জুন ১৮, ২০২৫

শুভ্র

আজিকে মন আর চারখানা দিনের মতো অতটা প্রফুল্লিত ছিল না। বিষণ্ণতার কারণখানি আজিকে না বলিলাম। সে না হয় তোলা থাকিল অন্য কোনো এক কথায়……

আজিকে নিতাই একাই গেলো খাবার খাইতে। গিয়ে টেবিলে বসিয়া খাবার ওর্ডার করিল। পূর্বের দিনের মতো সে আর ঐ মায়াবী বালকখানির কোনো খোঁজ নিল না। যদিও দেখিতে পাইয়াছে এবং বালকটিও দেখিয়াছে নিতাইকে। নিতান্তই একাকিত্বের সহিত খাবার আসার প্রহর গুনিতে ব্যস্ত ছিল আজিকে নিতাই।

খানিকক্ষণ পরেই বালকটি ওর হাতে থাকা উচ্ছিষ্ট খাবারের পাত্রখানি লইয়া আমার টেবিলের পাশে আসিল টেবিলখানি পরিষ্কার করিবার মনোরথে। যদিও পরিচ্ছন্নতা অতটাও জরুরি ছিল না, কারণ টেবিলটা মোটামুটি পরিষ্কারই ছিল।

কিন্তু আমি কেন জানি পূর্বের ন্যায় ওর মন কাড়ানো হাসিটার দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম না। তবে ইহা খুব ভালো করিয়াই হৃদয়ঙম হইল যে বালকটির মনে আমার জন্য কিছু একটা আছে। পরিষ্কার করিবার বাহানায় সে আমার সহিত খানিকক্ষণ গল্প করিতে আসিয়াছিল।

কিন্তু ঐ বালকটি যদি আমাকে প্রশ্ন করিয়া বসে যে, দাদা আপনি পূর্বের ন্যায় আমার সহিত কথা বলিতেছেন না কেন? আজিকে আমার প্রতি আপনার এই ঔদাসীন্যের রহস্য কি? তবে মনে হয় না নিতাই এর খুব একটা গোছানো উত্তর প্রদান করিতে পারিবে।

মানুষ আসলে একটা দিক থেকে খুবই কাঙাল। সেই দিকখানি কি জানেন, ভালোবাসা। ভালোবাসা সবাই পেতে চায়, যত্ন সবাই পেতে চায়। যাদের আপনজন বলিতে কেহ নাই তাহাদেরও মন আছে, অনুভূতি আছে। ওরাও ভালোবাসিতে জানে। ওরাও এই প্রত্যাশা করিয়া বসে যে, কেহ তাহাদের একটু খোঁজ নিক, ভালোমন্দ কিছু জিজ্ঞাসা করুক। ভালোবাসা দিলে যে এর প্রত্যুত্তরে ভালোবাসা পাওয়া যায় তার অনুধাবন নিতাই-এর হইল।

অবশেষে সে নিতাই-এর ঔদাসীন্যের কাছে পরাজয় স্বীকার করিয়া কিছু একটা জিজ্ঞাসা করিল। প্রথম বলাতে নিতাই বুঝে নি কি বলিয়াছে। দ্বিতীয় বলাতে সে বুঝিল।

সে কহিল: দাদা, খাইছেন? না খাইবার আইছেন?

নিতাই: না রে, এক্ষুণি আসিলাম মাত্র। খাব এখন। তুই খাইছিস?

সে: না দাদা, খাইনি।

নিতাই: কেন রে? বেলা যে বয়েই গেল, এখনও খাস নি কেন? ক্ষুধা লাগে নি বুঝি?

সে: দাদা, আমাগো অভ্যেস হইয়া গেছে। আপনেরা একবেলা না খাইলে আপনেগো খিদা লাগে। আর আমাগো একবেলা খাওয়ন না হইলে আমাগো খিদা লাগে না!!!!  

কথাখানি খুব শৈল্পিকভাবে সে উপস্থাপন করিল না!  সেই শৈল্পিকতার পরিচয় দিয়া একখানা হাসি দিল এবং অন্য টেবিলে সে ব্যস্ত হইয়া পড়িল।

ওর পূর্বের হাসির মায়াতে মনটা একদম সিক্ত হইয়া যাইত। যেন মনে হইত নীমিলিতনেত্রে চাহিয়াই থাকি। কিন্তু আজকের ওর সেই হাসি দ্বারা যেন ও ওর অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের আভাস দিয়াছিল। দশ বছরের সেই বালককে তখন আমার পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞ যুবক অনুভব হইতে লাগিল। আমি অবাক চাহনিতে ওর প্রস্থানের সহিত উপস্থাপিত সেই কথাই কেবল চিন্তা করিতে লাগিলাম।

শুভ্র কি জানে যে আজ সে তাহার বাণী দ্বারা আমার হৃদয়ের অর্ধখানি চুরি করিয়া লইয়াছে।

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ