জুন ২০, ২০২৫

বছরান্তে স্মৃতিচারণ

কী খবর সবার? “স্বপ্নের স্মৃতিচারণ” এর পর আজ ফিরে আসলাম বছরের স্মৃতিচারণ নিয়ে। এই লেখাটা যখন প্রকাশিত হবে তখন কাগজে কলমে ফাইনালের আনুষ্ঠানিকতা ব্যতীত প্রথম বর্ষের অবসান ঘটবে। যদিও এখনো বুঝেই উঠতে পারলাম না কী করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বছর শেষ করে ফেললাম। এইতো সেদিন আমরা এলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে কেউবা একরাশ স্বপ্ন নিয়ে কেউবা অন্য স্বপ্নের সাধ না মেটানোর ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে। আমাকে যদি প্রশ্ন করেন আমি কী নিয়ে এসেছিলাম আমি বলবো ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে প্রবেশ করেছিলাম প্রাণের ক্যাম্পাসের পরিসংখ্যান বিভাগে। যেহেতু ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই শুরু এ পথচলা, তাই পরম সত্য হলো শুরুতে এই আমি আর জীবন্ত হতাশার প্রতীকের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। অথচ আজ বছর পেরিয়ে সেই আমিই এই বিভাগে আসতে পেরে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবানদের একজন বলে মনে করি। একটা অসাধারণ বন্ধুমহল পেয়েছি যাদের সান্নিধ্য পেলে মনে হয় এদের সাথে দেখা হওয়া কপালে ছিলো বলেই তো এই বিভাগে হয়েছিল মোর পদচারণ, তারা যেন কত আপন, যুগ যুগ ধরে যেন তাদের সাথেই মোর চেনাজানা, আড্ডা হোক, খাওয়াদাওয়া হোক কোনো কিছুই যেন এখন আর তাদের ছাড়া ভাবা যায় না। একটা ডিপার্টমেন্ট যে আপনাকে পরিবারের মতো আপন করে নিতে পারে, বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই এই স্ট্যাট এ না আসলে আপনি এটা বুঝতেই পারবেন না। র্যাগিং কী জিনিস তা তো এ জীবনে দেখলামই না, বরং শুধু অবাক হয়ে বুঝলাম যে কী নির্দ্বিধায় রক্তের বন্ধন না থাকলেও আপন বড় ভাই-বোন পাওয়া যায়, এই একটা জিনিসের জন্য আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার প্রতি। এখানে এসে আপনি দেখবেন কী করে বিশুদবারের গানের আসরে বয়সভেদে সবাই মন-প্রাণ উজাড় করে গানের সুরে মিলিত হয়, কী করে ম্যাগাজিনের কাজের নাম করে বড় ভাই-আপুদের টাকা মেরে দিতে হয়, যাকে বলা যায় মনের আশীর্বাদ জোর করে আদায়।

আমি ৭২ ব্যাচের মানুষ, আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ হবে আর ৬৯ ব্যাচের নাম আসবে না তা তো হতেই পারেনা। হোক সে নবীনবরণ, হোক সে বনভোজন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষের স্মৃতির পাতায় লেখার মতো দিনগুলো তো তাদেরই দেয়া। এতো অল্প সময়ে এতো ব্যস্ততার মাঝেও এতো সুন্দর চমকপ্রদ আয়োজন আর কোনো বিভাগে দেখা যাবে বলে মনে হয়না। এই যে নবীনবরণ, এতো এতো চিন্তা, রিহার্সেল, আয়োজনের প্রস্তুতি সবকিছুর মাঝে কখনো বুঝতেই পারিনি কী করে প্রথম বর্ষ পার করে ফেললাম। পরিসংখ্যান আমাকে দিয়েছে কিছু আপন মানুষ, কিছু বড় ভাই-বোন যাদের নির্দ্বিধায় সব বলা যায়। আমাকে শিখিয়েছে কী করে আহাম্মক হয়েও বাবার নাম্বার না দিয়েই প্রথম বর্ষ পার করে ফেলা যায়। তাই বছর শেষে যদি আমার আবার আগের মাইশারার সাথে দেখা হতো তাকে বলতাম, “আরে এতো হতাশ না হয়ে চলে আয় পরিসংখ্যান বিভাগে, জীবন এই সুযোগ সবাইকে দেয়না রে!” আর সবকিছুতেই যাদের স্মরণ না করলেই নয়, তাদের দিয়েই তবে আজ এই লেখার ইতি টানা যাক।

“সেরা সেরা ৭২ ব্যাচ, থুক্কু থুক্কু সেরা সেরা সেরার সেরা ‘সংশপ্তক-৬৯’ ই সেরা।”
(৬৯, তুমি যেন থেকো বন্ধু চিরকাল নবীন)

শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp