fbpx

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

শেষের শুরু

[আমার খুব একটা গুছিয়ে লেখার অভ্যাস নেই, তবুও শেষের অনুভূতিগুলো লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করছি।]

‘3 idiots’ সিনেমাটা না হলেও ১০০ বারের বেশি বার দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনের সাথে এই সিনেমাটা সবসময় জুড়ে থাকবে। এই সিনেমায় একটা দৃশ্য আছে যেখানে সমাবর্তনের দিন ‘র‍্যাঞ্ছ’ বন্ধুদের অগোচরে ট্যাক্সি করে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায় কাউকে কিছু না বলে। কেবল বন্ধু ‘ফারহান’ই তাকে চলে যেতে দেখে। তারপর যে যার জীবন গুছিয়ে নেয়, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে র‍্যাঞ্ছ। আমি এদিক থেকে র‍্যাঞ্ছর একদম বিপরীত চরিত্রের। র‍্যাঞ্ছ মিশুক প্রকৃতির মেধাবী ছাত্র। আমি না মেধাবী, না মিশুক। বিশেষভাবে এই দৃশ্যটার কথা বলছি তার কারণ আমি আমার শিক্ষা জীবন শেষে এভাবে হারিয়ে যেতে চাই, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে চাই। আমার সবসময় মনে হয় আমার বিভাগে আমি ভীষণভাবে মিসফিট। ম্যাচুরিটির দিক থেকে আমি আমার সহপাঠীদের মত নই, এটা আমার দোষ যে আমি নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে পারি নি। কারণে অকারণে ক্লাসের অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, তার জন্য আমি দুঃখিত। আমার জীবনে ‘ফারহান’ বা ‘রাজু’র মত বন্ধুর বড় অভাব। আমি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে কেউ খুঁজতে আসবে না, আসা উচিতও না। এখানেও দোষটা আমারই! আমি ভালো বন্ধু হতে পারিনি এটা আমার ব্যর্থতা।

প্রথম বর্ষ পার করেছি স্থাপত্য নিয়ে পড়তে না পারার হতাশায়, তারপর করোনা পরবর্তী সময়ে সেশন জট কাটাতে দ্বিতীয় বর্ষ পার করি বেশ তাড়াহুড়ো করে, তারপর দেখতে দেখতে তৃতীয় বর্ষ শেষে চতুর্থ বর্ষও শেষের পর্যায়ে! বন্ধুত্বের প্রতিদান তো দূর, এমন কি আমার বিভাগ আমাকে যা দিয়েছে সে হিসাবে আমি আমার হৃদয়ের অর্ধেক দিয়েও বিভাগটি কে ভালবাসিনি, যথাযথ মূল্যও দিই নি। এখানেও আমি শিক্ষার্থী হিসেবে চরমভাবে ব্যর্থ! কতটা বোকা আমি! আর এখন বিদায়ের ঘণ্টা বাজলো পরে হুঁশ হল কত কিছু না দেখা রয়ে গেল, কত কিছুর প্রতিদান না দেয়া থেকে গেল। যদি পুনর্জন্ম বলে কিছু থাকে তবে পরের জন্মে পরিসংখ্যানে পড়ার ইচ্ছে নিয়েই জন্মাতে চাই আর একজন যোগ্য সহপাঠী হয়ে সংশপ্তক- ৬৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়েই ফিরে আসতে চাই।

এই ৪-৫ বছরে সবার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি, জেনেছি, অনেক কিছু পেয়েছি, যার কোনটারই প্রতিদান আমি দিতে পারি নি। আমি যদি আজ এই কথাগুলো না বলি তবে খুব খারাপ অনুভব করবো। সামনাসামনি এসব কখনই বলতে পারতাম না, তাই এই আনাড়ি হাতে লিখতে বসা। আমার সকল ভুলের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আগামীতে কে কোথায় থাকবো জানি না তবে যে যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। পরিসংখ্যান বিভাগও দিনে দিনে আরও উন্নত হোক, চারদিকে আরও খ্যাতি ছড়াক এই কামনা করি!

0612 শামায়েলা শেবন্তী photo
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়