fbpx

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

অপ্রত্যাশিত বিদায়

১৪ই ডিসেম্বর ২০২৪, ক্যাম্পাসে তখন শীতকালীন ছুটি চলমান। তাই তো স্বভাবসুলভ ভাবে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎই সকাল ১০ টা নাগাদ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখি রূপক ভাই; কল রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে বেশ ভারী কন্ঠে বললেন, “মুহেব্বুল, মুরশীদা ম্যাডামের বিষয় টা প্যাপাইরাসের ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করো, কি লিখতে হবে সেটা আমি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি আর আমিও ডিপার্টমেন্টে  যাচ্ছি সেখানে  জানাজায় দেখা হবে।”  ভাইয়ের কথার মানে তখনো সবটা বুঝতে না পারলেও, শেষের লাইন শুনে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম আসলে কি হয়েছে।

এরপর ফেসবুক পোস্ট আর গ্রুপ দেখে বুঝতে পারলাম আমাদের মুরশীদা ম্যাডাম আর এই পৃথিবীতে নেই। বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিল, গতকাল রাতেই প্যাপাইরাসের ২৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের ভিডিওটা এডিট করছিলাম। সেখানে ম্যাডামেরও স্পিচ ছিল যেটা প্যাপাইরাসের ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় আমি আর নিঝুম থাকলেও স্ক্রিপ্টটা ঠিক করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাডাম। আয়োজনের পুরোটা সময় আমাদের পাশে বসে ম্যাডাম নিজ হাতে লিখে দিয়েছিলেন কখন কি বলতে হবে। তাঁর লেখা বুঝতে পারবো কিনা এইটা ভেবেই সেটা আবার পড়ে পড়ে শুনিয়েছিলেন আর বলেছিলেন, “বাবা, দেখো পারবে তো এটা বলতে ?”

অনুষ্ঠানের শেষে কথা বলতে গিয়েছিলাম ম্যাডামের রুমে। আমাদের দেখে বলেছিলেন, “দেখো তোমরা অনেক ভালো করেছ, মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যেও, তোমাদের সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগে।” এসব কথা মনে আসতেই মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। সামনে হয়তো সামনে আরো প্রোগ্রাম আসবে কিন্তু স্ক্রিপ্ট নিয়ে আর ম্যাডামের কাছে যাওয়া হবে না।

এইতো বন্ধের দুই একদিন আগেই বিকেলের দিকে, ক্লান্ত শরীর আর ব্যাগ কাঁধে হেঁটে হেঁটে শহীদুল্লাহ হল থেকে ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। পথেই কার্জন হলের গেটের সামনে ম্যাডামের সাথে দেখা। সালাম দিতেই আমাকে দেখে বলেছিলেন, “বাবা, মুহেব্বুল এই সময়ে কোথায় যাচ্ছ?” ক্লাসে যাচ্ছি শুনে আর দেরি না করে বলেছিলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে ক্লাসে যাও।” ওটাই ছিল ম্যাডামের সাথে শেষ দেখা।

হয়তো খুব দীর্ঘ সময় আমরা আপনাকে পাইনি; কিন্তু যতটুকু সময় পেয়েছি, আপনি আমাদের আপন করে নিয়েছিলেন। ওপারে অনেক ভালো থাকবেন ম্যাডাম। মহান আল্লাহ তা’য়ালার কছে আরজি জানাই, উনি যেন আপনাকে জান্নাত নসিব করেন- আমিন।

1311 মো মুহেব্বুল ইসলাম writers photo
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়