fbpx

ভূত সমাচার

শীতের সকাল। ডিসেম্বরের পরীক্ষা শেষ। শীতটা একদম জাকিয়ে পড়েছে। ঠিক এমনি শীতের সকালে লেপ মুড়ি দিয়ে ভাপা পিঠা আর খেজুরের রসে চুমুক দিতে দিতে ভূতের বই পড়ার আনন্দটাই আলাদা। ছোটবেলায় এ ছিলো প্রতি শীতের নিয়মিত দৃশ্য। জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা হিমেল বাতাশ আর ঠাকুরমার ঝুলি কিংবা তারানাথ তান্ত্রিকের গল্পগুলো শরীরের লোম খাড়া করে দিতো। আহা সে কী রোমাঞ্চ! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ভূতগুলো কিন্তু বিভিন্ন রকম। পশ্চিমের ভূতগুলো অনেক বেশি ভয়ংকর হলেও আমাদের উপমহাদেশের ভূতগুলো কিন্তু অতোটাও ভয়ংকর না। বরং এরা আমাদের পাড়ার দুষ্টু প্রতিবেশির মতো যারা কিঞ্চিত ঝঞ্জাট করেই ক্ষান্ত। চলুন আজকে পরিচিত হই আমাদের আশেপাশের কিছু ভূতের সাথে—

পিশাচ: এরা সবথেকে ভয়ংকর। সব দেশের রূপকথা ও উপকথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা জীবিত না মৃত তা নিয়ে যথেষ্ট তর্ক আছে।এদের প্রিয় খাদ্য রক্ত। এরা যার রক্ত খায় সেও পিশাচ হয়ে যায়।কবরস্থান এদের বসবাসের জন্য প্রিয় হলেও ঘরেও থাকতে পারে।

ডাইনী: ডাইনী হলো বৃদ্ধা নারী ভূত। অনেকের মতে বৃদ্ধাদের যত্নের অভাবে বা অপঘাতে মৃত্যু হলে তারা ডাইনীতে পরিণত হয়। আবার অনেকেরই মতে, তন্ত্র সাধনা করে ডাইনী হতে হয়।

পেত্নী:‌ এরা আসলে নারী ভূত। বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিত অবস্থাতেই ইহলোক ত্যাগ করেছে। ভারি বদমেজাজি। পা থাকে পিছনে ঘোরানো। যখন যেমন ইচ্ছে আকার নিতে পারে। চলন্ত পথিককে ভয় দেখানো তার খুব প্রিয়। এই পেত্নীও আছে কয়েকরকম।

ঝেঁয়ো পেত্নী: সাধারণত ঝাউগাছে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যাবেলায় পথিক যদি একা একা সেই ঝাউবন বা জঙ্গল পেরোতে যায়, তখন তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে চড়িয়ে দেয়।

মোহিনী: এরাও পেত্নী তবে প্রেমে ব্যর্থ পেত্নী। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্নহত্যা করে এরা। তাই, পুরুষদের উপর খুব ক্ষোভ। রূপসী নারীর রূপ নিয়ে পুরুষদের গোপন স্থানে নিয়ে হত্যা করে।

শাকচুন্নি: সধবা নারী মরে হয় এই প্রকার ভূত। সাদা শাড়ি। হাতে শাঁখা। কপালে সিদূর। থাকে আমগাছে। আর ভর করে বিবাহিত মহিলাদের ওপর। যাতে আবার বিবাহিত জীবন যাপন করতে পারে।

চোরাচুন্নি: চোর মরলে হয় চোরাচুন্নি। পূর্ণিমার রাতে গৃহস্থ বাড়ি হানা দেয়। বাড়ির ছাদে নানা উপদ্রব করে। গাছের ফল নষ্ট করে। জিনিসপত্র এলোমেলো করে ফেলে রাখে।

পেঁচাপেঁচি: সচরাচর দেখা যায় না। থাকে জঙ্গলে। দুর্ভাগা পথিকের পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে মেরে তাঁর মাংস খায়। ভারি বিপজ্জনক।

মেছোভূত: বাংলা গল্পে এদের উপস্থিতি সবচাইতে বেশি। এরা কিন্তু তেমন ভয়ংকর না। খুনোখুনিতে এরা নাই। ভারি মাছ খেতে ভালোবাসে। এটুকুই যা দোষ। থাকে গ্রামের পুকুরের ধারে বা গাছের উপরে। মাছ কিনে ফেরার সময় অনেকে এদের খপ্পরে পড়ে। এরা ফুঁসলিয়ে সেই লোককে বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। তার পর ভয় দেখিয়ে মাছ ছিনিয়ে খায়। তবে ডাকামাত্র দিয়ে দিলে কিচ্ছুটি বলে না। রান্নাঘর, জেলেদের নৌকা থেকেও চুরি করে মাছ।

নিশি:‌ প্রিয়জনের গলা নকল করে ঘর থেকে ডেকে আনে। এই নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে যে ঘর ছাড়ে, সে আর ঘরে ফিরতে পারে না। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, নিশিরা কোনও মানুষকে দু’‌বারের বেশি ডাকতে পারে না। তাই,  রাতবিরেতে কেউ তিনবার ডাকলে তবেই বের হবেন।

কানাভুলো: এ শ্রেণির ভূতেরা এক বা দলছুট পথিককে গন্তব্য ভুলিয়ে দেয়। ঘোরে আচ্ছন্ন করে রাখে। অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। এর কবলে পড়ে মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত পথিককে আক্রমণ করে।

স্কন্ধকাটা:‌ নামেই বোঝা যাচ্ছে এদের মাথা নেই। রেলে কাটা পড়লে বা কেউ মাথা কাটলে হয় স্কন্ধকাটা।সারাক্ষণ তারা নিজেদের মাথা খুঁজে বেড়ায়। সাধারণ মানুষদেরকেও নিজের মাথার খোঁজ জিজ্ঞেস করে কিন্তু বলতে না পারলে রেগে যায়। এরা তাদের মৃত্যুস্থানের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করে।

বেঘোভূত: যাঁরা বাঘের আক্রমণে মারা যান, তাঁরাই নাকি হন বেঘোভূত। সুন্দরবন এলাকায় এ ধরনের ভূত নাকি দেখা যায়। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে ডেকে ওঠে।

দেও:‌ এরা থাকে পুকুরের ধারে। লোকজনকে জলে ডুবিয়ে মারা এদের নেশা। কাদায় মাথা ঢুকিয়ে শরীর উপরের দিকে নিয়ে পুতে রাখে।

মামদো ভূত: হিন্দুধর্মমতে,এটি মুসলমানের আত্মা। ভয় দেখানোই এদের কাজ।

গেছোভূত: গেছো ভূত গাছে বসবাস করে। রাতবিরেতে গাছের নিচ দিয়ে পথচারী গেলে, তাঁর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ে ভয় দেখায়।

ব্রহ্মদৈত্য:‌ ব্রাহ্মণ মরলে হয় এই ভূত। তাই ধুতি আর পৈতে পরে থাকে। সব ভূত অপকার করলেও এই ভূত মাঝে মাঝে উপকার করে থাকে।

এই ছিলো আমার জানা বিভিন্ন ভূতের গপ্পো। আজকে হয়তো আমরা সবাই অনেক বেশিই বড় হয়ে গেছি। ভূতের গল্পেও আগের সেই আমেজটা পাই না। আয়েস করে সকালে ভূতের বই পড়ার সময়টাই হয়তো অনেকের নেই। তারপরও যখন শীত আসে প্রতিবারই পুরোনো স্মৃতির পাতায় দোলা দেয় সেই অসাধারণ দিনগুলি। ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সুদূর অতীতে। তাই এ লেখায় আবার পুরোনো দিনগুলোকে মনে করানোর চেষ্টা করা হলো। সবাইকে শীতের শুভেচ্ছা।

(তথ্যগুলো গুগল হতে সংগৃহীত, পরিবর্তিত, পরিমার্জিত)

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়