দুরু দুরু বুকে দাঁড়িয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ৪০৬ নং কক্ষে। স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হবে নতুন এক জীবন। দাঁড়িয়ে থেকেই ভাসছিলাম স্বপ্নের দেশে। কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসলাম, কে যেন আমাকেই ডাকছে, “দাঁড়িয়ে কেন বাবা?” আদর-স্নেহ মাখা এক কণ্ঠস্বর।
আমাদের শ্রদ্ধেয় মুরশীদা খানম ম্যাডাম, খুব অল্প সময়ই তার সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়েছি। আমি নিজেকে একই সাথে ভাগ্যবান এবং দুর্ভাগা ভাবি। সৃষ্টিকর্তার কল্যাণে হঠাৎ করেই আমাদের একটি কোর্স এর দায়িত্ব নেন তিনি। তবে বেশিদিন তাঁকে কাছে পেলাম না।
আদর আর শাসনের সুষম মিশ্রণ ছিল তাঁর মাঝে। শুরুতে ভয়ে তটস্থ থাকতাম ক্লাসে। বকাও খেয়েছি। তবে শ্রদ্ধার কমতি পড়েনি কোনোদিন। উনি তো শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছিলেন। নিজের কর্মস্থলে দায়িত্বশীলতার এক অসাধারণ নজির রেখে গিয়েছেন। ক্লাস নিতে দেরি করে এসেছেন, এমন হতে দেখিনি কোনোদিন। প্রতিবার ক্লাস শুরু করার আগে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতেন, “কারো প্রশ্ন আছে কি? থাকলে এখনই বলবে আমাকে।” কোনোদিন প্রশ্ন উপেক্ষা করেননি তিনি। অনেক পরিশ্রম করে ক্লাস নিতেন। ক্লান্তি আমাদের বশ করতে পারলেও, তাঁকে বশ করতে পারতো না কখনো। তাঁর অসুস্থতার কথা আমাদের অজানা ছিল না। তাই অবাক হয়ে যেতাম, কাজের প্রতি কতটা নিষ্ঠা আর সততা থাকলে উনি এতো পরিশ্রম করে ক্লাস নিতে পারেন।
ম্যাডাম জোর দিতেন প্রতিটা পড়া বুঝে বুঝে পড়তে। উনি নিজে যেমন নিষ্ঠার সাথে পড়াতেন, আমরাও যেন সেভাবেই নিষ্ঠার সাথে পড়াশোনা করি এটাই ছিল তাঁর চাওয়া। প্রায় দিন উনি সমস্যা সমাধান করতে দিতেন আর যারা দ্রুত নির্ভুলভাবে সমাধান করে নিয়ে যেতে পারত, সেই খাতায় একটা করে স্বাক্ষর দিতেন। এই স্বাক্ষর নেওয়ার সৌভাগ্য আমার কোনোদিন হয়নি, যা আমাকে আজও আক্ষেপে পোড়ায়।
শীতকালীন ছুটির আগে শেষ ক্লাসটা ছিল শ্রদ্ধেয় মুরশীদা ম্যাডামের। বারবার বলেছিলেন ছুটিতে যেন পড়াশোনাটাও ঠিক মতো করি। আর তাঁর কোর্সের নোট খাতাটা যেন সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়ি। আমরা ছুটির আনন্দে ক্লাস শেষ করেছিলাম। কিন্তু কল্পনাও করতে পারিনি, এটাই ম্যাডামের সাথে আমাদের শেষ ক্লাস, এটাই শেষ দেখা।
আমরা ৭৩তম ব্যাচ আসলেই সৌভাগ্যবান, অল্প সময়ের জন্য হলেও তাঁর কাছাকাছি থাকতে পেরেছি। তাঁর দেওয়া শিক্ষা জীবনে কাজে লাগাতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করব। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের সেই সুযোগ দান করেন।
আল্লাহ ম্যাডামকে জান্নাত দান করুন, আমিন।
- মাহিম আহমেদ শাবাবhttps://www.thepapyrus.org/author/%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%bf%e0%a6%ae-%e0%a6%86%e0%a6%b9%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a6%a6-%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%ac/বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪