fbpx
বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

৩৬ দিনের জুলাই শেষে

২০২৪ এর জুলাই, বাংলাদেশের ইতিহাসে যুক্ত হওয়া নতুন একটি পাতা। বাঙালির জীবনে জুলাই বহুবার এসেছে কিন্তু জুলাই যে সহজে ভোলার নয়! যদিও আগাথা ক্রিস্ট্রি বলেছিলেন যে, জনগণের স্মৃতিশক্তি খুব কম। তবুও, কিছু সময় এমন থাকে যে, চাইলেও ভুলে যাওয়া যায় না সহজে।

কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তি পূর্ণ আন্দোলন এই মাসেই রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। ইতি ঘটে ১৫ বছর ধরে চলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন। এই বঙ্গ দেশের ছাত্রদের দমিয়ে রাখতে না পারার ইতিহাস কিন্তু নতুন নয়। মহাপরাক্রমশালী বৃটিশরা পারে নি, পাকিস্তানি আমলে আইয়ুব খান কিংবা ৭১ এ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীও পারে নি, ৯০ এর দশকে এরশাদ এবং তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। 

শেখ হাসিনা সরকারের পতন একই সাথে দেশের প্রায় সকল থানা ও পুলিশ ফাড়ি ফাঁকা হয়ে যাওয়া, এমন দৃশ্য মনে হয় না বাঙালি কখনো প্রত্যক্ষ করেছে। গ্রাম পর্যায়ের থানা থেকে শুরু করে ঢাকায় পুলিশের হেডকোয়ার্টার ও খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দেশ এর আগে কখনো এমন সংকটে পড়েছিলো বলে মনে হয় না, যেখানে কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ নেই। তবে ওই যে সুকান্তের কবিতাটা আছে না-

“সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়ঃ
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।”

এটাকে বাংলার মানুষ সত্যি প্রমাণ করতে কখনো ভুল করে নি বোধ হয়। এজন্য বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশটি কোনো প্রকার ল-এন্ড-অর্ডার ছাড়া ৭২ ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। অনেক প্রকার গুজব, ডাকাতির ভয় কিংবা আন্দোলনের ভয়কে পাশ কাটিয়ে এলাকায় পাহাড়া দেয়া শুরু করে সাধারণ মানুষ। আক্ষরিক অর্থেই ‘যার যা কিছু আছে’ তাই নিয়ে প্রতিবেশি, এলাকা, ধর্মীয় স্থাপনা তথা বৃহৎ অর্থে দেশ রক্ষায় এগিয়ে আসে সবাই। তবে এর মাঝে কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক অরাজকতা তৈরী করতে কিছু ধর্মীয় স্থাপনায়, বিশেষ করে হিন্দুদের মন্দিরে, হামলা এবং ভাংচুর করে। অনেকের বাড়ি লুটপাট করে এবং দেশের বেশ কিছু থানা পুড়িয়ে দেয়। বাংলার সাধারণ জণগণ সবসময় এমন হানাহানি কিংবা আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলো। পরে তারা নিজ উদ্যোগে রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে, রাস্তা পরিষ্কার, আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থান গুলো পরিষ্কার এবং সব ধরণের সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসে। সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি ছিলো স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের, যারা এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি ছিল। ৬-৯ আগস্ট পর্যন্ত দেখা যায় বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে রাতে মন্দির পাহাড়া দিতে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এটি। ছাত্রছাত্রীদের এখনো (১০ আগস্ট, ২০২৪) ট্রাফিক পুলিশের দ্বায়িত্ব করতে দেখা যাচ্ছে রাস্তায়। তারা কেউ-ই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হওয়াতে, কিছু জায়গায় ভুল-ত্রুটি রয়েছে। তবে তাদের চেষ্টায় কোনো কমতি ছিলো না ঢাকায় যানবাহন চলাচলে নিয়মনীতি প্রয়োগের। জণগণ যদি একটু সচেষ্ট হন, তাহলে ঠিকই আমাদের জ্যামের শহর ঢাকাতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, এটা প্রমাণ করে দিয়েছে বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা।

আর এভাবেই সবার অংশগ্রহণে হয়তো আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার আকাঙ্ক্ষাও পূর্ণ হতে বেশি সময় লাগবে না।

Profile Picture
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাবর্ষঃ ২০১৯-২০