জুলাই 12, 2025

গল্পটা অন্য কারও…

গল্পটা ১৫ দিন আগের। সবাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, জিমন্যাশিয়ামকে বাংলাদেশের ‘বায়তুল মাল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন; তখন এক মা তার ১০বছর বয়সের ডাউন সিন্ড্রোমের মেয়েটিকে এনেছিলেন নতুন করে বাংলাদেশ গড়ে উঠছে তা দেখাতে। উনার চোখে ছিল স্বপ্ন। আমি কীভাবে জানলাম?

শোনেন তাহলে কাহিনী:

বন্যার্তদের সহায়তায় যখন পুরো দেশ নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্যদের মতো আমি আর আমার কিছু বন্ধু টিএসসি, জিমন্যাশিয়ামে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছি। ঐ কাজের মাঝেই একদিন, তারিখ ঠিক মনে নেই, হঠাৎ দেখি দুটো ডাগর চোখ একটু বের হয়ে আবার লুকিয়ে যাচ্ছে একজন মহিলার পেছনে। ব্যাপারটা একটু চমকপ্রদ মনে হলো বলে আমিও তাকে দেখতে লাগলাম। একটু পর দেখি ডাগর চোখ দুটোর সাথে এক চিলতে হাসিও দেখা যাচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে কেউ মনে মনে খুব খুশি হচ্ছে, একটু পর পর জোরে জোরে হাসির আওয়াজ, হাত তালির শব্দ আসছে। ঐ ডাগর চোখের আড়ালে কে আছে দেখার খুব ইচ্ছে হলো।

সে রহস্যময়ী যেই না আমাকে পাশ কাটিয়ে আন্টির পেছন পেছন যাচ্ছিল আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু হঠাৎ হাত বাড়িয়ে বললাম, “এসো! আমাদের সাথে এখানে কাজে আসো, দাঁড়াও।” ইতস্তত করার পরও দাঁড়ালো সাথে; বললাম আসো কাজ করি; কাজও করল। একটা কাজ শেষ হয় তার এক চিলতে হাসি যেন ছড়িয়ে পরছে পুরো মুখে। কাজের ফাঁকে কথা বললাম, নাম জিজ্ঞেস করলাম; বললো “ছোঁয়া।” যখন বললাম, “বাহ্! খুব সুন্দর।” তার মুখের সাথে ডাগর চোখগুলোও মনে হলো হেসে ফেলল। কাজ একটু শেষ হয়, সে খুশিতে হাত তালি দেয়। তার কাজের ইচ্ছাশক্তি যেন অন্যরকম। সেও একে একে আমাদের নাম জানল, বলল আমাদের কি বলে ডাকবে? বন্ধু? আমরা কিছু বলার আগেই আন্টি বললেন ওরা সবাই তোমার আপু! আন্টি আমাদের বুড়ো বানিয়ে দিলেন, এই ভেবে মন খারাপ হলো আমার; কারণ আমি তো ওর বন্ধু হয়েই মজা করে কাজ করতে চেয়েছিলাম। একটু পর বলল, “পা ব্যাথা করছে। চলো না যাই; বসি।” তাকে নিয়ে বসালাম এক চেয়ারে। আন্টি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন এমন বাচ্চাদের সাথে আমরা আগে কখনো মিশেছি কিনা। আমাদের উত্তর না বোধক হওয়ায় আন্টি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ও তোমাদের সাথে মিশে গেল কীভাবে? ও তো কারও কাছে যায় না। কিছু বলে না। ও তো এ সমাজে অতিরিক্ত!” আমরা বললাম, “না তো আন্টি; ও অতিরিক্ত হবে কেন? ও তো অংশ সমাজের।” বললেন, “না বাবা, জানো না তোমরা। ওকে নিয়ে আমাকে কি কি সহ্য করতে হয়। ওকে নিয়ে খুব একটা বের হই না; কারণ ও তো খারাপ যা, তা যে মুখের উপর বলতে নেই, জানে না তো। এমন করলে তো টিকে থাকা কঠিন; সবার মন জুগিয়ে চলতে পারবে না তাই নিয়ে বের হতাম না। ওকে আমি আজ বহুদিন পর মানুষ দেখাতে নিয়ে এসেছি। বিশেষ করে GEN Z-দের, যাদের কারণে হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান আর দেশ এগিয়ে চলেছে উন্নতির চূড়ায় পদার্পণের লক্ষ্যে। এখন ও ওর স্বচ্ছ ভাবনা নিয়ে থাকতে পারবে এখানে, এটা বিশ্বাস করি।”

উনি মুখে একটা মাত্র বিশ্বাসের কথা বললেও উনার চোখে দেখেছিলাম সাম্য, ঐক্যের মেলবন্ধনে তৈরি একটা দেশের আকাঙ্ক্ষা; যেখানে শুধু উনার মেয়ে না, দেশের প্রতিটা মানুষ পাবে সবার সাথে ভাব প্রকাশের অধিকার। আন্টির চোখে কোথাও না ভয় ছিল না; ছিল নতুনভাবে দেশের উন্নয়নে সাক্ষী থাকার তৃষ্ণা।

আন্টির স্বপ্নগুলো একদিন সত্যি হবে। তাই না?

নুঝাত নাজিয়া
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১ম বর্ষ

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ