fbpx

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

প্রস্থান 

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মুরশীদা খানম ম্যাম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান। কোনোদিন ভাবতেই পারিনি ম্যাম আমাদের এভাবে ছেড়ে চলে যাবেন। লেখাটা লেখার সময় ম্যামের একটা কথা মনে পড়ছিল,‌ “মানুষের নিঃশ্বাসের বিশ্বাস নাই”। উনার অকাল প্রয়াণের পর কথাটার মর্মার্থ বুঝতে পারছি।

ম্যামের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রমের জন্য এ এফ মুজিবুর রহমান গণিত ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি রুমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন‌ আমার পায়ে ব্যথা ছিল। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। রুমে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন যারা কাগজপত্র জমা নিচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের দুই জন শিক্ষক শ্রদ্ধেয় ড. ওয়াসিমুল বারী স্যার ও‌ মুরশীদা ম্যাম। উনাদের কাছে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় উপলব্ধি করতে পেরেছি যে আমার কাছে এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পরীক্ষাগুলোর মার্কশিট নাই। ম্যাম আমার সমস্যা বুঝতে পেরে অন্য একটি রুমে যেতে বললেন সমস্যার সমাধানের জন্য। অনেক জটিল ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবশেষে আমার ঠাঁই হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগে। বিভাগের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামেই বারী স্যার ও মুরশীদা ম্যামকে আবার দেখতে পাই। ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল। ম্যাম আমাদের প্রথম বর্ষের নবীনবরণ কমিটির সঞ্চালক ছিলেন। নবীনবরণে ম্যামের মতো একজন অসাধারণ গায়িকার সামনে গান গাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। জীবনেও বুঝতে পারিনি ম্যামের উপস্থিতিতে এটাই আমার প্রথম ও শেষ সঙ্গীত পরিবেশনা হবে। 

চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে ম্যাম আমাদের ইকোনোমেট্রিকস্ কোর্স পড়াতেন। ম্যাম একাধারে ছিলেন কর্মঠ, নিয়মনিষ্ঠ, নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি। উনার স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল। চতুর্থ বর্ষে পড়াকালীন ক্লাস নেওয়ার কয়েকমাস পর উনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক মাস পর উনাকে দেখতে পাই প্রজেক্ট সাবমিশনের কয়েকদিন আগে। প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশনের দিনে উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা কবে শুরু হবে। প্রশ্নটির উত্তর দেওয়ার পর ম্যামের কাছে প্রেজেন্টেশন ভালো দেওয়ার জন্য দোয়া চেয়েছিলাম। 

মাস্টার্সে থিসিস সুপারভাইজার হিসেবে ম্যামকে পেয়েছিলাম। থিসিসের শুরুর দিনগুলিতে উনার কঠোর ব্যক্তিত্বের পিছনে  একজন মমতাময়ী মানুষকে আবিষ্কার করেছি। থিসিসের সুবাদে জানতে পেরেছি যে ম্যাম নজরুল একাডেমি থেকে একসময় নজরুল সঙ্গীত শিখেছেন। আমিও নজরুল একাডেমিতে ছাত্র ছিলাম। ম্যামের কাছ থেকে সুর,তাল,লয় এর ব্যাপারে পরামর্শ নিয়েছিলাম। ম্যাম আমাকে সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।  ছাপা অক্ষরে লেখা প্যাপাইরাস ম্যাগাজিনে আমার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল।‌ ম্যামের কাছে গিয়েছিলাম আমার লেখা কবিতার কথা জানাতে।  উনাকে প্যাপাইরাসে একটি লেখা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। ম্যাম বলেছিলেন সময় পেলে উনি লিখবেন।

ম্যামের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল  ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে। NST Fellowship এর মৌখিক পরীক্ষা শেষে উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। সবসময়ের মতো সেদিনও ম্যামকে বলেছিলাম, “ভালো থাকবেন। আমিনার ( ম্যামের আরেকজন থিসিস স্টুডেন্ট) জন্য দোয়া করবেন। ও ভাইবা দিতে গেল।“

আমরা ডিপার্টমেন্টের এক অমূল্য রত্নকে হারিয়েছি। এই শূন্যতা কোনোদিনও পূরণ হবে না। আল্লাহ এর কাছে উনার জন্য দোয়া করতে থাকি । আল্লাহ  উনাকে জান্নাতবাসী করুন, আমীন।

আনুশী আরভীন
শিক্ষার্থী | পরিসংখ্যান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সেশনঃ ২০১৮ - ২০১৯