fbpx

নভেম্বর ২, ২০২৪

শেষ সূর্যাস্ত

আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও একটি বছর। এই গত এক বছরে কি পেলাম আর কি পেলাম না তার হিসাব আজও মিললো না। বছরের পর বছর যায় আর অর্জনের থেকে যেন না পাওয়ার পাল্লাই ভারী হতে থাকে। তাই বলে কি কিছুই পাওয়া হয়নি বিগত কয়েক বছরে? এ নিয়ে কঠিন হিসাব কষছে অদিতি।  

সবে পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী করছে অদিতি। খুব একটা পছন্দের চাকুরী না। পেট চালাতে টাকার প্রয়োজন তাই মানিয়ে নিয়েছে। তার ছোট্ট জীবনের ২৬টা বছর কাটানোর পর আজ তার মনে হলো এ কয়েক বছরে তার জীবনে কি যোগ হলো আর কি বিয়োগ হলো সেটা তার জানা প্রয়োজন। ভেবে দেখলো ছোটবেলাটা হাসি খেলার মধ্য দিয়ে ভালোই কেটেছে তার। কোনো বিশেষ চাওয়া পাওয়া ছিলো না। কৈশোরটা কেটেছে বই খাতায় মুখ গুঁজে যাতে এই বয়সে এসে নিজের শখ-আহ্লাদ ও মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারে।

তরুণ জীবনের যোগবিয়োগ হিসাব করতে গিয়ে অদিতির হঠাৎ মনে হলো সে তার বিশের দশকের প্রায় শেষ প্রান্তে। অথচ তার কতশত শখ এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে। বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই সংসার জীবনে থিতু হয়েছে।  যদিও একার জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগ তার ছিলো না, এখনও নেই। কত কিছু করার ইচ্ছে ছিল জীবনে। ভীষণ অপছন্দের চাকুরীটা এখনও ধরে রেখেছে তার এসব শখ পূরণের আশায়। কিন্তু তার সে আশায় গুড়ে বালি।   

এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে চললো। হাতে সময় খুবই কম, তবুও অদিতি বিধাতার সাথে দেনাপাওনার হিসাব মিলাতে ব্যস্ত।  হঠাৎ হাসপাতালের কেবিনের বিশাল জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখলো পশ্চিম আকাশে সূর্য তাকে বিদায় জানাচ্ছে। ও মুগ্ধ হয়ে দেখে কি সুন্দর রক্তিম আভায় তার ঘর ছেয়ে গেছে। বছরের প্রথম সূর্যাস্ত বলে কথা!

সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অদিতির মনে হলো, সমুদ্র তার খুব পছন্দের জায়গা। তার একমাত্র কারণ সমুদ্র পাড়ে পানিতে পা ডুবিয়ে চমৎকার সূর্যাস্ত দেখা যায়, লাল- গোলাপি- হলুদ- বেগুনি রঙের মিশেলে আকাশটা তখন খুব সুন্দর দেখায়। কিন্তু তা আর হলো কই?

 এটাই হয়তো তার দেখা শেষ সূর্যাস্ত।

0612 শামায়েলা শেবন্তী photo
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়