fbpx

অবহেলিত গবেষক দম্পতিগন

আমাদের শঙখনীল কারাগারের প্রেম বিবর্জিত হতাশাগ্রস্ত কয়েদিরা প্রায়ই কার্জনে প্রেম বিরোধী অপারেশন clean-curzon নামে বিশেষ অভিযান চালিয়ে থাকে। আমি এই টিমের নিয়মিত সদস্য। অভিযানের কাজকর্ম আমার তেমন ভালো ঠেকে না। কার্জনে প্রেমের উর্বর কালচার হয় ব্যাপারটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হওয়া উচিত বলে মনে হয় আমার কাছে । এটা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ। এই প্রেম কালচারে নিযুক্ত গবেষক দম্পতির হাত ধরে হয়ত একদিন আমরা পারস্পরিক প্রেম বিনিময়ের মাধ্যেমে পৃথিবীতে ভালবাসা ও শান্তি বিস্তারের জন্য শান্তিতে নোবেল জয় করব। পরপর দুটো শান্তিতে নোবেলের জন্য বৈশ্বিক শান্তি সূচকে আমরা বহুদূর এগিয়ে যাব কিংবা আমাদের প্রেম কালচার বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিলে কোনো অথোরিটি প্রেমের উপর বিশেষ পুরষ্কার ‘দি ভ্যালেন্টাইন’ প্রচলন করতেও তাড়না পেতে পারে এবং আমাদের কার্জনবাসী প্রতিবছর এই পুরষ্কার জয় করে ভ্যালেন্টাইন বিজয়ী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম সবার উপরে রাখতে ভূমিকা রাখবে। এই পজিটিভ ব্যাপারগুলো আমাকে খুব আলোড়িত করে, ভাবায়, উৎফুল্ল করে। তাই তাদের উপর পরিচালিত অপারেশন clean-curzon এ আমি একটু আধটু নাখোশ। আমার ইউনিটের চিফ ইনভেস্টিগেটর, অ্যাটাকিং কমান্ডো, সিনিয়র আইডি চেকার, এডুকেশন এডভাইজার, ক্লিয়ারিং অফিসার, মুর‍্যাল পুলিশার ইত্যাদি কর্মকর্তাদের ভীড়ে আমি নিতান্তই পিছনের সারির একজন অকর্মণ্য সৈনিক। পেছনে থেকে আমি প্রেম গবেষকদের হালচাল বুঝার চেষ্টা করি। অপারেশন clean-curzon পরিচালনার জন্য তাদের গবেষণা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালানোতে যে ব্যাঘাত ঘটে তাদের বিড়বিড়ানিতে এ সংক্রান্ত বিরক্তির ভাব বুঝার চেষ্টা করি। গবেষণা চলাকালীন সময়ে কাদের সংসারে ঝামেলা চলতেছে, কে কিভাবে তার গবেষণা সহযোগীর মন জয় করতে চাচ্ছে, কিংবা গবেষণা সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে সুন্দর জীবন লিড করতে পার্টনারের অতীব প্রয়োজনিয়তা উল্লেখ করে প্রবন্ধ পাঠ ইত্যাদি খুব কাছ থেকে অবলোকন ও শ্রবণ করার সুযোগ হয়েছে আমার। আমাদের লাস্ট অপারেশনে শুনলাম একজন প্ৰণয়িনী তার প্রেমিকের উদ্দেশ্যে কিছুটা রাগ ও অভিমানের সুরে বলতেছে, ‘তুমি আমার দেহকে ভালোবাসো, মনকে ভালোবাসো না’। প্রত্যুত্তরে প্রণয়ী খুব কনফিডেন্সের সাথে বলল— আমি তোমার দেহ ও মন দুটোকেই ভালোবাসি। অথচ তুমি শুধু আমার মনকে ভালোবাসো, দেহকে ভালোবাসো না!

তাদের আলাপ শুনে আমি থমকে গেলাম। এই দম্পতির ‘দেহ ও মনের বন্টন বিষয়ক সম্পর্কের সংঘাত’ শীর্ষক গবেষণাটি পাব্লিশ হলেই আমরা নোবেল কিংবা ‘ভ্যালেন্টাইন’ জয় করে ফেলব ভেবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে হলে ফিরে আসলাম।

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়