জুলাই ১০, ২০২৫

মাসের নামকরণ-এর ইতিকথা

আমাদের ছেলেবেলায় বারো মাসের নাম মুখস্থ করা ছিল সবার শৈশবের স্মৃতি। কিন্তু আমাদের মধ্যে বলতে গেলে এমন কাউকে পাওয়া কষ্টকর হবে, যে ঐ নামকরণের পেছনের ইতিহাস জানে।
আসলেই তো একটা কৌতূহলী বিষয় কিভাবে এই সুন্দর সুন্দর নামগুলোর উৎপত্তি ঘটল!!

হ্যাঁ, এই কৌতূহলের সমাধান করার একটি প্রয়াস এই আর্টিকেল।

003. Month name and date

জানুয়ারি:
জানুয়ারী মাসের নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতা জানুসের নামে। জানুস হলো শুরু, দ্বার, রূপান্তর, সময়, দ্বৈততা, দরজা, প্যাসেজ, ফ্রেম এবং শেষের দেবতা। তার দুইটি মুখ ছিলো। যার একটি সামনে আর একটি পিছনে।

ফেব্রুয়ারি:
ফেব্রুয়ারির নামকরণ করা হয়েছে ফেব্রুয়া নামক শুদ্ধিকরণের একটি প্রাচীন রোমান উৎসবের নামানুসারে।

মার্চ:
রোমান যুদ্ধের দেবতা মার্সের নামানুসারে মার্চ মাসের নামকরণ করা হয়েছে। রোমান ক্যালেন্ডারটি মূলত মার্চ মাসে শুরু হয়েছিল এবং একটি ক্যালেন্ডার সংস্কারের পরে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসগুলি যোগ করা হয়েছিল।

এপ্রিল:
এপ্রিল এর নামটি ল্যাটিন শব্দ aperire থেকে নেওয়া হয়েছে, যার অর্থ ‘খোলা’ (যেমন- ফুল বসন্তে ফোটে) আবার অনেকের মতে এপ্রিল নামটি এসেছে রোমানদের আফ্রিদিতি দেবীর নামানুসারে।

মে:
গ্রীক দেবী মাইয়া থেকে মে এর নামকরণ করা হয়েছে। মাইয়া হল প্লিয়েডস এবং জিউসের হার্মিসের মা।

জুন:
জুনের নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবী জুনোর নামানুসারে। তিনি হলেন বিবাহ ও সন্তান জন্মদানের দেবতা এবং দেবতাদের রাজা জুপিটারের স্ত্রী।

জুলাই এবং আগস্ট:
জুলাই এবং আগস্টের নামকরণ করা হয়েছিলো প্রাচীন রোমান বিশ্বের দুটি প্রধান ব্যক্তিত্বের নামানুসারে – রাষ্ট্রনায়ক জুলিয়াস সিজার এবং রোমের প্রথম সম্রাট অগাস্টাস।

সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বর:
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের নামকরণ করা হয়েছে রোমান সংখ্যা 7, 8, 9 এবং 10 অনুযায়ী। এগুলি মূলত রোমান বছরের সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম মাস ছিলো!
রোমান শাসকদের নামে জুলাই এবং আগস্টের নাম পরিবর্তন করার আগে, তাদের বলা হতো কুইন্টিলিস এবং সেক্সটিলিস, যার অর্থ পঞ্চম এবং ষষ্ঠ মাস।

বাংলা মাসগুলোতে যে প্রধান প্রধান উৎসবগুলো আছে তা আমরা বাঙালি হিসেবে পালন করলেও বাংলা মাস,বছরের হিসেব আমরা রাখিনা। নাম কীভাবে এসেছে জানিনা। চলুন আজকে বাঙালি হিসেবে বাংলা মাসের নামের কাহিনী জেনে নেয়া যাক।

বাংলা ক্যালেন্ডারের ১২ মাসের নাম গুলো কিছু নির্দিষ্ট নক্ষত্রের সাথে চাঁদের অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে দেয়া। নামগুলি জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত একটি প্রাচীন ভারতীয় বই ‘সূর্য সিদ্ধান্ত’ থেকে নেওয়া হয়েছিলো।

মাসগুলোর নামকরণ এর ইতিকথাঃ

বৈশাখঃ
ʼবিশাখা নামের নক্ষত্র থেকে বৈশাখ মাসের নামকরণ করা হয়।
জৈষ্ঠঃ
ʼজেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম থেকে জৈষ্ঠ মাস এর নামকরণ করা হয়।
আষাঢ়ঃ
ʼউত্তরাষাঢ়া (উত্তরশহর) তারা থেকে আষাঢ় মাস।
শ্রাবণঃ
‘শ্রবণা তারার নাম থেকে শ্রাবণ।
ভাদ্রঃ
‘পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্র থেকে ভাদ্র।
আশ্বিনঃ
‘অশ্বিনী (Ôshshini) তারা থেকে আশ্বিন।
কার্তিকঃ
‘কৃত্তিকা তারা থেকে কার্তিক।
অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ):
‘মৃগশিরা নক্ষত্র থেকে অগ্রহায়ণ। (মার্গশীর্ষ) নাম দেয়া হয়।
পৌষঃ
‘পুষ্যা নক্ষত্র থেকে পৌষ
মাঘঃ
‘মঘা তারা থেকে মাঘ।
ফাল্গুনঃ
‘উত্তরফাল্গুনী নক্ষত্র থেকে ফাল্গুন।
আর
চৈত্রঃ
‘চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র।

প্রতিটি দিন কোনো না কোনো মাসে পড়ে, একটি দিন একটি সুন্দর মাসের পরিচয় বহন করে, বছর ঘুরে ঐ বারোটি মাসই আমরা পাই। কিন্তু ঐ চলে যাওয়া সময় আর ফিরে পাই না। জীবন সুন্দর এবং মূল্যবান তাই প্রতিটি মাস, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি কাজকে করে তুলতে হবে সর্বোচ্চ উপভোগ্য।

Profile Picture
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৯-২০

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ