না ফেরার দেশে চলে গেলেন গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আজীবন আপোষহীন ড. আকবর আলী খান। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২২) রাতে তাঁকে হৃদরোগে আক্রান্ত অবস্থায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বরেণ্য অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন হবিগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক। এ সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের সাথে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে আমলা হিসেবে পেশাজীবনের প্রধান ধারার পাশাপাশি করেছেন শিক্ষকতা। অবসর নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা দেখা দেওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনে দেশ ও দশের ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি দারিদ্রতা বিমোচনে বাস্তবায়িত বিভিন্ন কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালন করেন।
অবসরের পর তিনি পূর্ণকালীন লেখক হিসেবে মনোনিবেশ করেন। অর্থনীতি, ইতিহাস, সমাজ ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণাধর্মী বই লেখার পাশাপাশি তিনি পত্রপত্রিকায় নিয়মিত রাজনীতি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিয়ে অসংখ্য কলাম লিখেছেন। অর্থনীতি বিষয়ে তার দুইটি বই ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ এবং ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ পাঠকদের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের এবং তার সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বই লিখেছেন। ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ তার সর্বশেষ আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
কিংবদন্তী ড. আকবর আলী খান আমেরিকান ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। গবেষণা ও প্রকাশনার জন্য পেয়েছেন এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশের জাস্টিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্বর্ণপদক এবং ছিলেন আজীবন সদস্য। জনপ্রশাসনে অনস্বীকার্য ভূমিকার জন্য তিনি মওলানা আকরম খাঁ পদক এবং অর্থনৈতিক গবেষণার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদকে ভূষিত হন তিনি।
এই অসামান্য গুণী ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান সমগ্র দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর জীবনাদর্শ, বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা-চেতনা সুবিস্তৃত হোক প্রত্যেক প্রজন্মের মধ্য দিয়ে, ‘প্যাপাইরাস’-এর পক্ষ থেকে এই বাতিঘরের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।