলে ভিতরে এগিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ঘরের মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লুট করা। সে সদর দরজা দিয়ে সোজা ভিতরে ঢুকে পরে। হাতে টর্চ লাইট। লাইটের তীব্র আলোয় পুরো ঘরটা আলোকিত হয়ে গেছে। কিছু নারী ও শিশু একপাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। দলনেতা সময় নষ্ট করে না, সে দ্রুত সিন্ধুক খোলে টাকা পয়সা লুট করতে থাকে। একজন এগিয়ে এসে বলে- “ওস্তাদ মাদবর হালায়তো বেশি জালাজালি করতাছে, দিমু নাকি ঠুস কইরা?”

“বেশি জালাজালি করলে তো ঠুসই করন দরকার নাকি কছ?” এমন সময় কেউ একজন দৌড়ে এসে দলনেতার পা দুটো জাপটে ধরে।

“আমার স্বামীরে মাফ কইরা দেন, আমার স্বামীরে মাফ কইরা দেন।” দলনেতা চমকে উঠে।

“কল্পনা তুমি এইখানে!” কল্পনাও চমকে উঠে।

“মাঝি তুমি! তুমি তাইলে ডাকাইতের সর্দার?”

“হ কল্পনা, আমি অহন মাঝি না। আমি সোলেমান ডাকু। কিন্তু এইডা কী কইলা?”

“ঠিকই হুনছেন, আমি অহন মাদবরের বউ।” সোলেমানের বুকের ভিতরটা যেন মোচড় দিয়ে উঠে, বেদনায় চোখে কোণে জমে উঠছে বিন্দুবিন্দু জল।

“মাঝির বৈঠা রাইখা ডাকাতির পেশায় নামছ লজ্জা করে না তোমার?”

“লজ্জা শরম সব তিস্তার পানির লগে হুগায় গেছে, কল্পনা। তুমি আইজ মাদবরের বউ তোমার তো একটা ঠিকানা আছে কিন্তু আমার কোন ঠিকানা নাই, আমি ছন্নছাড়া, এতিম।”

“চুরি ডাকাতি বাদ দিয়া একটা ঠিকানা কইরা লও মাঝি।”

“তোমার লগে দেহা অওনের আগ পর্যন্ত ইচ্ছাডা ছিল, ইচ্ছা ছিল একটা নতুন ঘর বান্ধনের, মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেহি তিস্তায় জল আইছে, একটা বড় ডিঙি নৌকায় কইরা আমি আর তুমি হেই নায় ঘুরতাছি।”

“মিথ্যা স্বপ্ন দেইখ না মাঝি, তোমার স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন এখন এক না, তোমার পথ আর আমার পথ এখন আলাদা, আমার স্বপ্নের বুকে অহন তিস্তার বালি চর।”

“কল্পনা, আবার নতুন কইরা সব শুরু করন যায় না?”

“তা আর অয় না মাঝি তা আর অয় না।”

“ওস্তাদ পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরিয়া ফালাইছে, পালানের সুযোগ নাই, ধরা মনে দিতেই অইব।”

“কল্পনা যাই তাইলে, ধরা পড়লে কপালে কী আছে জানি না তয় তুমি ভালো আছ এইডাই আমার সান্ত্বনা।”


সোলেমানকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। মাদবর বল- “কুত্তার বাচ্চার উচিত বিচার অইছে।”

কিন্তু কল্পনার স্বপ্নে জমেছে আরো কিছু বালুচর। সে বালুচর ভেদ করে আবার পানি আসবে কিনা তা কল্পনার জানা নেই।

সমাপ্ত

প্রতিষ্ঠাতা সদস্য | বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস)

জন্ম ০৩ জুলাই, ১৯৮৬ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরআত্রা গ্রামে নানার বাড়িতে। বাবা- মো: আবদুল লতিফ, মা- সাহিদা বেগম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চরজুজিরা ও সাহেবেরচর গ্রামে। লেখকের পৈত্রিক বাড়ি তিন বার পদ্মার প্রবল নদি ভাঙ্গনের শিকার  হয়েছে। বর্তমানে লেখকের বাড়ি নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের বাংলাবাজারে। তিনি ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজী সাহিত্যে পৃথকভাবে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক সংগঠন “আবৃত্তি একাডেমির” সদস্য ও বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দেশবরেণ্য গবেষক ও ছিটমহল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জনাব এ এস এম ইউনুছের “পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন ও সংগ্রাম” বইতে লেখককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের প্রকাশিত বইসমূহ:

বনফুল(ছোট গল্প)

কান্নার সমুদ্রে এক চিলতে হাসি(কাব্য গ্রন্থ)

রক্ত নদে লাল গোলাপ(ছোট গল্প)

নিস্তব্ধ  শ্রাবণ(কাব্য গ্রন্থ)

চাঁদের দেশে তপু(উপন্যাস)

বরফকুমারী(ছোট গল্প)

বিড়ালের ভবিষ্যৎ ( ছোট গল্প)

সুলতান মাহমুদ

জন্ম ০৩ জুলাই, ১৯৮৬ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরআত্রা গ্রামে নানার বাড়িতে। বাবা- মো: আবদুল লতিফ, মা- সাহিদা বেগম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চরজুজিরা ও সাহেবেরচর গ্রামে। লেখকের পৈত্রিক বাড়ি তিন বার পদ্মার প্রবল নদি ভাঙ্গনের শিকার  হয়েছে। বর্তমানে লেখকের বাড়ি নড়িয়া পৌরসভার পশ্চিম লোনসিং গ্রামের বাংলাবাজারে। তিনি ব্যবস্থাপনা ও ইংরেজী সাহিত্যে পৃথকভাবে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক সংগঠন “আবৃত্তি একাডেমির” সদস্য ও বাংলাদেশ কবিসভা(বাকস) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দেশবরেণ্য গবেষক ও ছিটমহল আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জনাব এ এস এম ইউনুছের “পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন ও সংগ্রাম” বইতে লেখককে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের প্রকাশিত বইসমূহ:

বনফুল(ছোট গল্প)

কান্নার সমুদ্রে এক চিলতে হাসি(কাব্য গ্রন্থ)

রক্ত নদে লাল গোলাপ(ছোট গল্প)

নিস্তব্ধ  শ্রাবণ(কাব্য গ্রন্থ)

চাঁদের দেশে তপু(উপন্যাস)

বরফকুমারী(ছোট গল্প)

বিড়ালের ভবিষ্যৎ ( ছোট গল্প)