মুরশীদা ম্যাডাম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক আলোকবর্তিকা। তিনি আমাদের ৪র্থ বর্ষে ইকোনোমেট্রিক্স এবং মাস্টার্সে এডভান্স ইকোনোমেট্রিক্স পড়াতেন। তাঁর মতো অমায়িক, স্নেহশীল, এবং দায়িত্বশীল শিক্ষক পাওয়া সত্যিই বিরল। তাঁর প্রতিটি ক্লাসই ছিল শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা, এবং শিক্ষাদানের প্রতি গভীর ভালোবাসার নিদর্শন।
মুরশীদা ম্যাডাম প্রতিটি ক্লাসে সময়মতো উপস্থিত হতেন, জটিল বিষয়গুলো সহজ করে বোঝাতেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিস্তারিত লিখিয়ে দিতেন। প্রতিটি চ্যাপ্টার শেষে তিনি নিজের মতো করে লেকচার গুছিয়ে আবার আমাদের জন্য আপলোড করে দিতেন। তাঁর পড়ানোর প্রতি এই ডেডিকেশন ছিল অনন্য। তাঁর আচরণে আমরা শুধু একজন শিক্ষক নয়, একজন অভিভাবকের ছায়া পেতাম।
আমার জীবনেও তার অসংখ্য ঘটনা স্মৃতি হয়ে আছে। এরমধ্যে একটি ঘটনা আমাকে আজও ভীষণভাবে আবেগাপ্লুত করে। মাস্টার্সের গ্রীষ্মকালীন বন্ধের সময়ে আমাদের অনলাইন ক্লাস চলছিল। সকাল ১০টার ক্লাসে আমি একটি প্রশ্ন করেছিলাম ম্যাডামকে, কিন্তু তিনি যে উত্তর দিচ্ছিলেন তাতে তিনি নিজেই সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হচ্ছিলেন না। পরে তিনি বললেন, “পরের ক্লাসে আমি এর ব্যাখ্যা দেব।” আমি বললাম ঠিক আছে ম্যাডাম । কিন্তু অবাক করার বিষয়, বিকেল ৫টার দিকে তিনি আমাকে ফোন করলেন! আমার ফোন নম্বর তাঁর কাছে ছিল না, তবে কিভাবে যেনো তিনি আমার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করেছিলেন। তিনি বললেন, “আসাদ, আমি তোমার মুরশীদা ম্যাডাম বলছি। তোমার সকালে করা প্রশ্নটি নিয়ে আমি সারাদিন কাজ করেছি।” এরপর তিনি ধৈর্য্য সহকারে ফোনেই আবার উত্তরটি ব্যাখ্যা করলেন অনেক্ষন। তিনি আরও বললেন, “যদি কোনো কনফিউশন থাকে, আমাকে মেইল করো বা ফোন করো, আমি আবার বুঝিয়ে দেব।”
এ ঘটনা আমার হৃদয়ে এমন এক দাগ কেটেছিল যে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা হাজার গুণ বেড়ে গিয়েছিল। তিনি আমাদের শুধু শিক্ষক নন, আমাদের বিভাগের এক অভিভাবক ছিলেন। তাঁর স্নেহের পরশ, শাসন এবং ভালোবাসায় আমরা বড় হয়েছি।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তাঁর রুমের সামনে গেলে বুকটা কেঁপে উঠে। মনে হয় এই বুঝি তিনি তাঁর চিরচেনা হাসি দিয়ে সালাম গ্রহণ করবেন, আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, “ভালো আছো তুমি?” মুরশীদা ম্যাডাম আমাদের আবেগ, আমাদের ভালোবাসা এবং আমাদের অনুপ্রেরণা।
আমরা সবাই দোয়া করি, মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর শিক্ষাদানের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জীবনে চিরকাল দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করুক। আল্লাহ তাঁর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের ধৈর্য ধারণের শক্তি দিন- আমিন।
- This author does not have any more posts.