fbpx

নাম তার  “তুলনা”

জীবনের ভাবনাগুলোকে ইচ্ছে ঘুড়ির সাথে বেঁধে দিয়ে, স্বপ্নগুলোর সাথে ডানা মেলে উড়তে চেয়েও আজ সমাজের তথাকথিত নিয়ম আর করুণ বাস্তবতায় আটকা পড়ে গিয়েছে মেয়েটি । প্ৰাণ খুলে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করলেও মেয়েটি শুধু বলছে, “আপা, ফুল নাগবে? মাথায় পড়েন। সুন্নর নাগবে আপনাকে।” নয়তো বলছে, “ভাই, আপাকে এই ফুলতা দেন। আপা অনেক খুশি হবে। “

নিজের খুশিগুলোকে দু’হাতে সরায় ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটা, বয়সটা তার কতই হবে? পাঁচ বা ছয়। আজ ফুলের ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে ফিরে যাচ্ছে একজন থেকে অন্যজনে । যদি একটা ফুল কেউ কিনে নেয়, একটু স্বস্তিতে কাটবে হয়তো আজকের দিনটা ।

যে বয়সটা অন্য আর পাঁচটা বাচ্চা মেয়ের পুতুলের সংসার সাজাতেই কেটে যায়, সে বয়সটায় মেয়েটি ভাবছে ফুলটা কেউ নিলে তার পুচকে বোনটা কিছু খেতে পারবে। ফুল বিক্রি করতে করতে হলেও মেয়েটা কিন্তু খুঁজে বেড়ায় অন্য বাচ্চাগুলোর মতো একটু আদর একটু ভালোবাসা। যে ভালোবাসা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, শুধুই অনুভব করা যায়। সেই আদরের টানে বারবার মেয়েটি ঘুরে ফিরে ছুটে আসে, যেখানে সে পায় একটু ভালোবাসা একটু আদর। মায়া ফেলে যায় তার, মানুষগুলোর উপর।

মেয়েটা খেলতে জানে। মেয়েটা প্রাণ খুলে হাসতেও জানে। আদরে ডুবে মায়ায় ভাসিয়ে মেয়েটা বলতেও জানে, “আপা, এই ফুলতা তোমার।” দাম জিজ্ঞেস করলে বলবে, “নাগবে নাই।” বেশি জোর করলে আর একটা ফুল হাতে ধরিয়ে বলবে, “দশ তাকা।” যেখানে তার প্রতিটা ফুলই বিশ টাকার। যেখানে সে পাচ্ছে একটু ভালবাসা, সেখানে সে বারবার ছুটে যাচ্ছে,বসছে কোলে নয়তোবা খেলছে কাঁধে উঠে।

মেয়েটা জানে অধিকার খাটাতে। জানে আবদার করতে। “এইতা তোমার ” সেই যে মায়ায় ভরিয়ে দুইটা ফুল দিয়ে বলেছিল,” দুইতাই তোমার, কাউকে দিবা নাই।” সেই ফুল যখন অন্য কারো কাছে দেখে সে জিজ্ঞেস করে, ” আমার দেওয়া ফুলতা কই? ” বিদায়ের সময় বলতেও জানে “আবার আসিও”। মেয়েটি! জানেন কি নাম তার? নাম তার “তুলনা”, তার সাথে দেখা, কথা আর ভালো লাগা কার্জনের খোলা চত্বরে।

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১ম বর্ষ

নুঝাত নাজিয়া

১ম বর্ষ