fbpx
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

জুলাইয়ের শেষ দিনগুলিতে

৩৩/০৭/২০২৪

অহিংস আন্দোলন যখন সহিংসতায় রূপ নেয়; ছাত্র-জনতার দ্রোহযাত্রার পর যখন বলা হয়: অধিকার আদায় তো হলোই, এখন তবে রাজপথ ছাড়ো এই কথাটার যে দাম থাকে না; তা কি বুঝবে কেউ?

৩৪/০৭/২০২৪

বিক্ষোভ মিছিল মিলেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে; আজ এই শহীদ মিনার যেন ২০২৪ এর রেসকোর্স ময়দান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা করলো এক দফার: সরকারের পদত্যাগ।

এরপর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করলেন উনার অপরাধ কী? এও বললেন এখনো নাকি আলোচনার পথ খোলা। উনি সংঘাত চান না।

রক্ত গঙ্গা বয়ে যাওয়ার পর এসব কথা ফের বলছেন!

মানুষকে কি বোকা পেয়েছেন?

৩৫/০৭/২০২৪

সারাদেশে স্বৈরাচার পতনের দাবিতে আজকের খুব ব্যবহার করা স্লোগানগুলোর একটি হলো: “চশমাওয়ালী বুবুজান, নৌকা লইয়া ভারত যান।”

এদিকে সবকয়টি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে দেখাচ্ছে সারাদেশে ২১ জেলায় ১১৪ জন মারা গিয়েছেন। সত্যিই কি শুধু ১১৪ জন? সরকারি খবরের ১১৪ জন মানে তো তার চেয়ে আরও অনেক বেশি মারা  গিয়েছে।

এভাবে এতজনকে মেরে ফেললো!

হঠাৎই বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা করলো, ০৬ আগস্টের বদলে ০৫ আগস্টই হচ্ছে “লং মার্চ টু ঢাকা”; সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানায় স্বৈরাচারমুক্ত দেশ গড়তে যেন ঢাকায় আসেন।

কী যে হতে যাচ্ছে কাল?

হয় এসপার নয় ওসপার!

৩৬/০৭/২০২৪

সকাল ৮টা- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ঢাকা আসছেন।

সকাল ১০:৩০- হঠাৎই ব্রডব্যান্ড বন্ধ করে দিলো। পরিবেশ সামলাতে না পারলেই ইন্টারনেট যে বন্ধ করার একটা ধুম পরে তা আর নতুন কি? সবসময়ের মতো এখনও চ্যানেলগুলো বলছে পরিবেশ শান্ত, ঢাকার রাস্তা ফাঁকা। নিচে ব্রেকিং নিউজে আবার দেখায় বগুড়ায় ১০টি ট্রাক ছিনতাই হয়। মানুষ বোঝাই করে ঢাকা আসলো না তো ট্রাকগুলো?

ভালো কিছু হতে যাচ্ছে কি?

ধুর!

সকাল ১১:৩০- দীপ্ত টিভিতে দেখাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক একসাথে এগিয়ে চলেছে শাহবাগের উদ্দেশ্যে, “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে।

বেলা ১২:৩০- টিভিতে দেখি বলছে সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশ্যে দুপুর ২টায় বক্তব্য রাখবেন।

কি বলবেন উনি?

দুপুর ১টা- ইন্টারনেট আসলো; কিন্তু কোনো খবর নাই। টিভিতে বলছে আর্মিরা কাঁটাতার, বেড়া সব সরিয়ে দিয়েছে। ঢাকার আশপাশ থেকে মানুষ ঢাকায় ঢুকছে।

ভালো কিছু কি আসছে খবরে?

দুপুর ২টা- সময় পিছিয়ে বলা হলো বেলা ৩টায় সেনাপ্রধান বক্তব্য রাখবেন।

দুপুর ২:৩০- ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা। প্রতিটি চ্যানেলের ব্রেকিংনিউজ এই বলছে।

শুকরিয়া আদায় করল সারাদেশ!

বেলা ৩টা- আবারও সময় পিছিয়ে বলা হলো বেলা ৪টায় সেনাপ্রধান বক্তব্য রাখবেন। 

এরই মাঝে বের হলো আনন্দ মিছিল। গণস্রোত থেকে ভেসে আসছে স্বাধীনতার বহু স্লোগান।

বেলা ৩:৫২- সেনাপ্রধান বক্তব্য রাখছেন; বলছেন শীঘ্রই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করা হবে। এদিকে মানুষের ঢল দেখা যাচ্ছে গণভবন, সংসদ ভবনে। সবার চোখে মুখে স্বাধীনতার উল্লাস।

বিকাল ৫টা: হঠাৎই খবরে দেখায় “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসে ভোর থেকে বেলা ১২:৩০ অবদি পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে হতাহতের সংখ্যা অনেক। হুট করে মনটা খারাপ হয়ে গেল।

বিজয়টা দেখে যেতে পারল না কত মানুষ!

সন্ধ্যা ৭টা: আমরা আজ স্বাধীন হলেও সভ্য হই নি। শিক্ষিত মানুষ আন্দোলন করে স্বৈরাচারমুক্ত করল দেশ, আর অশিক্ষিত বর্বরজাতি চালাচ্ছে লুট, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন। ছিঃ!

হঠাৎই রাতে ফেসবুকে ঢুকে দেখি বিভিন্ন পোস্ট  বলছে কীসের নাকি ভারতীয় RAW ঘরে ঢুকে ঢুকে মানুষ মেরে ফেলছে। মানুষ ভয়ে ফেসবুকে আরও কত কি যে লিখছে! এ নিয়ে গ্রুপেও দেখি ঢের কথা-বার্তা।

কাহিনী কি?

(বিজয়ের মাধ্যমে শেষ হলো জুলাই)

০৬/০৮/২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে যুক্তরাজ্য ভিসা বাতিল করেছে শেখ হাসিনার, ব্রিটিশ অভিবাসন সংক্রান্ত আইনের কারণে ভিসা পাবেন না উনি।

তাহলে যাবেন কোথায় উনি? উনি নাকি এখন নয়াদিল্লিতে আছেন।

ওহ্, সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনলাম গত রাতের সব ছিল গুজব!!!

০৭/০৮/২০২৪

সারাদিন কি যে হলো.. মনেই নাই।

রাত১২টা- মসজিদের মাইকে বলা হচ্ছে আশপাশের কোথায় নাকি ডাকাত পরেছে; সবাই যেন সাবধানে থাকি।

রাত নির্ঘুম, মনে ভয়, কখন যেন কি হয়… কি হয়!!

০৮/০৮/২০২৪

দুপুর ২:১০- বাংলাদেশের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ড. মুহম্মদ ইউনূস। ওখানে তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৩জন সমন্বয়ক। সবার সাথেই বিমানবন্দরে আলোচনায় বসলেন ড. ইউনূস। 

কিন্তু কেন?

১৭সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় যার মাঝে ১৫জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের; প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কেমন যেন এক গর্ববোধ হচ্ছে। তার উপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো: নাহিদ ইসলাম এবং মো: আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, যারা একদম নবীন, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোনো; এখন তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণের অন্তর্ভুক্ত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হলেন ড. ইউনূস; উনি এখন থেকে অবস্থান করবেন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’-এ।

রাত ৯টা- এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সহ ১৬জন উপদেষ্টাগণের মাঝে ১৩জন উপদেষ্টা মহামান্য রাষ্ট্রপতির থেকে শপথ গ্রহণ করেন। (শহরের বাহিরে থাকায়  সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম শপথ গ্রহণ করতে পারেন নি)

এই প্রথম মনে হয় এতো আগ্রহ নিয়ে কোনো সরকারের শপথ গ্রহণ দেখলাম টিভিতে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এমন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলো।

হি! হি! আমিও সাক্ষী হলাম তার।

০৯/০৮/২০২৪

আজ সকালে দেখি ফেসবুকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আর এক সমন্বয়ক, সারজিস আলম, উনি একটা পোস্টে বলেছেন, “চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার; এখন আমরা সরকার।“

ভাইয়ের এই পোস্টটা পুরোই লাজাবাব…

আজ উপদেষ্টাগণের মাঝে মন্ত্রণালয় ভাগ করে দেওয়া হলো। শুরু হলো এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি।

Gen Z থেকে বলছি আমরা আজ যেমন নবীন-প্রবীণের এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেলাম, ইনশাআল্লাহ ক্রমান্বয়ে তেমন অসাম্প্রদায়িক, সভ্য, শিক্ষিত এক দেশও গড়ব।

নুঝাত নাজিয়া
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১ম বর্ষ