জুলাই ১০, ২০২৫

সম্পাদকীয় – নভেম্বর ২০২৪

মফিজ সাহেব পলিথিনের দুটি বড় ব্যাগ হাতে বাজার করতে গেলেন। সরকার পলিথিনের ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পরও পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন ও ক্রয়-বিক্রয় চলছে। কাজীর গরু কিতাবে নেই, কিন্তু গোয়ালে আছে। তবে, অনেক দোকানদার পলিথিন নিষিদ্ধের অজুহাতে ক্রেতাকে পলিথিন-ব্যাগ না দিয়ে টাকা বাঁচাচ্ছে। তাই মফিজ সাহেবকে পলিথিন-ব্যাগ হাতে বাসা থেকে বেরোতে হয়।

ভদ্রলোক প্রথমে গেলেন মুরগীর বাজারে। অনেক দিন মুরগী খান না, তাই এমন সাহসের কাজ তিনি করে ফেললেন। তবে, মুরগীর দাম শুনে বেশিক্ষণ সেখানে থাকার উৎসাহ বোধ করলেন না।
মাছের বাজার বড়ই বিচিত্র। মলা-ঢ্যালা জাতীয় ছোট মাছ আগে পানির দামে বিক্রি হতো, এখন এগুলোর দাম আকাশচুম্বী। খানিকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে মফিজ সাহেব বুঝতে পারলেন, কেবলমাত্র চাষের পাঙ্গাশ (ছোট সাইজের) কেনার সামর্থ্য তার রয়েছে। কিন্তু, গত দু’মাসে এই মাছ এত বেশি খাওয়া হয়েছে যে, পাঙ্গাশ হাতে বাসায় ফিরলে দরজা না-ও খোলা হতে পারে।

ডিমের বাজারে ঘুরে মফিজ সাহেব বুঝতে পারলেন, শুধুমাত্র বৈষম্য বিরোধীদের ফেসবুক পেজেই ডিমের ডজন ১৪০ টাকা। দোকানে দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। গরীবের প্রোটিন ডালের দামও নাগালের বাইরে।
সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, ভাবলেন মফিজ সাহেব। তাছাড়া, অনেক দিন লাবড়া খাওয়া হয় না। কিন্তু, সবজির দোকানিরাও সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কাঁচা মরিচ ডলে ভাত খেয়ে ফেলবো, এটা ভেবেও মফিজ সাহেব কাঁচা মরিচ কিনতে পারলেন না। এমন নয় যে, কাঁচা মরিচ কেনার টাকা তার পকেটে ছিলো না। এত দাম দিয়ে কেন কাঁচা মরিচ কিনতে হবে – এই ভেবে মফিজ সাহেব রাগ করে সেখান থেকে চলে এলেন।

ঐতিহ্য ধরে রাখতে পান্তাবুড়ির মতো লবণ দিয়ে পান্তাভাত খাবো, ভাবলেন মফিজ সাহেব। তখন তার মনে পড়লো সেই বাংলা বাগধারা, যা হয়তো মফিজ সাহেবের জন্যই রচিত হয়েছে, “নুন আনতে পান্তা ফুরায়, পান্তা আনতে নুন।”

IMG 6678

প্রাক্তন শিক্ষার্থী

পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ১৯৮৩ - ৮৪

Facebook
Threads
LinkedIn
Telegram
X
Reddit
Email
WhatsApp

আরও লেখা সমূহ