fbpx

অক্টোবর ১৬, ২০২৪

উপসম্পাদকীয় – সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট আন্দোলন মনে যে ক্ষত রেখে গেলো, সে ক্ষত থেকে আমরা একটা বিষয় জানলাম যে, আমাদের বর্তমান তরুণ শিক্ষার্থীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন চাওয়ার সাহস রাখে। ঠিক পরিবর্তন না, একে সংস্কার বলাই যৌক্তিক। এটা হয়তো আমরা সাহস করে বলতে পারিনি কিন্তু আমাদের তরুণরা বলতে পেরেছে। ফলে বিগত অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় যাবৎ দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নড়বড়ে প্রথা বা সিস্টেম গড়ে উঠেছে তার সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের মানুষ নড়েচড়ে উঠেছে। যারা দেশের স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে তুলেছিলো তাদের অপসারণের মাধ্যমে হয়তো সংস্কারের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন তো এখনো অনেক দূরের পথ! তাছাড়া পুরানো অনিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হটিয়ে নতুন পরিচ্ছন্ন নিয়মের মধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে বিশৃঙ্খলার সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে। আমরা যেখানে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ও নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী সেখানে শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী সিস্টেম প্রতিষ্ঠার দাবি হয়তো যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে আমাদের আরো ব্যাপক অর্থে পরিবর্তনে আগ্রহী হওয়া জরুরি।

আমরা যদি দেশকে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায্যতার ভিত্তিতে জনগণের কল্যাণে ও জাতীয় স্বার্থে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করতে চাই, তাহলে সুশাসন ও ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনগণ হিসেবে দায়িত্ববোধ ও অধিকারবোধ উভয় বোধের সামঞ্জস্যতা জরুরি। আমরা যদি শুধুমাত্র অধিকারবোধকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই একজন নাগরিক অথবা আরো সুস্পষ্টভাবে বললে একজন সুনাগরিক হিসেবে আমাদের মাঝে দায়িত্ববোধ সহকারে জীবনযাপন করার প্রতি অনীহা তৈরি হবে। বর্তমানে দেশের এই দোদুল্যমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে এমন অনেক নজির দেখা যাচ্ছে। যেমন, শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে, কিছুক্ষেত্রে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে; ভিন্ন মত কিংবা ভিন্ন ধর্ম কিংবা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করার কারণে ব্যক্তি বিশেষ বা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে; বিভিন্ন থানায় জোরপূর্বক মামলা নিতে পুলিশ বাহিনীকে হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে; জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকদের উপর হামলা করা হচ্ছে। এ ঘটনাগুলো কোনটাই কাঙ্ক্ষিত নয়; বরং এ সবগুলো ঘটনা তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের যে শ্রদ্ধা বোধ তৈরি হয়েছিলো এবং তাদের নিয়ে আমাদের গর্ব করার যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিলো সেগুলোর মূলে কুঠারাঘাত করছে।

সংস্কারের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর এখন তরুণ শিক্ষার্থীদের উচিত হবে এর চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে ধৈর্য্য ধারণ করতে ও সহনশীল হতে সকলকে আহ্বান জানানো এবং সংস্কারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সাধারণ জনগণকে সচেতন করা। একটা দেশ ও জাতিকে উন্নত হতে হলে পড়ালেখা, গবেষণা, চিন্তাশীলতা, শিল্প-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় অত্যাবশ্যক; এ বিষয়ে আমাদের বিশ্বাসকে একসূত্রে বাঁধতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য ক্যাম্পাসে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ বিষয়ক প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন যে, শিক্ষা ও ক্যাম্পাস ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের রাজনীতি ক্যাম্পাসে চলতে পারে, তবে রাজনৈতিক দলের অধীনে ছাত্র সংগঠন হিসেবে কিংবা দলীয় ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে চলবে কি না সে বিষয়ে সামাজিক ঐক্যমতের প্রয়োজন। দুর্নীতি, অনিয়ম, বৈষম্য প্রভৃতি রুখে দিতে আসলে আমাদের সামাজিক ঐক্যমতের প্রয়োজন। সামাজিক ঐক্যমত যে সহজেই কঠিন সময় মোকাবেলায় সহায়ক তার জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে – সেটা হলো দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাম্প্রতিক বন্যা। বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি কার্যকর না থাকার পরও বেসরকারি উদ্যোগে এ প্রবল বন্যা পরিস্থিতিকে আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।

কাজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে যদি আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে প্রথমে আমাদের নিজেদের সদিচ্ছার দৃঢ়তা প্রমাণ করতে হবে আমাদের নিয়মিত জীবনযাপনে, নিয়মিত কর্মকাণ্ডে। ধর্ম-জাতি-বর্ণ-মত ভেদের চেয়ে সুশাসন, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এখন জরুরি। আমাদের তরুণ সমাজ এ লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।    ‌

Rokonuzzaman
ব্যবস্থাপক | 

সদস‍্য, সম্পাদনা পর্ষদ, প‍্যাপাইরাস

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশন:১৯৯৯-২০০০