জুন ২০, ২০২৫

সম্পাদকীয় – জুলাই ২০২৪

সারাদেশে ছাত্রছাত্রী ও চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা বলা হচ্ছে। সরকারী চাকরিতে বহুদিন ধরে ৫৬% কোটা চালু ছিলো (৩০% মুক্তিযোদ্ধা, ১০% নারী, ১০% জেলা, ৫% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ১% প্রতিবন্ধী কোটা)। ২০১৮ সালে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার সব ধরনের কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করলেও সম্প্রতি সেই আদেশ ‘অবৈধ’ ঘোষনা করেছে হাইকোর্ট। তাই আবারো আন্দোলন শুরু হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট যদিও গতকাল হাইকোর্টের আদেশ একমাসের জন্য স্থগিত করেছে, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে কী হবে বলা যাচ্ছে না। 

প্রথমে দেখা যাক ৫৬% কোটার প্রকৃত অর্থ কী? মনে করুন একটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে ৩১ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। ৩১ জনের ৩০% হলো ৯.৩ জন, অর্থাৎ ১০ জন (৯.৩ জনের কম দেয়া যাবে না, তাই পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা বিবেচনা করতে হবে)। অর্থাৎ, মেধা তালিকায় না থাকলেও মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য কোটায় ১০ জনকে নিয়োগ দিতে হবে। পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা সব ক্যাটেগরির জন্য প্রযোজ্য। তাই, মেধা তালিকায় না থেকেও মোট ২১ জন (১০+৪+৪+২+১ জন) নিয়োগ পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, কাগজে-কলমে ৪৪% হলেও মেধা তালিকা থেকে চাকরি পাবে ৩১ জনের মধ্যে মাত্র ১০ জন (৩২% এর সামান্য বেশি)।

এমন একটা অন্যায় চাকরি প্রত্যাশীরা মানবে কেন?

মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আমরা সঠিকভাবে সম্মান জানাতে পারিনি। স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা উচিত ছিলো। তাহলে বর্তমান তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, তারা কেউ তালিকায় ঠাঁই পেতো না এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অসম্মানিত হতেন না।

এবার ধরা যাক, ‘ক’ মুক্তিযুদ্ধ করলেন। সরকার তাঁকে সম্মানজনক ভাতা/সুবিধা না দিয়ে তাঁর পোষ্য ‘খ’-কে চাকরি দিলো, যোগ্যতার বিচারে যেই চাকরিটা তৃতীয় ব্যক্তি ‘গ’-এর প্রাপ্য ছিলো। অর্থাৎ, ‘গ’-এর চাকরি ‘খ’-কে দিয়ে সরকার ‘ক’-কে ‘সম্মান’ জানাতে চেষ্টা করলো! এমন বিতর্কিত কাজ পরিহার করাই ভালো।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রকৃত সম্মান জানাতে চাইলে তাঁদের সঠিক তালিকা তৈরি করে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ/ভাতা/সুবিধা নির্ধারণ করে সুদে-আসলে স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধ করা হোক। মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে না থাকলে তাঁদের পরিবারবর্গকে সেই পাওনা পরিশোধ করা হোক। কিন্তু, সরকারী দপ্তর চালাতে চাইলে মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। আবেগ দিয়ে দেশ চলতে পারে না।

হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত আমাদের বোধগম্য হয়নি। সরকারী আদেশে কোটা চালু হয়েছে, সরকার কেন সেই কোটা বাতিল করতে পারবে না? কোটা বাতিলের পরিপত্র কেন ‘বেআইনি’ হবে? সরকার কি আদেশের মধ্যে কোনও শুভংকরের ফাঁকি রেখে দিয়েছিলো? আদালতের সিদ্ধান্তে সরকার কেন খুশি হয়েছিল? সরকারি আদেশ কোর্টে বাতিল হলে সরকারের তো বিব্রতবোধ করার কথা!

সরকার কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি-জামাতের ইন্ধন দেখতে পাচ্ছে। অথচ ‍বিএনপি অস্তমিত, জামাত বিতর্কিত। ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবিকে সরকার যদি বিএনপি-জামাতের চাল মনে করে, তাহলে সরকারের সিদ্ধান্ত ভুল হতে বাধ্য। জাতির জন্য তা হবে দুর্ভাগ্যজনক।

লেখাপড়ায় মেয়েরা এখন অনেক এগিয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে ছেলেদের চেয়েও বেশি। নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, তারা এখন আর নারী কোটা চায় না।

প্রতিবন্ধী কোটা ছাড়া বাকি সব কোটা বাতিল করা হোক।

00 Editorial end
IMG 6678

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ